বদর যুদ্ধে যাত্রা পথে দু’তিন জন করে পালাক্রমে সওয়ার হয়ে চলতে হত। রাসূল (সাঃ), আলী ও আবু লুবাবা ইবনুল মুনযির এবং পরবর্তীতে তার বদলে মারছাদ বিন আবু মারছাদ গানাভীর জন্য একটি উট বরাদ্দ ছিল। যাতে পায়ে হাঁটার পালা আসলে রাসূল (সাঃ) নিজেও হাঁটতেন। এসময় সাথীগণ নিজেরা হেঁটে তাঁকে উটে সওয়ার থাকার অনুরোধ করেন। জবাবে রাসূল (সাঃ) বলেন, مَا أَنْتُمَا بِأَقْوَى مِنِّى وَلاَ أَنَا بِأَغْنَى عَنِ الأَجْرِ مِنْكُمَا ‘তোমরা দু’জন আমার চাইতে শক্তিশালী নও এবং আমিও নেকী পাওয়ার ব্যাপারে তোমাদের চাইতে কম মুখাপেক্ষী নই’।[আহমাদ হা/৩৯০১; হাকেম হা/৪২৯৯; মিশকাত হা/৩৯১৫] (২) বেলাল (রাঃ)-কে নির্যাতনকারী মনিব এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সম্মুখে ও পিছনে নিন্দাকারী নরাধম উমাইয়া বিন খালাফ-এর সাথে আব্দুর রহমান বিন ‘আওফ (রাঃ)-এর জাহেলী যুগে চুক্তি ছিল যে, তিনি মক্কায় তার লোকদের রক্ষা করবেন এবং আব্দুর রহমান মদীনায় উমাইয়ার লোকদের রক্ষা করবেন। সেকারণ যুদ্ধ শেষে তিনি উমাইয়া ও তার ছেলেকে পাহাড়ের একটি গুহায় লুকিয়ে রাখেন। কিন্তু যেভাবেই হোক সেটি বেলালের নযরে পড়ে যায়। ফলে তিনি একদল আনছারের সামনে গিয়ে চীৎকার দিয়ে বলে উঠেন, ওহে আল্লাহর সাহায্যকারীগণ! শীর্ষ কাফের উমাইয়া এখানে। হয় আমি থাকব, নয় সে থাকবে’। তার ডাকের সাথে সাথে চারদিক থেকে সবাই এসে তাকে ঘিরে ফেলল। আব্দুর রহমান শত চেষ্টা করেও তাকে রক্ষা করতে পারলেন না। ফলে পিতা-পুত্র দু’জনেই সেখানে নিহত হল। এতে আব্দুর রহমান-এর পা যখমী হয়।[1] (৩) তিনদিন অবস্থানের পর বিদায়কালে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মক্কার মৃত নেতাদের উদ্দেশ্যে কূয়ার পাশে দাঁড়িয়ে একে একে পিতা সহ তাদের নাম ধরে ডেকে বলেন, يَا فُلاَنُ بْنَ فُلاَنٍ، وَيَا فُلاَنُ بْنَ فُلاَنٍ، أَيَسُرُّكُمْ أَنَّكُمْ أَطَعْتُمُ اللهَ وَرَسُولَهُ فَإِنَّا قَدْ وَجَدْنَا مَا وَعَدَنَا رَبُّنَا حَقًّا، فَهَلْ وَجَدْتُمْ مَا وَعَدَ رَبُّكُمْ حَقًّا؟ قَالَ فَقَالَ عُمَرُ يَا رَسُولَ اللهِ، مَا تُكَلِّمُ مِنْ أَجْسَادٍ لاَ أَرْوَاحَ لَهَا فَقَالَ رَسُولُ اللهِ –صلى الله عليه وسلم – وَالَّذِى نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ، مَا أَنْتُمْ بِأَسْمَعَ لِمَا أَقُولُ مِنْهُمْ. قَالَ قَتَادَةُ أَحْيَاهُمُ اللهُ حَتَّى أَسْمَعَهُمْ قَوْلَهُ تَوْبِيخًا وَتَصْغِيرًا وَنَقِيمَةً وَحَسْرَةً وَنَدَمًا- ‘হে অমুকের পুত্র অমুক! হে অমুকের পুত্র অমুক! তোমরা কি এখন বুঝতে পারছ যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করলে