গাযওয়া হামরাউল আসাদ : ━━━━━━━━━━━━━━━━━━ ৩য় হিজরীর ৮ই শাওয়াল রবিবার। আবু সুফিয়ানের বাহিনী পুনরায় মদীনা আক্রমণ করতে পারে, এই আশংকায় রাসূল (সাঃ) ওহুদ যুদ্ধের পরদিনই তাদের পশ্চাদ্ধাবন করেন এবং মদীনা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে মক্কার দিকে ১২ কি. মি. দূরে হামরাউল আসাদে পৌঁছেন। তিনি সেখানে তিনদিন অবস্থান শেষে মদীনায় ফিরে আসেন। (বিস্তারিত ৩৫৪ পৃঃ দ্রষ্টব্য)। ২. সারিইয়া আবু সালামাহ : ━━━━━━━━━━━━━━━━ ৪র্থ হিজরীর ১লা মুহাররম। ত্বালহা ও সালামা বিন খুওয়াইলিদ নামক কুখ্যাত ডাকাত দু’ভাই বনু আসাদ গোত্রকে মদীনা আক্রমণের প্ররোচনা দিচ্ছে মর্মে খবর পৌঁছলে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) স্বীয় দুধভাই আবু সালামাহ (রাঃ)-এর নেতৃত্বে মুহাজির ও আনছারদের ১৫০ জনের একটি সেনাদল প্রেরণ করেন। বনু আসাদের প্রস্তুততি গ্রহণের পূর্বেই তাদের ‘ক্বাত্বান’ (قَطَن) নামক ঘাঁটিতে অতর্কিত আক্রমণের ফলে তারা হতচকিত হয়ে পালিয়ে যায়। মুসলিম বাহিনী তাদের ফেলে যাওয়া উট ও বকরীর পাল ও গণীমতের মাল নিয়ে ফিরে আসে। এই যুদ্ধ থেকে ফিরে কিছু দিনের মধ্যে আবু সালামা মৃত্যুবরণ করেন। অতঃপর তার বিধবা স্ত্রী উম্মে সালামা রাসূল (সাঃ)-এর সাথে বিবাহিতা হন। আবু সালামা ইতিপূর্বে ওহুদের যুদ্ধে যখমী হয়েছিলেন’।[ইবনু সা‘দ ২/৩৮; যাদুল মা‘আদ ৩/২১৮; আল-বিদায়াহ ৪/৬১] ৩. সারিইয়া আব্দুল্লাহ বিন উনাইস : ━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━ ৪র্থ হিজরীর ৫ই মুহাররম সোমবার। মুসলমানদের উপরে হামলার জন্য নাখলা অথবা উরানাহ নামক স্থানে খালেদ বিন সুফিয়ান বিন নুবাইহ আল-হুযালী সৈন্য সংগ্রহ করছে মর্মে বলে সংবাদ পেয়ে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আব্দুল্লাহ বিন উনাইস আল-জুহানী আনছারীকে তার বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন। তিনি তাকে হত্যা করে মদীনায় ফিরে আসেন এবং রাসূল (সাঃ)-কে তার নিহত হওয়ার সংবাদ প্রদান করেন।[1] ৪. সারিইয়া বি’রে মাঊনা : ━━━━━━━━━━━━━━━━ ৪র্থ হিজরীর ছফর মাস। নাজদের নেতা আবু বারা ‘আমের বিন মালেকের আমন্ত্রণক্রমে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নাজদবাসীদের কুরআন পড়ানোর জন্য ও দ্বীন শিক্ষাদানের জন্য মুনযির বিন ‘আমের (রাঃ)-এর নেতৃত্বে ৭০ জনের একটি মুবাল্লিগ দল প্রেরণ করেন। যাদের সকলে ছিলেন শীর্ষস্থানীয় ক্বারী ও বিজ্ঞ আলেম। যারা দিনের বেলায় কাঠ কুড়াতেন এবং রাত্রি জেগে নফল সালাত আদায় করতেন। তাঁরা মাঊনা নামক কূয়ার নিকটে অবতরণ করেন। অতঃপর রাসূল (সাঃ)-এর পত্র নিয়ে হারাম বিন মিলহান গোত্রনেতা ‘আমের বিন তুফায়েল-এর নিকটে গমন করেন। কিন্তু সে পত্রের প্রতি দৃকপাত না করে একজনকে ইঙ্গিত দেয় তাকে হত্যা করার জন্য। ফলে হত্যাকারী তাকে পিছন দিক থেকে বর্শা বিদ্ধ করে। এ সময় রক্ত দেখে হারাম বিন মিলহান বলে ওঠেন,اللهُ أكْبَرُ، فُزْتُ وَرَبِّ الْكَعْبَةِ ‘আল্লাহু আকবর! কা‘বার রবের কসম! আমি সফল হয়েছি’। অতঃপর ‘আমের বিন তুফায়েলের আবেদনক্রমে বনু সুলাইমের তিনটি গোত্র উছাইয়া, রে‘ল ও যাকওয়ান(عُصَيَّة، رِعْل، ذَكْوَان) চতুর্দিক হতে তাদের উপরে আক্রমণ চালায় এবং সবাইকে হত্যা করে। একমাত্র ‘আমর বিন উমাইয়া যামরী রক্ষা পান মুযার গোত্রের সাথে সম্পর্ক থাকার কারণে। এতদ্ব্যতীত বনু নাজ্জারের কা‘ব বিন যায়েদ জীবিত ছিলেন। তাঁকে নিহতদের মধ্য থেকে যখমী অবস্থায় উঠিয়ে আনা হয়। পরে তিনি ৫ম হিজরীর শাওয়াল মাসে সংঘটিত খন্দকের যুদ্ধের সময় একটি অজ্ঞাত তীরের আঘাতে শহীদ হন।[যাদুল মা‘আদ ৩/২২২; ইবনু সা‘দ ২/৩৯-৪০] এসময় জিব্রীল (আঃ) রাসূল (সাঃ)-কে খবর দিয়ে বললেন, প্রেরিত দলটি তাদের রবের সাথে মিলিত হয়েছে। আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাদেরকে সন্তুষ্ট করেছেন। এ ঘটনার পর রাসূল (সাঃ) তাদের বিরুদ্ধে ৪০ দিন অন্য বর্ণনায় এক মাস যাবত কুনূতে নাযেলাহ পাঠ করেন। হারাম বিন মিলহানের মৃত্যুকালীন শেষ বাক্যটি হত্যাকারী জাববার বিন সালমা(عُصَيَّة، رِعْل، ذَكْوَان) এর অন্তরে এমনভাবে দাগ কাটে যে, পরে তিনি ইসলাম কবুল করেন’ (ইবনু হিশাম ২/১৮৬)।