in ইতিহাস ও নিদর্শন by
নবাব আলীবর্দী খাঁ সম্পর্কে লিখ?

2 Answers

0 votes
by
 
Best answer
আলীবর্দী খান রাজত্বকাল ২৯ এপ্রিল ১৭৪০ – ৯ এপ্রিল ১৭৫৬ রাজ্যাভিষেক ২৯ এপ্রিল ১৭৪০ পূর্ণ নাম মির্জা মুহম্মদ আলী জন্ম ১০ মে ১৬৭১ জন্মস্থান দাক্ষিণাত্য মৃত্যু ৯ এপ্রিল ১৭৫৬ মৃত্যুস্থান মুর্শিদাবাদ, বাংলা (বর্তমান মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) সমাধিস্থল খোশবাগ, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত পূর্বসূরি সরফরাজ খান উত্তরসূরি সিরাজদ্দৌলা দাম্পত্যসঙ্গী শরফুন্নেসা সন্তানাদি মেহের-উন-নিসা বেগম (ঘসেটি বেগম) মুনিরা বেগম আমিনা বেগম রাজবংশ আফসার পিতা শাহ কুলি খান (মির্জা মুহম্মদ মাদানি) মাতা নবাব আকিল খান আফসারের মেয়ে ধর্মবিশ্বাস শিয়া ইসলাম নবাব আলীবর্দী খাঁ। (১৬৭১-১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দ) সমার্থক নাম : মীর্জা বন্দী, আলীবর্দী খাঁ, আলীবর্দী খান। বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব। ১৬৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১০ মে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতামহ ছিলেন আরব বংশোদ্ভূত। তাঁর পিতা সম্রাট ঔরঙ্গজেবের শাসনামলে তিনি মোগল মনসবদার হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। এই সূত্রে তাঁর পুত্র মির্জা মুহাম্মদ (অন্যান্য নাম : শাহ কুলি খান, মিরজা মুহাম্মদ মাদানি, ঔরঙ্গজেবের দ্বিতীয় পুত্র আজম শাহের দরবারের একজন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। মির্জা মুহাম্মদ বিবাহ করেছিলেন খুরসানের এক আফগান-তুর্কি বংশসম্ভূতাকে। ইনি ছিলেন নবাব আকিল খান আফসারের মেয়ে। এই সূত্রে তিনি বাংলার নবাব সুজাউদ্দিন খাঁয়ের আত্মীয় ছিলেন। এই দম্পতির প্রথম সন্তানের নাম ছিল হাজী আহম্মদ, এরপর জন্মগ্রহণ করেন মীর্জা বন্দী (পরবর্তী সময়ে আলীবর্দী খান)। পিতার সূত্রে হাজী আহম্মদ এবং মীর্জা বন্দী― আজম শাহের দরবারে চাকরি পান। মীর্জা বন্দী তাঁর নিজের উন্নতি ঘটান এবং শেষ পর্যন্ত তাঁকে পিলখানার পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। ১৭০৭ খ্রিষ্টাব্দে জুজুর যুদ্ধে আজম শাহের মৃত্যু হয়। এরপর দুই ভাই-এরই চাকরি চলে যায়। ১৭২০ খ্রিষ্টাব্দে এই দুই ভাই সপরিবারে বাংলায় চলে আসেন এবং বাংলার তৎকালীন নবাব মুর্শিদকুলী খানের কাছে চাকরির আবেদন করেন। কিন্তু নবাব এঁদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করলে, এরপর এঁর উড়িষ্যার সহকারী সুবাদার সুজাউদ্দিন খাঁ-এর কাছে যান। সেখানে সুজাউদ্দিন খাঁ তাঁদেরকে চাকরি দেন। মীর্জা মীর্জা বন্দীর কাজে খুশি হয়ে, সুজাউদ্দিন তাঁকে পদোন্নতি দেন। এই সময় ওড়িশার কিছু জমিদারির তদারকি দান করেন। সুজাউদ্দিনের শ্বশুর মুর্শিদকুলী খানের মৃত্যুর পর বাংলার মসনদ রক্ষায় তিনি সুজাউদ্দিনকে তিনি সাহায্য করেন। সুজাউদ্দিন খাঁ -এর সিংহাসন প্রাপ্তিতে তিনি বিশেষ সহায়তা করেন। এরই পুরস্কার স্বরূপ মীর্জা বন্দীকে চাকলা আকবরনগর (রাজমহল) এর ফৌজদার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৭২৮ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে আলীবর্দী উপাধি দেওয়া হয়। এরপর থেকে তিনি আলীবর্দী খাঁ নামেই পরিচিত লাভ করেন। নতুন ফৌজদারের অধীনে, আলীবর্দী