in ইতিহাস ও নিদর্শন by
ভিনসেন্ট কোলম্যান: যার আত্মাহুতি বাঁচিয়েছিল হাজারও মানুষের প্রাণ এর রহস্য কি?

2 Answers

0 votes
by
 
Best answer
ভয়ঙ্কর এক বিস্ফোরণ ঘটতে যাচ্ছে কয়েক মুহূর্ত পরেই। বেঁচে থাকার প্রবল আকাঙ্ক্ষায় দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে ছুটছে মানুষ। আর অন্যপাশ থেকে সেই বিস্ফোরণের দিকে ছুটে আসছে একটি যাত্রীবাহী ট্রেন। বাঁচা-মরার প্রশ্নের ফায়সালা হবে কিছুক্ষণের মধ্যেই হতে যাচ্ছে। এমন সময়, ৪৫ বছর বয়সী একজন মানুষ ভাবলেন, বাঁচবার আগে বাঁচাতে হবে। তিনি ছুটে গেলেন না আর সবার মত। আর সেই বিস্ফোরণের মধ্যে আত্মাহুতি দিয়ে সেই মানুষটি বাঁচিয়ে গেলেন শত মানুষের প্রাণ। তার নাম প্যাট্রিক ভিনসেন্ট কোলম্যান। কানাডার সেই মহত্তম হৃদয়ের আখ্যান থাকছে আজকের লেখায়। প্যাট্রিক ভিনসেন্ট কোলম্যান ছিলেন একজন ট্রেন ডিসপ্যাচার। কানাডার রেলওয়েতে কাজ করতেন তিনি। কানাডার নোভা স্কটিয়ার হ্যালিফেক্সে রিচমন্ড রেল ইয়ার্ডের ছোট্ট একটা কাঠের স্টেশনটাই ছিল কোলম্যানের অফিস। হ্যালিফ্যাক্সের পোতাশ্রয়ের ৬ নম্বর জেটির একেবারে পাশেই এই ডিপো স্টেশনটি। সেখান থেকে হ্যালিফেক্সের প্রধান রেল লাইনের ট্রেনগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হত। অর্থ্যাৎ কোন ট্রেন কখন আসবে যাবে সব খবর নিয়ে সে অনুযায়ী সমন্বয় করে ট্রেনগুলোকে ছাড়ার বা থামার জন্য নির্দেশ দেয়াই ছিলো এই স্টেশনের প্রধান কাজ। এর দায়িত্বে ছিল চিফ ক্লার্ক উইলিয়াম লভেট ও ট্রেন ডিসপ্যাচার ভিনসেন্ট কোলম্যান। মূলত টেলিগ্রাফে বার্তা পাঠানোর মাধ্যমে ট্রেনগুলোকে নির্দেশনা দেয়ার কাজটাই করতেন কোলম্যান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলছে তখন। কোলম্যানের দিন কাটত অগণিত ট্রেনের আসা যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে করতে। কোনো ট্রেন আসছে মালামাল বোঝাই হয়ে, হ্যালিফেক্সের জেটিতে নোঙর করা জাহাজে ওঠানো হচ্ছে সেগুলো। কোনোটা যাত্রী নিয়ে পার হচ্ছে রিচমন্ড স্টেশন। বিশেষ ট্রেনে করে আসছে যাচ্ছে সৈন্যরা। আবার কোনো ট্রেন যাচ্ছে আহত সৈন্যদের নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে। ১৯১৬ সালে ‘কানাডিয়ান গভর্মেন্ট রেলওয়ে’ নাম দেয়ার আগ পর্যন্ত এর নাম ছিল ‘ইন্টারকলোনিয়াল রেলওয়ে’। ডিসপ্যাচারের দায়িত্বে থাকা কোলম্যানের পদ ছিল সাধারণ টেলিগ্রাফ অপারেটরদের চেয়ে এক ধাপ উপরে। দায়িত্ব পালনে দক্ষতার জন্য কোলম্যানের সুখ্যাতি ছিল। রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়নেও সে ছিল সক্রিয়। ৬ ডিসেম্বর, ১৯১৭। হ্যালিফেক্সের রিচমন্ডেই অফিস মাত্র পাঁচ ব্লক দূরে কোলম্যানের বাসা। স্ত্রী ফ্রান্সেস আর দু’বছরের ছোট্ট মেয়ে ইলিনকে বিদায় জানিয়ে সকালে কাজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন তিনি। অফিসে এসে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন প্রতিদিনের মত। এদিকে হ্যালিফিক্সের জাহাজ ঘাটেও তখন চলছিল নিয়মিত দিনের মত জাহাজের আসা যাওয়া। যুদ্ধকালীন বাণিজ্যের জন্য ওই অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জেটি ছিল সেটা। ঘাটে নোঙর করা নরওয়ের জাহাজ এসএস ইমো নেদারল্যান্ড থেকে ছেড়ে নিউইয়র্কের দিকে যাচ্ছিল, উদ্দেশ্য ছিল বেলজিয়ামের জন্য রিলিফ সাহায্য নিয়ে যাবে। আগের দিন ৫ ডিসেম্বর এটির হ্যালিফেক্স ছেড়ে যাবার কথা থাকলেও প্রয়োজনীয় জ্বালানী আসতে দেরি হওয়ায় জাহাজ ছাড়ার সময় ঠিক হয়েছিল পরদিন সকাল। অন্যদিকে ফরাসি কার্গো জাহাজ এসএস মন্ট-ব্ল্যাঙ্ক হ্যালিফেক্স এসেছিল নিউইয়র্ক থেকে। এতে ছিল কার্গো ভর্তি বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক যার মধ্যে ছিল টিএনটি, পিকরিক এসিড, গানকটন আর বেনজোল নামক অত্যন্ত দাহ্য এক ধরনের জ্বালানী। ইউরোপগামী একটি নৌবহরে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে এসেছিল জাহাজটি। সেদিন সকালে রওনা হল ইমো। দেরি হবার কারণে তাড়া ছিল জাহাজটির ক্যাপ্টেনের। হ্যালিফেক্স ছাড়ার সময় নির্ধারিত সীমার চেয়ে বেশি গতিতে জাহাজ ছাড়লেন তিনি। ওদিকে ইমোর যাবার পথেই বিপরীত দিক থেকে তখন রওনা হয়েছে মন্ট-ব্ল্যাঙ্ক, ধীর গতিতে। সেটাকে পাশ কাটিয়ে সাবধানে পার হতে হবে ইমো’র। কিন্তু ব্যর্থ হলেন ইমো’র ক্যাপ্টেন। মন্ট-ব্ল্যাঙ্কে অবস্থানরত হারবার পাইলট ফ্রান্সিস ম্যাকি যখন ইমো’র ছুটে আসা খেয়াল করলেন তখন সেটা মাত্র সোয়া কিলোমিটার দূরে। বেশ কয়েকবার সতর্ক বার্তা দেবার পরেও সংঘর্ষ এড়াতে পারল না ইমো। আনুমানিক সকাল ৮ টা ৪৫ মিনিটের দিকে সংঘর্ষ ঘটল দুটো জাহাজের মধ্যে। মন্ট-ব্ল্যাঙ্ক কিন্তু খুব একটা আঘাত পায় নি। তবে বিপদ হয়ে গেল তখন, যখন ইমোর ধাক্কায় মন্ট-ব্ল্যাঙ্কে রাখা বেনজোলের কয়েকটা ব্যারেল পড়ে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ল জাহাজের ডেকে। আগেই বলেছি, বেনজোল অত্যন্ত দাহ্য জ্বালানী। ইমো যখন মন্ট-ব্ল্যাঙ্ক থেকে সরে যাচ্ছিল তখন যে অল্প স্পার্ক হল সেটাতেই পানির উপরিতলে আগুন ধরে গেল বেনজোলে। দ্রুত সে আগুন উঠে এল উপরে, ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল। কালো ধোঁয়া উঠতে শুরু করে সাথে সাথে। আগুন নিয়ন্ত্রণ আর সম্ভব নয় ঐ মুহূর্তে। তখন ক্যাপ্টেন ক্রুদের নির্দেশ দিলেন জাহাজ ত্যাগ করার জন্য। জেটির পাশেই রাস্তায় তখন অনেক মানুষ ভীড় করেছে জাহাজের আগুন লাগার ঘটনা দেখার জন্য। আশেপাশের সব ভবনের জানালাতেও জড়ো হয়েছে মানুষ। এদিকে জাহাজটির ক্রুরা দুটো লাইফবোটে করে আসতে আসতে চিৎকার করছিল এই বলে যে জাহাজ বিস্ফোরিত হতে যাচ্ছে কিছুক্ষণের