in ইতিহাস ও নিদর্শন by
শাহবুদ্দিন মুহাম্মদ শাহ জাহান সম্পর্কে লিখ?

2 Answers

0 votes
by
 
Best answer
ফার্সি নাম شاه جهان। (শাহ্জাহান, অর্থ : পৃথিবীর রাজা)। ভারতবর্ষের পঞ্চম মোগল সম্রাট। তাঁর পূর্ণ নাম শাহবুদ্দিন মুহাম্মদ শাহ জাহান। শৈশবে এঁর নাম ছিল খুররম। সিংহাসনে আরোহণের পর তাঁর নতুন নাম হয় আবুল মুজাফফর শিহাবুদ্দিন মুহম্মদ শাহজাহান সাহিব কিরান-ই-সানী । ১৫৯২ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জানুয়ারি, তিনি লাহোরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন চতুর্থ মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর। তার মা ছিলেন রাজপুত রমণী। মায়ের নাম মনমতি। তিনি ছিলেন জাহাঙ্গীরের তৃতীয় পুত্র। সাহসিকতা ও বুদ্ধিমত্তায় তিনি অল্প বয়সেই সম্রাট জাহাঙ্গীরের প্রিয়পাত্র হন। ১৬০৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আট হাজারি মনসবদারি পদ লাভ করেন। এই বৎসরেই আসফ খাঁর কন্যা মমতাজ মহলের সাথে (আরজুমান্দ বানু বেগম) শাহজাহানের বাগদান হয়। ১৬১১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দশ হাজারি মনসবদারি পদ লাভ করেন। ১৬১২ খ্রিষ্টাব্দে মমতাজ মহলের সাথে তাঁর বিবাহ হয়। সম্রাট জাহাঙ্গীরের অন্যতম পত্নী নুরজাহান, তাঁর প্রথম ঘরের সন্তান কন্যার সাথে কনিষ্ঠ যুবরাজ শাহরিয়রের বিবাহ দেন। এই সময় নুরজাহান শাহারিয়ারকে সিংহাসনে বসানোর চেষ্টা করেন। ফল শাহজাহানের সাথে নুরজাহানের বৈরীতা শুরু হয়। আর সম্রাট জাহাঙ্গীরও প্রিয় পত্নীর মন রক্ষার্থে শাহজাহানের প্রতি বিরক্ত হন। ১৬১৩ খ্রিষ্টাব্দে মেবারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় শাহাজাহানকে সেনাপ্রধান করে পাঠানো হয়। এই যুদ্ধে শাহজাহান মেবারের রাজা অমর সিংহের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেন। ১৬১৫ খ্রিষ্টাব্দে অমর সিংহের সাথে মোগলদের একটি সন্ধিচুক্তি হয়। এই চুক্তি অনুসারে, অমর সিংহ এক হাজার অশ্বারোহী সৈন্য মোগল দরবারে পাঠান। ১৬১৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দাক্ষিণাত্যে অভিযান চালান। তিনি মালিক অম্বরকে পরাজিত করেন। এই সময় মালিক অম্বর বালাঘাট অঞ্চল এবং আহম্মদনগরের দুর্গ মোগলদের কাছে অর্পণ করেন। এই যুদ্ধ জয়ের পর, সম্রাট জাহাঙ্গীর তাঁকে শাহজাহান উপাধি দেন। এর কিছুদিন পর মোগলবাহিনীর অরাজকতার সুযোগে মালিক অম্বর বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। ফলে মালিক অম্বরের বিরুদ্ধে শাহাজাহানকে আবার যুদ্ধে পাঠানো হয়। এবারও মালিক অম্বর পরাজিত হন। এবারের যুদ্ধে মোগল বাহিনী বিজাপুর, আহম্মদনগর ও গোলকুণ্ডা অধিকার করেন। এই সময় মালিক অম্বর বিপুল অঙ্কের টাকা নজরানা দিয়ে মোগলদের সাথে সন্ধি করেন। ১৬২২ খ্রিষ্টাব্দে পারশ্য সৈন্য কান্দাহার অবরোধ করলে, সেখানকার সেনাপ্রধান