গিয়াসউদ্দিন মুহাম্মদের শৈল্পিক চিত্রায়ন রাজত্বকাল ১১৬৩–১২০২ রাজ্যাভিষেক ১১৬৩ জন্ম ১১৩৯ জন্মস্থান ঘুর মৃত্যু ১২০২ (৬৩ বছর) মৃত্যুস্থান হেরাত পূর্বসূরি সাইফউদ্দিন মুহাম্মদ উত্তরসূরি মুহাম্মদ ঘুরি সন্তানাদি গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ পিতা প্রথম বাহাউদ্দিন সাম ধর্মবিশ্বাস ইসলাম (সুন্নি) গিয়াসউদ্দিন মুহাম্মদ (ফার্সি: غیاث الدین محمد بن سام) ছিলেন ঘুরি সাম্রাজ্যের সুলতান। ১১৬৩ থেকে ১২০২ সাল পর্যন্ত তিনি সুলতানের পদে আসীন ছিলেন। তার শাসনামলে ঘুরি সাম্রাজ্য একটি বিশ্বশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় যা গুরগান থেকে বঙ্গ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। শাসনামলের শুরুর দিকে তিনি সিংহাসন দাবি করা ঘুরি ব্যক্তিদের পরাজিত করেছেন। খোরাসানের অধিকারের প্রশ্নে তিনি খোয়ারিজমীয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। ১১৭৬ সালে তিনি হেরাত অধিকার করেন। বর্তমান আফগানিস্তান এবং আশপাশের এলাকার অধিকাংশ ১২০০ সাল নাগাদ তিনি নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হন। পশ্চিমে বাস্তাম ও গুরগানে তার সীমানা বিস্তৃত ছিল। তার ভাই মুইজউদ্দিন সাম্রাজ্যের পূর্ব প্রান্ত বাংলা অবধি বিস্তৃত করতে সহায়তা করেছেন।মুইজউদ্দিন তার প্রতি আনুগত্যের সাথে দায়িত্বপালন করেছেন। ১২০২ সালে গিয়াসউদ্দিনের মৃত্যুর পর মুইজউদ্দিন ক্ষমতালাভ করেন। প্রারম্ভিক জীবন গিয়াসউদ্দিন ১১৩৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা প্রথম বাহাউদ্দিন সাম ১১৪৯ সালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ঘুরি রাজবংশের শাসক হন। গিয়াসউদ্দিনের ছোটভাই ছিলেন মুইজউদ্দিন। জীবনের শুরুর দিকে তারা উভয়ে তাদের চাচা আলাউদ্দিন হুসাইন কর্তৃক বন্দী হন, তবে পরে আলাউদ্দিনের পুত্র সাইফউদ্দিন মুহাম্মদ কর্তৃক মুক্তি পান।[১] ১১৬৩ সালে সাইফের মৃত্যুর পর ঘুরি অভিজাত ব্যক্তিবর্গ গিয়াসউদ্দিনকে সমর্থন দেন এবং সিংহাসন লাভে সহায়তা করেন। শাসনকাল সিংহাসন লাভের সময় প্রতিপক্ষ ঘুরি প্রধান আবুল আব্বাসকে হত্যা করায় তিনি তার ভাইয়ের সহায়তা পান। তবে এতে বিরোধ শেষ হয়নি। গিয়াসের চাচা ফখরউদ্দিন মাসুদ সিংহাসন দাবি করেছিলেন। হেরাত ও বলখের সেলজুক গভর্নর এসময় ফখরউদ্দিন মাসুদকে সমর্থন করেছিলেন।[২] গিয়াসউদ্দিন ও মুইজউদ্দিন একত্রে রাগ-ই জারে এই জোটকে পরাজিত করেন। গিয়াসউদ্দিন যুদ্ধকালে সেলজুক গভর্নরকে হত্যা করতে সক্ষম হন। এরপর তিনি জামিন্দাওয়ার, বাদগিস, গারচিস্তান ও গুজগান জয় করেন। তিনি ফখরউদ্দিনকে মুক্তি দেন এবং তাকে বামিয়ানের শাসক হিসেবে পুনস্থাপন করেন। ফখরউদ্দিনের মৃত্যুর পর তার পুত্র শামসউদ্দিন মুহাম্মদ ইবনে মাসুদ উত্তরাধিকারী হিসেবে ক্ষমতালাভ করেন। শামসউদ্দিন অল্প সময়ের মধ্যে কারা-খিতান খানাতের কাছ থেকে বলখ, চাগানিয়ান, ভাখশ, জারুম, বাদাখশান ও শিগনান অধিকার করতে সক্ষম হন এবং গিয়াসউদ্দিনের তরফ থেকে সুলতান উপাধি পান।