মধ্যে। কিন্তু তাদের আওয়াজ ঠিকমত বুঝতে পারছিল না তীরে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন। এদিকে ঢেউয়ের ধাক্কায় মন্ট-ব্ল্যাঙ্ক এসে আটকাল ৬ নম্বর জেটিতে, রিচমন্ডের রাস্তার একেবারে পাশেই। vlcsnap-2017-01-25-14h46m35s019 জাহাজে আগুন লাগার ঘটনা দেখছে লোকজন। (হেরিটেজ মিনিটস এর চলচ্চিত্রের ভিডিও থেকে নেয়া) ভীড় করে থাকা লোকজন যখন জানতে পারল কী ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটতে যাচ্ছে কিছুক্ষণের মধ্যে তখন আর খুব একটা সময় নেই। আতঙ্কে ছুটতে শুরু করল তারা। দ্রুত সে জায়গা ছেড়ে যেতে লাগল সবাই। পাশেই রেল স্টেশন। খবরটা পেয়ে স্টেশনের চিফ ক্লার্ক উইলিয়াম লভেটের সাথে কোলম্যানও বের হয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময়, কিছু একটা মনে পরে গেল কোলম্যানের। হঠাৎ করেই অফিসের দিকে ফিরে যেতে শুরু করলেন তিনি। মৃত্যু ধেয়ে আসছে, জান হাতে নিয়ে পালানোর সময়টুকুও প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। এমন একটা মুহূর্তে অফিসে ঢুকে টেলিগ্রাফের বার্তা পাঠানোর যন্ত্রটায় হাত দিলেন কোলম্যান। আগের রাতে নিউ ব্রুনসউইক এর সেইন্ট জন ছেড়ে আসা ১০ নম্বর যাত্রীবাহী ট্রেনটি রিচমন্ডে পৌঁছানোর কথা ছিল সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে। আর কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেটি এসে পড়ল বলে। ৩০০ জনের মত যাত্রী ছিল সে ট্রেনে। বাঁচার তাগিদে স্টেশন ছেড়ে যাবার ঠিক আগ মুহূর্তে কোলম্যানের মনে পড়েছিল তাদের কথা। যে ট্রেনগুলো এই মুহূর্তে হ্যালিফ্যাক্সের দিকে আসছে সেগুলোও তো বিপদে পড়বে। ১০ নম্বর ট্রেনটা তো নিশ্চিত বিস্ফোরণের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে। এই ভেবে কোলম্যান টেলিগ্রাফে বার্তা পাঠানো শুরু করলেন হ্যালিফেক্সগামী ট্রেনগুলো থামানোর জন্য। vlcsnap-2017-01-25-14h49m14s711 বার্তা পাঠাচ্ছেন কোলম্যান। (চলচ্চিত্রের ভিডিও থেকে নেয়া ছবি) জীবনের অন্তিম মুহূর্তে পৌঁছে টেলিগ্রাফে বার্তা লিখলেন কোলম্যান- “ট্রেন থামাও। ৬ নম্বর জেটির কাছে গোলাবারুদ ভর্তি জাহাজে আগুন ধরেছে এবং এখনই বিস্ফোরিত হবে। হয়ত এটাই হতে যাচ্ছে আমার পাঠানো শেষ মেসেজ। বিদায় বন্ধুরা।” রিচমন্ডের আগের স্টেশন রকিংহাম থেকে বেডফোর্ড, উইন্ডসর জংশন, এলমসডেল, স্টিওয়েক, তুরো পর্যন্ত মেসেজ পাঠাতে সক্ষম হলেন কোলম্যান। এরপর নিস্তব্ধ হয়ে গেল তার হাত দুটো। ৯ টা ৫ মিনিটের কয়েক সেকেন্ড আগে বিস্ফোরিত হল মন্ট-ব্ল্যাঙ্কের কার্গো। গোটা জাহাজ খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে গেল সাথে সাথে। বিস্ফোরণ কেন্দ্রের তাপমাত্রা হল পাঁচ হাজার ডিগ্রী সেলসিয়াস। সেই প্রচণ্ড বিস্ফোরণে জাহাজের সামনে স্থাপিত বন্দুকের একটি ব্যারেল সাড়ে পাঁচ
