in ইতিহাস ও নিদর্শন by
শাহ সুজা কি ছিলেন?

3 Answers

0 votes
by
 
Best answer
শাহ সুজা ও পরীবানু : জামাল উদ্দিন বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই ২০১৫ চট্টগ্রাম তথা কক্সবাজারের আঞ্চলিক ইতিহাস, ঐতিহ্য ও লোকসংস্কৃতির সাথে রয়েছে বাংলার নবাব শাহ সুজার আরাকান গমন এবং আরাকান রাজার হাতে সুজা পরিবারের করুণ ঘটনার এক সুদূরপ্রসারী প্রভাব। এককালে চট্টগ্রাম ও আরাকানের পল্লীগীতি, বারমাইস্যা, গ্রামীণ হঁলা ইত্যাদিতে চোখের জলে বুক ভাসিয়ে গাওয়া হতো সুজাতনয়ার বিলাপ, পরীবানুর হঁলা ইত্যাদি। আরাকান গমন শুধু একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা নয়, আমাদের লুপ্ত ইতিহাসের আলোক মশাল হিসেবেও এ ঘটনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও চট্টগ্রাম তথা কক্সবাজার এমনকি আরাকানের বিভিন্ন মুসলিম এলাকায় অনেক পরিবার নিজেদের শাহ সুজার সফরসঙ্গীর বংশধর বলে দাবি করে থাকেন। যে কারণে কক্সবাজার ও আরাকানের ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে শাহ সুজার ও তাঁর স্ত্রী পরীবানুর অনেক স্মৃতি। ১৬৬০ সালে বাংলার সুবেদার শাহ সুজা আপন ভাই আওরঙ্গজেবের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বিশাল সেনাবাহিনীসহ আশ্রয় নেন পার্শ্ববর্তী দেশ আরাকানের বন্দর শহর চট্টগ্রামে। শাহ সুজার চট্টগ্রাম গমন ও চট্টগ্রাম থেকে আরাকানের রাজধানী ম্রোহং-এ গিয়ে নির্মমভাবে নিহত হওয়া, অপরদিকে তাঁর বিশাল মোগলবাহিনীর রামুতে দুর্গ স্থাপন, রামু থেকে আলীকদমে গমন অতঃপর তাদের ভাগ্যের বিপর্যয় এবং বার্মা থেকে বিতাড়িত উপজাতীয় চাকমাদের সাথে সমাজবদ্ধ হওয়ার পেছনে রয়েছে অনেক ইতিহাস। ঐতিহাসিক ড. আবদুল করিম কক্সবাজারের ইতিহাস গ্রন্থে শাহজাদা সুজা প্রসঙ্গে বলেছেন, সুজা ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দের ৩ জুন দেয়াঙে পৌঁছেন। অতঃপর ৩০ রমজান ১০ জুন ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে দেয়াঙে রমজানের ঈদের নামাজ আদায় করেন। কক্সবাজার সীমান্তে থাকতেই কুরবানির ঈদ এসে যায়। ১৬৬০ সালের ১৭ আগস্ট ছিল ১০ জিলহজ (কুরবানির ঈদ)। ২৬ আগস্ট তারিখে আরাকানের রাজধানীতে পৌঁছার পূর্বে ১৭ আগস্ট তারিখে কুরবানির ঈদের নামাজ কক্সবাজারে পড়া সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। এ কারণে চকরিয়ার দুটি স্থানের নামকরণ ঈদগড়, ঈদগাহ হয় বলে মন্তব্য করেন। এই সময় সুজার সাথে ছিলেন সেনাপতি ফতে খাঁ, শেরমস্ত খাঁ, গোলাম হোসেন খাঁ, শের জব্বার খাঁ, নুরুল্লা খাঁ, শের দৌলত খাঁসহ ১৮ জন সেনাপতি ও সাড়ে চার হাজার মোগলযোদ্ধা এবং তাঁদের ব্যবহৃত কামানসহ বিপুল পরিমাণ সমরাস্ত্র, যুদ্ধহস্তি, অশ্বারোহী সৈনিক। এছাড়া সাথে ছিল শাহ সুজার অনুগত বিশাল সৈয়দ দল। তাঁদের মধ্যে সৈয়দ আলম বাদহকাশ, সৈয়দ কুলী উজবেগ, বাড়িহার সৈয়দ দল, ১২টি উট বোঝাই ধনরতœ, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা ও নিকট আত্মীয়সহ প্রায় অর্ধলক্ষাধিক অনুগত বাহিনী। এই দুঃসময়ে শাহ সুজার সফরসঙ্গী হয়েছিলেন তাঁরই পীর হাফেজ খান মজলিসসহ ২২ জন উচ্চপদস্থ আলেম। পীর হাফেজ খান ছিলেন শাহ সুজা দরবারের অন্যতম সভাসদ। অধিকন্তু তিনি বিচার বিভাগীয় প্রধান বিচারপতি ‘কাজী-উল-কুযাত’ এর উচ্চতম পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। চট্টগ্রামের স্থানীয় লোকগীতি ‘পরীবানুর হাওলা’য় শাহজাদা সুজা দেয়াঙ থেকে স্থলপথে আরাকান যাওয়ার কথা উচ্চারিত হয়েছে। রেনেল (জবহবষষ) এর মানচিত্রে আরাকান সড়কের এ অংশ থেকে রামু পর্যন্ত একটি সড়কের চিহ্ন দেখানো হয়েছে, যা বর্তমান চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক হিসেবে চিহ্নিত। এ সড়কের কিছু অংশ পাহাড়ি অঞ্চলের অভ্যন্তরে ভাগ হয়ে অতিক্রম করেছে। বার্মা ইতিহাসবিদ নামে খ্যাত ইংরেজ ঐতিহাসিক ফিয়ারি (চযধুবৎব) এবং স্টুয়ার্ট (ঝঃবধিৎঃ) উভয়ে একমত হন যে, শাহজাদা সুজা, তাঁর পরিবার এবং সহযোদ্ধা মোগলবাহিনী দক্ষিণ চট্টগ্রামে পাহাড়ি দুর্গম পথ অতিক্রম করে নাফ নদীর তীরে উপস্থিত হন। সেখানে সুজা তিনদিন পর্যন্ত বিশ্রাম নেন। রামুর ইতিহাস গ্রন্থের প্রণেতা গবেষক আবুল কাসেম শাহজাদা সুজার সহযোদ্ধা সেনাপতি গোলাম হোসেন খাঁ’র ডায়েরির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ঐ সময় সুজার সাথে বিশাল মোগল সেনাবাহিনী ছিল। দেয়াঙ থেকে দু’দলে বিভক্ত অগ্রগামী সেনাদলের নেতৃত্বে ছিলেন প্রধান সেনাপতি ফতে খাঁ, সেনাপতি