খাঁ রাজমহলের জনগণ শান্তি ও সমৃদ্ধি লাভ করে। প্রদেশের প্রায় সকল ক্ষেত্রে আলীবর্দী খাঁ, সুজাউদ্দিনের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। ১৭৩২ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট মুহাম্মদ শাহ বিহারকে বাংলা সুবার অধীনে নিয়ে আসেন। এই সময় নবাব সুজাউদ্দিন খাঁ বাংলাকে নিজের অধীনে রেখে, আলীবর্দীর খাঁর হাতে বিহারের শাসনভার অর্পণ করেন। এই সময় বিহার অত্যন্ত বিশৃঙ্খল অবস্থায় ছিল। স্থানীয় জমিদারদের অত্যাচার এবং রাজ্যের ভিতরে অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে রাজস্ব আদায় ঠিক মতো হতো না। আলীবর্দী খাঁ কঠোর হাতে এই বিশৃঙ্খলা দমন করেন। ফলে রাজ্যের রাজস্ব বৃদ্ধি পায়। সুজাউদ্দিন খাঁয়ের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র সরফরাজ খাঁ বাংলার নবাব হন। সরফরাজ খাঁ র দুর্বল শাসনের কারণে বাংলার মসনদ অস্থিরতার মধ্যে পতিত হয়। এই সময় তাঁর ভাই হাজী আহম্মদ-এর সাথে নিয়ে আলীবর্দী খাঁ বাংলার মসনদ দখল করার ষড়যন্ত্র করতে থাকেন। এই ষড়যন্ত্রে উৎসাহ দেন আলম চাঁদ, জগৎশেঠ-এর মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ। আলীবর্দী খাঁ গোপনে দিল্লীর সম্রাটের অনুচরদের উৎকোচ দিয়ে বশীভূত করেন। পরে সম্রাটকে পর্যাপ্ত রাজস্ব দেওয়ার অঙ্গীকার করে, রাজ্য শাসনের জন্য প্রয়োজনীয় আদেশনামা দিল্লীর দরবার থেকে আদায় করেন। এর ভিতরে তিনি জোরপূর্বক বাংলার মসনদ দখল করার জন্য সামরিক শক্তি বৃদ্ধিও করেন। অবশেষে তিনি ১৭৪০ খ্রিষ্টাব্দে সরফরাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। মুর্শিদাবাদের ২২ মাইল উত্তর-পশ্চিমে গিরিয়া নামক স্থানে উভয় সেনাবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে সরফরাজ খাঁ পরাজিত ও নিহত হন। এরপর বিনা বাধায় আলীবর্দী খাঁ মুর্শিদাবাদ দখল করেন এবং তিনি বাংলা ও বিহারে অধিকার লাভ করেন। এই সময় সরফরাজ খাঁর জামাত রুস্তম জঙ্গ (দ্বিতীয় মুর্শিদকুলি খান নামে পরিচিত ছিলেন) উড়িষ্যার শাসনকর্তা ছিলেন। রুস্তম জঙ্গ আলীবর্দী খানের আনুগত্য অস্বীকার করে, মুর্শিদাবাদ দখলের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এই সময় মেদেনীপুরের জমিদাররা আলীবর্দীর পক্ষালম্বন করেন। আলীবর্দী খাঁর নিজস্ব বাহিনী এবং জামিদারদের বাহিনী নিয়ে সুবর্ণরেখা নদীর তীরে রুস্তম জঙ্গের বাহিনীর মুখোমুখী হন। রুস্তম জঙ্গ এবং তাঁর জামাতা মীর্জা বাকর বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে পরাজিত হন। এই যুদ্ধে মীর্জা বাকর মারাত্মকভাবে আহত হন। পরে রুস্তম জঙ্গ তাঁর আহত জামাতাকে সাথে নিয়ে দাক্ষিণ্যাতে পালিয়ে যান। এরপর আলীবর্দী খান উড়িষ্যা দখল করেন এবং নিজ জামাতা শওকত জঙ্গের হাতে উড়িষ্যার শাসনভার অর্পণ করে মুর্শিদাবাদে ফিরে আসেন। শওকত জঙ্গের কুশাসনের ফলে উড়িষ্যার সামরিক শক্তিতে দুর্বল হয়ে পড়লে, ১৭৪১ খ্রিষ্টাব্দে মীর্জা বাকর মারাঠী সৈন্যদের সহায়তায় উড়িষ্যা দখল করে নেন। এই সময় আলীবর্দী খান বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে উড়িষ্যা অভিযান অগ্রসর হন। মীর্জা বাকর পরিস্থিতি উপলব্ধি করে আলীবর্দী খাঁর বাহিনীকে কোনো বাধা না দিয়ে, আবার দাক্ষিণ্যাতে পালিয়ে যান। আলীবর্দী খান তিন মাস সেখানে অবস্থান করেন। এরপর শেখ মাসুমকে উড়িষ্যার সহকারী শাসনকর্তা নিয়োগ করে মুর্শিদাবাদে ফিরে আসেন― ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম বর্গীর হাঙ্গামার পর। বর্গীর হাঙ্গামা (১৭৪১-৫০ খ্রিষ্টাব্দ) ১৭৪১ খ্রিষ্টাব্দের দিকে বাংলাদেশে মারাঠা আক্রমণ শুরু হয় এবং ১৭৫০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। প্রায় প্রতি বৎসরই মারাঠী সৈন্যরা এই আক্রমণ করতো। এই আক্রমণের সময় তারা ব্যাপক হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ করতো। মূলত পশ্চিমবঙ্গেই এই আক্রমণ হতো। স্থানীয় লোকেরা এই আক্রমণের ভয়ে পূর্ব-বাংলার দিকে পালিয়ে যেতো। এছাড়া বহুমানুষ তখন কলকাতায় আশ্রয় নিতো। ফলে এই সময় পশ্চিমবঙ্গে জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছিল আশঙ্কাজনকভাবে। ইতিহাসে এই আক্রমণকে বর্গীর হাঙ্গামা নামে অভিহিত করা হয়। মোগল সাম্রাজ্যের প্রভাব হ্রাস হওয়ার পর, পেশোয়া বালাজী বিশ্বনাথ সর্বপ্রথম ভারতবর্ষে মারাঠ সাম্রাজ্য স্থাপনের পরিকল্পনা করেছিলেন। বালাজী বিশ্বনাথের পুত্র পেশোয়া বাজীরাও এই বিষয়ে যত্নবান হন। হায়দ্রাবাদের নিজাম মারাঠী আক্রমণ থেকে নিজ রাজ্য রক্ষার জন্য, নাগপুরের স্বাধীন মারাঠী রাজা রঘুজী ভোঁসলেকে বাংলা আক্রমণে উৎসাহিত করেন। রঘুজী ভোঁসলে সাতরায় তাঁর আধিপত্য বিস্তারে ব্যর্থ হলে বাংলা আক্রমণের উদ্যোগ নেন। এই সময় পরাজিত রুস্তম জঙ্গও প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য রঘুজী ভোঁসলে -কে প্ররোচিত করেন। ১৭৪২ খ্রিষ্টাব্দে আলীবর্দী খাঁ উড়িষ্যা অভিযানে থাকার সময়, মারাঠী সেনাপতি ভাস্কর পণ্ডিত বাংলা আক্রমণ করেন এবং বিনা বাধায় বর্ধমান পর্যন্ত অগ্রসর হন। এরপর তিনি কাটোয়া দখল করে নেন। এরপর মারাঠী সৈন্যরা আলীবর্দীর খাঁর অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে, দ্রুত মুর্শিদাবাদ আক্রমণ করে মুর্শিদাবাদ শহর ও জগৎশেঠর কোষাগার লুণ্ঠন করে। এই সময় আলীবর্দীর খাঁ ফিরে এলে, ভাস্কর পণ্ডিত মুর্শিদাবাদ ত্যাগ করে কাটোয়ায় ফিরে যান এবং সেখানে মারাঠী ঘাঁটি স্থাপন করে গঙ্গা নদীর পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত নিজেদের অধিকারে রাখতে সক্ষম হন। ১৭৪৩ খ্রিষ্টাব্দে রঘুজী ভোঁসলে বাংলা আক্রমণের উদ্যেশ্যে রওনা হন। এই সময় তাঁর প্রধান প্রতিবন্ধক ছিলেন বালাজী রাও। মোগল সম্রাটের অনুরোধে বালাজী রাও রঘুজী ভোসলেঁর বিরুদ্ধে অগ্রসর হলে, রঘুজী ভোসলেঁ নিজ রাজ্যে ফিরে যান। ফলে রঘুজী ভোসলেঁর আক্রমণ থেকে আলীবর্দী খান রক্ষা পান। ১৭৪৪ খ্রিষ্টাব্দে ভাস্কর পণ্ডিত পুনরায় বাংলা আক্রমণ করেন। মারাঠী সেনাবাহিনীর তুলনায় আলীবার্দী খাঁর সেনবাহিনী দুর্বল ছিল। এই কারণে আলীবার্দী খাঁ প্রতারণার আশ্রয় নেন। তিনি সন্ধির নাম করে ভাস্কর পণ্ডিতকে আমন্ত্রণ জানান। পরে আফগান সেনাপ্রধান মুস্তফা খাঁর সহায়তায় ভাস্কর পণ্ডিতকে হত্যা করা হয়। ভাস্কর পণ্ডিতকে হত্যা করতে পারলে, আলীবর্দী খাঁ তাঁকে বিহারের শাসনকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেবেন, এই প্রতিশ্রুতি অনুসারে মুস্তফা খাঁ ভাস্কর পণ্ডিতকে হত্যা করলেও― আলীবর্দী খাঁ তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন নাই। এই কারণে মুস্তফা বিদ্রোহ ঘোষণা করলে, উভয়ের ভিতর যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে মুস্তফা নিহত হলে, বিহারের শাসনভার আলীবর্দী খাঁর পছন্দের শাসকের হাতেই রয়ে যায়। ভাস্কর পণ্ডিতের মৃত্যুর পর, রঘুজী ভোসলেঁ মারাঠী সৈন্যদের ভাস্কর পণ্ডিতের হত্যার প্রতিশোধের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন এবং ১৭৪৫ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা আক্রমণ করেন। রঘুজী প্রাথমিকভাবে উড়িষ্যা ও বিহার দখল করে মুর্শিদাবাদের দিকে অগ্রসর হন। কিন্তু আলীবর্দী খাঁরা বাধার মুখে পরাজিত হয়ে নিজ রাজ্যে ফিরে যান। ১৭৪৭ খ্রিষ্টাব্দে রঘুজীর পুত্র জনজীর ভোঁসলে বাংলা আক্রমণ করে বাংলার মেদিনীপুর ও উড়িষ্যা দখল করে নেন। এরপর টানা তিন বৎসর মারাঠী সৈন্যদের সাথে আলীবার্দীর খাঁর যুদ্ধ হয়। এই সময় আলীবর্দী খাঁর শত্রু মীর হাবিব মারাঠী বাহিনীর সাথে যোগ দেয় এবং নবাবের বাহিনীর আফগান সৈন্যরা বিদ্রোহ করে। নবাব এই বিদ্রোহ দমন করলেও, উড়িষ্যার পুরোপুরি মারাঠীদের দখলে চলে যায়। ১৭৫১ খ্রিষ্টাব্দে উভয় বাহিনীর মধ্যে একটি সন্ধি হয়। এই সন্ধি অনুসারে, উড়িষ্যায় মারাঠীদের অধিকারে থেকে যায়। এছাড়া বাৎসরিক ১২ লক্ষ টাকা মারাঠীদের কর প্রদানে আলীবর্দী খাঁ অঙ্গীকার করেন। কিন্তু বাংলাতে মারাঠীরা আর কখনো আক্রমণ করবে না, এই অঙ্গীকার মারাঠীরা প্রদান করে। এই সন্ধির মধ্য দিয়ে বর্গীর হাঙ্গামার পরিসমাপ্তি ঘটে। বাংলার অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য আলীবর্দী খান ইংরেজ, ফরাসীদের বাণিজ্য করার অনুমতি দেন। কিন্তু জীবনের শেষ দিকে তিনি ইংরেজদের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। ১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৯শে এপ্রিল তিনি মুর্শিদাবাদে মৃত্যবরণ করেন। তাঁর কোনো পুত্র সন্তান ছিল না। তিন কন্যার নাম ছিল- মেহার উন-নিসা বেগম (ঘোশেটি বেগম), মুনিরা বেগম এবং আমিনা বেগম। আমেনা বেগমের বিবাহ হয়েছিল তাঁর কনিষ্ঠ ভাতিজা জৈনুদ্দিন আহমেদ খান-এর সাথে। আমিনা বেগমের গর্ভেই বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার জন্ম হয়। আলীবর্দীর নিজের কোন পুত্র সন্তান না থাকায়, আলীবর্দী সিরাজউদ্দৌলাকে তার উত্তরসূরি ঘোষণা করে গিয়েছিলেন। ইতিহাসে বর্তমান অবস্থাটি বোঝার জন্য বারবার ফিরে তাকাতে হয় পেছনের দিকে; সেই বিন্দুটির দিকে, যেখান থেকে সবকিছুর শুরু। সমগ্র ভারতবর্ষের ইতিহাস বদলে দিয়েছিল যে ইংরেজরা, তাদের ভারতবর্ষের রাজনীতিতে প্রবেশই ঘটেছিল বাংলা দখল করার মধ্য দিয়ে। অর্থাৎ এই সমগ্র উপমহাদেশের মধ্যে বাংলা একটি তাৎপর্যবাহী জায়গা বরাবরই এককভাবে ধরে ছিল। সার্বভৌম বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসের গোড়ার সুতো ধরে টান দিলে একেবারে শুরুর দিকের যে নামটি আসে, সেটি হলো নবাব আলিবর্দী খান। সম্পর্কে তিনি ছিলেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলার নানা। আঠারো শতকের গোড়া থেকেই বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যা মিলে ক্রমান্বয়ে একটি স্বাধীন প্রাদেশিক রাজ্যে পরিণত হয়। বিদেশী মুসলমানরা ভাগ্যের সন্ধানে ভারতবর্ষে এসে নিজ কৃতিত্বগুণে প্রশাসনের উচ্চতর স্থানগুলো দখল করতে থাকেন। কেউ হন সুবাদার, কেউ নায়েব-সুবাদার। আলিবর্দী খানের পরিবারও এমনই এক সময় বাংলায় আসেন। তার প্রকৃত নাম ছিল মীর্জাবন্দে