0 votes
by
ভয়ঙ্কর এক বিস্ফোরণ ঘটতে যাচ্ছে কয়েক মুহূর্ত পরেই। বেঁচে থাকার প্রবল আকাঙ্ক্ষায় দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে ছুটছে মানুষ। আর অন্যপাশ থেকে সেই বিস্ফোরণের দিকে ছুটে আসছে একটি যাত্রীবাহী ট্রেন। বাঁচা-মরার প্রশ্নের ফায়সালা হবে কিছুক্ষণের মধ্যেই হতে যাচ্ছে। এমন সময়, ৪৫ বছর বয়সী একজন মানুষ ভাবলেন, বাঁচবার আগে বাঁচাতে হবে। তিনি ছুটে গেলেন না আর সবার মত। আর সেই বিস্ফোরণের মধ্যে আত্মাহুতি দিয়ে সেই মানুষটি বাঁচিয়ে গেলেন শত মানুষের প্রাণ। তার নাম প্যাট্রিক ভিনসেন্ট কোলম্যান। কানাডার সেই মহত্তম হৃদয়ের আখ্যান থাকছে আজকের লেখায়। প্যাট্রিক ভিনসেন্ট কোলম্যান ছিলেন একজন ট্রেন ডিসপ্যাচার। কানাডার রেলওয়েতে কাজ করতেন তিনি। কানাডার নোভা স্কটিয়ার হ্যালিফেক্সে রিচমন্ড রেল ইয়ার্ডের ছোট্ট একটা কাঠের স্টেশনটাই ছিল কোলম্যানের অফিস। হ্যালিফ্যাক্সের পোতাশ্রয়ের ৬ নম্বর জেটির একেবারে পাশেই এই ডিপো স্টেশনটি। সেখান থেকে হ্যালিফেক্সের প্রধান রেল লাইনের ট্রেনগুলো নিয়ন্ত্রণ করা হত। অর্থ্যাৎ কোন ট্রেন কখন আসবে যাবে সব খবর নিয়ে সে অনুযায়ী সমন্বয় করে ট্রেনগুলোকে ছাড়ার বা থামার জন্য নির্দেশ দেয়াই ছিলো এই স্টেশনের প্রধান কাজ। এর দায়িত্বে ছিল চিফ ক্লার্ক উইলিয়াম লভেট ও ট্রেন ডিসপ্যাচার ভিনসেন্ট কোলম্যান। মূলত টেলিগ্রাফে বার্তা পাঠানোর মাধ্যমে ট্রেনগুলোকে নির্দেশনা দেয়ার কাজটাই করতেন কোলম্যান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলছে তখন। কোলম্যানের দিন কাটত অগণিত ট্রেনের আসা যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে করতে। কোনো ট্রেন আসছে মালামাল বোঝাই হয়ে, হ্যালিফেক্সের জেটিতে নোঙর করা জাহাজে ওঠানো হচ্ছে সেগুলো। কোনোটা যাত্রী নিয়ে পার হচ্ছে রিচমন্ড স্টেশন। বিশেষ ট্রেনে করে আসছে যাচ্ছে সৈন্যরা। আবার কোনো ট্রেন যাচ্ছে আহত সৈন্যদের নিয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে। ১৯১৬ সালে ‘কানাডিয়ান গভর্মেন্ট রেলওয়ে’ নাম দেয়ার আগ পর্যন্ত এর নাম ছিল ‘ইন্টারকলোনিয়াল রেলওয়ে’। ডিসপ্যাচারের দায়িত্বে থাকা কোলম্যানের পদ ছিল সাধারণ টেলিগ্রাফ অপারেটরদের চেয়ে এক ধাপ উপরে। দায়িত্ব পালনে দক্ষতার জন্য কোলম্যানের সুখ্যাতি ছিল। রেলওয়ে শ্রমিক ইউনিয়নেও সে ছিল সক্রিয়। ৬ ডিসেম্বর, ১৯১৭। হ্যালিফেক্সের রিচমন্ডেই অফিস মাত্র পাঁচ ব্লক দূরে কোলম্যানের বাসা। স্ত্রী ফ্রান্সেস আর দু’বছরের ছোট্ট মেয়ে ইলিনকে বিদায় জানিয়ে সকালে কাজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন তিনি। অফিসে এসে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন প্রতিদিনের মত। এদিকে হ্যালিফিক্সের জাহাজ ঘাটেও তখন চলছিল