আল্লাহর গজবে ধ্বংসপ্রাপ্ত প্রধান ৬টি প্রাচীন জাতির মধ্যে পঞ্চম জাতি হল ‘আহলে মাদইয়ান’। ‘মাদইয়ান’ হল লূত সাগরের নিকটবর্তী সিরিয়া ও হিজাযের সীমান্তবর্তী একটি জনপদের নাম। যা অদ্যাবধি পূর্ব জর্ডনের সামুদ্রিক বন্দর ‘মো‘আন’ (معان )-এর অদূরে বিদ্যমান রয়েছে। কুফরী করা ছাড়াও এই জনপদের লোকেরা ব্যবসায়ের ওযন ও মাপে কম দিত, রাহাজানি ও লুটপাট করত। অন্যায় পথে জনগণের মাল-সম্পদ ভক্ষণ করত।[আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ১/১৭৩] ইয়াকূত হামাভী (মৃঃ ৬২৬/১২২৮খৃঃ) বলেন, ইবরাহীম-পুত্র মাদইয়ানের নামে জনপদটি পরিচিত হয়েছে।[মু‘জামুল বুলদান, (বৈরুত : দার ছাদের, ১৯৭৯), ৫/৭৭ পৃঃ] হযরত শোয়াইব (আঃ) এদের প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন। ইনি হযরত মূসা (আঃ)-এর শ্বশুর ছিলেন। কওমে লূত-এর ধ্বংসের অনতিকাল পরে কওমে মাদইয়ানের প্রতি তিনি প্রেরিত হন (হূদ ১১/৮৯)। চমৎকার বাগ্মিতার কারণে তিনি (خطيب الأنبياء) ‘খাত্বীবুল আম্বিয়া’ (নবীগণের মধ্যে সেরা বাগ্মী) নামে খ্যাত ছিলেন।[আল-বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ১/১৭৩] আহলে মাদইয়ান-কে পবিত্র কুরআনে কোথাও কোথাও ‘আছহাবুল আইকাহ’ (اصحاب الأيكة) বলা হয়েছে। যার অর্থ ‘জঙ্গলের বাসিন্দাগণ’। এটা বলার কারণ এই যে, এই অবাধ্য জনগোষ্ঠী প্রচন্ড গরমে অতিষ্ট হয়ে নিজেদের বসতি ছেড়ে জঙ্গলে আশ্রয় নিলে আল্লাহ তাদেরকে সেখানেই ধ্বংস করে দেন। এটাও বলা হয় যে, উক্ত জঙ্গলে ‘আইকা’ (الأيكة ) বলে একটা গাছকে তারা পূজা করত। যার আশপাশে জঙ্গল বেষ্টিত ছিল। মাদইয়ান (مدين ) ছিলেন হাজেরা ও সারাহর মৃত্যুর পরে হযরত ইবরাহীমের আরব বংশোদ্ভূত কেন‘আনী স্ত্রী ক্বানতূরা বিনতে ইয়াক্বত্বিন (قنطورا بنت يقطن) -এর ৬টি পুত্র সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ পুত্র।[ইবনু কাছীর, আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহ ১/১৬৪ পৃঃ] উল্লেখ্য যে, হযরত শোয়াইব (আঃ) সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের ১০টি সূরায় ৫৩টি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।[1] [1]. যথাক্রমে সূরা আ‘রাফ ৭/৮৫-৯৩=৯; তওবাহ ৯/৭০; হূদ ১১/৮৪-৯৫=১২; হিজর ১৫/৭৮-৭৯; হজ্জ ২২/৪৪; শো‘আরা ২৬/১৭৬-১৯১=১৬; ক্বাছাছ ২৮/২৩-২৮=৬; আনকাবূত ২৯/৩৬-৩৭; ছোয়াদ ৩৮/১৩-১৫=৩; ক্বাফ ৫০/১৪। সর্বমোট = ৫৩টি।