in ইতিহাস ও নিদর্শন by
তৈমুর বিন তারাগাই বারলাস সম্পর্কে কিছু লিখ?

2 Answers

0 votes
by
 
Best answer
তৈমুরের পুনর্গঠন রাজত্বকাল ৯ এপ্রিল ১৩৭০ – ১৪ ফেব্রুয়ারি ১৪০৫ রাজ্যাভিষেক ৯ এপ্রিল ১৩৭০ বালখ[১] পূর্ণ নাম সুজা-উদ্-দীন তৈমুর[২] জন্ম ৯ এপ্রিল ১৩৩৬[১] জন্মস্থান কিশ, চাগতাই খানাত মৃত্যু ১৯ ফেব্রুয়ারি ১৪০৫ (বয়স ৬৮) মৃত্যুস্থান ওতরার, ফারাব, সমাধিস্থল ঘুর-এ-আমীর, সমরকন্দ পূর্বসূরি আমির হুসাইন উত্তরসূরি খলিল সুলতান দাম্পত্যসঙ্গী Saray Mulk Khanum Chulpan Mulk Agha Aljaz Turkhan Agha Tukal Khanum Dil Shad Agha Touman Agha Other consorts সন্তানাদি মিরান শাহ শাহরুখ মির্জা রাজবংশ বারলাস তৈমুরদ পিতা আমীর তারাগাই মাতা তেকিনা খাতুন ধর্মবিশ্বাস ইসলাম। তৈমুর বিন তারাগাই বারলাস (চাগাতাই ভাষায়: تیمور - তেমোর্, লোহা) (১৩৩৬ - ফেব্রুয়ারি, ১৪০৫) ১৪শ শতকের একজন তুর্কী-মোঙ্গল সেনাধ্যক্ষ। তিনি পশ্চিম ও মধ্য এশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিজ দখলে এনে তৈমুরীয় সম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন যা ১৩৭০ থেকে ১৪০৫ সাল পর্যন্ত নেতৃত্বে আসীন ছিল। এই অপরাজেয় সমরবিদ ইতিহাসের অন্যতম সফল সেনানায়ক হিসেবে পরিগণিত হন।[১][৭][৮] এছাড়াও তাঁর কারণেই তৈমুরীয় রাজবংশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এই বংশ কোনো না কোনোভাবে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে নেতৃত্বে আসীন ছিল। তিনি তিমুরে ল্যাংগ্ (ফার্সি ভাষায়: تیمور لنگ ) নামেও পরিচিত, যার অর্থ খোঁড়া তৈমুর। তাঁর আসল নাম তৈমুর বেগ। যুদ্ধ করতে গিয়ে তিনি আহত হন, যার ফলে তাঁর একটি পা অকেজো হয়ে যায় এবং তিনি খোঁড়া বা ল্যাংড়া হয়ে যান। তিনি পূর্বপুরুষ মহান সেলযুক সাম্রাজ্যের শাসক সুলতান তুঘরিল বেগকে অনুপ্রেরণা হিসেবে অনুসরণ করতেন। তিনি তুঘরিল বেগের সরাসরি বংশধর না হলেও তুঘরিল বেগ যে অর্ঘুজ গোত্রে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেই অর্গুজ গোত্রেই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এবং তিনিও আলেকজান্ডার ও চেঙ্গিস খানের মতো বিশ্বজয়ে সৈন্যবাহিনী নিয়ে বের হয়েছিলেন। এ নিয়ে বিশ্ব বিজেতা তৈমুর লং, দিগ্বিজয়ী তৈমুর, দুনিয়া কাঁপানো তৈমুর লং নামের অনেকগুলো বইও রচিত হয়েছে। তাঁর সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ছিল আধুনিক তুরস্ক, সিরিয়া, ইরাক, কুয়েত, ইরান থেকে মধ্য এশিয়ার অধিকাংশ অংশ যার মধ্যে রয়েছে কাজাখস্তান, আফগানিস্তান, রাশিয়া, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজিস্তান, পাকিস্তান, ভারতবর্ষ এমনকি চীনের কাশগর পর্যন্ত। তিনি একটি আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ রচনা করিয়ে যান যার নাম তুজুক ই তৈমুরী। জন জোসেফ স্যান্ডার্সের মতে, তৈমুর হলেন একটি ইসলামিক ও ইরানীয় সমাজের ফসল, এবং স্তেপ যাযাবর নয় ১৪০৫ সালের জানুয়ারি মাস। কাজাখস্তান জুড়ে নেমে এসেছে অসহনীয় শীত। প্রবল তুষারপাতে সমস্ত পথঘাট চলাচলের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। শীতের তীব্রতায় পথের ধারে মরে পড়ে আছে পশুপাখির দল। এমন বৈরী পরিবেশে একদল অভিযাত্রীর দেখা মিললো চীনের দিকে অগ্রসররত অবস্থায়। সৈন্যসামন্ত, হাতি, ঘোড়া বোঝাই সেই দলটি তাদের অধিপতি তৈমুরের নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে চীন দখলের উদ্দেশ্যে। তৈমুর, যার নাম শুনলে পৃথিবীর যেকোনো রাজার সিংহাসন থর থর করে কাঁপে, তার পরিস্থিতিও বেশ সুবিধাজনক না। তার উপরে আজ সকাল থেকে তার শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বেড়ে গেছে। দলের কবিরাজরা তৈমুরকে পরীক্ষা করেন। তাদের চোখে মুখে ফুটে উঠে শঙ্কার ছাপ। এই মুহূর্তে পিছু না হটলে তৈমুরকে বাঁচানো সম্ভব নয়। কিন্তু তৈমুর নাছোড়বান্দা। রাগে গজ গজ করে উঠেন তিনি। শেষপর্যন্ত কাজাখস্তানের শীতের কাছে পরাস্ত হবেন! তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল, “পিছু হটা চলবে না। তৈমুর কখনও পিছু হটতে পারে না”। হাকিম নড়ে তো হুকুম নড়ে না। তাই শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এগিয়ে চললো তৈমুর বাহিনী। কিন্তু পথিমধ্যে শত শত সৈনিক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো। তৈমুরের নিজের অবস্থারও দিন দিন অবনতি হতে থাকলো। শেষ পর্যন্ত তৈমুর হার মানলেন। কাজাখস্তানের ওতরার পর্যন্ত এসে ভেঙে পড়লেন তৈমুর। শীতের কারণে পিছু হটাও অসম্ভব হয়ে উঠলো। শেষপর্যন্ত ফেব্রুয়ারির ১৮ তারিখ সকালে কাজাখস্তানের শীতের থাবায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন এশিয়ার ত্রাস তৈমুর লং। পৃথিবীর রাজাধিরাজরা যা করতে পারেননি, তা করে দেখালো সামান্য শীত! দাফনের উদ্দেশ্যে তৈমুরকে সমরকন্দে ফিরিয়ে আনা হলো। শেষ ইচ্ছানুযায়ী তার কবরে বড় বড় অক্ষরে লিখে দেয়া হলো, “আমি যেদিন ফের জেগে উঠবো, সেদিন সমগ্র পৃথিবী আমার ভয়ে কাঁপবে!” পৃথিবী শাসন করা বীরদের নাম নিলে প্রথমেই উঠে আসবে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট, চেঙ্গিস খান, কুবলাই খান, জুলিয়াস সিজার, তৈমুর লং সহ বহু শাসকের নাম। কিন্তু অন্যান্য শাসকদের ন্যায় তৈমুর কোনো রাজপরিবারের সন্তান ছিলেন না। সামান্য ভূস্বামীর সন্তান তৈমুর ধীরে ধীরে ক্ষমতার শীর্ষে আরোহণ করেছেন, হয়েছেন বিশ্বজয়ী বীর। তৈমুর তার নিষ্ঠুরতার জন্য অন্যান্য শাসকদের নিকট ছিলেন এক মূর্তিমান আতংক। এমনকি মৃত্যুর পরেও তিনি পৃথিবীকে জানান দিয়ে গেছেন তার ফিরে আসার কথা। কেশ শহরের দূরন্ত শিশু ১৩৩৬ সালের কথা। গভীর রাত। উজবেকিস্তানের