জাহাঙ্গীরের কাছে সৈন্য প্রার্থনা করেন। নুরজাহান কান্দাহার জয়ের জন্য শাহজাহানকে পাঠানোর ব্যবস্থা করলে, শাহজাহান এই অভিযানে যেতে অস্বীকার করেন। শাহজাহান ভেবেছিলেন কান্দাহারে পাঠিয়ে নুরজাহান তাঁকে হত্যা করার ব্যবস্থা করবেন। শাহজাহানের বিদ্রোহের সূত্রে মোগল বাহিনীর সাথে ১৬২৩ খ্রিষ্টাব্দে একটি যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে শাহজাহান পরাজিত হয়ে দাক্ষিণাত্যে পালিয়ে যান। এই সময় যুবরাজ পারভেজ ও সেনাপতি মহবৎ খাঁকে শাহজাহানের বিরুদ্ধে পাঠালে, শাহজাহান উড়িষ্যা, বিহার ও বঙ্গদেশ দখল করে নেন। কিন্তু এলাহাবাদের কাছে এক যুদ্ধে যুবরাজ পারভেজ ও সেনাপতি মহবৎ খাঁর সাথে যুদ্ধে তিনি পরাজিত হয়ে দাক্ষিণাত্যের দিকে যান। এই সময় তিনি মালিক অম্বরের সাথে যোগ দেন। ১৬২৫ খ্রিষ্টাব্দে মোগল বাহিনীর সাথে যুদ্ধে শাহাজাহান পরাজিত হয়ে আত্মসমর্পণ করেন। জাহাঙ্গীর বিদ্রোহী শাহজাহানকে ক্ষমা করে দেন। শাহজাহানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুবরাজ পারভেজ ও মহব্বৎ খানের সাফল্যে নুরজাহান শঙ্কিত হয়ে পড়েন। তিনি শাহরিয়ারকে সিংহাসনে বসানোর জন্য, প্রথমে এই দুই সেনাপতিকে পৃথক করে ফেলেন। তিনি মহব্বৎ খানকে বাংলাদেশের যাওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু নুরজাহান মহব্বৎ খায়ের বিরুদ্ধে গুরুতর কিছু অভিযোগ তুলে রাজধানীতে আসার ফরমান জারি করেন। নুরজাহান এবং জাহাঙ্গীর কাবুলের যাওয়ার পথে কৌশলে আক্রমণ করে জাহাঙ্গীরকে বন্দী করেন। নুরজাহান জাহাঙ্গীরকে উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে, মহব্বৎ খানের কাছে আত্ম-সমর্পণ করেন। পরে কৌশলে জাহাঙ্গীরকে উদ্ধার করে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হলে, মহব্বৎ খা দাক্ষিণাত্যে শাহজাহানের সাথে মিলিত হন। ১৬২৬ খ্রিষ্টাব্দে যুবরাজ পারভেজ মৃত্যুবরণ করেন। কাশ্মীর থেকে প্রত্যাবর্তনকালে ১৬২৭ খ্রিষ্টাব্দে জাহাঙ্গীর মৃত্যবরণ করেন। ফলে সিংহাসনের দাবিদার হন শাহজাহান এবং শাহরিয়ার। জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর সময়, শাহজাহান দাক্ষিণাত্যে ছিলেন। তাই আসফ খাঁ (শাহাজাহানের শ্বশুর) জাহাঙ্গীরের প্রথম পুত্র খসরু (আগেই নিহত হয়েছিলেন)-র প্রথম পুত্র দাওয়ার বক্সকে অস্থায়ী সম্রাট হিসেবে ঘোষণা দেন। এই সময় নূরজাহান লাহোরে শাহরিয়ারকে সম্রাট হিসেবে ঘোষণা দেন। আসফ খাঁ দ্রুত লাহোর আক্রমণ করে শাহরিয়ারকে বন্দী করেন এবং চোখ উপরে ফেলেন। শাহরিয়ারের এই বিপর্যয়ের পর নুরজাহান রাজনীতি থেকে অবসর নেন। অবশ্য তিনি নুরজাহানকে ক্ষমা করে দেন এবং তাঁর জন্য বাৎসরিক দুই লক্ষ টাকার বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করেন। ১৬৪৫ খ্রিষ্টাব্দে নুরজাহান মৃত্যবরণ করেন।
0 votes
by
