in ইতিহাস ও নিদর্শন by
মালিক গফুর সম্পর্কে কিছু লিখ?

2 Answers

0 votes
by
 
Best answer
অন্য নাম তাজ আল দীন ইজ্জত আল দৌলা, মালিক নায়েব, হজর দিনারী, আল-আলফি মৃত্যু ফেব্রুয়ারি ১৩১৬ দিল্লী আনুগত্য দিল্লি সুলতান পদমর্যাদা নায়েব (ভাইসরয়) যুদ্ধ/সংগ্রাম ভারতে মঙ্গলীয় আক্রমণ (১৩০৬) আলাউদ্দীন খিলজির দেবগিরি বিজয় (১৩০৮) ওয়ারাঙ্গাল দখল (১৩১০) দ্বৈরাসমুদ্র দখল (১৩১১) পান্ড্য রাজ্যে হামলা (১৩১১) মালিক গফুর (১৩১৬ সালে মৃত্যু) দিল্লি সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির একজন সেনাপতি ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন খোঁজা করা দাসী, খিলজির দাসী সেনাপতি হিসেবেই তিনি ছিলেন সম্যধিক পরিচিত। ১২৯৯ সালে আলাউদ্দিন খিলজি গুজরাট দখল করেন এবং তার সেনাপতি নুসরাত খান এই মালিক গফুরকে নিজের দাস বানান। গফুর ১৩০০ শতাব্দীর শুরুর দিকে খ্যাতিমান হয়ে ওঠেন। ১৩০৬ সালে ভারতে মঙ্গলীয়রা আক্রমণ করলে গফুর আলাউদ্দিনের সেনাবাহিনী পরিচালনা করে মঙ্গোলীয়দেরকে কঠোর শাস্তি দিয়েছিলেন। গফুরের খ্যাতি আরো ভালো করে ছড়ায় যখন তিনি আলাউদ্দিন খিলজির দেবগিরি বিজয়তে সেনাবাহিনী পরিচালনা করেন ১৩০৮ সালে, ১৩১০ সালে ওয়ারাঙ্গাল এলাকা দখল গফুরই করেন এবং দ্বৈরাসমুদ্রা ১৩১১ সালে বিজিত করেন তিনি। গফুর পান্ড্য রাজবংশের সেনাবাহিনীকেও পরাজিত করেছিলেন, তিনি সব যুদ্ধ থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র যেমনঃ সোনাগয়না, হাতি এবং ঘোড়া নিজের সেনাদের অধীনে নিয়ে ওগুলো দিল্লি সুলতানকে দিতেন। ১৩১৩-১৫ সাল গফুর দেবগিরিতে আলাউদ্দিনের গভর্নর হিসেবে কাজ করেন। ১৩১৫ সালে আলাউদ্দিন বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে গফুরকে দিল্লিতে ডাকা হয় এবং গফুর নায়েব (ভাইস রয়) এর দায়িত্ব পান। আলাউদ্দিন মারা গেলে তার ছেলে শিহাবউদ্দিন ওমরকে তার জায়গায় বসান গফুর। মাত্র এক মাস শিহাব সিংহাসনে ছিলেন এবং তাকে আলাউদ্দিনের সাবেক দেহরক্ষীরা মেরে ফেলে, সঙ্গে সঙ্গে গফুরও খুন হন। আলাউদ্দিনের বড় পুত্র মোবারক শাহ এরপর রাজার পদে বসেন। পূর্ব জীবন এবং কর্ম জীবন হিন্দু হিসেবে জন্মগ্রহণকারী গফুরের আসল নাম জানা যায়না, ভারতে মুসলিম শাসকদের দাপট বাড়লে অনেক গরিব হিন্দু তাদের হাতে পড়েন এবং তাদেরকে বলপূর্বক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়, মালিক গফুর তাদেরই একজন ছিলেন, তাকে খোঁজা করা হয়েছিলো যাতে তিনি মুসলিম নারীদের দেখাশোনা করতে গিয়ে কোনো যৌনকর্ম না করতে পারেন। ১২৯৯ সালে আলাউদ্দিন খিলজি (দিল্লি সুলতান) তার সেনাপতি নুসরাত খানকে গুজরাট দখলের জন্য পাঠান এবং নুসরাতের সেনাবাহিনী অনেক মানুষকে আটকায় যাদের