in ইতিহাস ও নিদর্শন by
সম্রাট আকবর কি ছিলেন?

3 Answers

0 votes
by
 
Best answer
পৃথিবীর ইতিহাসে মহান শাসকদের অন্যতম আকবর দি গ্রেট। মুঘল সম্রাটদের সেরা সম্রাটের পুরো নাম জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর। নিজের শাসনব্যবস্থার মাধ্যমে সম্রাট আকবর ইতিহাসকে যতটা প্রভাবিত করতে পেরেছিলেন, ততটা খুব কম ভারতীয় শাসকই করতে পেরেছিলেন। তাকে ভারতবর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে ধরা হয়। তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট ছিলেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে আকবর ভারতের শাসনভার গ্রহণ করেন। আজকের রকমারি আয়োজনে থাকছে আকবর দি গ্রেট সম্পর্কে বিস্তারিত। জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবরকে ভারতবর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে ধরা হয়। তাকে বলা হয় আকবর দি গ্রেট। পৃথিবীর ইতিহাসে মহান শাসকদের অন্যতম হওয়ায় তিনি ‘মহামতি আকবর’ নামেও পরিচিত। মুঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় এই সম্রাট বাবা সম্রাট হুমায়ুনের মৃত্যুর পর ১৫৫৬ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে ভারতের শাসনভার গ্রহণ করেন। তিনি ১৫৪২ সালের ২৩ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তখন বৈরাম খার তত্ত্বাবধানে সম্রাট আকবর সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্রাজ্য বিস্তার করতে থাকেন। ১৫৬০ সালে বৈরাম খাকে সরিয়ে আকবর নিজে সব ক্ষমতা দখল করেন। আকবর ভারতবর্ষ ও আফগানিস্তানে তার সাম্রাজ্য বিস্তার চালিয়ে যান। ১৬০৫ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় সমস্ত উত্তর ভারত তার সাম্রাজ্যের অধীনে চলে আসে। আকবরের মৃত্যুর পর ছেলে সম্রাট জাহাঙ্গীর ভারতবর্ষের শাসনভার গ্রহণ করেন। সম্রাট আকবর শাসনব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য প্রথমত দুইভাগে ভাগ করেছিলেন। ১. কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা, ২. প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা। কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থার প্রধান ছিলেন স্বয়ং আকবর। অর্থনৈতিক বিভাগ, সমর বিভাগ, বেতন ও হিসাব বিভাগ, বিচার বিভাগ, ডাক বিভাগ, গোয়েন্দা বিভাগসহ কেন্দ্রের অধীনস্থ বিভিন্ন মন্ত্রীদের দায়িত্বেও ছিল বিভিন্ন বিভাগ। বিশাল সাম্রাজ্যকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করার জন্য মোট পনেরটি প্রদেশে বিভক্ত করা হয়। প্রতিটি প্রদেশে একজন প্রধান শাসনকর্তা নিযুক্ত হতো। এমন সুপরিকল্পিতভাবে রাজ্য ব্যবস্থাকে পরিচালনা করায় নিজের দূরদর্শিতার প্রমাণ রেখেছেন। মানতেন কঠোর অনুশাসন সম্রাট আকবর শৌর্য-বীর্যে বা অসীম সাহসী একজন শাসক ছিলেন। তবে এগুলোর পেছনে গুরুত্ব দেওয়া হয় তার কঠোর অনুশাসন ও নিয়ম মান্য করার বিষয়টি। দিনে ঘুমাতেন মাত্র সারে চার ঘণ্টা। রাতে তিন ঘণ্টা ও দুপুরে দেড় ঘণ্টা ঘুমানোকে আকবর মনে করতেন মূল্যবান। সংক্ষিপ্ত এই জীবনকে বেশি ঘুমিয়ে নষ্ট করার পক্ষে ছিলেন না তিনি। মধ্য বয়সে এসে শাকাহারি হয়ে যান আকবর। মাছ-মাংস খাওয়া ছেড়ে দেন, পছন্দ করতেন হাঁটতে। মথুরার শিকার ভূমি থেকে একবার বিশাল লোকলস্কর নিয়ে পায়ে হেঁটে আগ্রা রওনা দিয়েছিলেন তিনি। যাত্রাপথ ছিল প্রায় ষাট কিলোমিটারের মতো। এতটাই দ্রুত হেঁটেছিলেন যে, শেষ পর্যন্ত তার সঙ্গে মাত্র দুজন লোক তাল মিলিয়ে চলতে পেরেছিল! চমৎকার স্থাপত্যশৈলী জ্ঞান আকবরের শাসনামলে গড়ে ওঠা স্থাপত্যগুলো তার স্থাপত্যশৈলী জ্ঞানের পরিচয় দেয়। তখনকার রাজধানী ফতেহপুর সিক্রি ১৯৮৬ সালে পৃথিবীর দর্শনীয় স্থানগুলোর তালিকায় জায়গা পায়। অনেকেই বলেন আকবরের স্থাপত্যের মাঝে কিছুটা নিজ ধর্মের প্রতি বেশিমাত্রায় টান প্রকাশ পায় কিন্তু হিন্দু কিংবা মুসলমান, দুই ধর্মের নিকট হতেই এই স্থাপত্যগুলোর উপাদান সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়াও বুলন্দ দরওয়াজা এবং জামে মসজিদের নির্মাণশৈলী করেছে ইতিহাসকে মুখ্য। শিকারি আকবর শিকার করতে সম্রাট আকবর খুব পছন্দ করতেন। শিকারে যাওয়ার সময় খুবই অল্প লোক রাখতেন। কখনো কখনো একা একাই শিকারে চলে যেতেন। কথিত আছে, ১৯ বছর বয়সে আকবর একটি সিংহি শিকার করেছিলেন শুধু একটি তলোয়ারের সাহায্যে। বাঘ, সিংহ, চিতা, বন্য বাইসন, এমনকি হাতিও শিকার করতেন আকবর। এসব শিকার করতে গিয়ে একবার মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি। তবে কিছুটা অলৌকিকভাবেই সেরে ওঠেন তিনি। নিরক্ষর আকবর সমগ্র ভারতবর্ষের