in ইতিহাস ও নিদর্শন by
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ব্যক্তিগত সম্পদ চুরির কাহিনী কি ছিল?

2 Answers

0 votes
by
 
Best answer
১৯৯০ সালের ১৮ মার্চ তারিখ, দিবাগত রাত। ম্যাসাচুসেটসের বোস্টনে ইসাবেলা স্টুয়ার্ট গার্ডনার মিউজিয়াম এর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দুই সিকিউরিটি গার্ড যাদুঘরের ভেতরে ঢুকতে দেয় দুই ‘পুলিশ অফিসার’কে। কিছুক্ষণ পরে সেই দুই ‘পুলিশ অফিসার’ হাত পা বেঁধে ফেলে সেই দুই গার্ডের, আর যাদুঘর থেকে বের করে নেয় ১৩ টি শিল্পকর্ম, এরপর সেগুলো তাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে হারিয়ে যায় চিরতরে। ৫০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের এই তেরটি শিল্পকর্ম যেখানে রাখা ছিল সেই গার্ডনার মিউজিয়ামটি আসলে একটি ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তোলা যাদুঘর। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রাইভেট প্রোপার্টি বা ব্যক্তিগত সম্পদ চুরির ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় এই ঘটনাটি ঘটিয়েছিল ঐ দুই ‘পুলিশ অফিসার’। ইসাবেলা স্টুয়ার্ট গার্ডনার মিউজিয়ামের একাংশ এফবিআই সহ বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা এই চুরির রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করলেও বিফল হয়েছে সবাই। এই প্রায় ২৭ বছরেও একটি মানুষকেও গ্রেফতার করা যায়নি চুরির দায়ে, কিংবা উদ্ধার করা যায়নি একটি শিল্পকর্মও। কেইসটা এখনও তদন্তাধীন, যাদুঘর কর্তৃপক্ষ ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে এই শিল্পকর্মগুলো উদ্ধার করার মত যে কোনো তথ্যের বিনিময়ে! কারা ছিল সেই ‘পুলিশ অফিসার’ এর ছদ্মবেশে দুই সদস্যের ডাকাতদল, সে প্রশ্নের উত্তর আজও মিলেনি। ইসাবেলা স্টুয়ার্ট গার্ডনার (১৮৪০-১৯২৪) ছিলেন একজন শিল্পসংগ্রাহক। তার নামেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বোস্টনের এই যাদুঘরটি। ডাচ স্বর্ণযুগের বিখ্যাত শিল্পী ইয়োহান ভার্মির এর শিল্পীজীবনে আঁকা মাত্র ৩৪ টি ছবির একটি ‘দ্য কনসার্ট’ ছিল সেই চুরি যাওয়া শিল্পকর্মগুলোর মধ্যে। কেবল ‘দ্য কনসার্ট’ এর আর্থিক মূল্যই ২০ কোটি মার্কিন ডলার। একই সময়ের আরেক বিখ্যাত শিল্পী রেমভ্রান্ট এর আঁকা একমাত্র সাগরের ছবি ‘দ্য স্টোর্ম অন দ্য সি অব গ্যালিলি’ও চুরি হয়ে যায় তখন। এছাড়া এডগার ডেগাস, এডুয়ার্ড ম্যানেট ও গোভার্ট ফ্লিংক এর মত শিল্পীর আঁকা ছবিও ছিল চুরি যাওয়া সম্পদের তালিকায়। ইয়োহান ভার্মির এর ‘দ্য কনসার্ট’ ১৯৯০ সালে ১৮ মার্চ ছিল রবিবার। আগের দিন ১৭ তারিখ ছিল ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মীয় শোক ও একই সাথে ভোজ উৎসবের দিন ‘সেইন্ট প্যাট্রিক ডে’। ১৮ মার্চের