শেরমস্ত খাঁ ও ডায়েরির লেখক সেনাপতি গোলাম হোসেন খাঁ। এই অগ্রগামী দল অরণ্যপথে ২২ হাত চওড়া একটি সড়ক নির্মাণ করেন। রামুর ঈদগড়, গর্জনিয়া, বড়বিল, কচ্ছপিয়া হয়ে দুর্গম পাহাড়ি পথে নির্মিত সড়কটির নামই সুজা সড়ক। সড়কটির অস্তিত্ব এখনো আছে। সড়কটি নির্মাণ শেষে সেনাপতিরা রামুর পুরনো ডাকবাংলো এলাকায় আস্তানা স্থাপন করেন এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য সেনাপতি ফতে খাঁ, গোলাম হোসেন খাঁ ও শেরমস্ত খাঁ দরবেশের ছদ্মবেশে গোপনে রামকোটে মগরাজার দরবারে হাজির হন। উদ্দেশ্য মগরাজার শক্তি সামর্থ্য ও পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত হওয়া এবং পশ্চাৎ অনুগামী আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নাফ নদী পার হওয়ার ব্যবস্থা করা। কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে সেনাপতিরা শিকলঘাটের চেকপোস্ট হয়ে বাঁকখালী নদী পার হয়ে মগদের শক্তি-সামর্থ্য দেখে বুঝলেন এই পথে নাফ নদী পার হয়ে আরাকানের রাজধানী রোসাঙ্গ যাওয়া সম্ভব নয়। তাই ডুলাহাজরা ফিরে গিয়ে শাহজাদা সুজাকে সড়কপথেই যাত্রা শুরুর ইঙ্গিত প্রদান করলেন। এ প্রসঙ্গে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ বলেন, শাহজাদা সুজা আরাকানের রাজধানীতে পলায়নকালে সকলকে বিদায়পূর্বক কতিপয় ঘনিষ্ঠজনকে সাথে নিয়ে নাফ নদী পার হয়ে আরাকানের রাজধানী রোসাঙ্গ পৌঁছেন ১৬ আগস্ট ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে। তাতে ধারণা করা যায় যে, শাহজাদা সুজার সহযোদ্ধা বিশাল সেনাবাহিনীর আরাকানের রাজধানীতে প্রবেশের অনুমতি ছিল না। সৈয়দ আলী আহসান তাঁর রচিত ‘পদ্মাবতী’ গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে বলেছেন, শাহ সুজা বাংলা ছেড়ে পলায়নকালে তাঁর সঙ্গে ১৫০০ অশ্বারোহী সৈন্য ছিল। মীর জুমলা যখন অনুসরণ করছিলেন তখন শাহ সুজা ব্রহ্মপুত্র নদ অতিক্রম করে রাঙ্গামাটি পার্বত্য অঞ্চলে প্রবেশ করেন। দুর্ভেদ্য পার্বত্য অঞ্চল অতিক্রম করে মাত্র ৪০ জন অনুচর ও দু’শজন দেহরক্ষী সাথে নিয়ে শাহ সুজা তাঁর স্ত্রী, তিন কন্যা এবং এক পুত্রকে নিয়ে গর্জনিয়া হয়ে আরাকান সীমান্তের ওপারে টোয়াটঙ (ঞধিঁঃধঁহম) গিয়ে পৌঁছেন এবং সেখান থেকে আরাকানের রাজধানী পৌঁছেন। শাহজাদা সুজা রাজধানীতে পৌঁছলে আরাকানের রাজসৈন্যরা তাঁকে অভ্যর্থনা জানায় এবং রাজা ‘চন্দ্রসুধর্ম্মা’ যথাসময়ে শাহ সুজার মক্কা গমনের প্রতিশ্রæতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। শাহজাদা সুজা আরাকানের রাজধানীতে পৌঁছলেও সেনাপতি ফতে খাঁ, শেরমস্ত খাঁ ও গোলাম হোসেন খাঁ, শের জব্বার খাঁ, নুরুল্লা খাঁ, শের দৌলত খাঁ, সৈয়দ আলম বাদহকাশ, সৈয়দ কুলী উজবেগ, বাড়িহার সৈয়দ দল, সাড়ে চার হাজার মোগল সৈনিকসহ বিভিন্ন স্তরের বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী অনিশ্চয়তার মধ্যেও রামুর রাজারকুল, সিপাহিপাড়া ও ফতে খাঁ’র কুল নামক স্থানে দুর্গ স্থাপন করে অপেক্ষায় থাকেন। আরাকানের রাজধানীতে শাহজাদা সুজা ও তাঁর নিকটজনদের প্রতি রাজা চন্দ্রসুধর্ম্মার মহানুভবতা ও সহৃদয়তার কথা অনেক ঐতিহাসিকের গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। কথিত আছে যে, সুজা ও তাঁর নিকটজনদের জন্য মগরাজা একটি সুন্দর দালান বানিয়ে দিয়েছিলেন, সুজা তথায় কিছুকাল শান্তিতে পরিবার পরিজনসহ বসবাস করেন। শাহ সুজা যখন আরাকানে আশ্রয় নিয়েছেন তখন কবি আলাওল ফারসি কবি নিজামীর হপ্তপয়কর কাব্যের অনুবাদ করেন (১৬৬০ খ্রি.)। উক্ত কাব্যে কবি আরাকানরাজ শ্রী চন্দ্রসুধর্ম্মার গুণ বর্ণনা করে বলেছেন- দিল্লীশ্বর বংশ আসি যাহার শরনে পশি তার সম কাহার মহিমা। এতে ধারণা করা হয় যে, শাহ সুজা আরাকানের রাজধানী গমনের প্রথম ভাগেই কবি এ গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর পরবর্তী জীবনের ঘটনাবলী অস্পষ্টতার ঘনকুয়াশায় আচ্ছন্ন। বিভিন্ন লেখক শাহজাদা সুজার আরাকান আশ্রয়কাল সম্পর্কে বিভিন্ন মত পোষণ করেন। কেউ কেউ বলেন যে, আওরঙ্গজেবের নির্দেশে সেনাপতি মীর জুমলা আরাকানের রাজাকে সুজা এবং তাঁর পরিবারবর্গকে মোগল সম্রাটের হাতে প্রত্যার্পণের প্রতিদানে ১২ হাজার মুদ্রা দেয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। ঠিক ঐ সময়ই আরাকানরাজের বন্ধুত্বপূর্ণ সহায়তায় সুজার মক্কা গমনের প্রায় সমস্ত ব্যবস্থাই সমাধা করা হলেও সুজার সঙ্গে আনীত ১২টি উট বোঝাই ধনরতœ ও মীর জুমলার প্রতিশ্রæত টাকার লোভে পড়ে