বা মীর্জা মুহাম্মদ আলী। পিতার দিক থেকে তিনি ছিলেন আরব বংশীয়, আর মাতার দিক তিনি খোরাসানের আফসার উপজাতি গোষ্ঠীর সাথে যুক্ত ছিলেন। আলিবর্দী খানের পিতা শাহ কুলি খান সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয় সন্তান আজম শাহ’র ভোজসভার একজন পরিচারক হিসেবে কাজ করতেন। তার কাজ ছিল পেয়ালায় মদ ঢেলে দেয়া। আলীবর্দী খান আওরঙ্গজেবের স্নেহধন্য হিসেবে বেড়ে ওঠেন এবং পরিণত বয়সে মুঘল মনসবদার পদে উন্নীত হন। সম্রাট আওরঙ্গজেবের আরেক কর্মচারী মুর্শিদকুলি খানের জামাতা সুজাউদ্দীন মুহাম্মদ খানের সাথে আলিবর্দীর মায়ের আত্মীয়তা ছিল। পিতার মৃত্যুর পরে আলিবর্দী উড়িষ্যার সুবাদার সুজাউদ্দীনের অধীনে চাকরী গ্রহণ করেন। সুজাউদ্দীন পরিচালিত শাসন ব্যবস্থাকে তিনি কঠোর পরিশ্রম করে জনপ্রিয় করে তোলেন। বাংলার মসনদে সুজাউদ্দীনের আসনকে সুদৃঢ় করতেও আলিবর্দী সাহায্য করেন। ১৭২৮ সালে সুজাউদ্দীন আলিবর্দী খানকে রাজমহলের ফৌজদার বা সেনাপতি নিযুক্ত করেন এবং তিনিই তাকে ‘আলিবর্দী খান’ নামে ভূষিত করেন। ১৭৩৩ সালে দিল্লীর সম্রাট বিহারকে বাংলার সাথে যুক্ত করলে আলিবর্দী খান বিহারের ‘নায়েব নাজিম’ বা সহকারী সুবাদার নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে নিজ কৃতিত্বগুণে আলিবর্দী খান সুজা উল মূলক (দেশের বীর), হাসিম উদ দৌলা (রাজ্যের তরবারি) এবং মহব্বত জং (যুদ্ধের ত্রাস) উপাধিতে ভূষিত হন। তাকে পাঁচ হাজারী মনসবদারীও দেয়া হয়। কিন্তু তার লক্ষ্য ছিল আরও বৃহৎ।
0 votes
by
আলীবর্দী খান রাজত্বকাল ২৯ এপ্রিল ১৭৪০ – ৯ এপ্রিল ১৭৫৬ রাজ্যাভিষেক ২৯ এপ্রিল ১৭৪০ পূর্ণ নাম মির্জা মুহম্মদ আলী জন্ম ১০ মে ১৬৭১ জন্মস্থান দাক্ষিণাত্য মৃত্যু ৯ এপ্রিল ১৭৫৬ মৃত্যুস্থান মুর্শিদাবাদ, বাংলা (বর্তমান মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত) সমাধিস্থল খোশবাগ, মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত পূর্বসূরি সরফরাজ খান উত্তরসূরি সিরাজদ্দৌলা দাম্পত্যসঙ্গী শরফুন্নেসা সন্তানাদি মেহের-উন-নিসা বেগম (ঘসেটি বেগম) মুনিরা বেগম আমিনা বেগম রাজবংশ আফসার পিতা শাহ কুলি খান (মির্জা মুহম্মদ মাদানি) মাতা নবাব আকিল খান আফসারের মেয়ে ধর্মবিশ্বাস শিয়া ইসলাম নবাব আলীবর্দী খাঁ। (১৬৭১-১৭৫৬ খ্রিষ্টাব্দ) সমার্থক নাম : মীর্জা বন্দী, আলীবর্দী খাঁ, আলীবর্দী খান। বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার নবাব। ১৬৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১০ মে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতামহ ছিলেন আরব বংশোদ্ভূত। তাঁর পিতা সম্রাট ঔরঙ্গজেবের শাসনামলে তিনি মোগল মনসবদার হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। এই সূত্রে তাঁর পুত্র মির্জা মুহাম্মদ (অন্যান্য নাম : শাহ কুলি খান, মিরজা মুহাম্মদ মাদানি, ঔরঙ্গজেবের দ্বিতীয় পুত্র আজম শাহের দরবারের একজন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। মির্জা মুহাম্মদ বিবাহ করেছিলেন খুরসানের এক আফগান-তুর্কি বংশসম্ভূতাকে। ইনি ছিলেন নবাব আকিল খান আফসারের মেয়ে। এই সূত্রে তিনি বাংলার নবাব সুজাউদ্দিন খাঁয়ের আত্মীয় ছিলেন। এই দম্পতির প্রথম সন্তানের নাম ছিল হাজী আহম্মদ, এরপর জন্মগ্রহণ করেন মীর্জা বন্দী (পরবর্তী সময়ে আলীবর্দী খান)। পিতার