দিবাগত রাতের শুরুতে একটি লাল রঙের ডজ ডায়াটোনা মডেলের গাড়ি এসে থামল প্যালেস রোডে, ইসাবেলা স্টুয়ার্ট গার্ডনার মিউজিয়ামের একপাশের প্রবেশমুখের কাছাকাছি। তখনও কাছের এক সেইন্ট প্যাট্রিক ডে’র উৎসব থেকে বাড়ি ফিরছে লোকজন। চারপাশ নীরব হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় এক ঘণ্টা গাড়িতে অপেক্ষা করল ভেতরের পুলিশের ইউনিফর্ম পরা দুজন। রাত ১ টার কিছুক্ষণ আগে যাদুঘরের একজন সিকিউরিটি গার্ড রিচার্ড অ্যাবাথ পুরো যাদুঘর একবার টহল দিয়ে এল নিচের ফ্রন্ট ডেস্কের ওখানে, আরেকজন গার্ডের সাথে জায়গা বদল করার জন্য। পুরো মিউজিয়ামে সে সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে কেবল মাত্র এ দুজন। এমন সময় অ্যাবাথ যাদুঘরের প্যালেস রোডের দিকের প্রবেশমুখের দরজাটি একবার খুলে খুব দ্রুততার সাথে আবার বন্ধ করল। অনেকেই ভাবতে পারেন এটাই হয়ত কিছুক্ষণ পরে ঘটতে যাওয়া ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত এক চুরির জন্য সিকিউরিটি গার্ড অ্যাবাথের চোরদের উদ্দেশ্যে সহায়তামূলক ইশারা। কিন্তু পরবর্তীতে অ্যাবাথ বলে, সিকিউরিটি ক্যামেরার ফুটেজ দেখলেই জানা যাবে যে, সে সব সময় এই কাজটা করত। দরজা খুলে আবার বন্ধ করে সেটার লক ঠিকঠাক আছে কিনা সেটা চেক করার জন্যই এই কাজটা সে করেছিল। পরবর্তীতে এফবিআই সিকিউরিটি ক্যামেরার ফুটেজগুলো খুঁটিয়ে দেখার পর এ ব্যাপারে আর কোনো মন্তব্য করেনি। অ্যাবাথ এর আগেও এই কাজটা করেছে, সম্ভবত তেমনটাই দেখা গেছে ফুটেজগুলোতে। isabella01-full গার্ডদের দেয়া বর্ণনা অনুসারে দুই চোরের স্কেচ যাই হোক, রাত ১টা বেজে ২৪ মিনিটে দুজন লোক যাদুঘরের দরজার বাইরের বেল টিপল। ভেতর থেকে তাদের পরিচয় জানতে চাইল অ্যাবাথ। উত্তরে লোক দুটি জানাল, তারা পুলিশ অফিসার, এই জায়গায় একটা সমস্যার কথা শুনে তারা এসেছে এবং তাদেরকে যেন ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়। অ্যাবাথের এইটুকু জানা ছিল, কোনো অনাহুত ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট সময়ের পরে আর যাদুঘরে ঢুকতে দেয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু সেটা যদি পুলিশ অফিসার হয় তাহলে কী করতে হবে সেটা তার জানা ছিল না। ভেতর থেকে সে দেখতে পাচ্ছিল লোকদুটোকে, পুলিশের ইউনিফর্ম পরা, পুলিশের ব্যাজও আছে সাথে। সেই মুহূর্তে একটা ঐতিহাসিক ভুল করে ফেলল রিক অ্যাবাথ, সে বিশ্বাস করল সে লোক দুটোকে। ডেস্কে থাক বোতাম চেপে দরজা খুলে সে তাদের ভেতরে ঢুকতে দিল। এরপর দুজন এগিয়ে এল ভেতরের দিকে, অ্যাবাথ তখন সিকিউরিটি ডেস্কের ভেতরে। এমন সময়, সে দুজনের একজন হঠাৎ বলে উঠল, অ্যাবাথের চেহারাটা তার চেনা চেনা লাগছে। এবং এরপরই বলল, ঐ চেহারার লোকটার নামে এরেস্ট ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে, যে