in ইতিহাস ও নিদর্শন by
রাজিয়া সুলতানা সম্পর্কে কিছু লিখ?

2 Answers

0 votes
by
 
Best answer
৭১১ সাল; জলদস্যুদের দ্বারা এক মুসলিম নারী নির্যাতিতা হয়ে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসূফের নিকট এক মর্মস্পর্শী পত্র লিখলেন। নির্যাতিতা ঐ নারীর পত্র হাতে পাওয়ার পর হাজ্জাজ বিন ইউসূফ সিন্ধুর রাজা দাহিরের নিকট অভিযোগ জানালেন। জলদস্যুদের উপর তার কোনো প্রভাব নেই, কাজেই এক্ষেত্রে তার কিছুই করার নেই- এমন একটি পত্র রাজা দাহির হাজ্জাজ বিন ইউসূফকে লিখে পাঠালেন। হাজ্জাজ বিন ইউসূফ এই পত্রটি পেয়েই ভারতবর্ষে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে দুটি অভিযান ব্যর্থ হলেও তাঁর নিজ ভাতিজা মুহাম্মদ বিন কাশিম ভারত অভিযান চালিয়ে সফল হন। ৭১২ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে মুহাম্মদ বিন কাশিম সিন্ধু দখল করে নেন। এর পর থেকে পরবর্তী প্রায় তিন শতাব্দী ধরে মুসলিম সাম্রাজ্যের সাথে উত্তর ভারতের রাজপুত রাজ্যগুলোর যুদ্ধ লেগেই থাকতো, যার ফলে ধীরে ধীরে উত্তর ভারতে মুসলিম সুলতানি শাসন প্রতিষ্ঠা পায়। এদিকে আরব বিশ্বের সাথে বাণিজ্যের সুবাদে তারও বহু আগে দক্ষিণ ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে আরবদের বসবাস শুরু হতে থাকে। হযরত মুহাম্মদ (সা) এর মাধ্যমে পুনরায় ইসলাম প্রচার শুরু হলে এসব আরবদের অধিকাংশই ইসলাম গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে এসব আরব মুসলিমদের দ্বারা দক্ষিণ ভারতে বাহমানি সালতানাত আর দাক্ষিনাত্য সালতানাত প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এদিকে ত্রয়োদশ শতাব্দীর দিকে তুর্কীরা সাবেক রাজপুত ভূখন্ডগুলোকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠা করেন দিল্লী সালতানাত। একে একে মামলুক দাস বংশ, খিলজী রাজবংশ, তুঘলক আর লোদি বংশের ধারাবাহিকতায় মুঘল রাজবংশের হাতে ভারতের শাসন ক্ষমতা এসে পৌঁছায়। ১১৯১ সালে ত্বরাইনের প্রথম যুদ্ধে রাজপুত বীর পৃথ্বিরাজ চৌহানের কাছে শোচনীয় পরাজয় আর ১১৯২ সালে ত্বরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে পৃথ্বিরাজ চৌহানকে পরাজিত করে মুহাম্মদ ঘুরী ভারতের উপর নিজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। ১২০৬ সালে নিঃসন্তান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে মুহাম্মদ ঘুরীর সাম্রাজ্য তাঁর বিশ্বস্ত সব সেনাপতির মাঝে ভাগ হয়ে যায়। দিল্লীর শাসনভার লাভ করেন কুতুবউদ্দীন আইবেক নামক এক তুর্কী মামলুক সেনাপতি। তিনিই ভারতের দিল্লী সালতানাতের দাস বংশের প্রতিষ্ঠাতা। ১২০৬ থেকে ১২১০ সাল পর্যন্ত তিনি দিল্লী শাসন করেছিলেন। ১২১০ সালে পোলো খেলার সময় ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে তিনি মারা যান। কুতুবউদ্দীন আইবেকের কোনো পুত্রসন্তান না থাকায় আরাম শাহ সিংহাসনে বসেন। কুতুবউদ্দীন আইবেকের সাথে আরাম শাহর কী সম্পর্ক ছিলো তা স্পষ্ট না। তবে মুঘল সম্রাট আকবরের রাজসভার ঐতিহাসিক আবুল ফজল বলেছেন, আরাম শাহ ছিলেন কুতুবউদ্দীন আইবেকের ভাই। আরাম শাহ সিংহাসনে বসে অবশ্য স্বস্তি পাননি। সে সময় দিল্লীর রাজসভার অভিজাত প্রায় ৪০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত একটি কাউন্সিল ছিলো, যাদের