ফার্সি নাম شاه جهان। (শাহ্জাহান, অর্থ : পৃথিবীর রাজা)। ভারতবর্ষের পঞ্চম মোগল সম্রাট। তাঁর পূর্ণ নাম শাহবুদ্দিন মুহাম্মদ শাহ জাহান। শৈশবে এঁর নাম ছিল খুররম। সিংহাসনে আরোহণের পর তাঁর নতুন নাম হয় আবুল মুজাফফর শিহাবুদ্দিন মুহম্মদ শাহজাহান সাহিব কিরান-ই-সানী । ১৫৯২ খ্রিষ্টাব্দের ৫ জানুয়ারি, তিনি লাহোরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন চতুর্থ মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীর। তার মা ছিলেন রাজপুত রমণী। মায়ের নাম মনমতি। তিনি ছিলেন জাহাঙ্গীরের তৃতীয় পুত্র। সাহসিকতা ও বুদ্ধিমত্তায় তিনি অল্প বয়সেই সম্রাট জাহাঙ্গীরের প্রিয়পাত্র হন। ১৬০৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আট হাজারি মনসবদারি পদ লাভ করেন। এই বৎসরেই আসফ খাঁর কন্যা মমতাজ মহলের সাথে (আরজুমান্দ বানু বেগম) শাহজাহানের বাগদান হয়। ১৬১১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দশ হাজারি মনসবদারি পদ লাভ করেন। ১৬১২ খ্রিষ্টাব্দে মমতাজ মহলের সাথে তাঁর বিবাহ হয়। সম্রাট জাহাঙ্গীরের অন্যতম পত্নী নুরজাহান, তাঁর প্রথম ঘরের সন্তান কন্যার সাথে কনিষ্ঠ যুবরাজ শাহরিয়রের বিবাহ দেন। এই সময় নুরজাহান শাহারিয়ারকে সিংহাসনে বসানোর চেষ্টা করেন। ফল শাহজাহানের সাথে নুরজাহানের বৈরীতা শুরু হয়। আর সম্রাট জাহাঙ্গীরও প্রিয় পত্নীর মন রক্ষার্থে শাহজাহানের প্রতি বিরক্ত হন। ১৬১৩ খ্রিষ্টাব্দে মেবারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় শাহাজাহানকে সেনাপ্রধান করে পাঠানো হয়। এই যুদ্ধে শাহজাহান মেবারের রাজা অমর সিংহের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেন। ১৬১৫ খ্রিষ্টাব্দে অমর সিংহের সাথে মোগলদের একটি সন্ধিচুক্তি হয়। এই চুক্তি অনুসারে, অমর সিংহ এক হাজার অশ্বারোহী সৈন্য মোগল দরবারে পাঠান। ১৬১৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি দাক্ষিণাত্যে অভিযান চালান। তিনি মালিক অম্বরকে পরাজিত করেন। এই সময় মালিক অম্বর বালাঘাট অঞ্চল এবং আহম্মদনগরের দুর্গ মোগলদের কাছে অর্পণ করেন। এই যুদ্ধ জয়ের পর, সম্রাট জাহাঙ্গীর তাঁকে শাহজাহান উপাধি দেন। এর কিছুদিন পর মোগলবাহিনীর অরাজকতার সুযোগে মালিক অম্বর বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। ফলে মালিক অম্বরের বিরুদ্ধে শাহাজাহানকে আবার যুদ্ধে পাঠানো হয়। এবারও মালিক অম্বর পরাজিত হন। এবারের যুদ্ধে মোগল বাহিনী বিজাপুর, আহম্মদনগর ও গোলকুণ্ডা অধিকার করেন। এই সময় মালিক অম্বর বিপুল অঙ্কের টাকা নজরানা দিয়ে মোগলদের সাথে সন্ধি করেন। ১৬২২ খ্রিষ্টাব্দে পারশ্য সৈন্য কান্দাহার অবরোধ করলে, সেখানকার সেনাপ্রধান জাহাঙ্গীরের কাছে সৈন্য প্রার্থনা করেন। নুরজাহান কান্দাহার জয়ের জন্য শাহজাহানকে পাঠানোর ব্যবস্থা করলে, শাহজাহান এই অভিযানে যেতে অস্বীকার করেন। শাহজাহান ভেবেছিলেন কান্দাহারে পাঠিয়ে নুরজাহান