কোনো অবস্থায় তাকে পাওয়া গেলে গ্রেফতার করবে পুলিশ। অ্যাবাথের আইডি কার্ড দেখতে চাইল সেই পুলিশ, আর ঐ মুহূর্তে দুই হাত উপরে তুলে দেয়ালের দিকে ফিরে অ্যাবাথকে সিকিউরিটি ডেস্ক থেকে বেরিয়ে আসার নির্দেশ দিল। অ্যাবাথ বুঝতে পারছিল কোথাও ভুল হচ্ছে, সেই পুলিশ তার চেহারা অন্য কোনো দাগী আসামীর সাথে মিলিয়ে ফেলছে। তবুও, ব্যাপারটা পরে বোঝানো যাবে এই ভেবে ঐ মুহূর্তের ঝামেলা সামাল দেয়ার জন্য পুলিশের কথামত দু হাত উপরে তুলে দেয়ালের দিকে ফিরে বেরিয়ে এল অ্যাবাথ। সেটাই হল তার দ্বিতীয় ঐতিহাসিক ভুল। কারণ সিকিউরিটি ডেস্কের ভেতরেই ছিল পুলিশের থানায় খবর পৌঁছে দেয়ার অ্যালার্ম বাজানোর বেলটা। সে বেরিয়ে আসার সাথে সাথে তার দুহাত পিছনে নিয়ে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দিল ঐ দুজন। হ্যান্ডকাফ পরানোর ঠিক পরপরই অ্যাবাথ ধরতে পারল ব্যাপারটা। কারণ পুলিশের নিয়ম হল, আত্মসমর্পণকারীকে হ্যান্ডকাফ পরানোর আগে তার শরীর সার্চ করে কোনো অস্ত্র আছে কিনা তা দেখা। এই দুজন সেটা করেনি। তার উপর আবার অ্যাবাথের চোখে পড়ল, দুজনের একজনের গোঁফটা আসলে মোমের তৈরি, হুট করে দেখলে বোঝা যায় না। ততক্ষণে যা হবার হয়ে গেছে। কয়েক মিনিটের মধ্যে অ্যাবাথের আরেক সহযোগী গার্ড এল, তাকেও ধরে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দেয়া হল। সেই গার্ডটি তখনও বোঝেনি। দুজন পুলিশ অফিসার দেখে সে জানতে চাইল কেন তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এবারে লোক দুটি ফাঁস করল গোমর। তারা আসলে পুলিশ অফিসার নয়। তারা চোর। এসেছে যাদুঘরে চুরি করতে। এই বলে দুই গার্ডকে তারা নিয়ে গেল মিউজিয়ামের নিচের বেজমেন্টে। সেখানে ইলেকট্রিক বক্সের সাথে তাদের হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে আটকে রাখা হল। দুজনের হাত, পা আর মাথায় পেঁচিয়ে দেয়া হল ডাক্ট টেপ, সেটা এতই শক্তিশালী টেপ, ওটা দিয়ে বাঁধা অবস্থা থেকে নিজ চেষ্টায় মুক্তি পাওয়া প্রায় অসম্ভব। Gardner-Museum-Heist-Security-guard-tied-duct-taped-basement এই অবস্থায় সকালে রিক অ্যাবাথকে উদ্ধার করে পুলিশ এর পরের ঘটনাগুলো ঘটে গেল দ্রুত। মিউজিয়ামে মোশন ডিটেক্টর লাগানো থাকায় ডাকাতদ্বয়ের পদচারণার শব্দ রেকর্ড হয় তাতে। সেগুলো শুনেই বোঝা যায় এরপর কী করেছিল এ দুজন। গার্ডদের বেঁধে রাখার পর দুজনে উপরে উঠে প্রথমে গেল যাদুঘরের ‘ডাচ রুম’ এ। তাদের একজন এগিয়ে গেল রেমভ্রান্ট এর আঁকা ‘সেলফ পোর্ট্রেট’ এর দিকে। একটা ছোট অ্যালার্ম বেজে উঠলেও সাথে সাথে সেটা ভেঙে চুরমার করে দেয়া হল। দেয়াল থেকে ছবিটি নামিয়ে এর ভারী ফ্রেম থেকে ছবির কাঠের প্যানেলটি বের করে আনার চেষ্টা করল তারা। কিন্তু কাজটা কঠিন হওয়ায় ছবিটা মেঝেতেই ফেলে রেখে
0 votes
by