একত্রে বলা হত ‘চিহালগানি’। এই চিহালগানি আরাম শাহের সিংহাসনে আরোহণের পর তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। বেশিরভাগ ঐতিহাসিকই একমত হয়েছেন যে, কুতুবউদ্দীন আইবেকের মৃত্যুর পর দিল্লীর আশেপাশে যোগ্য কেউ না থাকায় আরাম শাহকেই সিংহাসনে বসানো হয়। কিন্তু শীঘ্রই আরাম শাহ রাজ্য চালনায় তাঁর অযোগ্যতা প্রদর্শন করতে থাকেন। আর তাই চিহালগানি আরাম শাহের পরিবর্তে বাদাউনের গভর্নর শামসুদ্দীন ইলতুৎমিশকে সিংহাসনে বসাতে চাইলো। ইলতুৎমিশ সানন্দে এই প্রস্তাব গ্রহণ করে দিল্লী অধিকার করলেন। মামলুক দাস সালতানাতের সীমারেখা ব্যক্তিগত জীবনে ইলতুৎমিশ বেশ সাহসী আর যোগ্য শাসক ছিলেন। ১২১১ থেকে ১২৩৬ সাল পর্যন্ত তিনি দিল্লী শাসন করেছিলেন। এ সময় তাকে বেশ কিছু বিদ্রোহের মুখে পড়তে হয়েছিলো, তিনি দক্ষতার সাথে সেসব প্রতিহত করেন। এমনকি কুখ্যাত মোঙ্গল বাহিনীর সাথেও তাকে কয়েকবার লড়াই করতে হয়েছিলো। শাসনক্ষমতার শেষদিকে এসে ইলতুৎমিশ তাঁর উত্তরাধিকারী নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে যান। তাঁর পরে সিংহাসনে বসার মতো একমাত্র যোগ্য ছিলেন তাঁর বড় পুত্র। কিন্তু তিনি মারা যাওয়ায় ইলতুৎমিশকে বিকল্প উপায় ভাবতে হচ্ছিলো। এক্ষেত্রে তাঁর সামনে তাঁর কন্যা সুলতানা রাজিয়া ছাড়া আর কেউ ছিলো না। কারন তাঁর অন্যান্য ছোট পুত্রের কেউই রাজ্য চালনার জন্য উপযুক্ত ছিলো না। সুলতান ইলতুৎমিশ তাই তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর কন্যা রাজিয়াকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যান।
0 votes
by
৭১১ সাল; জলদস্যুদের দ্বারা এক মুসলিম নারী নির্যাতিতা হয়ে ইরাকের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসূফের নিকট এক মর্মস্পর্শী পত্র লিখলেন। নির্যাতিতা ঐ নারীর পত্র হাতে পাওয়ার পর হাজ্জাজ বিন ইউসূফ সিন্ধুর রাজা দাহিরের নিকট অভিযোগ জানালেন। জলদস্যুদের উপর তার কোনো প্রভাব নেই, কাজেই এক্ষেত্রে তার কিছুই করার নেই- এমন একটি পত্র রাজা দাহির হাজ্জাজ বিন ইউসূফকে লিখে পাঠালেন। হাজ্জাজ বিন ইউসূফ এই পত্রটি পেয়েই ভারতবর্ষে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে দুটি অভিযান ব্যর্থ হলেও তাঁর নিজ ভাতিজা মুহাম্মদ বিন কাশিম ভারত অভিযান চালিয়ে সফল হন। ৭১২ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে মুহাম্মদ বিন কাশিম সিন্ধু দখল করে নেন। এর পর থেকে পরবর্তী প্রায় তিন শতাব্দী ধরে মুসলিম সাম্রাজ্যের সাথে উত্তর ভারতের রাজপুত রাজ্যগুলোর যুদ্ধ লেগেই থাকতো, যার ফলে ধীরে ধীরে উত্তর ভারতে মুসলিম সুলতানি শাসন প্রতিষ্ঠা পায়। এদিকে আরব বিশ্বের সাথে বাণিজ্যের সুবাদে তারও বহু আগে দক্ষিণ ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে আরবদের বসবাস শুরু হতে থাকে। হযরত মুহাম্মদ (সা) এর মাধ্যমে পুনরায় ইসলাম প্রচার শুরু হলে এসব আরবদের অধিকাংশই ইসলাম গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে এসব আরব মুসলিমদের দ্বারা দক্ষিণ ভারতে বাহমানি সালতানাত আর দাক্ষিনাত্য সালতানাত প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এদিকে ত্রয়োদশ শতাব্দীর দিকে তুর্কীরা সাবেক রাজপুত ভূখন্ডগুলোকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠা করেন দিল্লী সালতানাত। একে একে মামলুক দাস বংশ, খিলজী রাজবংশ, তুঘলক আর লোদি বংশের ধারাবাহিকতায় মুঘল রাজবংশের হাতে ভারতের শাসন ক্ষমতা এসে পৌঁছায়। ১১৯১ সালে ত্বরাইনের প্রথম যুদ্ধে রাজপুত বীর পৃথ্বিরাজ চৌহানের কাছে শোচনীয় পরাজয় আর ১১৯২ সালে ত্বরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে পৃথ্বিরাজ চৌহানকে পরাজিত করে মুহাম্মদ ঘুরী ভারতের উপর নিজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। ১২০৬ সালে নিঃসন্তান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে মুহাম্মদ ঘুরীর সাম্রাজ্য তাঁর বিশ্বস্ত সব সেনাপতির মাঝে ভাগ হয়ে যায়। দিল্লীর শাসনভার লাভ করেন কুতুবউদ্দীন আইবেক নামক এক তুর্কী মামলুক সেনাপতি। তিনিই ভারতের দিল্লী সালতানাতের দাস বংশের প্রতিষ্ঠাতা। ১২০৬ থেকে ১২১০ সাল পর্যন্ত তিনি দিল্লী শাসন করেছিলেন। ১২১০ সালে পোলো খেলার সময় ঘোড়ার পিঠ থেকে পড়ে তিনি মারা যান। কুতুবউদ্দীন আইবেকের কোনো পুত্রসন্তান না থাকায় আরাম শাহ সিংহাসনে বসেন। কুতুবউদ্দীন আইবেকের সাথে আরাম শাহর কী সম্পর্ক ছিলো তা স্পষ্ট না। তবে মুঘল সম্রাট আকবরের রাজসভার ঐতিহাসিক আবুল ফজল বলেছেন, আরাম শাহ ছিলেন কুতুবউদ্দীন আইবেকের ভাই। আরাম শাহ সিংহাসনে বসে অবশ্য স্বস্তি পাননি। সে সময় দিল্লীর রাজসভার অভিজাত প্রায় ৪০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত একটি কাউন্সিল ছিলো, যাদের একত্রে বলা হত ‘চিহালগানি’। এই চিহালগানি আরাম শাহের সিংহাসনে আরোহণের পর তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করে। বেশিরভাগ ঐতিহাসিকই একমত হয়েছেন যে, কুতুবউদ্দীন আইবেকের মৃত্যুর পর দিল্লীর আশেপাশে যোগ্য কেউ না থাকায় আরাম শাহকেই সিংহাসনে বসানো হয়। কিন্তু শীঘ্রই আরাম শাহ রাজ্য চালনায় তাঁর অযোগ্যতা প্রদর্শন করতে থাকেন। আর তাই চিহালগানি আরাম শাহের পরিবর্তে বাদাউনের গভর্নর শামসুদ্দীন ইলতুৎমিশকে সিংহাসনে বসাতে চাইলো। ইলতুৎমিশ সানন্দে এই প্রস্তাব গ্রহণ করে দিল্লী অধিকার করলেন। মামলুক দাস সালতানাতের সীমারেখা ব্যক্তিগত জীবনে ইলতুৎমিশ বেশ সাহসী আর যোগ্য শাসক ছিলেন। ১২১১ থেকে ১২৩৬ সাল পর্যন্ত তিনি দিল্লী শাসন করেছিলেন। এ সময় তাকে বেশ কিছু বিদ্রোহের মুখে পড়তে হয়েছিলো, তিনি দক্ষতার সাথে সেসব প্রতিহত করেন। এমনকি কুখ্যাত মোঙ্গল বাহিনীর সাথেও তাকে কয়েকবার লড়াই করতে হয়েছিলো। শাসনক্ষমতার শেষদিকে এসে ইলতুৎমিশ তাঁর উত্তরাধিকারী নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে যান। তাঁর পরে সিংহাসনে বসার মতো একমাত্র যোগ্য ছিলেন তাঁর বড় পুত্র। কিন্তু তিনি মারা যাওয়ায় ইলতুৎমিশকে বিকল্প উপায় ভাবতে হচ্ছিলো। এক্ষেত্রে তাঁর সামনে তাঁর কন্যা সুলতানা রাজিয়া ছাড়া আর কেউ ছিলো না। কারন তাঁর অন্যান্য ছোট পুত্রের কেউই রাজ্য চালনার জন্য উপযুক্ত ছিলো না।

Related questions

উত্তর সন্ধানী! বেস্ট বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর ওয়েবসাইট। প্রশ্ন করুন, উত্তর নিন, সমস্যা সমাধান করুন ।
উত্তর সন্ধানী কি?
উত্তর সন্ধানী বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর এর ওয়েবসাইট।
গোপন প্রশ্ন ও উত্তর। ডিজিটাল শিক্ষায় প্রশ্নের উত্তরের সেরা ওয়েবসাইট।
...