আল্লাহ বলেন, وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُوْلُ فَخُذُوْهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوْا ‘আমার রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত হও’ (হাশর ৫৯/৭)। তিনি বলেন, وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى، إِنْ هُوَ إِلاَّ وَحْيٌ يُوْحَى ‘তিনি নিজ থেকে (দ্বীন বিষয়ে) কোন কথা বলেন না’। ‘যা বলেন অহী করা হলেই তবে বলেন’ (নাজম ৫৩/৩-৪)। সেকারণ রাসূল (সাঃ)-এর হাদীছ হেফাযতের দায়িত্বও আল্লাহ নিয়েছেন। যেমন তিনি বলেন, ثُمَّ إِنَّ عَلَيْنَا بَيَانَهُ ‘অতঃপর কুরআনের ব্যাখ্যা দানের দায়িত্ব আমাদেরই’ (ক্বিয়ামাহ ৭৫/১৯)। তিনি বলেন وَمَا أَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ إِلاَّ لِتُبَيِّنَ لَهُمُ الَّذِي اخْتَلَفُوا فِيهِ وَهُدًى وَرَحْمَةً لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ ‘আমি তোমার প্রতি কুরআন নাযিল করেছি কেবল এজন্য যে, তুমি তাদেরকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে দিবে যেসব বিষয়ে তারা মতভেদ করে এবং (এটি নাযিল করেছি) মুমিনদের জন্য হেদায়াত ও রহমত স্বরূপ’ (নাহল ১৬/৬৪)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَاناً لِّكُلِّ شَيْءٍ ‘আর আমি তোমার উপর কুরআন নাযিল করেছি সকল বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা হিসাবে’ (নাহল ১৬/৮৯)। ইমাম আওযাঈ (৮৮-১৫৭ হি.) বলেন, এর অর্থ بِالسُّنَّةِ ‘সুন্নাহ দ্বারা’ (ইবনু কাছীর)। অর্থাৎ সুন্নাহ সহ কুরআন সকল বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা স্বরূপ। যেমন কুরআনে সালাত, সিয়াম, যাকাত ও হজ্জ ফরয করা হয়েছে। কিন্তু হাদীছে তার নিয়ম-কানূন ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সেকারণ আল্লাহ বলেন, مَنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ ‘যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করল, সে আল্লাহর আনুগত্য করল’ (নিসা ৪/৮০)। আর সেটাই হল রাসূল প্রেরণের মূল উদ্দেশ্য। যেমন আল্লাহ বলেন, وَمَا أَرْسَلْنَا مِنْ رَسُولٍ إِلاَّ لِيُطَاعَ بِإِذْنِ اللهِ ‘আর আমি রাসূল প্রেরণ করেছি কেবল এজন্য যে, তাদের আনুগত্য করা হবে আল্লাহর অনুমতিক্রমে (নিসা ৪/৬৪)। একদা আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ (রাঃ) হাদীছ শুনিয়ে বলেন, আল্লাহ লা‘নত করেছেন ঐসব মহিলাদের প্রতি, যারা অপরের অঙ্গে উল্কি করে ও নিজেদের অঙ্গে উল্কি করে। যারা (কপাল বা ভ্রুর) চুল উপড়িয়ে ফেলে এবং সৌন্দর্যের জন্য দাঁত সরু ও তার ফাঁক বড় করে। যারা আল্লাহর সৃষ্টিকে বদলিয়ে ফেলে। এ কথা বনু আসাদ গোত্রের জনৈকা মহিলা উম্মে ইয়াকূবের কর্ণগোচর হলে তিনি এসে ইবনু মাসঊদ (রাঃ)-কে বলেন, আপনি নাকি এরূপ এরূপ কথা বলেছেন? জবাবে তিনি বলেন, আমি কেন তাকে লা‘নত করব না, যাকে আল্লাহর রাসূল লা‘নত করেছেন এবং যা আল্লাহর কিতাবে আছে? মহিলা বললেন, আমি কুরআনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়েছি। কিন্তু কোথাও একথা পাইনি। ইবনু মাসঊদ বললেন, আপনি মনোযোগ দিয়ে পড়লে অবশ্যই পেতেন। আপনি কি পড়েননি যে আল্লাহ বলেছেন, ‘রাসূল তোমাদেরকে যা দেন তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন তা বর্জন কর’ (সূরা হাশর ৫৯/৭)। মহিলা বললেন, হ্যাঁ, পড়েছি। তখন তিনি বললেন, রাসূল (সাঃ) এটি নিষেধ করেছেন। এরপর মহিলাটি বললেন, সম্ভবতঃ আপনার পরিবারে এটি করা হয়। ইবনু মাসঊদ বললেন, তাহলে যেয়ে দেখে আসুন। অতঃপর মহিলাটি ভিতরে গেলেন। কিন্তু সেরূপ কিছু না পেয়ে ফিরে এসে বললেন, আমি কিছুই পেলাম না। তখন ইবনু মাসঊদ বললেন, এরূপ কিছু থাকলে আমরা কখনোই একত্রিত থাকতাম না (অর্থাৎ তালাক দিতাম)।[বুখারী হা/৪৮৮৬; মুসলিম হা/২১২৫; মিশকাত হা/৪৪৩১] বস্ত্ততঃ রাসূল (সাঃ) হলেন মানদন্ড। যেমন তিনি বলেন, فَمَنْ أَطَاعَ مُحَمَّدًا صلى الله عليه وسلم فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ، وَمَنْ عَصَى مُحَمَّدًا فَقَدْ عَصَى اللهَ، وَمُحَمَّدٌ فَرْقٌ بَيْنَ النَّاسِ- ‘যে ব্যক্তি মুহাম্মাদের আনুগত্য করল, সে আল্লাহর আনুগত্য করল এবং যে ব্যক্তি মুহাম্মাদের অবাধ্যতা করল, সে আল্লাহর অবাধ্যতা করল। মুহাম্মাদ হলেন মানুষের মধ্যে পার্থক্যকারী মানদন্ড’।[বুখারী হা/৭২৮১; মিশকাত হা/১৪৪] প্রখ্যাত তাবেঈ সুফিয়ান ইবনু উয়ায়না (১০৭-১৯৮ হিঃ) বলেন, الْمِيزَانُ الْأَكْبَرُ هُوَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، تُعْرَضُ الْأَشْيَاءُ كُلُّهَا عَلَيْهِ ... فَمَا وَافَقَهُ فَهُوَ حَقٌّ، وَمَا خَالَفَهُ فَهُوَ بَاطِلٌّ ‘শ্রেষ্ঠতম মানদন্ড হলেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)। সকল বিষয় তার উপরেই ন্যস্ত হবে।... অতঃপর যেটি তার অনুকূলে হবে, সেটি সত্য এবং যেটি তার বিরোধী হবে, সেটি মিথ্যা’।[1] কুরআন সংক্ষিপ্ত ও মৌলিক বিধান সম্বলিত। সেকারণ তা সবার মুখস্থ এবং তা অবিরত ধারায় বর্ণিত (মুতাওয়াতির)। কিন্তু হাদীছ হল শাখা-প্রশাখা সহ বিস্তারিত ব্যাখ্যা সম্বলিত। তাই কেবল শ্রোতার নিকটেই তা মুখস্থ। শ্রোতার সংখ্যা একাধিক হলে ও সকল যুগে বহুল প্রচারিত হলে তা হয় ‘মুতাওয়াতির’। যা সব হাদীছের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। কুচক্রীরা তাই সুযোগ নিয়েছিল জাল