একচ্ছত্র অধিপতি আকবর দি গ্রেট। অথচ এই মানুষটি ছিলেন নিরক্ষর। লিখতে পড়তে জানতেন না। তবে অসম্ভব তীক্ষè স্মৃতিশক্তি ছিল তার। একবার যা দেখতেন বা শুনতেন, তাই মনে রাখতে পারতেন। ছোটবেলায় সমগ্র শাসনের ভার চলে আসার চাপে কখনো পড়াশোনা করার সুযোগ হয়নি আকবরের। কেউ কেউ বলেন আকবরের ডাইস্লেক্সিয়া নামক একটি রোগ ছিল। এই কারণে পড়তে গেলে কখনোই তিনি অক্ষরগুলো ঠাহর করতে পারতেন না, যে কারণে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি তার। তবে নিজে পড়াশোনা না করলেও আকবর শিক্ষিত ও জ্ঞানী-গুণীদের বেশ সমাদর করতেন। তার সভাকে অলঙ্কৃত করেছিলেন ইতিহাস বিখ্যাত নবরত্ন। সব দিক ছিল সমান গুরুত্ব নিজের খেয়াল বা হারেমের নারী, সব দিকেই আকবরের ছিল সমান গুরুত্ব। রাজ্য শাসন করার সময় তার বেশ কিছু সিদ্ধান্ত মানুষের উপকারে এসেছে। জিজিয়া কর সরিয়ে দেওয়া, হিন্দু ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করা, হজ্বের সময় যাতে মুসলমানদের কষ্ট কম হয়, সে জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। দ্বীন-ই-ইলাহী প্রবর্তন ইতিহাসের পাতায় তিনি আকবর দি গ্রেট হলেও তার কিছু কাজকর্ম জনমনে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। এর মধ্যে নিজের মতাদর্শে দ্বীন-ই-ইলাহী ধর্মের প্রবর্তন অন্যতম। আকবরের প্রাথমিক ধর্মবিশ্বাস ছিল ইসলাম। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজসহ ধর্মীয় সব আচার মেনে চলতেন। কিন্তু হঠাৎই তিনি অনুভব করলেন বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মাঝে ভেদাভেদ রাজ্যের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। তাই ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক করতে ১৫৮২ সালে প্রবর্তন করেন দ্বীন-ই-ইলাহী। এর মূল ভিত্তি ছিল ইসলাম, হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্মসহ অন্যান্য ধর্মের এক মিশ্র রীতিনীতি। তবে এই ধর্মমত কোনো ধর্মের অনুসারীই সহজে মানতে পারেনি, এমনকি ক্ষোভও তৈরি হয় তাদের মাঝে। আকবরের রাজসভার নবরত্ন মোঘল আমলের রত্ন তৃতীয় সম্রাট আকবরের ইতিহাস এখনো উজ্জ্বল। তার সভায় তিনি ছাড়াও ছিলেন আরও নয়জন রত্ন যাদের একসঙ্গে বলা হয় আকবরের রাজসভার ‘নবরত্ন’। স্ব-স্ব ক্ষেত্রে তারা ছিলেন শ্রেষ্ঠ। নবররত্নের একজন প্রধানমন্ত্রী আবুল ফজল। তার লেখনীতে আকবর আমলের রীতিনীতি ও খোদ আকবরের জীবনকে আমরা দেখতে পাই। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন আবদুর রহিম খান। তিনি শুধু আকবরের রাজসভা উজ্জ্বল করা নয়, একাধারে ছিলেন কবি, গায়ক, গীতিকার এবং জ্যোতিষশাস্ত্রী। তার জ্যোতিষশাস্ত্রের পারদর্শিতা রাজা-মন্ত্রীকে আশ্বস্ত রাখত। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বীরবল ছিলেন তীক্ষ্ণ বুদ্ধির। তিনি এতটায় প্রত্যুৎপন্নমতি ছিলেন যে, ভারতীয় উপমহাদেশে নামটি খুব শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হয়। এদিকে একজন সফল অনুবাদক ও শিক্ষক হিসেবে পরিচিত ছিলেন নবররত্নের অপর একজন শিক্ষামন্ত্রী ফইজি। পঞ্চতন্ত্র, রামায়ণ ও মহাভারত গ্রন্থগুলো ফার্সিতে অনূদিত করেন তিনিই। সম্রাট আকবরের পরামর্শদাতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ফকির আজিউদ্দিন। সেনাপতি মানসিংহ ছিলেন আকবরের বিশ্বস্ত বন্ধু। বহু যুদ্ধে আকবর তার কাছ থেকে অনেক সাহায্য পেতেন। গৃহমন্ত্রী মোল্লা দো-পিঁয়াজা তো সুস্বাদু খারাব দো-পিয়াজার উদ্ভাবক ছিলেন। সংগীতজ্ঞ তানসেনের গানে বৃষ্টি নামার গল্প আমাদের সবারই মোটামুটি জানা। নবররত্নের আরেকজন অর্থমন্ত্রী টোডরমল ছিলেন তৎকালীন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ। গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন আকবরের সমাধি ৬৩ বছর বয়সে ১৬০৫ সালের ১৫ অক্টোবর সম্রাট আকবরের মৃত্যু হয়। ভারতের উত্তর প্রদেশের আগ্রার শহরতলি সিকান্দ্রাতে সমাধি। বিস্তর জমির ওপর স্থাপিত সমাধিসৌধটি মুঘল স্থাপত্যের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। তখনকার দিনে মোঘল সম্রাটদের জীবদ্দশায় নিজের সমাধিস্থল নির্ধারণ করে যাওয়া ছিল শখের বিষয়। সম্রাট আকবর নিজের সমাধিস্থল হিসেবে পছন্দ করেন সিকান্দ্রাকে। জায়গাটা ছিল জনমানবহীন নির্জন। পাখিদের কলকাকলিতে ছিল সদা মুখর। বেশ নিরিবিলি হওয়ায় জায়গাটা হয়তো সম্রাটের খুব পছন্দ হয়েছিল। জঙ্গল পরিষ্কার করে ১১৯ একর জমিজুড়ে সৌধের নির্মাণকাজ শুরু করেন। কিন্তু কাজ সমাপ্ত হওয়ার আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ১৬১৩ সালে তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করেন