কুরআনের মূল পরিচয় হল এই যে, এটি ‘কালামুল্লাহ’ (كَلاَمُ اللهِ) বা আল্লাহর কালাম। যা সরাসরি আল্লাহর নিকট থেকে এসেছে।[1] সৃষ্টিজগত দুনিয়াবী চোখে কখনোই তার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে দেখতে পাবে না (আন‘আম ৬/১০৩)। তবে তাঁর ‘কালাম’ দেখে, পড়ে, শুনে ও বুঝে হেদায়াত লাভ করতে পারবে। কুরআনের ভাব ও ভাষা, এর প্রতিটি বর্ণ, শব্দ ও বাক্য আল্লাহর। জিব্রীল ছিলেন বাহক[বাক্বারাহ ২/৯৭; শু‘আরা ২৬/১৯৪] এবং রাসূল (সাঃ) ছিলেন এর প্রচারক ও ব্যাখ্যাতা (মায়েদাহ ৫/৬৭; নাহল ১৬/৪৪, ৬৪)। কুরআন লওহে মাহফূযে (সুরক্ষিত ফলকে) লিপিবদ্ধ ছিল’ (বুরূজ ৮৫/২১-২২)। সেখান থেকে আল্লাহর হুকুমে ক্রমে ক্রমে নাযিল হয়েছে (আলে ইমরান ৩/৩; ইসরা ১৭/১০৬)। শেষনবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর আগমনের পর বিগত সকল নবীর নবুঅত শেষ হয়ে গিয়েছে এবং কুরআন অবতরণের পর বিগত সকল ইলাহী কিতাবের হুকুম রহিত হয়ে গেছে। ঈসা (আঃ) সহ বিগত সকল নবীই শেষনবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর আগমনের সুসংবাদ দিয়ে গেছেন (ছফ ৬১/৬) এবং তাঁরা শেষনবীর আমল পেলে তাঁকে সর্বান্তঃকরণে সাহায্য করবেন বলে আল্লাহর নিকটে অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছিলেন (আলে ইমরান ৩/৮১)। এমনকি তওরাত ও ইনজীলে সর্বশেষ উম্মী নবীর আগমনের সুসংবাদ লিপিবদ্ধ ছিল (আ‘রাফ ৭/১৫৭)। সে হিসাবে মুহাম্মাদ (সাঃ) কেবল আখেরী যামানার নবী নন, বরং তিনি ছিলেন বিগত সকল নবীর নবী। অনুরূপভাবে তাঁর আনীত কিতাব ও শরী‘আত বিগত সকল কিতাব ও শরী‘আতের সত্যায়নকারী[বাক্বারাহ ২/৪১, ৯১, ৯৭;মায়েদাহ ৫/৪৮; আহক্বাফ ৪৬/৩০] এবং পূর্ণতা দানকারী (মায়েদাহ ৫/৩)। অতএব কুরআন বর্তমান পৃথিবীর একমাত্র ইলাহী কিতাব এবং সকল মানুষের জন্য একমাত্র পথপ্রদর্শক ইলাহী গ্রন্থ। এর সর্বাধিক প্রসিদ্ধ নাম হল ‘কুরআন’। যার অর্থ ‘পরিপূর্ণ’ যেমন বলা হয়, قَرَأتِ الْحَوْضُ ‘হাউয কানায় কানায় পূর্ণ হয়েছে’। সমস্ত জ্ঞানের ভান্ডার পূর্ণভাবে সঞ্চিত হওয়ার কারণে কালামুল্লাহকে ‘কুরআন’ বলা হয়েছে। ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) একথা বলেন (রহমাতুল্লিল ‘আলামীন ৩/২৪১)। আল্লাহ বলেন, وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ صِدْقًا وَّعَدْلاً ‘তোমার প্রভুর কালাম সত্য ও ন্যায় দ্বারা পূর্ণ’ (আন‘আম ৬/১১৫)। অর্থাৎ কুরআনের প্রতিটি কথাই সত্য এবং প্রতিটি বিধানই ন্যায় ও ইনছাফপূর্ণ। ذَلِكَ الْكِتَابُ لاَ رَيْبَ فِيهِ এই কিতাবে কোনরূপ ত্রুটি বা সন্দেহ নেই (বাক্বারাহ ২/২)। কুরআন ব্যতীত পৃথিবীতে এমন কোন ধর্মগ্রন্থ নেই, যা তার শুরুতেই নিজেকে সন্দেহমুক্ত বলে ঘোষণা করেছে। [1]. সহীহ ইবনু হিববান হা/৭৭৪; নিসা ৪/৮২; আন‘আম ৬/১১৫; আ‘রাফ ৭/৩৫; হামীম সাজদাহ ৪১/৪২; ওয়াক্বি‘আহ ৫৬/৭৭-৮২; হাক্কাহ ৬৯/৪৩; দাহর ৭৬/২৩।