নিয়মিত দিনের মত জাহাজের আসা যাওয়া। যুদ্ধকালীন বাণিজ্যের জন্য ওই অঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জেটি ছিল সেটা। ঘাটে নোঙর করা নরওয়ের জাহাজ এসএস ইমো নেদারল্যান্ড থেকে ছেড়ে নিউইয়র্কের দিকে যাচ্ছিল, উদ্দেশ্য ছিল বেলজিয়ামের জন্য রিলিফ সাহায্য নিয়ে যাবে। আগের দিন ৫ ডিসেম্বর এটির হ্যালিফেক্স ছেড়ে যাবার কথা থাকলেও প্রয়োজনীয় জ্বালানী আসতে দেরি হওয়ায় জাহাজ ছাড়ার সময় ঠিক হয়েছিল পরদিন সকাল। অন্যদিকে ফরাসি কার্গো জাহাজ এসএস মন্ট-ব্ল্যাঙ্ক হ্যালিফেক্স এসেছিল নিউইয়র্ক থেকে। এতে ছিল কার্গো ভর্তি বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক যার মধ্যে ছিল টিএনটি, পিকরিক এসিড, গানকটন আর বেনজোল নামক অত্যন্ত দাহ্য এক ধরনের জ্বালানী। ইউরোপগামী একটি নৌবহরে যোগ দেয়ার উদ্দেশ্যে এসেছিল জাহাজটি। সেদিন সকালে রওনা হল ইমো। দেরি হবার কারণে তাড়া ছিল জাহাজটির ক্যাপ্টেনের। হ্যালিফেক্স ছাড়ার সময় নির্ধারিত সীমার চেয়ে বেশি গতিতে জাহাজ ছাড়লেন তিনি। ওদিকে ইমোর যাবার পথেই বিপরীত দিক থেকে তখন রওনা হয়েছে মন্ট-ব্ল্যাঙ্ক, ধীর গতিতে। সেটাকে পাশ কাটিয়ে সাবধানে পার হতে হবে ইমো’র। কিন্তু ব্যর্থ হলেন ইমো’র ক্যাপ্টেন। মন্ট-ব্ল্যাঙ্কে অবস্থানরত হারবার পাইলট ফ্রান্সিস ম্যাকি যখন ইমো’র ছুটে আসা খেয়াল করলেন তখন সেটা মাত্র সোয়া কিলোমিটার দূরে। বেশ কয়েকবার সতর্ক বার্তা দেবার পরেও সংঘর্ষ এড়াতে পারল না ইমো। আনুমানিক সকাল ৮ টা ৪৫ মিনিটের দিকে সংঘর্ষ ঘটল দুটো জাহাজের মধ্যে। মন্ট-ব্ল্যাঙ্ক কিন্তু খুব একটা আঘাত পায় নি। তবে বিপদ হয়ে গেল তখন, যখন ইমোর ধাক্কায় মন্ট-ব্ল্যাঙ্কে রাখা বেনজোলের কয়েকটা ব্যারেল পড়ে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ল জাহাজের ডেকে। আগেই বলেছি, বেনজোল অত্যন্ত দাহ্য জ্বালানী। ইমো যখন মন্ট-ব্ল্যাঙ্ক থেকে সরে যাচ্ছিল তখন যে অল্প স্পার্ক হল সেটাতেই পানির উপরিতলে আগুন ধরে গেল বেনজোলে। দ্রুত সে আগুন উঠে এল উপরে, ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল। কালো ধোঁয়া উঠতে শুরু করে সাথে সাথে। আগুন নিয়ন্ত্রণ আর সম্ভব নয় ঐ মুহূর্তে। তখন ক্যাপ্টেন ক্রুদের নির্দেশ দিলেন জাহাজ ত্যাগ করার জন্য। জেটির পাশেই রাস্তায় তখন অনেক মানুষ ভীড় করেছে জাহাজের আগুন লাগার ঘটনা দেখার জন্য। আশেপাশের সব ভবনের জানালাতেও জড়ো হয়েছে মানুষ। এদিকে জাহাজটির ক্রুরা দুটো লাইফবোটে করে আসতে আসতে চিৎকার করছিল এই বলে যে জাহাজ বিস্ফোরিত হতে যাচ্ছে কিছুক্ষণের মধ্যে। কিন্তু তাদের আওয়াজ ঠিকমত বুঝতে পারছিল না তীরে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন। এদিকে ঢেউয়ের ধাক্কায় মন্ট-ব্ল্যাঙ্ক এসে আটকাল ৬ নম্বর জেটিতে, রিচমন্ডের রাস্তার একেবারে পাশেই। vlcsnap-2017-01-25-14h46m35s019 জাহাজে আগুন লাগার ঘটনা দেখছে লোকজন। (হেরিটেজ মিনিটস এর চলচ্চিত্রের ভিডিও থেকে নেয়া) ভীড় করে থাকা লোকজন যখন জানতে পারল কী ভয়ঙ্কর কাণ্ড ঘটতে যাচ্ছে কিছুক্ষণের মধ্যে তখন আর খুব একটা সময় নেই। আতঙ্কে ছুটতে শুরু করল তারা। দ্রুত সে জায়গা ছেড়ে যেতে লাগল সবাই। পাশেই রেল স্টেশন। খবরটা পেয়ে স্টেশনের চিফ ক্লার্ক উইলিয়াম লভেটের সাথে কোলম্যানও বের হয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময়, কিছু একটা মনে পরে গেল কোলম্যানের। হঠাৎ করেই অফিসের দিকে ফিরে যেতে শুরু করলেন তিনি। মৃত্যু ধেয়ে আসছে, জান হাতে নিয়ে পালানোর সময়টুকুও প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। এমন একটা মুহূর্তে অফিসে ঢুকে টেলিগ্রাফের বার্তা পাঠানোর যন্ত্রটায় হাত দিলেন কোলম্যান। আগের রাতে নিউ ব্রুনসউইক এর সেইন্ট জন ছেড়ে আসা ১০ নম্বর যাত্রীবাহী ট্রেনটি রিচমন্ডে পৌঁছানোর কথা ছিল সকাল ৮টা ৫৫ মিনিটে। আর কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেটি এসে পড়ল বলে। ৩০০ জনের মত যাত্রী ছিল সে ট্রেনে। বাঁচার তাগিদে স্টেশন ছেড়ে যাবার ঠিক আগ মুহূর্তে কোলম্যানের মনে পড়েছিল তাদের কথা। যে ট্রেনগুলো এই মুহূর্তে হ্যালিফ্যাক্সের দিকে আসছে সেগুলোও তো বিপদে পড়বে। ১০ নম্বর ট্রেনটা তো নিশ্চিত বিস্ফোরণের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে। এই ভেবে কোলম্যান টেলিগ্রাফে বার্তা পাঠানো শুরু করলেন হ্যালিফেক্সগামী ট্রেনগুলো থামানোর জন্য। vlcsnap-2017-01-25-14h49m14s711 বার্তা পাঠাচ্ছেন কোলম্যান। (চলচ্চিত্রের ভিডিও থেকে নেয়া ছবি) জীবনের অন্তিম মুহূর্তে পৌঁছে টেলিগ্রাফে বার্তা লিখলেন কোলম্যান- “ট্রেন থামাও। ৬ নম্বর জেটির কাছে গোলাবারুদ ভর্তি জাহাজে আগুন ধরেছে এবং এখনই বিস্ফোরিত হবে। হয়ত এটাই হতে যাচ্ছে আমার পাঠানো শেষ মেসেজ। বিদায় বন্ধুরা।” রিচমন্ডের আগের স্টেশন রকিংহাম থেকে বেডফোর্ড, উইন্ডসর জংশন, এলমসডেল, স্টিওয়েক, তুরো পর্যন্ত মেসেজ পাঠাতে সক্ষম হলেন কোলম্যান। এরপর নিস্তব্ধ হয়ে গেল তার হাত দুটো। ৯ টা ৫ মিনিটের কয়েক সেকেন্ড আগে বিস্ফোরিত হল মন্ট-ব্ল্যাঙ্কের কার্গো। গোটা জাহাজ খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে গেল সাথে সাথে। বিস্ফোরণ কেন্দ্রের তাপমাত্রা হল পাঁচ হাজার ডিগ্রী সেলসিয়াস।

Related questions

উত্তর সন্ধানী! বেস্ট বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর ওয়েবসাইট। প্রশ্ন করুন, উত্তর নিন, সমস্যা সমাধান করুন ।
উত্তর সন্ধানী কি?
উত্তর সন্ধানী বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর এর ওয়েবসাইট।
গোপন প্রশ্ন ও উত্তর। ডিজিটাল শিক্ষায় প্রশ্নের উত্তরের সেরা ওয়েবসাইট।
...