পুত্র জাহাঙ্গীর। পিতার পরিকল্পিত নকশা ধরেই নির্মাণ করেন তিনি সুবিশাল এই সৌধ। এর চারদিকে চারটি গেট আছে। প্রতিটি গেটেই রয়েছে অসাধারণ সুন্দর নকশা, যা লাল-নীল বা সোনালি রঙের পাথর দিয়ে তৈরি। গেট থেকে মর্মর পাথরে নির্মিত বড় একটি রাস্তা চলে গেছে সমাধিস্থল বরাবর। দুপাশে বিশাল খালি প্রান্তর। সেখানে বিচরণ করছে বেশ কিছু চিত্রা হরিণ। সামনে একটি স্বচ্ছ পানির ফোয়ারা। চারপাশে বড় বড় বারান্দা বিশিষ্ট সমাধির সৌধটি বিশাল আকৃতির। পুরোটাই শ্বেতপাথর, লালপাথর ও জেডপাথরে তৈরি। মুঘল সম্রাটদের অন্যান্য স্থাপত্যের মতো এর দেয়ালগুলোও সুন্দর কারুকার্য খচিত। রাজপুতদের সঙ্গে কৌশলী সম্পর্ক প্রায় সাড়ে তিন শ বছরের মুঘল ইতিহাসে আকবরই শাসন করেছেন প্রায় ৫৩ বছর। এত বেশি সময় ধরে অন্য কোনো সম্রাট ভারত শাসন করতে পারেননি। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন রাজ্য চালাতে তাকে ভিন্নধর্মী কৌশল অবলম্বন করতে হবে। তিনি অনুধাবন করেছিলেন যে, রাজপুতরা শত্রু হিসেবে প্রবল কিন্তু মিত্র হিসেবে হবেন নির্ভরযোগ্য। আর তাই নিজের শাসনকালে কৌশল হিসেবে রাজপুতদের সঙ্গে সন্ধি করার প্রয়াস করেছিলেন। সে কৌশল ছিল কিছুটা যুদ্ধের দ্বারা এবং অনেকটাই ছিল বিবাহসূত্রের মাধ্যমে। প্রচলিত তথ্য থেকে জানা যায়, অম্বরের রাজা ভর মল্লের মেয়ে যোধাবাঈ-এর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ভর মল্লের ছেলে রাজা ভগবান দাস আকবরের সভায় নবরতেœর একজন ছিলেন। ভগবান দাসের ছেলে রাজা মানসিংহ আকবরের বিশাল সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি ছিলেন। রাজা টোডরমল ছিলেন আকবরের অর্থমন্ত্রী। আরেক রাজপুত বীরবল ছিলেন আকবরের সবচেয়ে কাছের বন্ধু ও প্রিয়পাত্র। বেশিরভাগ রাজপুত রাজ্য যখন আকবরের অধীনে চলে আসছে, তখন একমাত্র মেওয়ারের রাজপুত রাজা মহারানা উদয় সিংহ মুঘলদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। চিতোরের পতনের পর তিনি উদয়পুর পালিয়ে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে রাজপুতদের একত্রিত করতে চেষ্টা করেন। তার পুত্র মহারানা প্রতাপ সিংহ সারা জীবন মুঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গেছেন। প্রতাপ আকবরের আনুগত্য মেনে না নিলেও, চিতোর দুর্গে আকবর আক্রমণ করার পর তারা পালিয়ে যায়। পরে আর কখনো রাজ্য স্থাপন করতে পারেননি। রাজপুতদের কখনো একত্রিতও করতে পারেননি। এ ছাড়াও প্রতাপ সিং চিতোর দুর্গ পুনরুদ্ধার করতে পারেননি। মেওয়ারের রাজপুতরাই একমাত্র রাজপুত জাতি যারা রাজ্য হারিয়ে ভিখারি হয়েছে তবুও আকবরের প্রতি আনুগত্য মেনে নেয়নি। বাংলা নববর্ষের প্রবর্তক ১৬শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে মোঘল সম্রাট আকবর বাংলা ক্যালেন্ডার প্রবর্তন করেন। ১৫৫৬-১৬০৯ সাল পর্যন্ত তার শাসনকালে ধর্ম, সংস্কৃতি, দর্শন, সাহিত্যের পাশাপাশি নানা জিনিসে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছিলেন। বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল ছিলেন আকবর। তখনকার দিনে হিজরি সনকে ‘ফসলি সন’ ধরা হলে মুসলিম ব্যতীত অন্য ধর্মাবলম্বীরা অনীহা প্রকাশ করেন। এ কারণে সব ধর্মের লোকের ব্যবহার উপযোগী সাল গণনায় বর্তমান বাংলা সন বঙ্গাব্দের জন্ম হয়। সম্রাট আকবরের নির্দেশে এবং বিজ্ঞ রাজ জ্যোতিষী ও পণ্ডিত আমির ফতেহ উল্লাহ সিরাজীর গবেষণার ফলে বাংলা সনের উৎপত্তি হয়। ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন অব্দের উদ্ভব হয়। সম্রাট আকবরের হাতে সূচনা হয় নতুন বাংলা ক্যালেন্ডারের! একইভাবে তিনি সর্বধর্মের সমন্বয় করে দ্বীন-ই-ইলাহীর প্রবর্তন করেন। জানা গেছে, আকবরের তৈরি এই ক্যালেন্ডারটির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘তারিখ-ই-ইলাহী’ বা ভগবানের বর্ষপঞ্জি। এটি সম্ভবত ১৫৮৪ সাল নাগাদ চালু হয়েছিল। ইতিহাসবিদরা বলেন, আকবর বাধ্য হয়েই বাংলা বর্ষপঞ্জি তৈরিতে উদ্যোগী হন। না হলে রাজস্ব আদায়ে নানা ক্ষতির স্বীকার হতে হচ্ছিল সম্রাটকে। কারণ মোঘলরা ইসলামিক হিজরি ক্যালেন্ডার ব্যবহার করত যার সঙ্গে বাংলার ঋতু পরিবর্তনের কোনো মিল ছিল না। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই সম্রাট আকবর বর্ষপঞ্জি তৈরিতে উদ্যোগী হন। যোধাবাঈ আসলে কে? ভারত উপমহাদেশের রহস্যময় ঐতিহাসিক চরিত্রগুলোর অন্যতম হচ্ছেন যোধাবাঈ। প্রচলিত আছে, যোধাকে বিয়ে করার মধ্য দিয়ে মোগল এবং রাজপুতদের মধ্যে একরকম সম্পর্ক স্থাপন হয়েছিল। বলিউড চলচ্চিত্র যোধা-আকবর মুক্তি পাওয়ার পর সাধারণ মানুষের মনে এই চরিত্রটি আরও স্পষ্টভাবে জায়গা করে নেয়। কিন্তু এই নামে কোনো নারী আদৌ ছিলেন কি না সে বিষয় নিয়ে পক্ষে- বিপক্ষে বিভিন্ন মত রয়েছে। তবে ঐতিহাসিক বইপত্র থেকে জানা যায়, যোধাবাঈ নামে ইতিহাসে কোনো চরিত্র ছিল না। আবার রাজস্থানের প্রামাণ্য ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে লেখা বইয়ে তার উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। এই তথ্যগত দ্বন্দ্বের কারণে যোধাবাঈ নামে আসলেই কেউ ছিলেন কি ছিলেন না, সাধারণ মানুষের পক্ষে তা বোঝা কঠিন। ঐতিহাসিক মত যাই থাক না কেন, ভারতীয় উপমহাদেশে যোধাবাঈ-এর নামে ছড়িয়ে থাকা কিংবদন্তিগুলোই সম্ভবত তাকে অমর করে রেখেছে। সম্রাট আকবরের সময়কাল, শাসনব্যবস্থা এবং জীবনী নিয়ে ফার্সি ভাষার তিনটি গ্রন্থের (আকবরনামা, মুতাখাবাত তাওয়ারিখ, তবকাত-ই-আকবরি) কোথাও যোধাবাঈ-এর নাম উল্লেখ নেই। আবুল ফজলের তিন খণ্ডে রচিত আকবরনামায় উল্লেখ আছে আকবর রাজপুতের মরিয়ম জামানী উপাধির রাজকুমারীকে বিয়ে করেছিলেন। এই মরিয়ম জামানীর গর্ভে জন্ম নিয়েছিলেন এক রাজকুমার, যার নাম সেলিম। যিনি সম্রাট জাহাঙ্গীর ছিলেন। কিন্তু যোধা নামটি কোথাও উল্লেখ নেই
0 votes
by
পৃথিবীর ইতিহাসে মহান শাসকদের অন্যতম আকবর দি গ্রেট। মুঘল সম্রাটদের সেরা সম্রাটের পুরো নাম জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর। নিজের শাসনব্যবস্থার মাধ্যমে সম্রাট আকবর ইতিহাসকে যতটা প্রভাবিত করতে পেরেছিলেন, ততটা খুব কম ভারতীয় শাসকই করতে পেরেছিলেন। তাকে ভারতবর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে ধরা হয়। তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট ছিলেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে আকবর ভারতের শাসনভার গ্রহণ করেন। আজকের রকমারি আয়োজনে থাকছে আকবর দি গ্রেট সম্পর্কে বিস্তারিত। জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবরকে ভারতবর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে ধরা হয়। তাকে বলা হয় আকবর দি গ্রেট। পৃথিবীর ইতিহাসে মহান শাসকদের অন্যতম হওয়ায় তিনি ‘মহামতি আকবর’ নামেও পরিচিত। মুঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় এই সম্রাট বাবা সম্রাট হুমায়ুনের মৃত্যুর পর ১৫৫৬ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে ভারতের শাসনভার গ্রহণ করেন। তিনি ১৫৪২ সালের ২৩ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তখন বৈরাম খার তত্ত্বাবধানে সম্রাট আকবর সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্রাজ্য বিস্তার করতে থাকেন। ১৫৬০ সালে বৈরাম খাকে সরিয়ে আকবর নিজে সব ক্ষমতা দখল করেন। আকবর ভারতবর্ষ ও আফগানিস্তানে তার সাম্রাজ্য বিস্তার চালিয়ে যান। ১৬০৫ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় সমস্ত উত্তর ভারত তার সাম্রাজ্যের অধীনে চলে আসে। আকবরের মৃত্যুর পর ছেলে সম্রাট জাহাঙ্গীর ভারতবর্ষের শাসনভার গ্রহণ করেন। সম্রাট আকবর শাসনব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য প্রথমত দুইভাগে ভাগ করেছিলেন। ১. কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা, ২. প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা। কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থার প্রধান ছিলেন স্বয়ং আকবর। অর্থনৈতিক বিভাগ, সমর বিভাগ, বেতন ও হিসাব বিভাগ, বিচার বিভাগ, ডাক বিভাগ, গোয়েন্দা বিভাগসহ কেন্দ্রের অধীনস্থ বিভিন্ন মন্ত্রীদের দায়িত্বেও ছিল বিভিন্ন বিভাগ। বিশাল সাম্রাজ্যকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করার জন্য মোট পনেরটি প্রদেশে বিভক্ত করা হয়। প্রতিটি প্রদেশে একজন প্রধান শাসনকর্তা নিযুক্ত হতো। এমন সুপরিকল্পিতভাবে রাজ্য ব্যবস্থাকে পরিচালনা করায় নিজের দূরদর্শিতার প্রমাণ রেখেছেন। মানতেন কঠোর অনুশাসন সম্রাট আকবর শৌর্য-বীর্যে বা অসীম সাহসী একজন শাসক ছিলেন। তবে এগুলোর পেছনে গুরুত্ব দেওয়া হয় তার কঠোর অনুশাসন ও নিয়ম মান্য করার বিষয়টি। দিনে ঘুমাতেন মাত্র সারে চার ঘণ্টা। রাতে তিন ঘণ্টা ও দুপুরে দেড় ঘণ্টা ঘুমানোকে আকবর মনে করতেন মূল্যবান। সংক্ষিপ্ত এই জীবনকে বেশি ঘুমিয়ে নষ্ট করার পক্ষে ছিলেন না তিনি। মধ্য বয়সে এসে শাকাহারি হয়ে যান আকবর। মাছ-মাংস খাওয়া ছেড়ে দেন, পছন্দ করতেন হাঁটতে। মথুরার শিকার ভূমি থেকে একবার বিশাল লোকলস্কর নিয়ে পায়ে হেঁটে আগ্রা রওনা দিয়েছিলেন তিনি। যাত্রাপথ ছিল প্রায় ষাট কিলোমিটারের মতো। এতটাই দ্রুত হেঁটেছিলেন যে, শেষ পর্যন্ত তার সঙ্গে মাত্র দুজন লোক তাল মিলিয়ে চলতে পেরেছিল! চমৎকার