[৩] ১১৭৩ সালে গিয়াস গজনি আক্রমণ করেন এবং অগুজ তুর্কিদের পরাজিত করেন। অগুজ তুর্কিরা গজনভিদের কাছ থেকে শহর দখল করেছিল। এরপর তিনি তার ভাই মুইজউদ্দিনকে গজনির শাসক নিযুক্ত করেন।[২] ১১৭৫ সালে সেলজুক গভর্নর বাহাউদ্দিন তুগরিলের কাছ থেকে গিয়াসউদ্দিন হেরাত জয় করেন। এছাড়া তিনি পুশাং জয় করেন। সিস্তানের শাসক তাজউদ্দিব হারব ইবনে মুহাম্মদ এর অল্প সময় পর গিয়াসউদ্দিনের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নেন। অগুজ তুর্কি অধ্যুষিত কিরমানও অনুরূপ আনুগত্য স্বীকার করে।[৪] একই সময়ে খোয়ারিজমীয় রাজপুত্র সুলতান শাহ তার ভাই আলাউদ্দিন তেকিশ কর্তৃক খোয়ারিজম থেকে বিতাড়িত হয়ে ঘুরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তিনি গিয়াসউদ্দিনের কাছে সামরিক সহায়তা চান। তবে গিয়াসউদ্দিন তা প্রদান করেননি। সুলতান শাহ এরপর কারা-খিতান খানাতের কাছ থেকে সহায়তা লাভে সমর্থ হন এবং ঘুরিদের উত্তরাঞ্চলে হামলা চালানো শুরু করেন। ১১৮৬ সালে গিয়াস ও মুইজ একত্রে লাহোর জয়ের মাধ্যমে গজনভিদের শাসন সমাপ্ত করেন।[২][৫] বামিয়ান ও সিস্তানের শাসক এবং তার ভাই মুইজউদ্দিনের সহায়তায় এরপর তিনি ১১৯০ সালে সুলতান শাহর বাহিনীকে পরাজিত করেন। খোরাসানে সুলতান শাহর অধিকাংশ অঞ্চল তিনি নিজ শাসনের আওতাভুক্ত করে নেন। খোয়ারিজমীয় শাহ এবং ঘুরিদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার অল্পকিছুকাল পরে তেকিশ হেরাত আক্রমণ করেন। এসময় কারা-খিতানরা গুজগান আক্রমণ করেছিল। গিয়াসউদ্দিন উভয়কে পরাজিত করেন। ১২০০ সালে তেকিশ মারা যান এবং দ্বিতীয় মুহাম্মদ তার উত্তরসুরি হন। এই সংবাদ পাওয়ার পর গিয়াসউদ্দিন ও মুইজউদ্দিন তাদের বাহিনী নিয়ে পশ্চিমে খোরাসানের দিকে অগ্রসর হন। নিশাপুর জয় করার পর মুইজউদ্দিনকে রাইয়ের দিকে অভিযানে পাঠানো হয়। তবে তিনি গুরগানের বেশি অগ্রসর হতে পারেননি। ফলে তিনি গিয়াসউদ্দিনের অসন্তোষের শিকার হন। এই ঘটনা তাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে বিবাদের একমাত্র ঘটনা হিসেবে জানা যায়।[৬][৭] ফখরউদ্দিন মাসুদের পুত্র তাজউদ্দিন জানগিকে গিয়াসউদ্দিন সারাখসের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেন। অন্যদিকে নাসিরউদ্দিন মুহাম্মদ খারনাক মার্ভের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পান। মৃত্যু কয়েকমাস অসুস্থ থাকার পর ১২০২ সালে গিয়াসউদ্দিন হেরাতে মারা যান। তার ভাই মুইজউদ্দিন তার উত্তরসুরি হন। মুইজউদ্দিন ভারত থেকে ঘুরে ফিরে আসেন এবং ঘুরি অভিজাত ব্যক্তিবর্গের সমর্থন লাভ করেন। ফিরোজকোহে ঘুরি সাম্রাজ্যের সুলতান হিসেবে তার অভিষেক হয়।