সঠিক সময়: আয়ুর্বেদীয় শাস্ত্রমতে প্রতিটি ফল খাওয়ারই একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। নির্দিষ্ট সময় মেনে ফলটি খেলে তা কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে। আপেল খাওয়ার কিছু নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। পুষ্টি বিজ্ঞানিদের মতে সকাল বেলা আপেল খাওয়া খুবই উপকারী। আপেলের খোসা ও আঁশ পেকটিন সমৃদ্ধ। ঘুমের অনিয়মের কারনে হজমজনিত সমস্যা দেখা দেয় বা বদহজম হয়ে থাকে। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে আপেল খাওয়া সব থেকে ভালো। এতে করে অন্ত্রের ক্রিয়া সুষ্ঠভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। আপেলে থাকা পেকটিন কোলনে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। যা পরবর্তীতে পাঁচন তন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে থাকে। তাই সকালবেলা আপেল খাওয়া অত্যান্ত উপকারী। সঠিক সময় নয়: রাতে বা বিকেলে আপেল খাওয়া ঠিক নয়। এতে করে হজম অন্ত্রের কাজে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। রাতের বেলা আপেল খেলে হজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর আপনার পেটে গ্যাস হলে সেখান থেকে অস্বস্তি তৈরি হবে এবং রাতে ভালো ঘুম নাও হতে পারে। এরকম নানা ধরনের অসুবিধা দেখা দিতে পারে। তাই বিকেলে বা রাতে আপেল না খাওয়াই ভালো। আপেলের উপকারীতা: আপেল একটি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ফল। এটি আমাদের দেহের অনেক উপাকার সাধন করে থাকে। নিচে তার কিছু বর্নান দেওয়া হলো: ক্যান্সার প্রতিরোধ: আপেল ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। আপেলে পেকটিন জাতীয় একটি উপাদান থাকে যা শরীরকে কোলন ক্যান্সারের থাবা থেকে আমাদের দূরে রাখে। ফুসফুসের ক্যান্সার ও লিভারের ক্যান্সার প্রতিরোধেও আপেল বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখে। আপেলের পেকটিন জাতীয় পদার্থ ক্যান্সার সৃষ্টকারী কারসিনোজাসিস দূর করতে ভীষণভাবে সাহায্য করে। আপেল খেলে ৮০% ক্যান্সার রোধ করা সম্ভব। নিয়োমিত এই সুস্বাদু আপেল ফলটি খেলে আমরা ক্যান্সারের থাবা থেকে কিছুটা হলেও মুক্ত থাকতে পারবো। হার্ট ভালো রাখে: আপেলে রয়েছে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট উপাদান সমূহ, যা হার্টের স্বাস্থের জন্য বিশেষভাবে উপকারী। হার্ট আমাদের শরীরের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। হার্টের সু-স্বাস্থ নিশ্চিত করা আমাদের অতি জরুরী একটি বিষয়। আমরা যদি নিয়োমিত আপেল খাই (গড়ে প্রতিদিন ১টি করে) তাহলে আমাদের হার্টের স্বাস্থের অনেকটা উপাকার হবে। ওজন নিয়ন্ত্রনে থাকে: আমাদের বর্তমান বিশ্বে ওজন নিয়ন্ত্রনের ব্যাপারে আমরা প্রায় সবাই কম বেশি আগ্রহী। এর জন্য আমাদের অনেক অসুবিধায়ও পরতে হয়। এর জন্যে মেডিসিন সেবন করলে অনেক সময় বেশ কিছু পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। আমাদের উচিৎ যথাসম্ভব মেডিসিনকে এড়য়ে চলা। এক্ষেত্রে ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখতে আপেলের ভূমিকা বেশ তাৎপর্যপূর্ন। প্রতিদিন গড়ে তিনটি আপেল খেলে ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখা বেশ সহজ হয়। তাই আমরা ওজন নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রে আপেলের দিকে নজর রাখতে পারি। এটি আমাদের অনেকটা সাহায্য করতে পারে। দাঁত ভালো রাখে: আমাদের অনেকেরই দাঁতের নানা সমস্যায় ভূগতে হয়। দাঁত মানুষের, শুধু মানুষেরই না সকল প্রানীরই একটি অমূল্য সম্পদ। দাঁতের যত্ন নেওয়া আমাদের খুবই জরুরী। দাঁতের মর্ম দাঁত না থাকলে বুঝা যায়। তাই দাঁত থাকা অবস্থায় এর যত্ন নেওয়া খুবই জরুরী। আর এক্ষেত্রে আপেল আমাদের সাহায্য করতে পারে। আপেলের রস দাঁতের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে দাঁতকে ভালো রাখে। আমরা দাঁতের যত্নে নিয়োমিত আপেল খেতে পারি, এটি আমাদের দাঁতের অনেকটা উপাকার করতে পারে। ত্বক ভালো রাখে: ত্বকের যত্ন কে না করে। সবাই চায় তার ত্বক যেনো ভালো থাকে, উজ্জ্বল থাকে। আমরা হয়তো জানিই না যে, ত্বকের যত্নে আপেল আমাদের সাহায্য করতে পারে। আপেলে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড যেমন, ফ্লোরিজিন, সিলিমারিন ও জেনিসটিন। এই সবকটি ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। আমরা ত্বকের যত্নে কত অর্থ খরচ করি, কত মেডিসিন ব্যাবহার করি। কিন্তু এগুলো আমাদের সাময়িক সমাধান দিলেও ভবিষ্যৎ করুন হতে পারে। তাই আমরা ত্বকের যত্নে আপেল খেতে পারি, এটি আমাদের কোনো ক্ষতি করবে না, বরং বহুমুখী উপাকার করবে। হজম ক্ষমতা বাড়ে: আমরা অনেকেই হয়তো হজমের সমস্যায় ভূগে থাকি। কিন্তু আমরা এর প্রাকৃতিক সমাধান কখনই খোজে দেখি না। হজমের সমস্যা সমাধানে আপেলের ভূমিকা অনেক। প্রতিদিন আপেল খেলে হজমের জন্য উপকারী ব্যাকটেরিয়া পেটে জন্মায়, এর ফলে আমাদের হজম শক্তি বাড়ে। হাড় শক্ত করে: আপেলে আছে পর্যাপ্ত পরিমানে বোরন, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও জিংক যা হাড় শক্ত করতে সহায়তা করে। আমরা প্রতিদিন নিয়োমিত আপেল খেলে আমাদের শরীরের হাড়গুলি শক্ত ও মজবুত থাকবে। বিশেষভাবে শিশুদের হাড়গুলির ব্যাপারে আমাদের নজর রাখা বেশ জরুরি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে হাড়গুলি দুর্বল হতে থাকে, তাই বৃদ্ধদের প্রতি এক্সট্রা নজর রাখা প্রয়োজন। তাই তাদের খাবার চার্টে আপেল রাখা উচিৎ। আপেল আমাদের অস্টিওপোরেসিসের মতো রোগের হাত থেকে বাঁচাবে। পানিশূন্যতা দূর করে: আপেলে আছে প্রচুর পরিমানে পানি যা তৃষ্ণা মেটানোর পাশাপাশি পানিশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করে এবং শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায়তা করে। পানিশূন্যতাকে আমরা সহজ ভাবে নিলেও এটি অনেক জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে। এক্ষেত্রে প্রাননাশেরও আশংকা থাকে। তাই আমাদের উচিৎ এর দিকে বিশেষভাবে নজর দেওয়া। এক্ষেত্রেও আপেল আমাদের সাহায্য করতে পারে। নিয়োমিত আপেল খেলে আমরা এর থেকে কিছুটা হলেও পরিত্রাণ পেতে পারি। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন করে: বর্তমান সময়ে ডায়াবেটিস একটি অতি পরিচিত নাম।ডায়াবেটিস সম্পর্কে জানে না এমন মানুষ নেই বললেই চলে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখতে আপেল কিছুটা সাহায্য করতে পারে। আপেলে পেকটিন নামক যে উপাদান থাকে সেটি ইনসুলিনের পরিমানকে ঠিক রেখে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে রাখতে সহায়তা করে। আমরা ডায়াবেটিস রোগীর খাবার চার্টে আপেল ফলটিকে রাখতে পারি। আপেলের অপকারীতা: আমরা আগেই জেনেছি যে আপেল আমাদের অনেক উপকার করে থাকে। তবে এর কিছু অপকারীতাও আছে। তবে সেগুলোকে বিবেচনার বাইরে রাখতে হয়। কারন সেগুলো আমাদের শরীরের উপর নির্ভর করে। আসুন কিছু ক্ষতিকর দিক দেখে নেয়া যাক_ যাদের ফ্রক্টজের প্রতি এলার্জি আছে তারা আপেল খেলে পেটের সমস্যায় ভূগতে পারে। এর ফলে ডায়রিয়া, বমিবমি ভাব বা অস্বস্তি হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। যদি প্লাম, পিয়ার, এপ্রিকট ইত্যাদি ফলের প্রতি এলার্জি থাকে তাহলে আপেলকেও এড়িয়ে চালা ভালো। কারণ বৈজ্ঞানিকভাবে এই সবকটি একই গোষ্ঠীর অন্তর্গত। এতে করে আপনার এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। অসময়ে আপেল খেলে গ্যাসের মতো নানা সমস্যার দেখা দিতে পারে। তাই সঠিক সময় ছাড়া আপেল খাওয়া উচিৎ নয়। আপেল খাওয়ার সতর্কতা: আপেল খাওয়ার জন্য কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। আপেলের বিজ থেকে সাবধান। কারন আপেলের বিজ ড্রাগ অর্থাৎ সায়ানাইডের ভূমিকা নিতে পারে। আপেলের বীজ থেকে নানা ধরনের ড্রাগ উৎপন্ন করা হয়। সাধারনত ২০০ টি বিজ খেলে এর প্রভাব শরীরে পরতে পারে, এর আগেও পরতে পারে। তাই আপেলের বিজ এড়িয়ে চলাই ভালো। সাধারনত গর্ভবতী ও স্তন্যপান করানো মহিলাদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া আপেল খাওয়ানো থেকে বিরত থাকুন। আপেল পুষ্টি উপাদান: প্রতি ১০০ গ্রাম আপেল এ রয়েছে – খাদ্যশক্তি- ৫২ কিলোক্যালরি, আমিষ ০.২৬ গ্রাম, শর্করা ১৩.৮১ গ্রাম, ফাইবার ২.৪ গ্রাম, চর্বি ০.১৭ গ্রাম, ভিটামিন এ ৫৪ আইইউ, ভিটামিন সি ৪.৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ই ০.১৮ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১০৭ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৬ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ১ মিলিগ্রাম, কোলেস্টেরল ০ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.১২ মিলিগ্রাম, জিংক ০.০৪ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ১১ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৫ মিলিগ্রাম।