তাঁকে হত্যা করার ব্যবস্থা করবেন। শাহজাহানের বিদ্রোহের সূত্রে মোগল বাহিনীর সাথে ১৬২৩ খ্রিষ্টাব্দে একটি যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে শাহজাহান পরাজিত হয়ে দাক্ষিণাত্যে পালিয়ে যান। এই সময় যুবরাজ পারভেজ ও সেনাপতি মহবৎ খাঁকে শাহজাহানের বিরুদ্ধে পাঠালে, শাহজাহান উড়িষ্যা, বিহার ও বঙ্গদেশ দখল করে নেন। কিন্তু এলাহাবাদের কাছে এক যুদ্ধে যুবরাজ পারভেজ ও সেনাপতি মহবৎ খাঁর সাথে যুদ্ধে তিনি পরাজিত হয়ে দাক্ষিণাত্যের দিকে যান। এই সময় তিনি মালিক অম্বরের সাথে যোগ দেন। ১৬২৫ খ্রিষ্টাব্দে মোগল বাহিনীর সাথে যুদ্ধে শাহাজাহান পরাজিত হয়ে আত্মসমর্পণ করেন। জাহাঙ্গীর বিদ্রোহী শাহজাহানকে ক্ষমা করে দেন। শাহজাহানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুবরাজ পারভেজ ও মহব্বৎ খানের সাফল্যে নুরজাহান শঙ্কিত হয়ে পড়েন। তিনি শাহরিয়ারকে সিংহাসনে বসানোর জন্য, প্রথমে এই দুই সেনাপতিকে পৃথক করে ফেলেন। তিনি মহব্বৎ খানকে বাংলাদেশের যাওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু নুরজাহান মহব্বৎ খায়ের বিরুদ্ধে গুরুতর কিছু অভিযোগ তুলে রাজধানীতে আসার ফরমান জারি করেন। নুরজাহান এবং জাহাঙ্গীর কাবুলের যাওয়ার পথে কৌশলে আক্রমণ করে জাহাঙ্গীরকে বন্দী করেন। নুরজাহান জাহাঙ্গীরকে উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে, মহব্বৎ খানের কাছে আত্ম-সমর্পণ করেন। পরে কৌশলে জাহাঙ্গীরকে উদ্ধার করে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হলে, মহব্বৎ খা দাক্ষিণাত্যে শাহজাহানের সাথে মিলিত হন। ১৬২৬ খ্রিষ্টাব্দে যুবরাজ পারভেজ মৃত্যুবরণ করেন। কাশ্মীর থেকে প্রত্যাবর্তনকালে ১৬২৭ খ্রিষ্টাব্দে জাহাঙ্গীর মৃত্যবরণ করেন। ফলে সিংহাসনের দাবিদার হন শাহজাহান এবং শাহরিয়ার। জাহাঙ্গীরের মৃত্যুর সময়, শাহজাহান দাক্ষিণাত্যে ছিলেন। তাই আসফ খাঁ (শাহাজাহানের শ্বশুর) জাহাঙ্গীরের প্রথম পুত্র খসরু (আগেই নিহত হয়েছিলেন)-র প্রথম পুত্র দাওয়ার বক্সকে অস্থায়ী সম্রাট হিসেবে ঘোষণা দেন। এই সময় নূরজাহান লাহোরে শাহরিয়ারকে সম্রাট হিসেবে ঘোষণা দেন। আসফ খাঁ দ্রুত লাহোর আক্রমণ করে শাহরিয়ারকে বন্দী করেন এবং চোখ উপরে ফেলেন। শাহরিয়ারের এই বিপর্যয়ের পর নুরজাহান রাজনীতি থেকে অবসর নেন। অবশ্য তিনি নুরজাহানকে ক্ষমা করে দেন এবং তাঁর জন্য বাৎসরিক দুই লক্ষ টাকার বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করেন।

Related questions

উত্তর সন্ধানী! বেস্ট বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর ওয়েবসাইট। প্রশ্ন করুন, উত্তর নিন, সমস্যা সমাধান করুন ।
উত্তর সন্ধানী কি?
উত্তর সন্ধানী বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর এর ওয়েবসাইট।
গোপন প্রশ্ন ও উত্তর। ডিজিটাল শিক্ষায় প্রশ্নের উত্তরের সেরা ওয়েবসাইট।
...