মধ্যে গফুরও ছিলেন, গফুরকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করানো হয় এবং তাকে দিল্লিতে আলাউদ্দিনের কাছে আনা হয়। বীর্যপাতের ক্ষমতা হরণ করা হতো | কিন্তু যৌনসুখ দিতে পারতেন পুরোমাত্রায় | এভাবেই তৈরি করা হতো খোজা ক্রীতদাসদের | যাতে নিশ্চিন্তে নবাব-সুলতান-সম্রাটদের হারেমের পাহারাদার হতে পারেন | তাঁদের বীর্য থেকে গর্ভবতী হবেন না কোনও বেগম | কিন্তু দরকারে যৌনসুখ দিতে পারবেন হারেমবাসিনীদের | এমনকী বেগম এবং নবাব বা সুলতান বা সম্রাটকেও ! সেরকমই এক খোজা ক্রীতদাস ছিলেন মালিক কাফুর | সামান্য অবস্থান থেকে নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির প্রধান মন্ত্রণাদাতার জায়গায় | ইতিহাসের বইতে তাঁকে নিয়ে পড়েছেন স্কুলে | তিনি খিলজির দাক্ষিণাত্য বিজয়ের প্রধান কারিগর | কিন্তু তাঁর জীবনের অদেখা দিকগুলো জানতে চান ? পদ্মাবৎ ছবিতে তিনি খলনায়ক | কিন্তু তাঁর নিজের জীবনও রক্তাক্ত যন্ত্রণায় ক্লীষ্ট | জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে প্রামাণ্য তথ্য নেই | কিন্তু বেশিরভাগ ঐতিহাসিকদের মতে তিনি জন্মগত ভাবে হিন্দু | সম্ভবত মরাঠি বা মরহাট্টা | আবার অনেকে বলেন তিনি আফ্রিকান | কিন্তু ছিলেন খুবই সুপুরুষ | ক্রীতদাস হিসেবে খোজা করে দেওয়া হয়েছিল শৈশবেই | খাম্বাতের শাসকের অন্তঃপুররক্ষী ছিলেন | ১২৯৯ খ্রিস্টাব্দে গুজরাত অভিযানে খাম্বাত জয় করেন আলাউদ্দিন | তাঁর সেনাপতি নুসরত খান সুলতানকে উপহার দেন খোজা ক্রীতদাস | ইবন বতুতা তাঁর বিবরণে বলেছেন দাস বাজার থেকে ১০০০ দীনার ( সেই যুগে ) দিয়ে কেনা হয়েছিল তাঁকে | তবে অনেক ঐতিহাসিক বলেন‚ নুসরত খান লুঠ করেছিলেন আরও অনেকের মতো এই সুপুরুষ দাসকেও | ধর্মান্তকরণের পরে নাম হয় মালিক কাফুর | অল্প দিনেই আলাউদ্দিনের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন মালিক কাফুর | তাঁর নেতৃত্বে সেনাবাহিনী পাঠিয়েছিলেন আলাউদ্দিন | পঞ্জাবের রাভি নদীর তীরে মোঙ্গল শাসক চাগতাই খানাতেকে পরাস্ত করেন কাফুর | কয়েকশো বছরের জন্য ভারতে মুঘল শাসন শুরু হওয়া পিছিয়ে যায় | তবে কাফুরের সবথেকে উল্লেখযোগ্য কীর্তি হল দাক্ষিণাত্যে ইসলামিক শাসনের বিজয়কেতন ওড়ানো | বিন্ধ্য পর্বতের এদিকে এবং পেরিয়ে ওদিকে কাফুরের তথা আলাউদ্দিন খিলজির পদানত হয় একে একে যাদব‚ কাকাতীয়‚ হোয়সল এবং পাণ্ড্য বংশ | যাদবদের হারিয়ে দেবগিরি যুক্ত হয় আলাউদ্দিনের সাম্রাজ্যে | কাকাতীয় বংশে লুঠপাঠ চালিয়ে কোহিনূর হিরে মালিক কাফুরের হস্তগত হয় বলে অনেক গবেষকের বিশ্বাস | তাঁদের রাজপরিবারের কুলদেবতার বিগ্রহের চোখের মণি বা মাথার মুকুটের সজ্জা ছিল ওই হিরে | দেবগিরিতে অভিযান চালিয়ে দুবার