প্রতিটি ঘরের বাতি নিভে গেছে। গভীর ঘুমে বিভোর উজবেকবাসী। কিন্তু ঘুম নেই শুধু একটি ঘরে। সমরকন্দ থেকে প্রায় ৫০ মাইল দূরে অবস্থিত কেশ নগরীর স্কারদু শহরের সবচেয়ে বড় বাড়িতে এখনও নিভু নিভু অবস্থায় প্রদীপ জ্বলছে। ঘরের বাইরে উঠানে অস্থির পায়চারি করছেন বাড়ির মালিক তারাগে। তিনি এই অঞ্চলের ভূস্বামী। হঠাৎ তার স্ত্রীর প্রসব বেদনা ওঠায় তিনি চিন্তিত। শহরে লোক পাঠানো হয়েছে ধাত্রীর খোঁজে, কিন্তু তারা এখনও ফিরে আসেনি। মনে মনে সৃষ্টিকর্তার নিকট প্রার্থনা করছেন তিনি। শেষপর্যন্ত তার ডাকে সাড়া দিলেন সৃষ্টিকর্তা। ভোরের প্রথম আলোর সাথে ভূমিষ্ঠ হলো এক পুত্রসন্তান। পুত্রের নাম রাখা হলো ‘তৈমুর’, যার অর্থ ‘লৌহ’। ইউরোপে তিনি ‘তিমুর’ (Timur) বা ‘তিমুরলেন’ (Timurlane) নামে পরিচিত। প্রযুক্তির সাহায্যে নির্মিত তৈমুরের মুখাবয়ব হয়তো তার নামকরণের সার্থকতা প্রমাণের জন্যই তৈমুর বেশ দুরন্ত এবং সাহসী কিশোর হিসেবে বেড়ে ওঠেন। এমনকি ছোটখাট ডাকাত বাহিনীও গড়ে তুলেন তিনি। এলাকা ঘুরে ঘুরে ছোটখাট জিনিস লুট করে বেড়াতো তারা। দেখতে দেখতে তৈমুর যৌবনে পদার্পণ করেন। বয়সের সাথে সাথে তার শক্তি এবং সাহস, দুটোই বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার সত্যিকারের দস্যুদল গঠন করেন তিনি। তৈমুরের দাপটে এলাকার ধনীরা আতংকিত হয়ে থাকতো। যুবক তৈমুরের ডান পা এক দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে যায়। কিন্তু ঠিক কীভাবে তিনি খোঁড়া হয়েছিলেন, তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। একদল ইতিহাসবিদের মতে, একবার তৈমুর তার দলবল নিয়ে এক বণিকের ভেড়ার পাল লুট করতে যান। কিন্তু ফেরার পথে তৈমুর রাখালদের তীরের আঘাতে মারাত্মকভাবে জখম হন। তার ডান হাত এবং ডান পা চিরতরে অকেজো হয়ে যায়। এরপর থেকে তিনি ‘খোঁড়া তৈমুর’ বা ‘তৈমুর-ই-লং’ নামে পরিচিত হন। তৈমুর লং এর উত্থান এক পা খোঁড়া হয়ে গেলেও তৈমুর দমে যাননি। আহত বাঘের মতো আরও হিংস্র হয়ে ওঠেন তিনি। তৈমুরের সময়ের প্রায় একশত বছর পূর্বে চেঙ্গিস খান পুরো পৃথিবীর শাসন করেছিলেন। তৈমুর মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন, তিনিও চেঙ্গিসের মতো পৃথিবী শাসন করবেন। তাই খোঁড়া পা নিয়ে সমরবিদ্যার প্রশিক্ষণ নেন তিনি। কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি অস্ত্র চালনায় বেশ পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তৈমুর যখন টগবগে যুবক, তখন সমগ্র মধ্য এশিয়া (আমু দরিয়া এবং সির দরিয়া নদীবিধৌত অঞ্চল) জুড়ে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়। বিভিন্ন যাযাবর দল এবং স্থানীয় নেতাদের মধ্যে প্রায়ই যুদ্ধ লেগে থাকতো। অপরদিকে স্থানীয় নেতারা অনেকটা পশ্চিমা মতাদর্শে শাসন করতেন। তারা চেঙ্গিস খান, কুবলাই খানের