স্থাপত্যশৈলী জ্ঞান আকবরের শাসনামলে গড়ে ওঠা স্থাপত্যগুলো তার স্থাপত্যশৈলী জ্ঞানের পরিচয় দেয়। তখনকার রাজধানী ফতেহপুর সিক্রি ১৯৮৬ সালে পৃথিবীর দর্শনীয় স্থানগুলোর তালিকায় জায়গা পায়। অনেকেই বলেন আকবরের স্থাপত্যের মাঝে কিছুটা নিজ ধর্মের প্রতি বেশিমাত্রায় টান প্রকাশ পায় কিন্তু হিন্দু কিংবা মুসলমান, দুই ধর্মের নিকট হতেই এই স্থাপত্যগুলোর উপাদান সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়াও বুলন্দ দরওয়াজা এবং জামে মসজিদের নির্মাণশৈলী করেছে ইতিহাসকে মুখ্য। শিকারি আকবর শিকার করতে সম্রাট আকবর খুব পছন্দ করতেন। শিকারে যাওয়ার সময় খুবই অল্প লোক রাখতেন। কখনো কখনো একা একাই শিকারে চলে যেতেন। কথিত আছে, ১৯ বছর বয়সে আকবর একটি সিংহি শিকার করেছিলেন শুধু একটি তলোয়ারের সাহায্যে। বাঘ, সিংহ, চিতা, বন্য বাইসন, এমনকি হাতিও শিকার করতেন আকবর। এসব শিকার করতে গিয়ে একবার মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি। তবে কিছুটা অলৌকিকভাবেই সেরে ওঠেন তিনি। নিরক্ষর আকবর সমগ্র ভারতবর্ষের একচ্ছত্র অধিপতি আকবর দি গ্রেট। অথচ এই মানুষটি ছিলেন নিরক্ষর। লিখতে পড়তে জানতেন না। তবে অসম্ভব তীক্ষè স্মৃতিশক্তি ছিল তার। একবার যা দেখতেন বা শুনতেন, তাই মনে রাখতে পারতেন। ছোটবেলায় সমগ্র শাসনের ভার চলে আসার চাপে কখনো পড়াশোনা করার সুযোগ হয়নি আকবরের। কেউ কেউ বলেন আকবরের ডাইস্লেক্সিয়া নামক একটি রোগ ছিল। এই কারণে পড়তে গেলে কখনোই তিনি অক্ষরগুলো ঠাহর করতে পারতেন না, যে কারণে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি তার। তবে নিজে পড়াশোনা না করলেও আকবর শিক্ষিত ও জ্ঞানী-গুণীদের বেশ সমাদর করতেন। তার সভাকে অলঙ্কৃত করেছিলেন ইতিহাস বিখ্যাত নবরত্ন। সব দিক ছিল সমান গুরুত্ব নিজের খেয়াল বা হারেমের নারী, সব দিকেই আকবরের ছিল সমান গুরুত্ব। রাজ্য শাসন করার সময় তার বেশ কিছু সিদ্ধান্ত মানুষের উপকারে এসেছে। জিজিয়া কর সরিয়ে দেওয়া, হিন্দু ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করা, হজ্বের সময় যাতে মুসলমানদের কষ্ট কম হয়, সে জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। দ্বীন-ই-ইলাহী প্রবর্তন ইতিহাসের পাতায় তিনি আকবর দি গ্রেট হলেও তার কিছু কাজকর্ম জনমনে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। এর মধ্যে নিজের মতাদর্শে দ্বীন-ই-ইলাহী ধর্মের প্রবর্তন অন্যতম। আকবরের প্রাথমিক ধর্মবিশ্বাস ছিল ইসলাম। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজসহ ধর্মীয় সব আচার মেনে চলতেন। কিন্তু হঠাৎই তিনি অনুভব করলেন বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মাঝে ভেদাভেদ রাজ্যের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। তাই ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক করতে ১৫৮২ সালে প্রবর্তন করেন দ্বীন-ই-ইলাহী। এর মূল ভিত্তি ছিল ইসলাম, হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্মসহ অন্যান্য ধর্মের এক মিশ্র রীতিনীতি। তবে এই ধর্মমত কোনো ধর্মের অনুসারীই সহজে মানতে পারেনি, এমনকি ক্ষোভও তৈরি হয় তাদের মাঝে। আকবরের রাজসভার নবরত্ন মোঘল আমলের রত্ন তৃতীয় সম্রাট আকবরের ইতিহাস এখনো উজ্জ্বল। তার সভায় তিনি ছাড়াও ছিলেন আরও নয়জন রত্ন যাদের একসঙ্গে বলা হয় আকবরের রাজসভার ‘নবরত্ন’। স্ব-স্ব ক্ষেত্রে তারা ছিলেন শ্রেষ্ঠ। নবররত্নের একজন প্রধানমন্ত্রী আবুল ফজল। তার লেখনীতে আকবর আমলের রীতিনীতি ও খোদ আকবরের জীবনকে আমরা দেখতে পাই। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন আবদুর রহিম খান। তিনি শুধু আকবরের রাজসভা উজ্জ্বল করা নয়, একাধারে ছিলেন কবি, গায়ক, গীতিকার এবং জ্যোতিষশাস্ত্রী। তার জ্যোতিষশাস্ত্রের পারদর্শিতা রাজা-মন্ত্রীকে আশ্বস্ত রাখত। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বীরবল ছিলেন তীক্ষ্ণ বুদ্ধির। তিনি এতটায় প্রত্যুৎপন্নমতি ছিলেন যে, ভারতীয় উপমহাদেশে নামটি খুব শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হয়। এদিকে একজন সফল অনুবাদক ও শিক্ষক হিসেবে পরিচিত ছিলেন নবররত্নের অপর একজন শিক্ষামন্ত্রী ফইজি। পঞ্চতন্ত্র, রামায়ণ ও মহাভারত গ্রন্থগুলো ফার্সিতে অনূদিত করেন তিনিই। সম্রাট আকবরের পরামর্শদাতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ফকির আজিউদ্দিন। সেনাপতি মানসিংহ ছিলেন আকবরের বিশ্বস্ত বন্ধু। বহু যুদ্ধে আকবর তার কাছ থেকে অনেক সাহায্য পেতেন। গৃহমন্ত্রী মোল্লা দো-পিঁয়াজা তো সুস্বাদু খারাব দো-পিয়াজার উদ্ভাবক ছিলেন। সংগীতজ্ঞ তানসেনের গানে