আরাকানরাজ তাঁর বন্ধুত্বের কথা ভুলে গিয়ে সুজার শত্রুতে পরিণত হলেন। সুজার এ অসহায়ত্বের সুযোগে আরাকানরাজ সুজার কন্যাকে বিবাহ করারও প্রস্তাব দেন। এ প্রস্তাবে সুজা ক্রোধে ফেটে পড়েন। বিশ্বাসঘাতককে সমুচিত শিক্ষা দেয়ার মানসে সুজা মগরাজাকে সিংহাসনচ্যুত করার ষড়যন্ত্রের জাল ফাঁদেন। আরাকান গমনকালে তাঁর সহচর স্বল্প সংখ্যক মোগল সৈন্য এবং আরাকান সেনাবাহিনীতে নিয়োজিত কিছুসংখ্যক মুসলিম সৈনিককে সঙ্গে নিয়ে সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মগরাজাকে অপসারণ করে ক্ষমতা দখলের কল্পনা করেছিলেন। কিন্তু সে চেষ্টা ফলপ্রসূ হয়নি। কারণ তাঁদের পরিকল্পনা ছিল ত্রুটিবহুল। ষড়যন্ত্রের গোপনীয়তা রক্ষা করা যায়নি, তা দ্রুত রাজার কানে গিয়ে পৌঁছে। আরাকানরাজ নির্মম হস্তে এ বিদ্রোহ দমন করতে অগ্রসর হন। আরাকানি সৈন্যরা রক্তপিপাসু ব্যাঘ্রের ন্যায় বিদ্রোহীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ সময় মুসলিম বিদ্রোহীরাও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তারা রাজধানীতে আগুন লাগিয়ে নিকটবর্তী বনে পালিয়ে যায়। পরে অবশ্য রাজার সৈন্যদের হাতে গ্রেপ্তার হয়। অধিকাংশ লোককেই আরাকানি সৈন্যরা নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। যারা রক্ষা পায় তারা পরে আরাকান রাজার দেহরক্ষী সৈন্যরূপে নিযুক্ত হয়। ধনুকের ফারসি নাম ‘কামান’। এ নামে ধনুকধারী মোগল দেহরক্ষীদের ‘কামাঞ্চি’ বলে অভিহিত করা হয়। তবে সুজার ভাগ্যে প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছিল তা কোনো ঐতিহাসিকই সঠিকভাবে বলতে পারেন না। কেউ বলেন, পলায়নকালে সুজা বনেই নিহত হন, কেউ বলেন, জঙ্গল হতে ধরে এনে সুজার শিরñেদ করা হয়। কারো মতে, সুজাকে বস্তাভর্তি করে সাগরে ডুবিয়ে মারা হয়। যা হোক, বিদ্রোহীদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবার পর সুজা সম্পর্কে আর কোনো উল্লেখযোগ্য কথা শোনা যায় না। সশস্ত্র বিদ্রোহ ব্যর্থ হবার পর সুজার পরিজনদের ভাগ্যে কী ঘটেছিল তাও বিতর্কমুক্ত নয়। গবেষক ও ঐতিহাসিকরা এ সম্পর্কে নানা মত পোষণ করেন। আরাকানে প্রচলিত কাব্য ও প্রবাদ ইত্যাদি পাঠে হার্ভে, মি. যান শোয়েবু এবং অন্যান্য ঐতিহাসিকগণ বলেন যে, হতভাগ্য সুজাকন্যাদের অন্তঃপুরে বন্দি করা হয়। ১৬৬৩ খ্রিস্টাব্দে সুজার পুত্রগণ ‘কামাঞ্চি’ এবং অন্যান্য মুসলমানদের সাহায্যে পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেয়ার মনস্থ করেন। কিন্তু এ খবরও অচিরেই রাজার কানে পৌঁছে। ফলে সুজার পুত্র এবং কন্যাগণকে নিষ্ঠুর নির্যাতনের মধ্যে মৃত্যুবরণ করতে হয়। নিহত শাহজাদিদের মধ্যে একজন আসন্নপ্রসবা ছিলেন। অপর একদল ঐতিহাসিক এ মত পোষণ করেন যে, সুজার মৃত্যুর পর বড় দু’শাহজাদি ছুরিকাঘাতে আত্মহত্যা করেন। কনিষ্ঠ শাহজাদিকে বলপূর্বক বিশ্বাসঘাতক রাজা চন্দ্রসুধর্ম্মা অন্দরমহলে নিয়ে যান। কিন্তু সন্তানসম্ভবা শাহজাদিকেও নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। এভাবেই তাজমহল নির্মাতা দিল্লির সম্রাট শাহজাহানের পুত্র নবাব সুজার বংশ আরাকানের রাজধানীতে পৃথিবী থেকে চিরবিদায় গ্রহণ করে। শাহজাদা সুজার সাথে যোগাযোগ থাকার সন্দেহে রোসাঙ্গে বসবাসকারী মুসলমানদের ভাগ্যেও নেমে আসে চরম বিপর্যয়। আরাকানে বহু মুসলমান নিহত ও কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়। আরাকানের মুসলিমের ওপর চলতে থাকে অত্যাচার ও নিপীড়ন। তেমনি নিপীড়িত হয়েছিল রোসাঙ্গ প্রবাসী বাঙালি মুসলিম কবি আলাওল। কবি আলাওল তাঁর ‘সয়ফুল মুলুক বদিউজ্জামাল’ কাব্যের শেষার্ধে এবং ‘দারা-সেকান্দর নামা’য় সুজার বিপর্যয়ের কাহিনী উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, মির্জা নামের এক ব্যক্তি, যে সম্ভবত শাহ সুজার সমর্থকদের মধ্যে ছিল, শাহ সুজার হত্যার পর আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে আলাওলের ওপর অপবাদ দেয়। এ অপবাদের কারণে বিনা বিচারে কবি আলাওল কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন এবং ৫০ দিন কারাগারে কাটান। অবশেষে তিনি কারামুক্ত হন এবং মির্জা শূলবিদ্ধ হয়। শাহ সুজার মৃত্যুর ৯ বছর পরে ১৬৬৯ খ্রিস্টাব্দে কবি তাঁর ‘সয়ফুল মুলুক’ কাব্য রচনা করেন। আরাকানে আশ্রয়ের ৬ মাসের মধ্যে শাহ সুজার নির্মম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হবার পর রামুতে অবস্থানরত বিশাল মোগলবাহিনীর ভাগ্যে কী পরিণতি হয়েছিল এ সম্পর্কে ইতিহাস অস্পষ্ট। ধারণা করা