in ধর্ম ও আধ্যাত্মিক বিষয় by
সর্বস্তরের লোকদের নিকট দাওয়াত কি ছিল?

2 Answers

0 votes
by
 
Best answer
সাফা পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে কুরায়েশদের নিকটে দাওয়াত পৌঁছানোর পর রাসূল (সাঃ) এবার সর্বস্তরের মানুষের নিকটে দাওয়াত পৌঁছানোর সিদ্ধান্ত নিলেন।
উল্লেখ্য যে, ঐ সময় মক্কায় বিদ্রূপকারীদের নেতা ছিল পাঁচ জন: বনু সাহম গোত্রের ‘আছ বিন ওয়ায়েল, বনু আসাদ গোত্রের আসওয়াদ বিন মুত্ত্বালিব, বনু যোহরা গোত্রের আসওয়াদ বিন ‘আব্দে ইয়াগূছ, বনু মাখযূম গোত্রের অলীদ বিন মুগীরাহ এবং বনু খুযা‘আহ গোত্রের হারিছ বিন তুলাত্বিলা। এই পাঁচ জনই আল্লাহর হুকুমে একই সময়ে মৃত্যুবরণ করে। এভাবেই আল্লাহর ওয়াদা সত্যে পরিণত হয় (ইবনু হিশাম ১/৪০৯-১০)। কেননা আল্লাহ আগেই স্বীয় নবীকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেন,إِنَّا كَفَيْنَاكَ الْمُسْتَهْزِئِينَ ‘তোমাকে বিদ্রুপকারীদের জন্য আমিই যথেষ্ট’ (হিজর ১৫/৯৫)।
রাসূল (সাঃ) মক্কার হাটে-মাঠে-ঘাটে, বাজারে ও বস্তিতে সর্বত্র দাওয়াত ছড়িয়ে দিতে থাকলেন। তিনি ও তাঁর সাথীরা নিরন্তর প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন। এ সময় তাঁরা মূর্তিপূজার অসারতা, শিরকী আক্বীদার অনিষ্টকারিতা এবং তাওহীদের উপকারিতা বুঝাতে থাকেন। সাথে সাথে মানুষকে আখেরাতে জবাবদিহিতার বিষয়ে সজাগ করতে থাকেন।
স্মর্তব্য যে, মাক্কী জীবনে যে ৮৬টি সূরা নাযিল হয়েছে, তার প্রায় সবই ছিল আখেরাত ভিত্তিক। এর মাধ্যমে দুনিয়াপূজারী ভোগবাদী মানুষকে আখেরাতমুখী করার চেষ্টা করা হয়েছে। আর এটাই হল যুগে যুগে ইসলামী সমাজ গঠনের প্রধান মাধ্যম। সেই সাথে আরবদের পারস্পরিক গোত্রীয় হিংসা, দলাদলি ও হানাহানির অবসানকল্পে এবং দাস-মনিব ও সাদা-কালোর উঁচু-নীচু ভেদাভেদ চূর্ণ করার লক্ষ্যে তিনি এক আল্লাহর দাসত্বের অধীনে সকল মানুষের সমানাধিকার ঘোষণা করেন।