বৃষ্টি নামার গল্প আমাদের সবারই মোটামুটি জানা। নবররত্নের আরেকজন অর্থমন্ত্রী টোডরমল ছিলেন তৎকালীন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ। গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন আকবরের সমাধি ৬৩ বছর বয়সে ১৬০৫ সালের ১৫ অক্টোবর সম্রাট আকবরের মৃত্যু হয়। ভারতের উত্তর প্রদেশের আগ্রার শহরতলি সিকান্দ্রাতে সমাধি। বিস্তর জমির ওপর স্থাপিত সমাধিসৌধটি মুঘল স্থাপত্যের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। তখনকার দিনে মোঘল সম্রাটদের জীবদ্দশায় নিজের সমাধিস্থল নির্ধারণ করে যাওয়া ছিল শখের বিষয়। সম্রাট আকবর নিজের সমাধিস্থল হিসেবে পছন্দ করেন সিকান্দ্রাকে। জায়গাটা ছিল জনমানবহীন নির্জন। পাখিদের কলকাকলিতে ছিল সদা মুখর। বেশ নিরিবিলি হওয়ায় জায়গাটা হয়তো সম্রাটের খুব পছন্দ হয়েছিল। জঙ্গল পরিষ্কার করে ১১৯ একর জমিজুড়ে সৌধের নির্মাণকাজ শুরু করেন। কিন্তু কাজ সমাপ্ত হওয়ার আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ১৬১৩ সালে তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করেন পুত্র জাহাঙ্গীর। পিতার পরিকল্পিত নকশা ধরেই নির্মাণ করেন তিনি সুবিশাল এই সৌধ। এর চারদিকে চারটি গেট আছে। প্রতিটি গেটেই রয়েছে অসাধারণ সুন্দর নকশা, যা লাল-নীল বা সোনালি রঙের পাথর দিয়ে তৈরি। গেট থেকে মর্মর পাথরে নির্মিত বড় একটি রাস্তা চলে গেছে সমাধিস্থল বরাবর। দুপাশে বিশাল খালি প্রান্তর। সেখানে বিচরণ করছে বেশ কিছু চিত্রা হরিণ। সামনে একটি স্বচ্ছ পানির ফোয়ারা। চারপাশে বড় বড় বারান্দা বিশিষ্ট সমাধির সৌধটি বিশাল আকৃতির। পুরোটাই শ্বেতপাথর, লালপাথর ও জেডপাথরে তৈরি। মুঘল সম্রাটদের অন্যান্য স্থাপত্যের মতো এর দেয়ালগুলোও সুন্দর কারুকার্য খচিত। রাজপুতদের সঙ্গে কৌশলী সম্পর্ক প্রায় সাড়ে তিন শ বছরের মুঘল ইতিহাসে আকবরই শাসন করেছেন প্রায় ৫৩ বছর। এত বেশি সময় ধরে অন্য কোনো সম্রাট ভারত শাসন করতে পারেননি। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন রাজ্য চালাতে তাকে ভিন্নধর্মী কৌশল অবলম্বন করতে হবে। তিনি অনুধাবন করেছিলেন যে, রাজপুতরা শত্রু হিসেবে প্রবল কিন্তু মিত্র হিসেবে হবেন নির্ভরযোগ্য। আর তাই নিজের শাসনকালে কৌশল হিসেবে রাজপুতদের সঙ্গে সন্ধি করার প্রয়াস করেছিলেন। সে কৌশল ছিল কিছুটা যুদ্ধের দ্বারা এবং অনেকটাই ছিল বিবাহসূত্রের মাধ্যমে। প্রচলিত তথ্য থেকে জানা যায়, অম্বরের রাজা ভর মল্লের মেয়ে যোধাবাঈ-এর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। ভর মল্লের ছেলে রাজা ভগবান দাস আকবরের সভায় নবরতেœর একজন ছিলেন। ভগবান দাসের ছেলে রাজা মানসিংহ আকবরের বিশাল সেনাবাহিনীর প্রধান সেনাপতি ছিলেন। রাজা টোডরমল ছিলেন আকবরের অর্থমন্ত্রী। আরেক রাজপুত বীরবল ছিলেন আকবরের সবচেয়ে কাছের বন্ধু ও প্রিয়পাত্র। বেশিরভাগ রাজপুত রাজ্য যখন আকবরের অধীনে চলে আসছে, তখন একমাত্র মেওয়ারের রাজপুত রাজা মহারানা উদয় সিংহ মুঘলদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। চিতোরের পতনের পর তিনি উদয়পুর পালিয়ে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে রাজপুতদের একত্রিত করতে চেষ্টা করেন। তার পুত্র মহারানা প্রতাপ সিংহ সারা জীবন মুঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গেছেন। প্রতাপ আকবরের আনুগত্য মেনে না নিলেও, চিতোর দুর্গে আকবর আক্রমণ করার।
0 votes
by
মহান শাসকদের অন্যতম আকবর দি গ্রেট। মুঘল সম্রাটদের সেরা সম্রাটের পুরো নাম জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবর। নিজের শাসনব্যবস্থার মাধ্যমে সম্রাট আকবর ইতিহাসকে যতটা প্রভাবিত করতে পেরেছিলেন, ততটা খুব কম ভারতীয় শাসকই করতে পেরেছিলেন। তাকে ভারতবর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে ধরা হয়। তিনি মুঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় সম্রাট ছিলেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে আকবর ভারতের শাসনভার গ্রহণ করেন। আজকের রকমারি আয়োজনে থাকছে আকবর দি গ্রেট সম্পর্কে বিস্তারিত। জালাল উদ্দিন মোহাম্মদ আকবরকে ভারতবর্ষের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে ধরা হয়। তাকে বলা হয় আকবর দি গ্রেট। পৃথিবীর ইতিহাসে মহান শাসকদের অন্যতম হওয়ায় তিনি ‘মহামতি আকবর’ নামেও পরিচিত। মুঘল সাম্রাজ্যের তৃতীয় এই সম্রাট বাবা সম্রাট হুমায়ুনের মৃত্যুর পর ১৫৫৬ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে ভারতের শাসনভার গ্রহণ করেন। তিনি ১৫৪২ সালের ২৩ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তখন