যায় যে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রামুতে অবস্থানরত মোগল সৈন্যদের মধ্যে স্বভাবতই উত্তেজনা দেখা দেয় এবং সেখানকার দুর্গের মগ সৈন্যের সাথেও তাদের মরণপণ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। অবশেষে নিরাপত্তাজনিত কারণে মোগলযোদ্ধারা রামু ত্যাগ করে প্রায় ৬০ কিলোমিটার পূর্বে তৈনছড়ি নদীর তীরে গভীর অরণ্যে গিয়ে পুনরায় দুর্গ স্থাপন করে এবং সেখানেই বসবাসের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ সময় মোগলযোদ্ধাদের সহযাত্রী হয় আরাকান থেকে বিতাড়িত রামুর চাকমারকুলের উদ্বাস্তু চাকমারাও। গভীর অরণ্যে এই জুমিয়া চাকমাদের সহযোগে মোগলযোদ্ধারা গড়ে তোলে এক ভিন্ন প্রকৃতির সমাজ। এই জনপদেই নারীবিহীন মোগলযোদ্ধাদের অনেকেই চাকমা তথা উপজাতীয় রমণীদের সাথে একে একে প্রণয়সূত্রে আবদ্ধ হয়ে শুরু করে সংসার জীবন।
0 votes
by
শাহ সুজা ও পরীবানু : জামাল উদ্দিন বৃহস্পতিবার, ১৬ জুলাই ২০১৫ চট্টগ্রাম তথা কক্সবাজারের আঞ্চলিক ইতিহাস, ঐতিহ্য ও লোকসংস্কৃতির সাথে রয়েছে বাংলার নবাব শাহ সুজার আরাকান গমন এবং আরাকান রাজার হাতে সুজা পরিবারের করুণ ঘটনার এক সুদূরপ্রসারী প্রভাব। এককালে চট্টগ্রাম ও আরাকানের পল্লীগীতি, বারমাইস্যা, গ্রামীণ হঁলা ইত্যাদিতে চোখের জলে বুক ভাসিয়ে গাওয়া হতো সুজাতনয়ার বিলাপ, পরীবানুর হঁলা ইত্যাদি। আরাকান গমন শুধু একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা নয়, আমাদের লুপ্ত ইতিহাসের আলোক মশাল হিসেবেও এ ঘটনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও চট্টগ্রাম তথা কক্সবাজার এমনকি আরাকানের বিভিন্ন মুসলিম এলাকায় অনেক পরিবার নিজেদের শাহ সুজার সফরসঙ্গীর বংশধর বলে দাবি করে থাকেন। যে কারণে কক্সবাজার ও আরাকানের ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে শাহ সুজার ও তাঁর স্ত্রী পরীবানুর অনেক স্মৃতি। ১৬৬০ সালে বাংলার সুবেদার শাহ সুজা আপন ভাই আওরঙ্গজেবের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বিশাল সেনাবাহিনীসহ আশ্রয় নেন পার্শ্ববর্তী দেশ আরাকানের বন্দর শহর চট্টগ্রামে। শাহ সুজার চট্টগ্রাম গমন ও চট্টগ্রাম থেকে আরাকানের রাজধানী ম্রোহং-এ গিয়ে নির্মমভাবে নিহত হওয়া, অপরদিকে তাঁর বিশাল মোগলবাহিনীর রামুতে দুর্গ স্থাপন, রামু থেকে আলীকদমে গমন অতঃপর তাদের ভাগ্যের বিপর্যয় এবং বার্মা থেকে বিতাড়িত উপজাতীয় চাকমাদের সাথে সমাজবদ্ধ হওয়ার পেছনে রয়েছে অনেক ইতিহাস। ঐতিহাসিক ড. আবদুল করিম কক্সবাজারের ইতিহাস গ্রন্থে শাহজাদা সুজা প্রসঙ্গে বলেছেন, সুজা ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দের ৩ জুন দেয়াঙে পৌঁছেন। অতঃপর ৩০ রমজান ১০ জুন ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে দেয়াঙে রমজানের ঈদের নামাজ আদায় করেন। কক্সবাজার সীমান্তে থাকতেই কুরবানির ঈদ এসে যায়। ১৬৬০ সালের ১৭ আগস্ট ছিল ১০ জিলহজ (কুরবানির ঈদ)। ২৬ আগস্ট তারিখে আরাকানের রাজধানীতে পৌঁছার পূর্বে ১৭ আগস্ট তারিখে কুরবানির ঈদের নামাজ কক্সবাজারে পড়া সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। এ কারণে চকরিয়ার দুটি স্থানের নামকরণ ঈদগড়, ঈদগাহ হয় বলে মন্তব্য করেন। এই সময় সুজার সাথে ছিলেন সেনাপতি ফতে খাঁ, শেরমস্ত খাঁ, গোলাম হোসেন খাঁ, শের জব্বার খাঁ, নুরুল্লা খাঁ, শের দৌলত খাঁসহ ১৮ জন সেনাপতি ও সাড়ে চার হাজার মোগলযোদ্ধা এবং তাঁদের ব্যবহৃত কামানসহ বিপুল পরিমাণ সমরাস্ত্র, যুদ্ধহস্তি, অশ্বারোহী সৈনিক। এছাড়া সাথে ছিল শাহ সুজার অনুগত বিশাল সৈয়দ দল। তাঁদের মধ্যে সৈয়দ আলম বাদহকাশ, সৈয়দ কুলী উজবেগ, বাড়িহার সৈয়দ দল, ১২টি উট বোঝাই ধনরতœ, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা ও নিকট আত্মীয়সহ প্রায় অর্ধলক্ষাধিক অনুগত বাহিনী। এই দুঃসময়ে শাহ সুজার সফরসঙ্গী হয়েছিলেন তাঁরই পীর হাফেজ খান মজলিসসহ ২২ জন উচ্চপদস্থ আলেম। পীর হাফেজ খান ছিলেন শাহ সুজা দরবারের অন্যতম সভাসদ। অধিকন্তু তিনি বিচার বিভাগীয় প্রধান বিচারপতি ‘কাজী-উল-কুযাত’ এর উচ্চতম পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। চট্টগ্রামের স্থানীয় লোকগীতি ‘পরীবানুর হাওলা’য় শাহজাদা সুজা দেয়াঙ থেকে স্থলপথে আরাকান যাওয়ার কথা উচ্চারিত হয়েছে। রেনেল (জবহবষষ) এর মানচিত্রে আরাকান সড়কের এ অংশ থেকে রামু পর্যন্ত একটি সড়কের চিহ্ন দেখানো হয়েছে, যা বর্তমান চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক হিসেবে চিহ্নিত। এ সড়কের কিছু অংশ পাহাড়ি অঞ্চলের অভ্যন্তরে ভাগ হয়ে অতিক্রম করেছে। বার্মা ইতিহাসবিদ নামে খ্যাত ইংরেজ ঐতিহাসিক ফিয়ারি (চযধুবৎব) এবং স্টুয়ার্ট (ঝঃবধিৎঃ) উভয়ে একমত হন যে, শাহজাদা সুজা, তাঁর পরিবার এবং সহযোদ্ধা মোগলবাহিনী দক্ষিণ চট্টগ্রামে পাহাড়ি দুর্গম পথ অতিক্রম করে নাফ নদীর তীরে উপস্থিত হন। সেখানে সুজা তিনদিন পর্যন্ত বিশ্রাম নেন। রামুর ইতিহাস গ্রন্থের প্রণেতা গবেষক আবুল কাসেম শাহজাদা সুজার সহযোদ্ধা সেনাপতি গোলাম হোসেন খাঁ’র ডায়েরির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ঐ সময় সুজার সাথে বিশাল মোগল সেনাবাহিনী ছিল। দেয়াঙ থেকে দু’দলে বিভক্ত অগ্রগামী সেনাদলের নেতৃত্বে ছিলেন প্রধান সেনাপতি ফতে খাঁ, সেনাপতি শেরমস্ত খাঁ ও ডায়েরির লেখক সেনাপতি গোলাম হোসেন খাঁ। এই অগ্রগামী দল অরণ্যপথে ২২ হাত চওড়া একটি সড়ক নির্মাণ করেন। রামুর ঈদগড়, গর্জনিয়া, বড়বিল, কচ্ছপিয়া হয়ে দুর্গম পাহাড়ি পথে নির্মিত সড়কটির নামই সুজা সড়ক। সড়কটির অস্তিত্ব এখনো আছে। সড়কটি নির্মাণ শেষে সেনাপতিরা রামুর পুরনো ডাকবাংলো এলাকায় আস্তানা স্থাপন করেন এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য সেনাপতি ফতে খাঁ, গোলাম হোসেন খাঁ ও শেরমস্ত খাঁ দরবেশের ছদ্মবেশে গোপনে রামকোটে মগরাজার দরবারে হাজির হন। উদ্দেশ্য মগরাজার শক্তি সামর্থ্য ও পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত হওয়া এবং পশ্চাৎ অনুগামী আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নাফ নদী পার হওয়ার ব্যবস্থা করা। কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে সেনাপতিরা শিকলঘাটের চেকপোস্ট হয়ে বাঁকখালী নদী পার হয়ে মগদের শক্তি-সামর্থ্য দেখে বুঝলেন এই পথে নাফ নদী পার হয়ে আরাকানের রাজধানী রোসাঙ্গ যাওয়া সম্ভব নয়। তাই ডুলাহাজরা ফিরে গিয়ে শাহজাদা সুজাকে সড়কপথেই যাত্রা শুরুর ইঙ্গিত প্রদান করলেন। এ প্রসঙ্গে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ বলেন, শাহজাদা সুজা আরাকানের রাজধানীতে পলায়নকালে সকলকে বিদায়পূর্বক কতিপয় ঘনিষ্ঠজনকে সাথে নিয়ে নাফ নদী পার হয়ে আরাকানের রাজধানী রোসাঙ্গ পৌঁছেন ১৬ আগস্ট ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে। তাতে ধারণা করা যায় যে, শাহজাদা সুজার সহযোদ্ধা বিশাল সেনাবাহিনীর আরাকানের রাজধানীতে প্রবেশের অনুমতি ছিল না। সৈয়দ আলী আহসান তাঁর রচিত ‘পদ্মাবতী’ গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে বলেছেন, শাহ সুজা বাংলা ছেড়ে পলায়নকালে তাঁর সঙ্গে ১৫০০ অশ্বারোহী সৈন্য ছিল। মীর জুমলা যখন অনুসরণ করছিলেন তখন শাহ সুজা ব্রহ্মপুত্র নদ অতিক্রম করে রাঙ্গামাটি পার্বত্য অঞ্চলে প্রবেশ করেন। দুর্ভেদ্য পার্বত্য অঞ্চল অতিক্রম করে মাত্র ৪০ জন অনুচর ও দু’শজন দেহরক্ষী সাথে নিয়ে শাহ সুজা তাঁর স্ত্রী, তিন কন্যা এবং এক পুত্রকে নিয়ে গর্জনিয়া হয়ে আরাকান সীমান্তের ওপারে টোয়াটঙ (ঞধিঁঃধঁহম) গিয়ে পৌঁছেন এবং সেখান থেকে আরাকানের রাজধানী পৌঁছেন। শাহজাদা সুজা রাজধানীতে পৌঁছলে আরাকানের রাজসৈন্যরা তাঁকে অভ্যর্থনা জানায় এবং রাজা ‘চন্দ্রসুধর্ম্মা’ যথাসময়ে শাহ সুজার মক্কা গমনের প্রতিশ্রæতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। শাহজাদা সুজা আরাকানের রাজধানীতে পৌঁছলেও সেনাপতি ফতে খাঁ, শেরমস্ত খাঁ ও গোলাম হোসেন খাঁ, শের জব্বার খাঁ, নুরুল্লা খাঁ, শের দৌলত খাঁ, সৈয়দ আলম বাদহকাশ, সৈয়দ কুলী উজবেগ, বাড়িহার সৈয়দ দল, সাড়ে চার হাজার মোগল সৈনিকসহ বিভিন্ন স্তরের বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী অনিশ্চয়তার মধ্যেও রামুর রাজারকুল, সিপাহিপাড়া ও ফতে খাঁ’র কুল নামক স্থানে দুর্গ স্থাপন করে অপেক্ষায় থাকেন। আরাকানের রাজধানীতে শাহজাদা সুজা ও তাঁর নিকটজনদের প্রতি রাজা চন্দ্রসুধর্ম্মার মহানুভবতা ও সহৃদয়তার কথা অনেক ঐতিহাসিকের গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। কথিত আছে যে, সুজা ও তাঁর নিকটজনদের জন্য মগরাজা একটি সুন্দর দালান বানিয়ে দিয়েছিলেন, সুজা তথায় কিছুকাল শান্তিতে পরিবার পরিজনসহ বসবাস করেন। শাহ সুজা যখন আরাকানে আশ্রয় নিয়েছেন তখন কবি আলাওল ফারসি কবি নিজামীর হপ্তপয়কর কাব্যের অনুবাদ করেন (১৬৬০ খ্রি.)