সূত্রে হাজী আহম্মদ এবং মীর্জা বন্দী― আজম শাহের দরবারে চাকরি পান। মীর্জা বন্দী তাঁর নিজের উন্নতি ঘটান এবং শেষ পর্যন্ত তাঁকে পিলখানার পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। ১৭০৭ খ্রিষ্টাব্দে জুজুর যুদ্ধে আজম শাহের মৃত্যু হয়। এরপর দুই ভাই-এরই চাকরি চলে যায়। ১৭২০ খ্রিষ্টাব্দে এই দুই ভাই সপরিবারে বাংলায় চলে আসেন এবং বাংলার তৎকালীন নবাব মুর্শিদকুলী খানের কাছে চাকরির আবেদন করেন। কিন্তু নবাব এঁদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করলে, এরপর এঁর উড়িষ্যার সহকারী সুবাদার সুজাউদ্দিন খাঁ-এর কাছে যান। সেখানে সুজাউদ্দিন খাঁ তাঁদেরকে চাকরি দেন। মীর্জা মীর্জা বন্দীর কাজে খুশি হয়ে, সুজাউদ্দিন তাঁকে পদোন্নতি দেন। এই সময় ওড়িশার কিছু জমিদারির তদারকি দান করেন। সুজাউদ্দিনের শ্বশুর মুর্শিদকুলী খানের মৃত্যুর পর বাংলার মসনদ রক্ষায় তিনি সুজাউদ্দিনকে তিনি সাহায্য করেন। সুজাউদ্দিন খাঁ -এর সিংহাসন প্রাপ্তিতে তিনি বিশেষ সহায়তা করেন। এরই পুরস্কার স্বরূপ মীর্জা বন্দীকে চাকলা আকবরনগর (রাজমহল) এর ফৌজদার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৭২৮ খ্রিষ্টাব্দে তাঁকে আলীবর্দী উপাধি দেওয়া হয়। এরপর থেকে তিনি আলীবর্দী খাঁ নামেই পরিচিত লাভ করেন। নতুন ফৌজদারের অধীনে, আলীবর্দী খাঁ রাজমহলের জনগণ শান্তি ও সমৃদ্ধি লাভ করে। প্রদেশের প্রায় সকল ক্ষেত্রে আলীবর্দী খাঁ, সুজাউদ্দিনের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। ১৭৩২ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট মুহাম্মদ শাহ বিহারকে বাংলা সুবার অধীনে নিয়ে আসেন। এই সময় নবাব সুজাউদ্দিন খাঁ বাংলাকে নিজের অধীনে রেখে, আলীবর্দীর খাঁর হাতে বিহারের শাসনভার অর্পণ করেন। এই সময় বিহার অত্যন্ত বিশৃঙ্খল অবস্থায় ছিল। স্থানীয় জমিদারদের অত্যাচার এবং রাজ্যের ভিতরে অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে রাজস্ব আদায় ঠিক মতো হতো না। আলীবর্দী খাঁ কঠোর হাতে এই বিশৃঙ্খলা দমন করেন। ফলে রাজ্যের রাজস্ব বৃদ্ধি পায়। সুজাউদ্দিন খাঁয়ের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র সরফরাজ খাঁ বাংলার নবাব হন। সরফরাজ খাঁ র দুর্বল শাসনের কারণে বাংলার মসনদ অস্থিরতার মধ্যে পতিত হয়। এই সময় তাঁর ভাই হাজী আহম্মদ-এর সাথে নিয়ে আলীবর্দী খাঁ বাংলার মসনদ দখল করার ষড়যন্ত্র করতে থাকেন। এই ষড়যন্ত্রে উৎসাহ দেন আলম চাঁদ, জগৎশেঠ-এর মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ। আলীবর্দী খাঁ গোপনে দিল্লীর সম্রাটের অনুচরদের উৎকোচ দিয়ে বশীভূত করেন। পরে সম্রাটকে পর্যাপ্ত রাজস্ব দেওয়ার অঙ্গীকার করে, রাজ্য শাসনের জন্য প্রয়োজনীয় আদেশনামা দিল্লীর দরবার থেকে আদায় করেন। এর ভিতরে তিনি জোরপূর্বক বাংলার মসনদ দখল করার জন্য সামরিক শক্তি বৃদ্ধিও করেন। অবশেষে তিনি ১৭৪০ খ্রিষ্টাব্দে সরফরাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। মুর্শিদাবাদের ২২ মাইল উত্তর-পশ্চিমে গিরিয়া নামক স্থানে উভয় সেনাবাহিনীর মধ্যে যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধে সরফরাজ খাঁ পরাজিত ও নিহত হন। এরপর বিনা বাধায় আলীবর্দী খাঁ মুর্শিদাবাদ দখল করেন এবং তিনি বাংলা ও বিহারে অধিকার লাভ করেন। এই সময় সরফরাজ খাঁর জামাত রুস্তম জঙ্গ (দ্বিতীয় মুর্শিদকুলি খান নামে পরিচিত ছিলেন) উড়িষ্যার শাসনকর্তা ছিলেন। রুস্তম জঙ্গ আলীবর্দী খানের আনুগত্য অস্বীকার করে, মুর্শিদাবাদ দখলের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এই সময় মেদেনীপুরের জমিদাররা আলীবর্দীর পক্ষালম্বন করেন। আলীবর্দী খাঁর নিজস্ব বাহিনী এবং জামিদারদের বাহিনী নিয়ে সুবর্ণরেখা নদীর তীরে রুস্তম জঙ্গের বাহিনীর মুখোমুখী হন। রুস্তম জঙ্গ এবং তাঁর জামাতা মীর্জা বাকর বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে পরাজিত হন। এই যুদ্ধে মীর্জা বাকর মারাত্মকভাবে আহত হন। পরে রুস্তম জঙ্গ তাঁর আহত জামাতাকে সাথে নিয়ে দাক্ষিণ্যাতে পালিয়ে যান। এরপর আলীবর্দী খান উড়িষ্যা দখল করেন এবং নিজ জামাতা শওকত জঙ্গের হাতে উড়িষ্যার শাসনভার অর্পণ করে মুর্শিদাবাদে ফিরে আসেন। শওকত জঙ্গের কুশাসনের ফলে উড়িষ্যার সামরিক শক্তিতে দুর্বল হয়ে পড়লে, ১৭৪১ খ্রিষ্টাব্দে মীর্জা বাকর মারাঠী সৈন্যদের সহায়তায় উড়িষ্যা দখল করে নেন। এই সময় আলীবর্দী খান বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে উড়িষ্যা অভিযান অগ্রসর হন। মীর্জা বাকর পরিস্থিতি উপলব্ধি করে আলীবর্দী খাঁর বাহিনীকে কোনো বাধা না দিয়ে, আবার দাক্ষিণ্যাতে পালিয়ে যান। আলীবর্দী খান তিন মাস সেখানে অবস্থান করেন। এরপর শেখ মাসুমকে উড়িষ্যার সহকারী শাসনকর্তা নিয়োগ করে মুর্শিদাবাদে ফিরে আসেন― ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের প্রথম বর্গীর হাঙ্গামার পর। বর্গীর হাঙ্গামা (১৭৪১-৫০ খ্রিষ্টাব্দ) ১৭৪১ খ্রিষ্টাব্দের দিকে বাংলাদেশে মারাঠা আক্রমণ শুরু হয় এবং ১৭৫০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। প্রায় প্রতি বৎসরই মারাঠী সৈন্যরা এই আক্রমণ করতো। এই আক্রমণের সময় তারা ব্যাপক হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ করতো। মূলত পশ্চিমবঙ্গেই এই আক্রমণ হতো। স্থানীয় লোকেরা এই আক্রমণের ভয়ে পূর্ব-বাংলার দিকে পালিয়ে যেতো। এছাড়া বহুমানুষ তখন কলকাতায় আশ্রয় নিতো। ফলে এই সময় পশ্চিমবঙ্গে জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছিল আশঙ্কাজনকভাবে। ইতিহাসে এই আক্রমণকে বর্গীর হাঙ্গামা নামে অভিহিত করা হয়। মোগল সাম্রাজ্যের প্রভাব হ্রাস হওয়ার পর, পেশোয়া বালাজী বিশ্বনাথ সর্বপ্রথম ভারতবর্ষে মারাঠ সাম্রাজ্য স্থাপনের পরিকল্পনা করেছিলেন। বালাজী বিশ্বনাথের পুত্র পেশোয়া বাজীরাও এই বিষয়ে যত্নবান হন। হায়দ্রাবাদের নিজাম মারাঠী আক্রমণ থেকে নিজ রাজ্য রক্ষার জন্য, নাগপুরের স্বাধীন মারাঠী রাজা রঘুজী ভোঁসলেকে বাংলা আক্রমণে উৎসাহিত করেন। রঘুজী ভোঁসলে সাতরায় তাঁর আধিপত্য বিস্তারে ব্যর্থ হলে বাংলা আক্রমণের উদ্যোগ নেন। এই সময় পরাজিত রুস্তম জঙ্গও প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য রঘুজী ভোঁসলে -কে প্ররোচিত করেন। ১৭৪২ খ্রিষ্টাব্দে আলীবর্দী খাঁ উড়িষ্যা অভিযানে থাকার সময়, মারাঠী সেনাপতি ভাস্কর পণ্ডিত বাংলা আক্রমণ করেন এবং বিনা বাধায় বর্ধমান পর্যন্ত অগ্রসর হন। এরপর তিনি কাটোয়া দখল করে নেন। এরপর মারাঠী সৈন্যরা আলীবর্দীর খাঁর অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে, দ্রুত মুর্শিদাবাদ আক্রমণ করে মুর্শিদাবাদ শহর ও জগৎশেঠর কোষাগার লুণ্ঠন করে। এই