হিজরতের অনধিক ১৯ মাস পর ২য় হিজরীর ১৭ই রামাযান শুক্রবার সকালে (৬২৪ খৃ. ১১ই মার্চ) ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়।[1] এই যুদ্ধে মুসলিম পক্ষে ৬ জন মুহাজির ও ৮ জন আনছারসহ মোট ১৪ জন শহীদ হন। কাফের পক্ষে ৭০ জন নিহত ও ৭০ জন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি বন্দী হয় (আর-রাহীক্ব ২২৪ পৃঃ)। বিস্তারিত বিবরণ নিম্নরূপ।- বদর হল মদীনা থেকে ১৬০ কি. মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত একটি প্রসিদ্ধ বাণিজ্য কেন্দ্রের নাম। যেখানে পানির প্রাচুর্য থাকায় স্থানটির গুরুত্ব ছিল সর্বাধিক। এখানেই সংঘটিত হয় ইসলামের ইতিহাসে তাওহীদ ও শিরকের মধ্যকার প্রথম সশস্ত্র মুকাবিলা। ১৯ মাসের এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে কুরায়েশরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে মদীনা থেকে বের করে দেবার জন্য নানাবিধ অপচেষ্টা চালায়। যেমনভাবে তারা ইতিপূর্বে হাবশায় হিজরতকারী মুসলমানদের সেখান থেকে বের করে দেবার ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু সেখানে তারা ব্যর্থ হয়েছিল প্রধানতঃ তিনটি কারণে। (১) সেখানে ছিল একজন ধর্মপরায়ণ খ্রিষ্টান বাদশাহ আছহামা নাজাশীর রাজত্ব। যিনি নিজে ইনজীলে পন্ডিত ছিলেন এবং সেকারণে আখেরী নবী হিসাবে রাসূল (সাঃ)-এর প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। (২) মক্কা ও হাবশার মধ্যখানে ছিল আরব সাগরের একটি প্রশস্ত শাখা। যা পেরিয়ে ওপারে গিয়ে হামলা করা সম্ভব ছিল না। (৩) হাবশার লোকেরা ছিল হিব্রুভাষী। তাদের সাথে কুরায়েশদের ভাষাগত মিল ছিল না এবং কোনরূপ আত্মীয়তা বা পূর্ব পরিচয় ছিল না। ধর্ম ও অঞ্চলগত মিলও ছিল না। পক্ষান্তরে ইয়াছরিব ছিল কুরায়েশদের খুবই পরিচিত এলাকা। যার উপর দিয়ে তারা নিয়মিতভাবে সিরিয়াতে ব্যবসার জন্য যাতায়াত করত। তাছাড়া তাদের সঙ্গে ভাষাগত মিল এবং আত্মীয়তাও ছিল। অধিকন্তু রাস্তা ছিল স্থলপথ, যেখানে নদী-নালার কোন বাধা নেই। দূরত্ব বর্তমানের হিসাবে প্রায় ৪৬০ কিলোমিটার হলেও সেখানে যাতায়াতে তারা অভ্যস্ত ছিল। এক্ষণে আমরা বদর যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পরোক্ষ কারণগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করব।- পরোক্ষ কারণ সমূহ : ━━━━━━━━━━━━ মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইয়ের নিকটে কুরায়েশ নেতাদের পত্র প্রেরণ। উল্লেখ্য যে, আব্দুল্লাহ তখনও ইসলাম কবুল করেননি। রাসূল (সাঃ)-এর আগমনের কারণে ইয়াছরিবের নেতৃত্ব লাভের মোক্ষম সুযোগটি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় তিনি ছিলেন মনে মনে দারুণভাবে ক্ষুব্ধ। রাসূল (সাঃ)-এর প্রতি তার এই ক্ষোভটাকেই কুরায়েশরা কাজে লাগায় এবং নিম্নোক্ত ভাষায় কঠোর হুমকি দিয়ে তার নিকটে চিঠি পাঠায়।- إِنَّكُمْ آوَيْتُمْ صَاحِبَنَا وَإِنَّا نُقْسِمُ بِاللهِ لَتُقَاتِلُنَّهُ أَوْ لَتُخْرِجُنَّهُ أَوْ لَنَسِيرَنَّ إِلَيْكُمْ بِأَجْمَعِنَا حَتَّى نَقْتُلَ مُقَاتِلَتَكُمْ وَنَسْتَبِيحَ نِسَاءَكُمْ ‘তোমরা আমাদের লোকটিকে (মুহাম্মাদকে) আশ্রয় দিয়েছ। এজন্য আমরা আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, হয় তোমরা তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে ও তাকে বের করে দিবে নতুবা আমরা তোমাদের উপরে সর্বশক্তি নিয়ে হামলা করব। তোমাদের যোদ্ধাদের হত্যা করব ও নারীদের হালাল করব’ (আবুদাঊদ হা/৩০০৪)। এই পত্র পেয়ে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই দ্রুত তার সমমনাদের সাথে গোপন বৈঠকে বসে গেল। কিন্তু সংবাদ রাসূল (সাঃ)-এর কানে পৌঁছে গেল। তিনি সরাসরি তাদের বৈঠকে এসে হাযির হলেন এবং তাদের উদ্দেশ্যে বললেন, আমি দেখছি কুরায়েশদের হুমকিকে তোমরা দারুণভাবে গ্রহণ করেছ। অথচ এর মাধ্যমে তোমরা নিজেরা নিজেদেরকে যে পরিমাণ ক্ষতির মুখে ঠেলে দিতে যাচ্ছ, কুরায়েশরা তোমাদের সেই পরিমাণ ক্ষতি করতে সক্ষম হবে না। أَتُرِيدُونَ أَنْ تُقَاتِلُوا أَبْنَاءَكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ ‘তোমরা কি তোমাদের সন্তান ও ভাইদের সাথে (অর্থাৎ মুসলমানদের সাথে) যুদ্ধ করতে চাও’? রাসূল (সাঃ)-এর মুখে এ বক্তব্য শুনে বৈঠক ভেঙ্গে গেল ও দল বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল।[আবুদাঊদ হা/৩০০৪; মুছান্নাফ আব্দুর রাযযাক্ব হা/৯৭৩৩] যদিও আব্দুল্লাহর অন্তরে হিংসার আগুন জ্বলতে থাকল। তবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মুনাফিক ও ইহূদীদের সঙ্গে সদ্ভাব রেখে চলতে থাকেন। যাতে হিংসার আগুন জ্বলে না ওঠে। (২) আউস গোত্রের নেতা সা‘দ বিন মু‘আয (রাঃ) ওমরাহ করার জন্য মক্কায় যান ও কুরায়েশ নেতা উমাইয়া বিন খালাফের অতিথি হন। উমাইয়ার ব্যবস্থাপনায় দুপুরে নিরিবিলি ত্বাওয়াফ করতে দেখে আবু জাহল তাকে ধমকের সুরে বলেন, أَلاَ أَرَاكَ تَطُوفُ بِمَكَّةَ آمِنًا، وَقَدْ أَوَيْتُمُ الصُّبَاةَ؟ ‘তোমাকে দেখছি মক্কায় বড় নিরাপদে