বৈরাম খার তত্ত্বাবধানে সম্রাট আকবর সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় সাম্রাজ্য বিস্তার করতে থাকেন। ১৫৬০ সালে বৈরাম খাকে সরিয়ে আকবর নিজে সব ক্ষমতা দখল করেন। আকবর ভারতবর্ষ ও আফগানিস্তানে তার সাম্রাজ্য বিস্তার চালিয়ে যান। ১৬০৫ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত প্রায় সমস্ত উত্তর ভারত তার সাম্রাজ্যের অধীনে চলে আসে। আকবরের মৃত্যুর পর ছেলে সম্রাট জাহাঙ্গীর ভারতবর্ষের শাসনভার গ্রহণ করেন। সম্রাট আকবর শাসনব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য প্রথমত দুইভাগে ভাগ করেছিলেন। ১. কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা, ২. প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা। কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থার প্রধান ছিলেন স্বয়ং আকবর। অর্থনৈতিক বিভাগ, সমর বিভাগ, বেতন ও হিসাব বিভাগ, বিচার বিভাগ, ডাক বিভাগ, গোয়েন্দা বিভাগসহ কেন্দ্রের অধীনস্থ বিভিন্ন মন্ত্রীদের দায়িত্বেও ছিল বিভিন্ন বিভাগ। বিশাল সাম্রাজ্যকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করার জন্য মোট পনেরটি প্রদেশে বিভক্ত করা হয়। প্রতিটি প্রদেশে একজন প্রধান শাসনকর্তা নিযুক্ত হতো। এমন সুপরিকল্পিতভাবে রাজ্য ব্যবস্থাকে পরিচালনা করায় নিজের দূরদর্শিতার প্রমাণ রেখেছেন। মানতেন কঠোর অনুশাসন সম্রাট আকবর শৌর্য-বীর্যে বা অসীম সাহসী একজন শাসক ছিলেন। তবে এগুলোর পেছনে গুরুত্ব দেওয়া হয় তার কঠোর অনুশাসন ও নিয়ম মান্য করার বিষয়টি। দিনে ঘুমাতেন মাত্র সারে চার ঘণ্টা। রাতে তিন ঘণ্টা ও দুপুরে দেড় ঘণ্টা ঘুমানোকে আকবর মনে করতেন মূল্যবান। সংক্ষিপ্ত এই জীবনকে বেশি ঘুমিয়ে নষ্ট করার পক্ষে ছিলেন না তিনি। মধ্য বয়সে এসে শাকাহারি হয়ে যান আকবর। মাছ-মাংস খাওয়া ছেড়ে দেন, পছন্দ করতেন হাঁটতে। মথুরার শিকার ভূমি থেকে একবার বিশাল লোকলস্কর নিয়ে পায়ে হেঁটে আগ্রা রওনা দিয়েছিলেন তিনি। যাত্রাপথ ছিল প্রায় ষাট কিলোমিটারের মতো। এতটাই দ্রুত হেঁটেছিলেন যে, শেষ পর্যন্ত তার সঙ্গে মাত্র দুজন লোক তাল মিলিয়ে চলতে পেরেছিল! চমৎকার স্থাপত্যশৈলী জ্ঞান আকবরের শাসনামলে গড়ে ওঠা স্থাপত্যগুলো তার স্থাপত্যশৈলী জ্ঞানের পরিচয় দেয়। তখনকার রাজধানী ফতেহপুর সিক্রি ১৯৮৬ সালে পৃথিবীর দর্শনীয় স্থানগুলোর তালিকায় জায়গা পায়। অনেকেই বলেন আকবরের স্থাপত্যের মাঝে কিছুটা নিজ ধর্মের প্রতি বেশিমাত্রায় টান প্রকাশ পায় কিন্তু হিন্দু কিংবা মুসলমান, দুই ধর্মের নিকট হতেই এই স্থাপত্যগুলোর উপাদান সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়াও বুলন্দ দরওয়াজা এবং জামে মসজিদের নির্মাণশৈলী করেছে ইতিহাসকে মুখ্য। শিকারি আকবর শিকার করতে সম্রাট আকবর খুব পছন্দ করতেন। শিকারে যাওয়ার সময় খুবই অল্প লোক রাখতেন। কখনো কখনো একা একাই শিকারে চলে যেতেন। কথিত আছে, ১৯ বছর বয়সে আকবর একটি সিংহি শিকার করেছিলেন শুধু একটি তলোয়ারের সাহায্যে। বাঘ, সিংহ, চিতা, বন্য বাইসন, এমনকি হাতিও শিকার করতেন আকবর। এসব শিকার করতে গিয়ে একবার মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি। তবে কিছুটা অলৌকিকভাবেই সেরে ওঠেন তিনি। নিরক্ষর আকবর সমগ্র ভারতবর্ষের একচ্ছত্র অধিপতি আকবর দি গ্রেট। অথচ এই মানুষটি ছিলেন নিরক্ষর। লিখতে পড়তে জানতেন না। তবে অসম্ভব তীক্ষè স্মৃতিশক্তি ছিল তার। একবার যা দেখতেন বা শুনতেন, তাই মনে রাখতে পারতেন। ছোটবেলায় সমগ্র শাসনের ভার চলে আসার চাপে কখনো পড়াশোনা করার সুযোগ হয়নি আকবরের। কেউ কেউ বলেন আকবরের ডাইস্লেক্সিয়া নামক একটি রোগ ছিল। এই কারণে পড়তে গেলে কখনোই তিনি অক্ষরগুলো ঠাহর করতে পারতেন না, যে কারণে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি তার। তবে নিজে পড়াশোনা না করলেও আকবর শিক্ষিত ও জ্ঞানী-গুণীদের বেশ সমাদর করতেন। তার সভাকে অলঙ্কৃত করেছিলেন ইতিহাস বিখ্যাত নবরত্ন। সব দিক ছিল সমান গুরুত্ব নিজের খেয়াল বা হারেমের নারী, সব দিকেই আকবরের ছিল সমান গুরুত্ব। রাজ্য শাসন করার সময় তার বেশ কিছু সিদ্ধান্ত মানুষের উপকারে এসেছে। জিজিয়া কর সরিয়ে দেওয়া, হিন্দু ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতা করা, হজ্বের সময় যাতে মুসলমানদের কষ্ট কম হয়, সে জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। দ্বীন-ই-ইলাহী প্রবর্তন ইতিহাসের পাতায় তিনি আকবর দি গ্রেট হলেও তার কিছু কাজকর্ম জনমনে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। এর মধ্যে নিজের মতাদর্শে দ্বীন-ই-ইলাহী ধর্মের প্রবর্তন অন্যতম। আকবরের প্রাথমিক ধর্মবিশ্বাস ছিল ইসলাম। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজসহ ধর্মীয় সব আচার মেনে চলতেন। কিন্তু হঠাৎই তিনি অনুভব করলেন বিভিন্ন ধর্মের মানুষের মাঝে ভেদাভেদ রাজ্যের জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। তাই ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক করতে ১৫৮২ সালে প্রবর্তন করেন দ্বীন-ই-ইলাহী। এর মূল ভিত্তি ছিল ইসলাম, হিন্দুধর্ম, বৌদ্ধধর্মসহ অন্যান্য ধর্মের এক মিশ্র রীতিনীতি। তবে এই ধর্মমত কোনো ধর্মের অনুসারীই সহজে মানতে পারেনি, এমনকি ক্ষোভও তৈরি হয় তাদের মাঝে। আকবরের রাজসভার নবরত্ন মোঘল আমলের রত্ন তৃতীয় সম্রাট আকবরের ইতিহাস এখনো উজ্জ্বল। তার সভায় তিনি ছাড়াও ছিলেন আরও নয়জন রত্ন যাদের একসঙ্গে বলা হয় আকবরের রাজসভার ‘নবরত্ন’। স্ব-স্ব ক্ষেত্রে তারা ছিলেন শ্রেষ্ঠ। নবররত্নের একজন প্রধানমন্ত্রী আবুল ফজল। তার লেখনীতে আকবর আমলের রীতিনীতি ও খোদ আকবরের জীবনকে আমরা দেখতে পাই। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন আবদুর রহিম খান। তিনি শুধু আকবরের রাজসভা উজ্জ্বল করা নয়, একাধারে ছিলেন কবি, গায়ক, গীতিকার এবং জ্যোতিষশাস্ত্রী। তার জ্যোতিষশাস্ত্রের পারদর্শিতা রাজা-মন্ত্রীকে আশ্বস্ত রাখত। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বীরবল ছিলেন তীক্ষ্ণ বুদ্ধির। তিনি এতটায় প্রত্যুৎপন্নমতি ছিলেন যে, ভারতীয় উপমহাদেশে নামটি খুব শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারিত হয়। এদিকে একজন সফল অনুবাদক ও শিক্ষক হিসেবে পরিচিত ছিলেন নবররত্নের অপর একজন শিক্ষামন্ত্রী ফইজি। পঞ্চতন্ত্র, রামায়ণ ও মহাভারত গ্রন্থগুলো ফার্সিতে অনূদিত করেন তিনিই। সম্রাট আকবরের পরামর্শদাতাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ফকির আজিউদ্দিন। সেনাপতি মানসিংহ ছিলেন আকবরের বিশ্বস্ত বন্ধু। বহু যুদ্ধে আকবর তার কাছ থেকে অনেক সাহায্য পেতেন। গৃহমন্ত্রী মোল্লা দো-পিঁয়াজা তো সুস্বাদু খারাব দো-পিয়াজার উদ্ভাবক ছিলেন। সংগীতজ্ঞ তানসেনের গানে বৃষ্টি নামার গল্প আমাদের সবারই মোটামুটি জানা। নবররত্নের আরেকজন অর্থমন্ত্রী টোডরমল ছিলেন তৎকালীন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ। গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন আকবরের সমাধি ৬৩ বছর বয়সে ১৬০৫ সালের ১৫ অক্টোবর সম্রাট আকবরের মৃত্যু হয়। ভারতের উত্তর প্রদেশের আগ্রার শহরতলি সিকান্দ্রাতে সমাধি। বিস্তর জমির ওপর স্থাপিত সমাধিসৌধটি মুঘল স্থাপত্যের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। তখনকার দিনে মোঘল সম্রাটদের জীবদ্দশায় নিজের সমাধিস্থল নির্ধারণ করে যাওয়া ছিল শখের বিষয়। সম্রাট আকবর নিজের সমাধিস্থল হিসেবে পছন্দ করেন সিকান্দ্রাকে। জায়গাটা ছিল জনমানবহীন নির্জন। পাখিদের কলকাকলিতে ছিল সদা মুখর। বেশ নিরিবিলি হওয়ায় জায়গাটা হয়তো সম্রাটের খুব পছন্দ হয়েছিল। জঙ্গল পরিষ্কার করে ১১৯ একর জমিজুড়ে সৌধের নির্মাণকাজ শুরু করেন। কিন্তু কাজ সমাপ্ত হওয়ার আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ১৬১৩ সালে তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করেন পুত্র জাহাঙ্গীর। পিতার পরিকল্পিত নকশা ধরেই নির্মাণ করেন তিনি সুবিশাল এই সৌধ। এর চারদিকে চারটি গেট আছে। প্রতিটি গেটেই রয়েছে অসাধারণ সুন্দর নকশা, যা লাল-নীল বা সোনালি রঙের পাথর দিয়ে তৈরি। গেট থেকে মর্মর পাথরে নির্মিত বড় একটি রাস্তা চলে গেছে সমাধিস্থল বরাবর। দুপাশে বিশাল খালি প্রান্তর। সেখানে বিচরণ করছে বেশ কিছু চিত্রা হরিণ। সামনে একটি স্বচ্ছ পানির ফোয়ারা। চারপাশে বড় বড় বারান্দা বিশিষ্ট সমাধির সৌধটি বিশাল আকৃতির। পুরোটাই শ্বেতপাথর, লালপাথর ও জেডপাথরে তৈরি। মুঘল সম্রাটদের অন্যান্য স্থাপত্যের মতো এর দেয়ালগুলোও সুন্দর কারুকার্য খচিত। রাজপুতদের সঙ্গে কৌশলী সম্পর্ক প্রায় সাড়ে তিন শ বছরের মুঘল ইতিহাসে আকবরই শাসন করেছেন প্রায় ৫৩ বছর। এত বেশি সময় ধরে অন্য কোনো সম্রাট ভারত শাসন করতে পারেননি। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন রাজ্য চালাতে তাকে ভিন্নধর্মী কৌশল অবলম্বন করতে হবে

Related questions

উত্তর সন্ধানী! বেস্ট বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর ওয়েবসাইট। প্রশ্ন করুন, উত্তর নিন, সমস্যা সমাধান করুন ।
উত্তর সন্ধানী কি?
উত্তর সন্ধানী বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর এর ওয়েবসাইট।
গোপন প্রশ্ন ও উত্তর। ডিজিটাল শিক্ষায় প্রশ্নের উত্তরের সেরা ওয়েবসাইট।
...