সময় আলীবর্দীর খাঁ ফিরে এলে, ভাস্কর পণ্ডিত মুর্শিদাবাদ ত্যাগ করে কাটোয়ায় ফিরে যান এবং সেখানে মারাঠী ঘাঁটি স্থাপন করে গঙ্গা নদীর পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত নিজেদের অধিকারে রাখতে সক্ষম হন। ১৭৪৩ খ্রিষ্টাব্দে রঘুজী ভোঁসলে বাংলা আক্রমণের উদ্যেশ্যে রওনা হন। এই সময় তাঁর প্রধান প্রতিবন্ধক ছিলেন বালাজী রাও। মোগল সম্রাটের অনুরোধে বালাজী রাও রঘুজী ভোসলেঁর বিরুদ্ধে অগ্রসর হলে, রঘুজী ভোসলেঁ নিজ রাজ্যে ফিরে যান। ফলে রঘুজী ভোসলেঁর আক্রমণ থেকে আলীবর্দী খান রক্ষা পান। ১৭৪৪ খ্রিষ্টাব্দে ভাস্কর পণ্ডিত পুনরায় বাংলা আক্রমণ করেন। মারাঠী সেনাবাহিনীর তুলনায় আলীবার্দী খাঁর সেনবাহিনী দুর্বল ছিল। এই কারণে আলীবার্দী খাঁ প্রতারণার আশ্রয় নেন। তিনি সন্ধির নাম করে ভাস্কর পণ্ডিতকে আমন্ত্রণ জানান। পরে আফগান সেনাপ্রধান মুস্তফা খাঁর সহায়তায় ভাস্কর পণ্ডিতকে হত্যা করা হয়। ভাস্কর পণ্ডিতকে হত্যা করতে পারলে, আলীবর্দী খাঁ তাঁকে বিহারের শাসনকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেবেন, এই প্রতিশ্রুতি অনুসারে মুস্তফা খাঁ ভাস্কর পণ্ডিতকে হত্যা করলেও― আলীবর্দী খাঁ তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেন নাই। এই কারণে মুস্তফা বিদ্রোহ ঘোষণা করলে, উভয়ের ভিতর যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে মুস্তফা নিহত হলে, বিহারের শাসনভার আলীবর্দী খাঁর পছন্দের শাসকের হাতেই রয়ে যায়। ভাস্কর পণ্ডিতের মৃত্যুর পর, রঘুজী ভোসলেঁ মারাঠী সৈন্যদের ভাস্কর পণ্ডিতের হত্যার প্রতিশোধের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন এবং ১৭৪৫ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা আক্রমণ করেন। রঘুজী প্রাথমিকভাবে উড়িষ্যা ও বিহার দখল করে মুর্শিদাবাদের দিকে অগ্রসর হন। কিন্তু আলীবর্দী খাঁরা বাধার মুখে পরাজিত হয়ে নিজ রাজ্যে ফিরে যান। ১৭৪৭ খ্রিষ্টাব্দে রঘুজীর পুত্র জনজীর ভোঁসলে বাংলা আক্রমণ করে বাংলার মেদিনীপুর ও উড়িষ্যা দখল করে নেন। এরপর টানা তিন বৎসর মারাঠী সৈন্যদের সাথে আলীবার্দীর খাঁর যুদ্ধ হয়। এই সময় আলীবর্দী খাঁর শত্রু মীর হাবিব মারাঠী বাহিনীর সাথে যোগ দেয় এবং নবাবের বাহিনীর আফগান সৈন্যরা বিদ্রোহ করে। নবাব এই বিদ্রোহ দমন করলেও, উড়িষ্যার পুরোপুরি মারাঠীদের দখলে চলে যায়। ১৭৫১ খ্রিষ্টাব্দে উভয় বাহিনীর মধ্যে একটি সন্ধি হয়। এই সন্ধি অনুসারে, উড়িষ্যায় মারাঠীদের অধিকারে থেকে যায়। এছাড়া বাৎসরিক ১২ লক্ষ টাকা মারাঠীদের কর প্রদানে আলীবর্দী খাঁ অঙ্গীকার করেন। কিন্তু বাংলাতে মারাঠীরা আর কখনো আক্রমণ করবে না, এই অঙ্গীকার মারাঠীরা প্রদান করে। এই সন্ধির মধ্য দিয়ে বর্গীর হাঙ্গামার পরিসমাপ্তি ঘটে। বাংলার অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য আলীবর্দী খান ইংরেজ, ফরাসীদের বাণিজ্য করার অনুমতি দেন। কিন্তু জীবনের শেষ দিকে তিনি।

Related questions

উত্তর সন্ধানী! বেস্ট বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর ওয়েবসাইট। প্রশ্ন করুন, উত্তর নিন, সমস্যা সমাধান করুন ।
উত্তর সন্ধানী কি?
উত্তর সন্ধানী বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর এর ওয়েবসাইট।
গোপন প্রশ্ন ও উত্তর। ডিজিটাল শিক্ষায় প্রশ্নের উত্তরের সেরা ওয়েবসাইট।
...