১৯৯০ সালের ১৮ মার্চ তারিখ, দিবাগত রাত। ম্যাসাচুসেটসের বোস্টনে ইসাবেলা স্টুয়ার্ট গার্ডনার মিউজিয়াম এর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দুই সিকিউরিটি গার্ড যাদুঘরের ভেতরে ঢুকতে দেয় দুই ‘পুলিশ অফিসার’কে। কিছুক্ষণ পরে সেই দুই ‘পুলিশ অফিসার’ হাত পা বেঁধে ফেলে সেই দুই গার্ডের, আর যাদুঘর থেকে বের করে নেয় ১৩ টি শিল্পকর্ম, এরপর সেগুলো তাদের গাড়িতে তুলে নিয়ে হারিয়ে যায় চিরতরে। ৫০ কোটি মার্কিন ডলার মূল্যের এই তেরটি শিল্পকর্ম যেখানে রাখা ছিল সেই গার্ডনার মিউজিয়ামটি আসলে একটি ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তোলা যাদুঘর। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রাইভেট প্রোপার্টি বা ব্যক্তিগত সম্পদ চুরির ঘটনাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় এই ঘটনাটি ঘটিয়েছিল ঐ দুই ‘পুলিশ অফিসার’। ইসাবেলা স্টুয়ার্ট গার্ডনার মিউজিয়ামের একাংশ এফবিআই সহ বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা এই চুরির রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা করলেও বিফল হয়েছে সবাই। এই প্রায় ২৭ বছরেও একটি মানুষকেও গ্রেফতার করা যায়নি চুরির দায়ে, কিংবা উদ্ধার করা যায়নি একটি শিল্পকর্মও। কেইসটা এখনও তদন্তাধীন, যাদুঘর কর্তৃপক্ষ ৫০ লক্ষ মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে এই শিল্পকর্মগুলো উদ্ধার করার মত যে কোনো তথ্যের বিনিময়ে! কারা ছিল সেই ‘পুলিশ অফিসার’ এর ছদ্মবেশে দুই সদস্যের ডাকাতদল, সে প্রশ্নের উত্তর আজও মিলেনি। ইসাবেলা স্টুয়ার্ট গার্ডনার (১৮৪০-১৯২৪) ছিলেন একজন শিল্পসংগ্রাহক। তার নামেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বোস্টনের এই যাদুঘরটি। ডাচ স্বর্ণযুগের বিখ্যাত শিল্পী ইয়োহান ভার্মির এর শিল্পীজীবনে আঁকা মাত্র ৩৪ টি ছবির একটি ‘দ্য কনসার্ট’ ছিল সেই চুরি যাওয়া শিল্পকর্মগুলোর মধ্যে। কেবল ‘দ্য কনসার্ট’ এর আর্থিক মূল্যই ২০ কোটি মার্কিন ডলার। একই সময়ের আরেক বিখ্যাত শিল্পী রেমভ্রান্ট এর আঁকা একমাত্র সাগরের ছবি ‘দ্য স্টোর্ম অন দ্য সি অব গ্যালিলি’ও চুরি হয়ে যায় তখন। এছাড়া এডগার ডেগাস, এডুয়ার্ড ম্যানেট ও গোভার্ট ফ্লিংক এর মত শিল্পীর আঁকা ছবিও ছিল চুরি যাওয়া সম্পদের তালিকায়। ইয়োহান ভার্মির এর ‘দ্য কনসার্ট’ ১৯৯০ সালে ১৮ মার্চ ছিল রবিবার। আগের দিন ১৭ তারিখ ছিল ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মীয় শোক ও একই সাথে ভোজ উৎসবের দিন ‘সেইন্ট প্যাট্রিক ডে’। ১৮ মার্চের দিবাগত রাতের শুরুতে একটি লাল রঙের ডজ ডায়াটোনা মডেলের গাড়ি এসে থামল প্যালেস রোডে, ইসাবেলা স্টুয়ার্ট গার্ডনার মিউজিয়ামের একপাশের প্রবেশমুখের কাছাকাছি। তখনও কাছের এক সেইন্ট প্যাট্রিক ডে’র উৎসব থেকে