। উক্ত কাব্যে কবি আরাকানরাজ শ্রী চন্দ্রসুধর্ম্মার গুণ বর্ণনা করে বলেছেন- দিল্লীশ্বর বংশ আসি যাহার শরনে পশি তার সম কাহার মহিমা। এতে ধারণা করা হয় যে, শাহ সুজা আরাকানের রাজধানী গমনের প্রথম ভাগেই কবি এ গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর পরবর্তী জীবনের ঘটনাবলী অস্পষ্টতার ঘনকুয়াশায় আচ্ছন্ন। বিভিন্ন লেখক শাহজাদা সুজার আরাকান আশ্রয়কাল সম্পর্কে বিভিন্ন মত পোষণ করেন। কেউ কেউ বলেন যে, আওরঙ্গজেবের নির্দেশে সেনাপতি মীর জুমলা আরাকানের রাজাকে সুজা এবং তাঁর পরিবারবর্গকে মোগল সম্রাটের হাতে প্রত্যার্পণের প্রতিদানে ১২ হাজার মুদ্রা দেয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। ঠিক ঐ সময়ই আরাকানরাজের বন্ধুত্বপূর্ণ সহায়তায় সুজার মক্কা গমনের প্রায় সমস্ত ব্যবস্থাই সমাধা করা হলেও সুজার সঙ্গে আনীত ১২টি উট বোঝাই ধনরতœ ও মীর জুমলার প্রতিশ্রæত টাকার লোভে পড়ে আরাকানরাজ তাঁর বন্ধুত্বের কথা ভুলে গিয়ে সুজার শত্রুতে পরিণত হলেন। সুজার এ অসহায়ত্বের সুযোগে আরাকানরাজ সুজার কন্যাকে বিবাহ করারও প্রস্তাব দেন। এ প্রস্তাবে সুজা ক্রোধে ফেটে পড়েন। বিশ্বাসঘাতককে সমুচিত শিক্ষা দেয়ার মানসে সুজা মগরাজাকে সিংহাসনচ্যুত করার ষড়যন্ত্রের জাল ফাঁদেন। আরাকান গমনকালে তাঁর সহচর স্বল্প সংখ্যক মোগল সৈন্য এবং আরাকান সেনাবাহিনীতে নিয়োজিত কিছুসংখ্যক মুসলিম সৈনিককে সঙ্গে নিয়ে সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মগরাজাকে অপসারণ করে ক্ষমতা দখলের কল্পনা করেছিলেন। কিন্তু সে চেষ্টা ফলপ্রসূ হয়নি। কারণ তাঁদের পরিকল্পনা ছিল ত্রুটিবহুল। ষড়যন্ত্রের গোপনীয়তা রক্ষা করা যায়নি, তা দ্রুত রাজার কানে গিয়ে পৌঁছে। আরাকানরাজ নির্মম হস্তে এ বিদ্রোহ দমন করতে অগ্রসর হন। আরাকানি সৈন্যরা রক্তপিপাসু ব্যাঘ্রের ন্যায় বিদ্রোহীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ সময় মুসলিম বিদ্রোহীরাও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তারা রাজধানীতে আগুন লাগিয়ে নিকটবর্তী বনে পালিয়ে যায়। পরে অবশ্য রাজার সৈন্যদের হাতে গ্রেপ্তার হয়। অধিকাংশ লোককেই আরাকানি সৈন্যরা নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। যারা রক্ষা পায় তারা পরে আরাকান রাজার দেহরক্ষী সৈন্যরূপে নিযুক্ত হয়। ধনুকের ফারসি নাম ‘কামান’। এ নামে ধনুকধারী মোগল দেহরক্ষীদের ‘কামাঞ্চি’ বলে অভিহিত করা হয়। তবে সুজার ভাগ্যে প্রকৃতপক্ষে কী ঘটেছিল তা কোনো ঐতিহাসিকই সঠিকভাবে বলতে পারেন না। কেউ বলেন, পলায়নকালে সুজা বনেই নিহত হন, কেউ বলেন, জঙ্গল হতে ধরে এনে সুজার শিরñেদ করা হয়। কারো মতে, সুজাকে বস্তাভর্তি করে সাগরে ডুবিয়ে মারা হয়। যা হোক, বিদ্রোহীদের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবার পর সুজা সম্পর্কে আর কোনো উল্লেখযোগ্য কথা শোনা যায় না। সশস্ত্র বিদ্রোহ ব্যর্থ হবার পর সুজার পরিজনদের ভাগ্যে কী ঘটেছিল তাও বিতর্কমুক্ত নয়। গবেষক ও ঐতিহাসিকরা এ সম্পর্কে নানা মত পোষণ করেন। আরাকানে প্রচলিত কাব্য ও প্রবাদ ইত্যাদি
0 votes
by
ঐতিহ্য ও লোকসংস্কৃতির সাথে রয়েছে বাংলার নবাব শাহ সুজার আরাকান গমন এবং আরাকান রাজার হাতে সুজা পরিবারের করুণ ঘটনার এক সুদূরপ্রসারী প্রভাব। এককালে চট্টগ্রাম ও আরাকানের পল্লীগীতি, বারমাইস্যা, গ্রামীণ হঁলা ইত্যাদিতে চোখের জলে বুক ভাসিয়ে গাওয়া হতো সুজাতনয়ার বিলাপ, পরীবানুর হঁলা ইত্যাদি। আরাকান গমন শুধু একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা নয়, আমাদের লুপ্ত ইতিহাসের আলোক মশাল হিসেবেও এ ঘটনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও চট্টগ্রাম তথা কক্সবাজার এমনকি আরাকানের বিভিন্ন মুসলিম এলাকায় অনেক পরিবার নিজেদের শাহ সুজার সফরসঙ্গীর বংশধর বলে দাবি করে থাকেন। যে কারণে কক্সবাজার ও আরাকানের ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে শাহ সুজার ও তাঁর স্ত্রী পরীবানুর অনেক স্মৃতি। ১৬৬০ সালে বাংলার সুবেদার শাহ সুজা আপন ভাই আওরঙ্গজেবের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বিশাল সেনাবাহিনীসহ আশ্রয় নেন পার্শ্ববর্তী দেশ আরাকানের বন্দর শহর চট্টগ্রামে। শাহ সুজার চট্টগ্রাম গমন ও চট্টগ্রাম থেকে আরাকানের রাজধানী ম্রোহং-এ গিয়ে নির্মমভাবে নিহত হওয়া, অপরদিকে তাঁর বিশাল মোগলবাহিনীর রামুতে দুর্গ স্থাপন, রামু থেকে আলীকদমে গমন অতঃপর তাদের ভাগ্যের বিপর্যয় এবং বার্মা থেকে বিতাড়িত উপজাতীয় চাকমাদের সাথে সমাজবদ্ধ হওয়ার পেছনে রয়েছে অনেক ইতিহাস। ঐতিহাসিক ড. আবদুল করিম কক্সবাজারের ইতিহাস গ্রন্থে শাহজাদা সুজা প্রসঙ্গে বলেছেন, সুজা ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দের ৩ জুন দেয়াঙে পৌঁছেন। অতঃপর ৩০ রমজান ১০ জুন ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে দেয়াঙে রমজানের ঈদের নামাজ আদায় করেন। কক্সবাজার সীমান্তে থাকতেই কুরবানির ঈদ এসে যায়। ১৬৬০ সালের ১৭ আগস্ট ছিল ১০ জিলহজ (কুরবানির ঈদ)। ২৬ আগস্ট তারিখে আরাকানের রাজধানীতে পৌঁছার পূর্বে ১৭ আগস্ট তারিখে কুরবানির ঈদের নামাজ কক্সবাজারে পড়া সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। এ কারণে চকরিয়ার দুটি স্থানের নামকরণ ঈদগড়, ঈদগাহ হয় বলে মন্তব্য করেন। এই সময় সুজার সাথে ছিলেন সেনাপতি ফতে খাঁ, শেরমস্ত খাঁ, গোলাম হোসেন খাঁ, শের জব্বার খাঁ, নুরুল্লা খাঁ, শের দৌলত খাঁসহ ১৮ জন সেনাপতি ও সাড়ে চার হাজার মোগলযোদ্ধা এবং তাঁদের ব্যবহৃত কামানসহ বিপুল পরিমাণ সমরাস্ত্র, যুদ্ধহস্তি, অশ্বারোহী সৈনিক। এছাড়া সাথে ছিল শাহ সুজার অনুগত বিশাল সৈয়দ দল। তাঁদের মধ্যে সৈয়দ আলম বাদহকাশ, সৈয়দ কুলী উজবেগ, বাড়িহার সৈয়দ দল, ১২টি উট বোঝাই ধনরতœ, স্ত্রী, পুত্র, কন্যা ও নিকট আত্মীয়সহ প্রায় অর্ধলক্ষাধিক অনুগত বাহিনী। এই দুঃসময়ে শাহ সুজার সফরসঙ্গী হয়েছিলেন তাঁরই পীর হাফেজ খান মজলিসসহ ২২ জন উচ্চপদস্থ আলেম। পীর হাফেজ খান ছিলেন শাহ সুজা দরবারের অন্যতম সভাসদ। অধিকন্তু তিনি বিচার বিভাগীয় প্রধান বিচারপতি ‘কাজী-উল-কুযাত’ এর উচ্চতম পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। চট্টগ্রামের স্থানীয় লোকগীতি ‘পরীবানুর হাওলা’য় শাহজাদা সুজা দেয়াঙ থেকে স্থলপথে আরাকান যাওয়ার কথা উচ্চারিত হয়েছে। রেনেল (জবহবষষ) এর মানচিত্রে আরাকান সড়কের এ অংশ থেকে রামু পর্যন্ত একটি সড়কের চিহ্ন দেখানো হয়েছে, যা বর্তমান চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক হিসেবে চিহ্নিত। এ সড়কের কিছু অংশ পাহাড়ি অঞ্চলের অভ্যন্তরে ভাগ হয়ে অতিক্রম করেছে। বার্মা ইতিহাসবিদ নামে খ্যাত ইংরেজ ঐতিহাসিক ফিয়ারি (চযধুবৎব) এবং স্টুয়ার্ট (ঝঃবধিৎঃ) উভয়ে একমত হন যে, শাহজাদা সুজা, তাঁর পরিবার এবং সহযোদ্ধা মোগলবাহিনী দক্ষিণ চট্টগ্রামে পাহাড়ি দুর্গম পথ অতিক্রম করে নাফ নদীর তীরে উপস্থিত হন। সেখানে সুজা তিনদিন পর্যন্ত বিশ্রাম নেন। রামুর ইতিহাস গ্রন্থের প্রণেতা গবেষক আবুল কাসেম শাহজাদা সুজার সহযোদ্ধা সেনাপতি গোলাম হোসেন খাঁ’র ডায়েরির উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, ঐ সময় সুজার সাথে বিশাল মোগল সেনাবাহিনী ছিল। দেয়াঙ থেকে দু’দলে বিভক্ত অগ্রগামী সেনাদলের নেতৃত্বে ছিলেন প্রধান সেনাপতি ফতে খাঁ, সেনাপতি শেরমস্ত খাঁ ও ডায়েরির লেখক সেনাপতি গোলাম হোসেন খাঁ। এই অগ্রগামী দল অরণ্যপথে ২২ হাত চওড়া একটি সড়ক নির্মাণ করেন। রামুর ঈদগড়, গর্জনিয়া, বড়বিল, কচ্ছপিয়া হয়ে দুর্গম পাহাড়ি পথে নির্মিত সড়কটির নামই সুজা সড়ক। সড়কটির অস্তিত্ব এখনো আছে। সড়কটি নির্মাণ শেষে সেনাপতিরা রামুর পুরনো ডাকবাংলো এলাকায় আস্তানা স্থাপন করেন এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার জন্য সেনাপতি ফতে খাঁ, গোলাম হোসেন খাঁ ও শেরমস্ত খাঁ দরবেশের ছদ্মবেশে গোপনে রামকোটে মগরাজার দরবারে হাজির হন। উদ্দেশ্য মগরাজার শক্তি সামর্থ্য ও পরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত হওয়া এবং পশ্চাৎ অনুগামী আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য নাফ নদী পার হওয়ার ব্যবস্থা করা। কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে সেনাপতিরা শিকলঘাটের চেকপোস্ট হয়ে বাঁকখালী নদী পার হয়ে মগদের শক্তি-সামর্থ্য দেখে বুঝলেন এই পথে নাফ নদী পার হয়ে আরাকানের রাজধানী রোসাঙ্গ যাওয়া সম্ভব নয়। তাই ডুলাহাজরা ফিরে গিয়ে শাহজাদা সুজাকে সড়কপথেই যাত্রা শুরুর ইঙ্গিত প্রদান করলেন। এ প্রসঙ্গে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ বলেন, শাহজাদা সুজা আরাকানের রাজধানীতে পলায়নকালে সকলকে বিদায়পূর্বক কতিপয় ঘনিষ্ঠজনকে সাথে নিয়ে নাফ নদী পার হয়ে আরাকানের রাজধানী রোসাঙ্গ পৌঁছেন ১৬ আগস্ট ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে। তাতে ধারণা করা যায় যে, শাহজাদা সুজার সহযোদ্ধা বিশাল সেনাবাহিনীর আরাকানের রাজধানীতে প্রবেশের অনুমতি ছিল না। সৈয়দ আলী আহসান তাঁর রচিত ‘পদ্মাবতী’ গ্রন্থে এ প্রসঙ্গে বলেছেন, শাহ সুজা বাংলা ছেড়ে পলায়নকালে তাঁর সঙ্গে ১৫০০ অশ্বারোহী সৈন্য ছিল। মীর জুমলা যখন অনুসরণ করছিলেন তখন শাহ সুজা ব্রহ্মপুত্র নদ অতিক্রম করে রাঙ্গামাটি পার্বত্য অঞ্চলে প্রবেশ করেন। দুর্ভেদ্য পার্বত্য অঞ্চল অতিক্রম করে মাত্র ৪০ জন অনুচর ও দু’শজন দেহরক্ষী সাথে নিয়ে শাহ সুজা তাঁর স্ত্রী, তিন কন্যা এবং এক পুত্রকে নিয়ে গর্জনিয়া হয়ে আরাকান সীমান্তের ওপারে টোয়াটঙ (ঞধিঁঃধঁহম) গিয়ে পৌঁছেন এবং সেখান থেকে আরাকানের রাজধানী পৌঁছেন। শাহজাদা সুজা রাজধানীতে পৌঁছলে আরাকানের রাজসৈন্যরা তাঁকে অভ্যর্থনা জানায় এবং রাজা ‘চন্দ্রসুধর্ম্মা’ যথাসময়ে শাহ সুজার মক্কা গমনের প্রতিশ্রæতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন। শাহজাদা সুজা আরাকানের রাজধানীতে পৌঁছলেও সেনাপতি ফতে খাঁ, শেরমস্ত খাঁ ও গোলাম হোসেন খাঁ, শের জব্বার খাঁ, নুরুল্লা খাঁ, শের দৌলত খাঁ, সৈয়দ আলম বাদহকাশ, সৈয়দ কুলী উজবেগ, বাড়িহার সৈয়দ দল, সাড়ে চার হাজার মোগল সৈনিকসহ বিভিন্ন স্তরের বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী অনিশ্চয়তার মধ্যেও রামুর রাজারকুল, সিপাহিপাড়া ও ফতে খাঁ’র কুল নামক স্থানে দুর্গ স্থাপন করে অপেক্ষায় থাকেন। আরাকানের রাজধানীতে শাহজাদা সুজা ও তাঁর নিকটজনদের প্রতি রাজা চন্দ্রসুধর্ম্মার মহানুভবতা ও সহৃদয়তার কথা অনেক ঐতিহাসিকের গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। কথিত আছে যে, সুজা ও তাঁর নিকটজনদের জন্য মগরাজা একটি সুন্দর দালান বানিয়ে দিয়েছিলেন, সুজা তথায় কিছুকাল শান্তিতে পরিবার পরিজনসহ বসবাস করেন। শাহ সুজা যখন আরাকানে আশ্রয় নিয়েছেন তখন কবি আলাওল ফারসি কবি নিজামীর হপ্তপয়কর কাব্যের অনুবাদ করেন (১৬৬০ খ্রি.)। উক্ত কাব্যে কবি আরাকানরাজ শ্রী চন্দ্রসুধর্ম্মার গুণ বর্ণনা করে বলেছেন- দিল্লীশ্বর বংশ আসি যাহার শরনে পশি তার সম কাহার মহিমা। এতে ধারণা করা হয় যে, শাহ সুজা আরাকানের রাজধানী গমনের প্রথম ভাগেই কবি এ গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর পরবর্তী জীবনের ঘটনাবলী অস্পষ্টতার ঘনকুয়াশায় আচ্ছন্ন। বিভিন্ন লেখক শাহজাদা সুজার আরাকান আশ্রয়কাল সম্পর্কে বিভিন্ন মত পোষণ করেন। কেউ কেউ বলেন যে, আওরঙ্গজেবের নির্দেশে সেনাপতি মীর জুমলা আরাকানের রাজাকে সুজা এবং তাঁর পরিবারবর্গকে মোগল সম্রাটের হাতে প্রত্যার্পণের প্রতিদানে ১২ হাজার মুদ্রা দেয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। ঠিক ঐ সময়ই আরাকানরাজের বন্ধুত্বপূর্ণ সহায়তায় সুজার মক্কা গমনের প্রায় সমস্ত ব্যবস্থাই সমাধা করা হলেও সুজার সঙ্গে আনীত ১২টি উট বোঝাই ধনরতœ ও মীর জুমলার প্রতিশ্রæত টাকার লোভে পড়ে আরাকানরাজ তাঁর বন্ধুত্বের কথা ভুলে গিয়ে সুজার শত্রুতে পরিণত হলেন। সুজার এ অসহায়ত্বের সুযোগে আরাকানরাজ সুজার কন্যাকে বিবাহ করারও প্রস্তাব দেন। এ প্রস্তাবে সুজা ক্রোধে ফেটে পড়েন। বিশ্বাসঘাতককে সমুচিত শিক্ষা দেয়ার মানসে সুজা মগরাজাকে সিংহাসনচ্যুত করার ষড়যন্ত্রের জাল ফাঁদেন। আরাকান গমনকালে তাঁর সহচর স্বল্প সংখ্যক মোগল সৈন্য এবং আরাকান সেনাবাহিনীতে নিয়োজিত কিছুসংখ্যক মুসলিম সৈনিককে সঙ্গে নিয়ে সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মগরাজাকে অপসারণ করে ক্ষমতা দখলের কল্পনা করেছিলেন। কিন্তু সে চেষ্টা ফলপ্রসূ হয়নি। কারণ তাঁদের পরিকল্পনা ছিল ত্রুটিবহুল। ষড়যন্ত্রের গোপনীয়তা রক্ষা করা যায়নি, তা দ্রুত রাজার কানে গিয়ে পৌঁছে। আরাকানরাজ নির্মম হস্তে এ বিদ্রোহ দমন করতে অগ্রসর হন। আরাকানি সৈন্যরা রক্তপিপাসু ব্যাঘ্রের ন্যায় বিদ্রোহীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এ সময় মুসলিম বিদ্রোহীরাও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তারা রাজধানীতে আগুন লাগিয়ে নিকটবর্তী বনে পালিয়ে যায়। পরে অবশ্য রাজার সৈন্যদের হাতে গ্রেপ্তার হয়। অধিকাংশ লোককেই আরাকানি সৈন্যরা নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে। যারা রক্ষা পায় তারা পরে আরাকান রাজার দেহরক্ষী সৈন্যরূপে নিযুক্ত হয়। ধনুকের ফারসি নাম ‘কামান’। এ নামে ধনুকধারী মোগল দেহরক্ষীদের ‘কামাঞ্চি’ বলে অভিহিত করা

Related questions

উত্তর সন্ধানী! বেস্ট বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর ওয়েবসাইট। প্রশ্ন করুন, উত্তর নিন, সমস্যা সমাধান করুন ।
উত্তর সন্ধানী কি?
উত্তর সন্ধানী বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর এর ওয়েবসাইট।
গোপন প্রশ্ন ও উত্তর। ডিজিটাল শিক্ষায় প্রশ্নের উত্তরের সেরা ওয়েবসাইট।
...