এই যুদ্ধে বিশ্বশক্তি রোমকবাহিনীর যুদ্ধ ছাড়াই পিছু হটে যাওয়ায় মুসলিম শক্তির প্রভাব আরব ও আরব এলাকার বাইরে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। (২) রোমকদের কেন্দ্রবিন্দু সিরিয়া ও তার আশপাশের সকল খ্রিষ্টান শাসক ও গোত্রীয় নেতৃবৃন্দ মুসলিম শক্তির সাথে স্বেচ্ছায় সন্ধিচুক্তি স্বাক্ষর করে। ফলে আরব এলাকা বহিঃশক্তির হামলা থেকে নিরাপদ হয়। (৩) শুধু অপ্রতিদ্বন্দ্বী সামরিক শক্তি হিসাবে নয়, সর্বোচ্চ মানবাধিকার নিশ্চিতকারী বাহিনী হিসাবে মুসলমানদের সুনাম-সুখ্যাতি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। ফলে দলে দলে খ্রিষ্টানরা মুসলমান হয়ে যায়। যা খেলাফতে রাশেদাহর সময় বিশ্বব্যাপী মুসলিম বিজয়ে সহায়ক হয়। তাবূক যুদ্ধ থেকে প্রাপ্ত বিধানসমূহ : ━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━ (১) এ যুদ্ধে রাসূল (সাঃ) আব্দুর রহমান বিন ‘আওফের পিছনে ফজরের সালাত এক রাক‘আত আদায় করেন। পরে বাকী রাক‘আত শেষে সালাম ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, তোমরা সঠিক কাজ করেছ। সালাত যথাসময়ে আদায় করতে হয়’ (মুসলিম হা/২৭৪ (১০৫)। এর দ্বারা অনুত্তমের পিছনে উত্তমের সালাত জায়েয প্রমাণিত হয়। তাছাড়া জামা‘আতের জন্য সময় নির্ধারণ করা ও তা সকলের জন্য মেনে চলা আবশ্যিক প্রমাণিত হয়। (২) ফেরার পথে মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ) রাসূল (সাঃ)-এর নিকট এমন আমলের কথা জানতে চান, যা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে ও জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। জবাবে রাসূল (সাঃ) বলেন, প্রধান বিষয় হল ইসলাম কবুল করা। কেননা যে ইসলাম কবুল করে, সে জাহান্নাম থেকে নিরাপদ হয়। এর স্তম্ভ হল সালাত এবং চূড়া হল জিহাদ’ (আহমাদ হা/২২১২১)। (৩) এ যুদ্ধে রাসূল (সাঃ)-কে মুছল্লীর সুৎরা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এটি হাওদার পিছনের অংশের ন্যায় উঁচু(مِثْلُ مُؤْخِرَةِ الرَّحْلِ)। নাসাঈ হা/৭৪৬। (৪) এ সফরে যোহর-আছর, মাগরিব-এশা জমা ও ক্বছর করা হয়’ (মুসলিম হা/৭০৫ (৫১)। (৫) তাবূক যাওয়ার পথে ওয়াদীল ক্বোরার একটি বাগিচা থেকে অনুমানের ভিত্তিতে খেজুর খরীদ করা হয়। যার দ্বারা অনুমান ভিত্তিক ব্যবসা জায়েয প্রমাণিত হয়’ (ফাৎহুল বারী হা/১৪৮১-এর আলোচনা)। (৬) তাবূকের একটি বাড়ি থেকে চামড়ার পাত্রে রাখা পানি চাওয়া হয়। এ সময় মৃত প্রাণীর চামড়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে রাসূল (সাঃ) বলেন,دِبَاغُهَا طُهُورُهَا ‘এর দাবাগত করাই হল এর পবিত্রতা’ (আবুদাঊদ হা/৪১২৫)। (৭) জনৈক ব্যক্তি মারামারির সময় অন্যের হাত কামড়ে ধরলে জোরে টান দেওয়ার কারণে তার সম্মুখের উপর-নীচ দু’টি দাঁত ছিটকে বেরিয়ে আসে। রাসূল (সাঃ) তার জন্য ক্বিছাছ বাতিল করে দেন’ (বুখারী হা/২৯৭৩; মুসলিম হা/১৬৭৩)। কারণ সে ইচ্ছাকৃতভাবে তার দাঁত উপড়ে ফেলেনি। (৮) এ যুদ্ধে তিন দিনের অধিক সময় কোন মুমিন ব্যক্তির সাথে দ্বীনী কারণে বয়কট সিদ্ধ করা হয়। যা যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে থাকা তিন জন মুখলেছ সাহাবীর ক্ষেত্রে ৫০ দিনের বয়কট দ্বারা প্রমাণিত হয়’ (বুখারী হা/৪৪১৮; মুসলিম হা/২৭৬৯)। (৯) এ যুদ্ধে তাবূকে ২০ দিন অবস্থানকালে এবং সেখানে যাওয়া ও প্রত্যাবর্তনকালে পূরা সময়টা সালাতে জমা ও ক্বছর করা হয়।[মুসলিম হা/৭০৫ (৫১); আবুদাঊদ হা/১২০৮; মিশকাত হা/১৩৪৪] এতে বুঝা যায় যে, সফরে ক্বছরের জন্য ১৯ দিন সময়কাল নির্ধারিত নয়। যেটি ইবনু আববাস (রাঃ) বলেছেন (বুখারী হা/৪২৯৮)।