জয়ী হন মালিক কাফুর | সন্তুষ্ট আলাউদ্দিন কাফুরকে দেবগিরির শাসক নিযুক্ত করেন | দু বছর কাফুর দেবগিরির একচ্ছত্র শাসক ছিলেন | ১৩১৫ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে দিল্লি ফিরে যেতে হয় জরুরি তলবে | কারণ আলাউদ্দিন খিলজি তখন অসুস্থ | আলাউদ্দিন-কাফুর সম্পর্ক রহস্যাবৃত | শুধুমাত্র প্রভু-ভৃত্য কোনওমতেই নয় | এক একটি প্রদেশ জয়ের সঙ্গে সঙ্গে মালিকের পদোন্নতি হয়েছে | পেয়েছেন একাধিক উপাধি আলাউদ্দিনের থেকে | তাঁদের অন্তরঙ্গতাকে অনেক ঐতিহাসিকই বলেছেন সমকামিতা হিসেবে | কাফুরের সমসাময়িক ঐতিহাসিক ছিলেন জিয়াউদ্দিন বরনি | তিনি তো বলেইছেন‚ উভকামী মালিক কাফুরের সঙ্গে সমকামিতায় লিপ্ত ছিলেন উভকামী আলাউদ্দিন খিলজি | কিন্তু একে অনেকেই বলেন অত্যন্ত একপেশে মন্তব্য | কারণ বরনি ছিলেন মালিক কাফুর বিরোধী | অতুর্কী‚ অমুসলিম এক ক্রীতদাসকে তিনি সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির সেনাপতি হিসেবে মানতেই পারেননি | তবে সমকামিতা থাক বা না থাক‚ মালিক কাফুরের উপর অন্ধ আস্থা ও বিশ্বাস ছিল আলাউদ্দিন খিলজির | খিলজির অসুস্থতার সময় বকলমে রাজকার্য চালাতেন মালিক কাফুর | এসময় ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চেষ্টা করেন তিনি | বরখাস্ত করেন দক্ষ প্রশাসকদের | ফলে খিলজির রাজসভায় বিশেষত তুর্কী সভাসদদের বিরাগভাজন হন তিনি | অসুস্থ আলাউদ্দিনের সামনে তাঁর ৬ বছরের শিশুকে উত্তরাধিকার ঘোষণা করেন মালিক কাফুর | তখন এতই অসুস্থ সুলতান‚ কিছু মতামতই দিতে পারেননি | সেই নীরবতাকেই সম্মতি বলে ধরে নেওয়া হয় | কাফুরকে সমর্থন করলেন অতুর্কী সভাসদরা | কিন্তু ক্ষুব্ধ হল তুর্কী লবি | ১৩১৬ খ্রিস্টাব্দের ৪ জানুয়ারি প্রয়াত হন আলাউদ্দিন খিলজি | শেষ কয়েকদিন তাঁর কাছে কাউকে যেতে দেননি মালিক কাফুর | সমাহিত করার আগে খুলে নেন তাঁর হাতের অভিজ্ঞান স্বরূপ আংটি | এরপর সিংহাসনে বসান বালক শিহাবুদ্দিনকে | বকলমে রাজসভা চালাতেন নিজে | অনেক গবেষক মনে করেন শিহাবুদ্দিনের মা‚ আলাউদ্দিনের এক বেগমকে বিয়েও করেছিলেন মালিক কাফুর | খিলজির প্রধান বেগমের সব ক্ষমতা কেড়ে তাঁকে কারাবন্দি করেন মালিক কাফুর | কারাবন্দি করেছিলেন আলাউদ্দিনের এক সাবালক পুত্রকেও | হত্যা করান বহু তুর্কী অভিজাতকে | তাঁর এই স্বেচ্ছাচারে ছড়িয়ে পড়ছিল ক্ষোভের আগুন | বালক শিহাবুদ্দিনকে পুতুল-রাজা করে মালিক কাফুরের রাজত্ব বেশিদিন চলল না | এক মাস পরেই আলাউদ্দিন খিলজির প্রাক্তন দেহরক্ষীরা ষড়যন্ত্র করে শিরচ্ছেদ করে বধ করেছিল তাঁকে | এরপর বালক-সুলতান হতভাগ্য শিহাবুদ্দিনকে অন্ধ করে সিংহাসনে বসেন মুবারক শাহ | আলাউদ্দিনের সেই ছেলে যাঁকে বন্দি করেছিলেন মালিক কাফুর | আলাউদ্দিনের বাকি ছেলেদের হয় অন্ধ করে দিয়েছিলেন‚ নয় হত্যা করেছিলেন তিনি | কোথায় মালিক কাফুরকে সমাধিস্থ করা হয়‚ কেউ জানে না নিশ্চিত ভাবে | পরাজিত দেবগিরি প্রদেশের রাজকন্যাকে বিয়ে করেছিলেন আলাউদ্দিন খিলজি | সেই রাজকন্যারই ছেলে ছিল শিহাবুদ্দিন | তাঁকে দৃষ্টিহীন করে গোয়ালিয়রে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন মুবারক শাহ | সেখানে ১৩১৬ খ্রিস্টাব্দেই মৃত্যু হয় হতভাগ্য বালক শিহাবুদ্দিনের | যদিও এর পরে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেননি আলাউদ্দিন-পুত্র মুবারক | কার্যত খিলজি বংশের পতন হয়ে যায় | কয়েক বছর খিলজিদের সেনাপতিরা সর্বেসর্বা হয়ে থাকলেও ১৩২০ খ্রিস্টাব্দে দিল্লির মসনদে বসে তুঘলক বংশ | আলাউদ্দিনের ছেলের অনুপযুক্ততা, মন্ত্রীদের ষড়যন্ত্র ও কাফুরের কূটকৌশলের ফলে খলজি বংশের পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে। মালিক কাফুর ক্ষমতা দখল করার জন্য নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন। সুলতানের ওপর ছিল তার অসীম প্রভাব। সুলতানের মৃত্যুর আগেই তিনি সুলতানকে তার দুই ছেলে খিজির খান ও সাহদি খানকে ষড়যন্ত্রের অপরাধে বন্দী করতে এবং শিশু পুত্র শিহাবউদ্দিনকে উত্তরাধিকার দানের জন্য বাধ্য করেন। কারাগারে খিজির খান ও সাহদি খানকে অন্ধ করে রাখা হয়। তাদের মাকে তিনি জোরপূর্বক বিয়ে করেন এবং তার প্রিয়জনকে তিনি সরকারি উচ্চপদে বহাল করেন। কিন্তু অধিককাল তিনি এ পাপপূর্ণ জীবনযাপন করতে পারেননি। প্রাসাদরক্ষী একজন সৈনিক তাকে হত্যা করে। আলাউদ্দিনের তৃতীয় ছেলে মুবারক শিহাবউদ্দিনের প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত হন। অল্পকাল পরই মুবারক তার শিশু ভাইকে অন্ধ ও সিংহাসনচ্যুত করে ১৩১৬ খ্রিস্টাব্দে নিজে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন।
0 votes
by
অন্য নাম তাজ আল দীন ইজ্জত আল দৌলা, মালিক নায়েব, হজর দিনারী, আল-আলফি মৃত্যু ফেব্রুয়ারি ১৩১৬ দিল্লী আনুগত্য দিল্লি সুলতান পদমর্যাদা নায়েব (ভাইসরয়) যুদ্ধ/সংগ্রাম ভারতে মঙ্গলীয় আক্রমণ (১৩০৬) আলাউদ্দীন খিলজির দেবগিরি বিজয় (১৩০৮) ওয়ারাঙ্গাল দখল (১৩১০) দ্বৈরাসমুদ্র দখল (১৩১১) পান্ড্য রাজ্যে হামলা (১৩১১) মালিক গফুর (১৩১৬ সালে মৃত্যু) দিল্লি সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির একজন সেনাপতি ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন খোঁজা করা দাসী, খিলজির দাসী সেনাপতি হিসেবেই তিনি ছিলেন সম্যধিক পরিচিত। ১২৯৯ সালে আলাউদ্দিন খিলজি গুজরাট দখল করেন এবং তার সেনাপতি নুসরাত খান এই মালিক গফুরকে নিজের দাস বানান। গফুর ১৩০০ শতাব্দীর শুরুর দিকে খ্যাতিমান