বাড়ি ফিরছে লোকজন। চারপাশ নীরব হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় এক ঘণ্টা গাড়িতে অপেক্ষা করল ভেতরের পুলিশের ইউনিফর্ম পরা দুজন। রাত ১ টার কিছুক্ষণ আগে যাদুঘরের একজন সিকিউরিটি গার্ড রিচার্ড অ্যাবাথ পুরো যাদুঘর একবার টহল দিয়ে এল নিচের ফ্রন্ট ডেস্কের ওখানে, আরেকজন গার্ডের সাথে জায়গা বদল করার জন্য। পুরো মিউজিয়ামে সে সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে কেবল মাত্র এ দুজন। এমন সময় অ্যাবাথ যাদুঘরের প্যালেস রোডের দিকের প্রবেশমুখের দরজাটি একবার খুলে খুব দ্রুততার সাথে আবার বন্ধ করল। অনেকেই ভাবতে পারেন এটাই হয়ত কিছুক্ষণ পরে ঘটতে যাওয়া ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত এক চুরির জন্য সিকিউরিটি গার্ড অ্যাবাথের চোরদের উদ্দেশ্যে সহায়তামূলক ইশারা। কিন্তু পরবর্তীতে অ্যাবাথ বলে, সিকিউরিটি ক্যামেরার ফুটেজ দেখলেই জানা যাবে যে, সে সব সময় এই কাজটা করত। দরজা খুলে আবার বন্ধ করে সেটার লক ঠিকঠাক আছে কিনা সেটা চেক করার জন্যই এই কাজটা সে করেছিল। পরবর্তীতে এফবিআই সিকিউরিটি ক্যামেরার ফুটেজগুলো খুঁটিয়ে দেখার পর এ ব্যাপারে আর কোনো মন্তব্য করেনি। অ্যাবাথ এর আগেও এই কাজটা করেছে, সম্ভবত তেমনটাই দেখা গেছে ফুটেজগুলোতে। isabella01-full গার্ডদের দেয়া বর্ণনা অনুসারে দুই চোরের স্কেচ যাই হোক, রাত ১টা বেজে ২৪ মিনিটে দুজন লোক যাদুঘরের দরজার বাইরের বেল টিপল। ভেতর থেকে তাদের পরিচয় জানতে চাইল অ্যাবাথ। উত্তরে লোক দুটি জানাল, তারা পুলিশ অফিসার, এই জায়গায় একটা সমস্যার কথা শুনে তারা এসেছে এবং তাদেরকে যেন ভেতরে ঢুকতে দেয়া হয়। অ্যাবাথের এইটুকু জানা ছিল, কোনো অনাহুত ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট সময়ের পরে আর যাদুঘরে ঢুকতে দেয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু সেটা যদি পুলিশ অফিসার হয় তাহলে কী করতে হবে সেটা তার জানা ছিল না। ভেতর থেকে সে দেখতে পাচ্ছিল লোকদুটোকে, পুলিশের ইউনিফর্ম পরা, পুলিশের ব্যাজও আছে সাথে। সেই মুহূর্তে একটা ঐতিহাসিক ভুল করে ফেলল রিক অ্যাবাথ, সে বিশ্বাস করল সে লোক দুটোকে। ডেস্কে থাক বোতাম চেপে দরজা খুলে সে তাদের ভেতরে ঢুকতে দিল। এরপর দুজন এগিয়ে এল ভেতরের দিকে, অ্যাবাথ তখন সিকিউরিটি ডেস্কের ভেতরে। এমন সময়, সে দুজনের একজন হঠাৎ বলে উঠল, অ্যাবাথের চেহারাটা তার চেনা চেনা লাগছে। এবং এরপরই বলল, ঐ চেহারার লোকটার নামে এরেস্ট ওয়ারেন্ট জারি হয়েছে, যে কোনো অবস্থায় তাকে পাওয়া গেলে গ্রেফতার করবে পুলিশ। অ্যাবাথের আইডি কার্ড দেখতে চাইল সেই পুলিশ, আর ঐ মুহূর্তে দুই হাত উপরে তুলে দেয়ালের দিকে ফিরে অ্যাবাথকে সিকিউরিটি ডেস্ক থেকে বেরিয়ে আসার নির্দেশ দিল। অ্যাবাথ বুঝতে পারছিল কোথাও ভুল হচ্ছে, সেই পুলিশ তার চেহারা অন্য কোনো দাগী আসামীর সাথে মিলিয়ে ফেলছে। তবুও, ব্যাপারটা পরে বোঝানো যাবে এই ভেবে ঐ মুহূর্তের ঝামেলা সামাল দেয়ার জন্য পুলিশের কথামত দু হাত উপরে তুলে দেয়ালের দিকে ফিরে বেরিয়ে এল অ্যাবাথ। সেটাই হল তার দ্বিতীয় ঐতিহাসিক ভুল। কারণ সিকিউরিটি ডেস্কের ভেতরেই ছিল পুলিশের থানায় খবর পৌঁছে দেয়ার অ্যালার্ম বাজানোর বেলটা। সে বেরিয়ে আসার সাথে সাথে তার দুহাত পিছনে নিয়ে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দিল ঐ দুজন। হ্যান্ডকাফ পরানোর ঠিক পরপরই অ্যাবাথ ধরতে পারল ব্যাপারটা। কারণ পুলিশের নিয়ম হল, আত্মসমর্পণকারীকে হ্যান্ডকাফ পরানোর আগে তার শরীর সার্চ করে কোনো অস্ত্র আছে কিনা তা দেখা। এই দুজন সেটা করেনি। তার উপর আবার অ্যাবাথের চোখে পড়ল, দুজনের একজনের গোঁফটা আসলে মোমের তৈরি, হুট করে দেখলে বোঝা যায় না। ততক্ষণে যা হবার হয়ে গেছে। কয়েক মিনিটের মধ্যে অ্যাবাথের আরেক সহযোগী গার্ড এল, তাকেও ধরে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে দেয়া হল। সেই গার্ডটি তখনও বোঝেনি। দুজন পুলিশ অফিসার দেখে সে জানতে চাইল কেন তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এবারে লোক দুটি ফাঁস করল গোমর। তারা আসলে পুলিশ অফিসার নয়। তারা চোর। এসেছে যাদুঘরে চুরি করতে। এই বলে দুই গার্ডকে তারা নিয়ে গেল মিউজিয়ামের নিচের বেজমেন্টে। সেখানে ইলেকট্রিক বক্সের সাথে তাদের হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে আটকে রাখা হল। দুজনের হাত, পা আর মাথায় পেঁচিয়ে দেয়া হল ডাক্ট টেপ, সেটা এতই শক্তিশালী টেপ, ওটা দিয়ে বাঁধা অবস্থা থেকে নিজ চেষ্টায় মুক্তি পাওয়া প্রায় অসম্ভব। Gardner-Museum-Heist-Security-guard-tied-duct-taped-basement এই অবস্থায় সকালে রিক অ্যাবাথকে উদ্ধার করে পুলিশ এর পরের ঘটনাগুলো ঘটে গেল দ্রুত। মিউজিয়ামে মোশন ডিটেক্টর লাগানো থাকায় ডাকাতদ্বয়ের পদচারণার শব্দ রেকর্ড হয় তাতে। সেগুলো শুনেই বোঝা যায় এরপর কী করেছিল এ দুজন। গার্ডদের বেঁধে রাখার পর দুজনে উপরে উঠে প্রথমে গেল যাদুঘরের ‘ডাচ রুম’ এ। তাদের একজন এগিয়ে গেল রেমভ্রান্ট এর আঁকা ‘সেলফ পোর্ট্রেট’ এর দিকে। একটা ছোট অ্যালার্ম বেজে উঠলেও সাথে সাথে সেটা ভেঙে চুরমার করে দেয়া হল। দেয়াল থেকে ছবিটি নামিয়ে এর ভারী ফ্রেম থেকে ছবির কাঠের প্যানেলটি বের করে আনার চেষ্টা করল তারা।

Related questions

উত্তর সন্ধানী! বেস্ট বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর ওয়েবসাইট। প্রশ্ন করুন, উত্তর নিন, সমস্যা সমাধান করুন ।
উত্তর সন্ধানী কি?
উত্তর সন্ধানী বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর এর ওয়েবসাইট।
গোপন প্রশ্ন ও উত্তর। ডিজিটাল শিক্ষায় প্রশ্নের উত্তরের সেরা ওয়েবসাইট।
...