শাসনব্যবস্থা পরিত্যাগ করেছিলেন। এই কারণে স্থানীয় জনগণ তাদের উপর অসন্তুষ্ট ছিল। ১৩৪৭ সালে আমির কাজগান স্থানীয় নেতা চাগতাই খানাতের সর্দার বরলদেকে হটিয়ে নিজে ক্ষমতা দখল করেন। কিন্তু ১৩৫৮ সালে তিনি ঘাতকের হাতে নিহত হন। মানচিত্রে তৈমুরের সাম্রাজ্য এবার ক্ষমতায় আসেন তুঘলক তিমুর। তিনি বারলাস অঞ্চলের শাসক হিসেবে তৈমুর লংকে নিযুক্ত করেন। তৈমুর ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই তুঘলককে অপসারণ করার নীলনকশা তৈরি করতে থাকেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তিনি ধরা পড়ে যান। তুঘলক তিমুর তৈমুরকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। এবার তৈমুর লং স্বয়ং আমির কাজগানের নাতি আমির হুসেইনের সাথে হাত মেলান। তৈমুর হুসেইনের বোনকে বিয়ে করেন। তারা দুজন মিলে ১৩৬৪ সালে তুঘলক তিমুরের পুত্র আমির খোজাকে পরাজিত করে মধ্য এশিয়ার সিংহাসনে বসেন। তৈমুর এবং হুসেইন যৌথভাবে শাসন করতে থাকেন। কিন্তু তৈমুর সন্তুষ্ট ছিলেন না। তিনি হুসেইনকে হটিয়ে দেয়ার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। এদিকে ১৩৭০ সালে তৈমুরের স্ত্রী মৃত্যুবরণ করেন। এই মৃত্যু তৈমুরের জন্য শাপে বর হয়ে আসে। এবার আর হুসেইনের সাথে কোনো পারিবারিক বন্ধন থাকলো না। তৈমুর আমির হুসেইনকে হত্যা করে নিজেকে মধ্য এশিয়ার একচ্ছত্র অধিপতি হিসেবে ঘোষণা করেন। শুরু হয় তৈমুর লং এর শাসন। সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ তৈমুর মঙ্গোল সাম্রাজ্যের খান হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু চেঙ্গিস খানের সাথে পারিবারিক সম্পর্ক না থাকায় তিনি মঙ্গোলদের আমির হিসেবে শাসন করেন। তিনি রণকৌশলে অত্যন্ত পারদর্শী ছিলেন। তাই ক্ষমতা লাভের কয়েক বছরের মাথায় অনায়াসেই পুরো মধ্য এশিয়ার অধিপতি হয়ে যান। কিন্তু তৈমুর আরও চান। তিনি চেঙ্গিসের মতো পৃথিবী শাসন করতে চান। সভাসদদের সাথে তৈমুর লং তৈমুর তার সামনে চেঙ্গিস খানের মানচিত্র মেলে ধরেন। পুরো মানচিত্রে একবার চোখ বুলিয়ে নেন তিনি। এতে তার বিশ্বজয়ের আকাঙ্ক্ষা আরো বেড়ে গেলো। পরদিনই তিনি বিশাল সেনাবহর নিয়ে বিশ্বজয়ে বের হন। তৈমুরের অভিযানের খবর পেয়ে ক্ষমতাচ্যুত মঙ্গোল খান তোকতামিশ তৈমুরের সাহায্য প্রার্থনা করেন। তোকতামিশ খান শত্রুদের হাতে রাশিয়ার মসনদ হারিয়েছিলেন। তৈমুর লং বিশাল সেনাবহর নিয়ে রাশিয়া আক্রমণ করেন এবং তোকতামিশ খানকে রাশিয়ার হৃত সিংহাসন ফিরিয়ে দেন। এরপরই তৈমুর পারস্যের দিকে রওয়ানা হন। তৈমুরের পারস্য অভিযান শুরু হয় হেরাত নগরী দখলের মাধ্যমে। প্রথমদিকে কার্তিদ সাম্রাজ্যের রাজধানী হেরাত তৈমুরের নিকট আত্মসমর্পণ করতে অপারগতা প্রকাশ করে। তৈমুর যেন এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। তিনি হেরাতের সকল নাগরিককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করার আদেশ দেন। আদেশ পাওয়া মাত্র তৈমুরবাহিনী হেরাতবাসীর উপর চড়াও হয়ে ওঠে। তৈমুর বাহিনীর আগ্রাসনে মৃত্যু-নগরীতে পরিণত হয় হেরাত। শেষপর্যন্ত ১৩৮৩ সালে হেরাত তৈমুরের পায়ে লুটিয়ে পড়ে পরাজয় স্বীকার করে। এরপর তৈমুর তার বাহিনী নিয়ে আরো পশ্চিমে অগ্রসর হতে থাকেন। ততদিনে তৈমুরের নৃশংসতার খবর পারস্যের ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। তৈমুর তেহরানের মাটিতে পা দিলেন। তেহরান নির্দ্বিধায় তৈমুরের নিকট আত্মসমর্পণ করে। ধীরে ধীরে এশিয়া মাইনর, সিরিয়া, আফগানিস্তান এবং ইরাকের কিছু অংশ তৈমুরের দখলে চলে আসে। তৈমুর যখন দেশ দখলে ব্যস্ত, তখন তার কানে খবর পৌঁছে, বিভিন্ন অঞ্চলের নেতারা তৈমুরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। ক্রুদ্ধ তৈমুর অভিযান ক্ষান্ত দিয়ে কঠোর হাতে বিদ্রোহ দমন করেন। আফগানিস্তানে বিদ্রোহীদের হত্যা করার পর তিনি একটি মিনার নির্মাণ করেন। মিনার নির্মাণের সরঞ্জাম ছিল বিদ্রোহীদের মস্তক। ইস্পাহান শহরের ৭০ হাজার বিদ্রোহীর মাথার খুলি একটি অপরটির উপর জুড়ে দিয়ে মিনার তৈরি করা হয়। এভাবে ১৩৮৫ সালে পুরো পারস্য তৈমুরের দখলে চলে আসে। তৈমুর পুরো পারস্য দখল করে নেন ১৩৮৭ সালে তৈমুরের মিত্র তোকতামিশ মধ্য এশিয়া আক্রমণ করে বসেন। নিজের ঘর বাঁচাতে তৈমুর নিজ অঞ্চলে ফিরে আসেন। তৈমুরের বিশাল বাহিনীর হাতে পরাজয় ঘটে তোকতামিশ খানের। তোকতামিশ খান রাশিয়ায় ফেরত যান। তৈমুর ১৩৯২ সালে পুনরায় পশ্চিমে অভিযান চালান এবং ইরাক দখল করে নেন। মঙ্গোল খানদের গৌরব ‘গোল্ডেন হোর্ড’ বা ‘ইলখানাত‘ তৈমুরের নিকট অসহায় পরাজয় বরণ করে। তৈমুরের পূর্বে কেউ ইলখানাত ধ্বংস করতে পারেনি। এবার তিনি রাশিয়ার দিকে অগ্রসর হন। তেরেক নদীর তীরে তোকতামিশ খান এবং তৈমুর ফের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। এবারও তৈমুরের কাছে পরাজিত হন তিনি। তৈমুর ১৩৯৫ সালে মস্কো দখল করেন। অগ্নিস্নাত মস্কোর সামনে দাঁড়িয়ে তৈমুর তৃপ্তির হাসি দেন। তবে তার ক্ষুধা তখনও মিটেনি। সেদিনই মনে মনে ছক কষতে থাকেন তৈমুর। এবার ভারতবর্ষ জয়ের পালা। ভারতবর্ষে তৈমুর ভারতবর্ষ আজীবন তৈমুরকে মনে রাখবে তার নৃশংসতার জন্য। ভারতবর্ষের অধিপতি ফিরোজ শাহের মৃত্যুর পর ক্ষমতার দ্বন্দ্বে বিভিন্ন নেতারা অন্তর্দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। চতুর তৈমুর এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইলেন না। ১৩৯৮ সালের শেষের দিকে প্রায় ৯০ হাজার সৈন্য নিয়ে সিন্ধু নদের পাড়ে হাজির হন তৈমুর লং। দূর থেকে দেখে ভয় পেয়ে যায় ভারতবাসী। যেন তৈমুর নয়, সাক্ষাত যমদূত তার বাহিনী নিয়ে হাজির হয়েছেন। সিন্ধু নদ পাড়ি দিয়েই তৈমুর হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠেন। নির্বিচারে