তোমরা আজ খুশী হতে? নিশ্চয়ই আমরা আমাদের প্রতিপালক আমাদেরকে যে (বিজয়ের) ওয়াদা দিয়েছিলেন, আমরা তা সত্যরূপে পেয়েছি। তোমরা কি তা সত্যরূপে পেয়েছ যা তোমাদের প্রতিপালক তোমাদেরকে (আযাবের) ওয়াদা করেছিলেন? এ সময় উমর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি এমন দেহগুলির সাথে কথা বলছেন, যাদের মধ্যে রূহ নাই। জবাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, যার হাতে আমার জীবন, তাঁর কসম করে বলছি, তোমরা তাদের চাইতে অধিক শ্রবণকারী নও, যা আমি বলছি’। এর ব্যাখ্যায় ক্বাতাদাহ (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তাদেরকে (সাময়িকভাবে) জীবিত করেন, যাতে তারা নবীর ধিক্কারবাণীগুলি শুনতে পায় ও লজ্জিত হয়’ (বুখারী হা/৩৯৭৬)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, উমর (রাঃ) বলেন, يَا رَسُولَ اللهِ كَيْفَ يَسْمَعُوا وَأَنَّى يُجِيبُوا وَقَدْ جَيَّفُوا قَالَ وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ مَا أَنْتُمْ بِأَسْمَعَ لِمَا أَقُولُ مِنْهُمْ وَلَكِنَّهُمْ لاَ يَقْدِرُونَ أَنْ يُجِيبُوا ‘ওরা কিভাবে শুনবে এবং ওরা কিভাবে জওয়াব দিবে। অথচ ওরা মরে পচে গেছে’। জওয়াবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, যার হাতে আমার জীবন, তাঁর কসম করে বলছি, তোমরা ওদের চাইতে অধিক শ্রবণকারী নও, যা আমি বলছি’। কিন্তু ওরা জওয়াব দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না’।[বুখারী হা/৩৯৭৬; মুসলিম হা/২৮৭৪; মিশকাত হা/৩৯৬৭] অন্য বর্ণনায় এসেছে, يَا رَسُولَ اللهِ أَتُنَادِيهِمْ بَعْدَ ثَلاَثٍ وَهَلْ يَسْمَعُونَ؟ يَقُولُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ (إِنَّكَ لاَ تُسْمِعُ الْمَوْتَى). فَقَالَ وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ مَا أَنْتُمْ بِأَسْمَعَ مِنْهُمْ وَلَكِنَّهُمْ لاَ يَسْتَطِيعُونَ أَنْ يُجِيبُوا ‘হে আল্লাহর রাসূল! তিন দিন পরে আপনি ওদের ডাকছেন। ওরা কি শুনতে পাবে? অথচ আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি শুনাতে পারো না কোন মৃতকে’ (নামল ২৭/৮০; রূম ৩০/৫২)। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, যার হাতে আমার জীবন, তাঁর কসম করে বলছি, তোমরা তাদের চাইতে অধিক শ্রবণকারী নও, যা আমি বলছি’। কিন্তু ওরা জওয়াব দেওয়ার ক্ষমতা রাখে না’ (আহমাদ হা/১৪০৯৬, সনদ সহীহ)। উক্ত বিষয়ে ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, ক্বাতাদাহ (রাঃ) ঐসব ব্যক্তিগণের প্রতিবাদে উপরোক্ত কথা বলেছেন, যারা বদরে মৃত কাফিরদের রাসূল (সাঃ)-এর