হয়ে ওঠেন। ১৩০৬ সালে ভারতে মঙ্গলীয়রা আক্রমণ করলে গফুর আলাউদ্দিনের সেনাবাহিনী পরিচালনা করে মঙ্গোলীয়দেরকে কঠোর শাস্তি দিয়েছিলেন। গফুরের খ্যাতি আরো ভালো করে ছড়ায় যখন তিনি আলাউদ্দিন খিলজির দেবগিরি বিজয়তে সেনাবাহিনী পরিচালনা করেন ১৩০৮ সালে, ১৩১০ সালে ওয়ারাঙ্গাল এলাকা দখল গফুরই করেন এবং দ্বৈরাসমুদ্রা ১৩১১ সালে বিজিত করেন তিনি। গফুর পান্ড্য রাজবংশের সেনাবাহিনীকেও পরাজিত করেছিলেন, তিনি সব যুদ্ধ থেকে বিভিন্ন জিনিসপত্র যেমনঃ সোনাগয়না, হাতি এবং ঘোড়া নিজের সেনাদের অধীনে নিয়ে ওগুলো দিল্লি সুলতানকে দিতেন। ১৩১৩-১৫ সাল গফুর দেবগিরিতে আলাউদ্দিনের গভর্নর হিসেবে কাজ করেন। ১৩১৫ সালে আলাউদ্দিন বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে গফুরকে দিল্লিতে ডাকা হয় এবং গফুর নায়েব (ভাইস রয়) এর দায়িত্ব পান। আলাউদ্দিন মারা গেলে তার ছেলে শিহাবউদ্দিন ওমরকে তার জায়গায় বসান গফুর। মাত্র এক মাস শিহাব সিংহাসনে ছিলেন এবং তাকে আলাউদ্দিনের সাবেক দেহরক্ষীরা মেরে ফেলে, সঙ্গে সঙ্গে গফুরও খুন হন। আলাউদ্দিনের বড় পুত্র মোবারক শাহ এরপর রাজার পদে বসেন। পূর্ব জীবন এবং কর্ম জীবন হিন্দু হিসেবে জন্মগ্রহণকারী গফুরের আসল নাম জানা যায়না, ভারতে মুসলিম শাসকদের দাপট বাড়লে অনেক গরিব হিন্দু তাদের হাতে পড়েন এবং তাদেরকে বলপূর্বক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়, মালিক গফুর তাদেরই একজন ছিলেন, তাকে খোঁজা করা হয়েছিলো যাতে তিনি মুসলিম নারীদের দেখাশোনা করতে গিয়ে কোনো যৌনকর্ম না করতে পারেন। ১২৯৯ সালে আলাউদ্দিন খিলজি (দিল্লি সুলতান) তার সেনাপতি নুসরাত খানকে গুজরাট দখলের জন্য পাঠান এবং নুসরাতের সেনাবাহিনী অনেক মানুষকে আটকায় যাদের মধ্যে গফুরও ছিলেন, গফুরকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করানো হয় এবং তাকে দিল্লিতে আলাউদ্দিনের কাছে আনা হয়। বীর্যপাতের ক্ষমতা হরণ করা হতো | কিন্তু যৌনসুখ দিতে পারতেন পুরোমাত্রায় | এভাবেই তৈরি করা হতো খোজা ক্রীতদাসদের | যাতে নিশ্চিন্তে নবাব-সুলতান-সম্রাটদের হারেমের পাহারাদার হতে পারেন | তাঁদের বীর্য থেকে গর্ভবতী হবেন না কোনও বেগম | কিন্তু দরকারে যৌনসুখ দিতে পারবেন হারেমবাসিনীদের | এমনকী বেগম এবং নবাব বা সুলতান বা সম্রাটকেও ! সেরকমই এক খোজা ক্রীতদাস ছিলেন মালিক কাফুর | সামান্য অবস্থান থেকে নিজেকে নিয়ে গিয়েছিলেন সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির প্রধান মন্ত্রণাদাতার জায়গায় | ইতিহাসের বইতে তাঁকে নিয়ে পড়েছেন স্কুলে | তিনি খিলজির দাক্ষিণাত্য বিজয়ের প্রধান কারিগর | কিন্তু তাঁর জীবনের অদেখা দিকগুলো জানতে চান ? পদ্মাবৎ ছবিতে তিনি খলনায়ক | কিন্তু তাঁর নিজের জীবনও রক্তাক্ত যন্ত্রণায় ক্লীষ্ট | জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে প্রামাণ্য তথ্য নেই | কিন্তু বেশিরভাগ ঐতিহাসিকদের মতে তিনি জন্মগত ভাবে হিন্দু | সম্ভবত মরাঠি বা মরহাট্টা | আবার অনেকে বলেন তিনি আফ্রিকান | কিন্তু ছিলেন খুবই সুপুরুষ | ক্রীতদাস হিসেবে খোজা করে দেওয়া হয়েছিল শৈশবেই | খাম্বাতের শাসকের অন্তঃপুররক্ষী ছিলেন | ১২৯৯ খ্রিস্টাব্দে গুজরাত অভিযানে খাম্বাত জয় করেন আলাউদ্দিন | তাঁর সেনাপতি নুসরত খান সুলতানকে উপহার দেন খোজা ক্রীতদাস | ইবন বতুতা তাঁর বিবরণে বলেছেন দাস বাজার থেকে ১০০০ দীনার ( সেই যুগে ) দিয়ে কেনা হয়েছিল তাঁকে | তবে অনেক ঐতিহাসিক বলেন‚ নুসরত খান লুঠ করেছিলেন আরও অনেকের মতো এই সুপুরুষ দাসকেও | ধর্মান্তকরণের পরে নাম হয় মালিক কাফুর | অল্প দিনেই আলাউদ্দিনের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন মালিক কাফুর | তাঁর নেতৃত্বে সেনাবাহিনী পাঠিয়েছিলেন আলাউদ্দিন | পঞ্জাবের রাভি নদীর তীরে মোঙ্গল শাসক চাগতাই খানাতেকে পরাস্ত করেন কাফুর | কয়েকশো বছরের জন্য ভারতে মুঘল শাসন শুরু হওয়া পিছিয়ে যায় | তবে কাফুরের সবথেকে উল্লেখযোগ্য কীর্তি হল দাক্ষিণাত্যে ইসলামিক শাসনের বিজয়কেতন ওড়ানো | বিন্ধ্য পর্বতের এদিকে এবং পেরিয়ে ওদিকে কাফুরের তথা আলাউদ্দিন খিলজির পদানত হয় একে একে যাদব‚ কাকাতীয়‚ হোয়সল এবং পাণ্ড্য বংশ | যাদবদের হারিয়ে দেবগিরি যুক্ত হয় আলাউদ্দিনের সাম্রাজ্যে | কাকাতীয় বংশে লুঠপাঠ চালিয়ে কোহিনূর হিরে মালিক কাফুরের হস্তগত হয় বলে অনেক গবেষকের বিশ্বাস | তাঁদের রাজপরিবারের কুলদেবতার বিগ্রহের চোখের মণি বা মাথার মুকুটের সজ্জা ছিল ওই হিরে | দেবগিরিতে অভিযান চালিয়ে দুবার জয়ী হন মালিক কাফুর | সন্তুষ্ট আলাউদ্দিন কাফুরকে দেবগিরির শাসক নিযুক্ত করেন | দু বছর কাফুর দেবগিরির একচ্ছত্র শাসক ছিলেন | ১৩১৫ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে দিল্লি ফিরে যেতে হয় জরুরি তলবে | কারণ আলাউদ্দিন খিলজি তখন অসুস্থ | আলাউদ্দিন-কাফুর সম্পর্ক রহস্যাবৃত | শুধুমাত্র প্রভু-ভৃত্য কোনওমতেই নয় | এক একটি প্রদেশ জয়ের সঙ্গে সঙ্গে মালিকের পদোন্নতি হয়েছে | পেয়েছেন একাধিক উপাধি আলাউদ্দিনের থেকে | তাঁদের অন্তরঙ্গতাকে অনেক ঐতিহাসিকই বলেছেন সমকামিতা হিসেবে | কাফুরের সমসাময়িক ঐতিহাসিক ছিলেন জিয়াউদ্দিন বরনি | তিনি তো বলেইছেন‚ উভকামী মালিক কাফুরের সঙ্গে সমকামিতায় লিপ্ত ছিলেন উভকামী আলাউদ্দিন খিলজি | কিন্তু একে অনেকেই বলেন অত্যন্ত একপেশে মন্তব্য | কারণ বরনি ছিলেন মালিক কাফুর বিরোধী | অতুর্কী‚ অমুসলিম এক ক্রীতদাসকে তিনি সুলতান আলাউদ্দিন খিলজির সেনাপতি