সাধারণ মানুষ হত্যা করতে করতে দিল্লীর দিকে অগ্রসর হতে থাকেন তৈমুর। প্রায় এক লাখ মানুষ হত্যার পরে তিনি দিল্লী গিয়ে পৌঁছান। দিল্লীর সুলতান নাসিরুদ্দিন শাহ তুঘলক হস্তিবাহিনী নিয়ে তৈমুরকে আক্রমণ করে বসেন। বুদ্ধিমান তৈমুর এবার নতুন কৌশল অবলম্বন করলেন। হাজার হাজার উটের পিঠ খড়ের গাদা দিয়ে বোঝাই করলেন। এরপর খড়ের গাদায় আগুন লাগিয়ে উটগুলোকে হস্তিবাহিনীর দিকে হটিয়ে দেন। সুলতানের হস্তিবাহিনী জ্বলন্ত উটের আগ্রাসনে ভয় পেয়ে যায়। অবস্থা হিতে বিপরীত হয়ে যায়। হাতিগুলো উল্টো ঘুরে সুলতানকেই আক্রমণ করে বসে।
0 votes
by
৭১১ সাল; জলদস্যুদের দ্বারা এক মুসলিম নারী নির্যাতিতা হয়ে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসূফের নিকট এক মর্মস্পর্শী পত্র লিখলেন। নির্যাতিতা ঐ নারীর পত্র হাতে পাওয়ার পর হাজ্জাজ বিন ইউসূফ সিন্ধুর রাজা দাহিরের নিকট অভিযোগ জানালেন। জলদস্যুদের উপর তার কোনো প্রভাব নেই, কাজেই এক্ষেত্রে তার কিছুই করার নেই- এমন একটি পত্র রাজা দাহির হাজ্জাজ বিন ইউসূফকে লিখে পাঠালেন। হাজ্জাজ বিন ইউসূফ এই পত্রটি পেয়েই ভারতবর্ষে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে দুটি অভিযান ব্যর্থ হলেও তাঁর নিজ ভাতিজা মুহাম্মদ বিন কাশিম ভারত অভিযান চালিয়ে সফল হন। ৭১২ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে মুহাম্মদ বিন কাশিম সিন্ধু দখল করে নেন। এর পর থেকে পরবর্তী প্রায় তিন শতাব্দী ধরে মুসলিম সাম্রাজ্যের সাথে উত্তর ভারতের রাজপুত রাজ্যগুলোর যুদ্ধ লেগেই থাকতো, যার ফলে ধীরে ধীরে উত্তর ভারতে মুসলিম সুলতানি শাসন প্রতিষ্ঠা পায়। এদিকে আরব বিশ্বের সাথে বাণিজ্যের সুবাদে তারও বহু আগে দক্ষিণ ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে আরবদের বসবাস শুরু হতে থাকে। হযরত মুহাম্মদ (সা) এর মাধ্যমে পুনরায় ইসলাম প্রচার শুরু হলে এসব আরবদের অধিকাংশই ইসলাম গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে এসব আরব মুসলিমদের দ্বারা দক্ষিণ ভারতে বাহমানি সালতানাত আর দাক্ষিনাত্য সালতানাত প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এদিকে ত্রয়োদশ শতাব্দীর দিকে তুর্কীরা সাবেক রাজপুত ভূখন্ডগুলোকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠা করেন দিল্লী সালতানাত। একে একে মামলুক দাস বংশ, খিলজী রাজবংশ, তুঘলক আর লোদি বংশের ধারাবাহিকতায় মুঘল রাজবংশের হাতে ভারতের শাসন ক্ষমতা এসে পৌঁছায়। ১১৯১ সালে ত্বরাইনের প্রথম যুদ্ধে রাজপুত বীর পৃথ্বিরাজ চৌহানের কাছে শোচনীয় পরাজয় আর ১১৯২ সালে ত্বরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে পৃথ্বিরাজ চৌহানকে পরাজিত করে মুহাম্মদ ঘুরী ভারতের উপর নিজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। ১২০৬ সালে নিঃসন্তান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে মুহাম্মদ ঘুরীর সাম্রাজ্য তাঁর বিশ্বস্ত সব সেনাপতির মাঝে ভাগ হয়ে যায়। দিল্লীর শাসনভার লাভ করেন কুতুবউদ্দীন আইবেক নামক এক তুর্কী মামলুক সেনাপতি। তিনিই ভারতের দিল্লী সালতানাতের দাস বংশের প্রতিষ্ঠাতা। ১২০৬ থেকে ১২১০ সাল পর্যন্ত তিনি দিল্লী শাসন করেছিলেন। ১২১০ সালে পোলো খেলার সময় ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে তিনি মারা যান। কুতুবউদ্দীন আইবেকের কোনো পুত্রসন্তান না থাকায় আরাম শাহ সিংহাসনে বসেন। কুতুবউদ্দীন আইবেকের সাথে আরাম শাহর কী সম্পর্ক ছিলো তা স্পষ্ট না। তবে মুঘল সম্রাট আকবরের রাজসভার ঐতিহাসিক আবুল ফজল বলেছেন, আরাম শাহ ছিলেন কুতুবউদ্দীন আইবেকের ভাই। আরাম শাহ সিংহাসনে বসে অবশ্য স্বস্তি পাননি। সে সময় দিল্লীর রাজসভার অভিজাত প্রায় ৪০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত একটি কাউন্সিল ছিলো, যাদের একত্রে বলা হত ‘চিহালগানি’। এই চিহালগানি আরাম শাহের সিংহাসনে আরোহণের পর তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। বেশিরভাগ ঐতিহাসিকই একমত হয়েছেন যে, কুতুবউদ্দীন আইবেকের মৃত্যুর পর দিল্লীর আশেপাশে যোগ্য কেউ না থাকায় আরাম শাহকেই সিংহাসনে বসানো হয়। কিন্তু শীঘ্রই আরাম শাহ রাজ্য চালনায় তাঁর অযোগ্যতা প্রদর্শন করতে থাকেন। আর তাই চিহালগানি আরাম শাহের পরিবর্তে বাদাউনের গভর্নর শামসুদ্দীন ইলতুৎমিশকে সিংহাসনে বসাতে চাইলো। ইলতুৎমিশ সানন্দে এই প্রস্তাব গ্রহণ করে দিল্লী অধিকার করলেন। মামলুক দাস সালতানাতের সীমারেখা ব্যক্তিগত জীবনে ইলতুৎমিশ বেশ সাহসী আর যোগ্য শাসক ছিলেন। ১২১১ থেকে ১২৩৬ সাল পর্যন্ত তিনি দিল্লী শাসন করেছিলেন। এ সময় তাকে বেশ কিছু বিদ্রোহের মুখে পড়তে হয়েছিলো, তিনি দক্ষতার সাথে সেসব প্রতিহত করেন। এমনকি কুখ্যাত মোঙ্গল বাহিনীর সাথেও তাকে কয়েকবার লড়াই করতে হয়েছিলো। শাসনক্ষমতার শেষদিকে এসে ইলতুৎমিশ তাঁর উত্তরাধিকারী নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে যান। তাঁর পরে সিংহাসনে বসার মতো একমাত্র যোগ্য ছিলেন তাঁর বড় পুত্র। কিন্তু তিনি মারা যাওয়ায় ইলতুৎমিশকে বিকল্প উপায় ভাবতে হচ্ছিলো। এক্ষেত্রে তাঁর সামনে তাঁর কন্যা সুলতানা রাজিয়া ছাড়া আর কেউ ছিলো না। কারন তাঁর অন্যান্য ছোট পুত্রের কেউই রাজ্য চালনার জন্য উপযুক্ত ছিলো না।

Related questions

উত্তর সন্ধানী! বেস্ট বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর ওয়েবসাইট। প্রশ্ন করুন, উত্তর নিন, সমস্যা সমাধান করুন ।
উত্তর সন্ধানী কি?
উত্তর সন্ধানী বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর এর ওয়েবসাইট।
গোপন প্রশ্ন ও উত্তর। ডিজিটাল শিক্ষায় প্রশ্নের উত্তরের সেরা ওয়েবসাইট।
...