হিসেবে মানতেই পারেননি | তবে সমকামিতা থাক বা না থাক‚ মালিক কাফুরের উপর অন্ধ আস্থা ও বিশ্বাস ছিল আলাউদ্দিন খিলজির | খিলজির অসুস্থতার সময় বকলমে রাজকার্য চালাতেন মালিক কাফুর | এসময় ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চেষ্টা করেন তিনি | বরখাস্ত করেন দক্ষ প্রশাসকদের | ফলে খিলজির রাজসভায় বিশেষত তুর্কী সভাসদদের বিরাগভাজন হন তিনি | অসুস্থ আলাউদ্দিনের সামনে তাঁর ৬ বছরের শিশুকে উত্তরাধিকার ঘোষণা করেন মালিক কাফুর | তখন এতই অসুস্থ সুলতান‚ কিছু মতামতই দিতে পারেননি | সেই নীরবতাকেই সম্মতি বলে ধরে নেওয়া হয় | কাফুরকে সমর্থন করলেন অতুর্কী সভাসদরা | কিন্তু ক্ষুব্ধ হল তুর্কী লবি | ১৩১৬ খ্রিস্টাব্দের ৪ জানুয়ারি প্রয়াত হন আলাউদ্দিন খিলজি | শেষ কয়েকদিন তাঁর কাছে কাউকে যেতে দেননি মালিক কাফুর | সমাহিত করার আগে খুলে নেন তাঁর হাতের অভিজ্ঞান স্বরূপ আংটি | এরপর সিংহাসনে বসান বালক শিহাবুদ্দিনকে | বকলমে রাজসভা চালাতেন নিজে | অনেক গবেষক মনে করেন শিহাবুদ্দিনের মা‚ আলাউদ্দিনের এক বেগমকে বিয়েও করেছিলেন মালিক কাফুর | খিলজির প্রধান বেগমের সব ক্ষমতা কেড়ে তাঁকে কারাবন্দি করেন মালিক কাফুর | কারাবন্দি করেছিলেন আলাউদ্দিনের এক সাবালক পুত্রকেও | হত্যা করান বহু তুর্কী অভিজাতকে | তাঁর এই স্বেচ্ছাচারে ছড়িয়ে পড়ছিল ক্ষোভের আগুন | বালক শিহাবুদ্দিনকে পুতুল-রাজা করে মালিক কাফুরের রাজত্ব বেশিদিন চলল না | এক মাস পরেই আলাউদ্দিন খিলজির প্রাক্তন দেহরক্ষীরা ষড়যন্ত্র করে শিরচ্ছেদ করে বধ করেছিল তাঁকে | এরপর বালক-সুলতান হতভাগ্য শিহাবুদ্দিনকে অন্ধ করে সিংহাসনে বসেন মুবারক শাহ | আলাউদ্দিনের সেই ছেলে যাঁকে বন্দি করেছিলেন মালিক কাফুর | আলাউদ্দিনের বাকি ছেলেদের হয় অন্ধ করে দিয়েছিলেন‚ নয় হত্যা করেছিলেন তিনি | কোথায় মালিক কাফুরকে সমাধিস্থ করা হয়‚ কেউ জানে না নিশ্চিত ভাবে | পরাজিত দেবগিরি প্রদেশের রাজকন্যাকে বিয়ে করেছিলেন আলাউদ্দিন খিলজি | সেই রাজকন্যারই ছেলে ছিল শিহাবুদ্দিন | তাঁকে দৃষ্টিহীন করে গোয়ালিয়রে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন মুবারক শাহ | সেখানে ১৩১৬ খ্রিস্টাব্দেই মৃত্যু হয় হতভাগ্য বালক শিহাবুদ্দিনের | যদিও এর পরে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারেননি।

Related questions

উত্তর সন্ধানী! বেস্ট বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর ওয়েবসাইট। প্রশ্ন করুন, উত্তর নিন, সমস্যা সমাধান করুন ।
উত্তর সন্ধানী কি?
উত্তর সন্ধানী বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর এর ওয়েবসাইট।
গোপন প্রশ্ন ও উত্তর। ডিজিটাল শিক্ষায় প্রশ্নের উত্তরের সেরা ওয়েবসাইট।
...