দু’টি দাওয়াত দু’টি আনুগত্যের প্রতি :
━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━
মুহাম্মাদ (সাঃ) ও তাঁর চাচা কুরায়েশ নেতা আবু লাহাবের দু’টি দাওয়াত ছিল দু’টি আনুগত্যের প্রতি ও দু’টি সার্বভৌমত্বের প্রতি দাওয়াত। দু’টি ছিল সম্পূর্ণ পরস্পর বিরোধী দাওয়াত। একটিতে ছিল আল্লাহর সার্বভৌমত্বের অধীনে সকল মানুষের অধিকার সমান। অন্যটিতে ছিল মানুষের সার্বভৌমত্বের অধীনে মানুষ মানুষের গোলাম। নিম্নের হাদীছ দু’টি তার জাজ্বল্যমান প্রমাণ।-
عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ أَنَّهُ سَمِعَ رَبِيعَةَ بْنَ عِبَادٍ الدُّؤَلِيَّ يَقُولُ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمِنًى فِي مَنَازِلِهِمْ قَبْلَ أَنْ يُهَاجِرَ إِلَى الْمَدِينَةِ يَقُولُ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّ اللهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تَعْبُدُوهُ وَلاَ تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا. قَالَ: وَوَرَاءَهُ رَجُلٌ يَقُولُ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّ هَذَا يَأْمُرُكُمْ أَنْ تَتْرُكُوا دَيْنَ آبَائِكُمْ، فَسَأَلْتُ مَنْ هَذَا الرَّجُلُ؟ قِيلَ: أَبُو لَهَبٍ-
وفى رواية عنه قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْجَاهِلِيَّةِ بِسُوقِ ذِي الْمَجَازِ وَهُوَ يَقُولُ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ، قُولُوا لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ تُفْلِحُوا قَالَ: يُرَدِّدُهَا مِرَارًا وَالنَّاسُ مُجْتَمِعُونَ عَلَيْهِ يَتَّبِعُونَهُ، وَإِذَا وَرَاءَهُ رَجُلٌ أَحْوَلُ ذُو غَدِيرَتَيْنِ وَضِيءُ الْوَجْهِ يَقُولُ: إِنَّهُ صَابِئٌ كَاذِبٌ، فَسَأَلْتُ: مَنْ هَذَا؟ فَقَالُوا: عَمُّهُ أَبُو لَهَبٍ-
‘মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির বলেন, তিনি রাবী‘আহ বিন এবাদ আদ-দুআলী-কে বলতে শুনেছেন তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে মদীনায় হিজরতের পূর্বে মিনাতে লোকদের তাঁবু সমূহে গিয়ে বলতে শুনেছি, হে লোকসকল! আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁর ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না’। রাবী বলেন, এ সময় তাঁর পিছনে আর একজন ব্যক্তিকে বলতে শুনলাম, হে লোকসকল! নিশ্চয় এই ব্যক্তি তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যাতে তোমরা তোমাদের বাপ-দাদার ধর্ম পরিত্যাগ কর’। রাবী বলেন, আমি লোকদের জিজ্ঞেস করলাম এ ব্যক্তিটি কে? তারা বলল, আবু লাহাব’ (হাকেম হা/৩৮, হাদীছ সহীহ)।
একই রাবী কর্তৃক অন্য বর্ণনায় এসেছে, জাহেলী যুগে আমি রাসূল (সাঃ)-কে যুল-মাজায বাজারে লোকদের উদ্দেশ্যে বার বার বলতে শুনেছি, قُولُوا لآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ تُفْلِحُوا ‘তোমরা বল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তাহলে তোমরা সফলকাম হবে’। তাঁর পিছে পিছে আর একজন চোখ ট্যারা, দুই ঝুটি চুল ওয়ালা উজ্জ্বল গৌর বর্ণের ব্যক্তি বলছেন,إِنَّهُ صَابِئٌ كَاذِبٌ ‘লোকটি ধর্মত্যাগী ও মিথ্যাবাদী’। আমি লোকদের জিজ্ঞেস করলাম, এই ব্যক্তিটি কে? লোকেরা বলল, উনার চাচা আবু লাহাব’।[হাকেম হা/৩৯, ১/১৫ পৃঃ, হাদীছ সহীহ, আহমাদ হা/১৬০৬৬]
ত্বারেক আল-মাহারেবী বলেন, আমি জাহেলী যুগে যুল-মাজায বাজারে লাল জুববা পরিহিত অবস্থায় রাসূল (সাঃ)-কে দাওয়াত দিতে শুনেছি যে,يَا أَيُّهَا النَّاسُ، قُولُوا: لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ تُفْلِحُوا ‘হে জনগণ! তোমরা বল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ আল্লাহ ব্যতীত কোন
0 votes
by
মক্কায় বিদ্রূপকারীদের নেতা ছিল পাঁচ জন: বনু সাহম গোত্রের ‘আছ বিন ওয়ায়েল, বনু আসাদ গোত্রের আসওয়াদ বিন মুত্ত্বালিব, বনু যোহরা গোত্রের আসওয়াদ বিন ‘আব্দে ইয়াগূছ, বনু মাখযূম গোত্রের অলীদ বিন মুগীরাহ এবং বনু খুযা‘আহ গোত্রের হারিছ বিন তুলাত্বিলা। এই পাঁচ জনই আল্লাহর হুকুমে একই সময়ে মৃত্যুবরণ করে। এভাবেই আল্লাহর ওয়াদা সত্যে পরিণত হয় (ইবনু হিশাম ১/৪০৯-১০)। কেননা আল্লাহ আগেই স্বীয় নবীকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেন,إِنَّا كَفَيْنَاكَ الْمُسْتَهْزِئِينَ ‘তোমাকে বিদ্রুপকারীদের জন্য আমিই যথেষ্ট’ (হিজর ১৫/৯৫)। রাসূল (সাঃ) মক্কার হাটে-মাঠে-ঘাটে, বাজারে ও বস্তিতে সর্বত্র দাওয়াত ছড়িয়ে দিতে থাকলেন। তিনি ও তাঁর সাথীরা নিরন্তর প্রচেষ্টা চালাতে থাকেন। এ সময় তাঁরা মূর্তিপূজার অসারতা, শিরকী আক্বীদার অনিষ্টকারিতা এবং তাওহীদের উপকারিতা বুঝাতে থাকেন। সাথে সাথে মানুষকে আখেরাতে জবাবদিহিতার বিষয়ে সজাগ করতে থাকেন। স্মর্তব্য যে, মাক্কী জীবনে যে ৮৬টি সূরা নাযিল হয়েছে, তার প্রায় সবই ছিল আখেরাত ভিত্তিক। এর মাধ্যমে দুনিয়াপূজারী ভোগবাদী মানুষকে আখেরাতমুখী করার চেষ্টা করা হয়েছে। আর এটাই হল যুগে যুগে ইসলামী সমাজ গঠনের প্রধান মাধ্যম। সেই সাথে আরবদের পারস্পরিক গোত্রীয় হিংসা, দলাদলি ও হানাহানির অবসানকল্পে এবং দাস-মনিব ও সাদা-কালোর উঁচু-নীচু ভেদাভেদ চূর্ণ করার লক্ষ্যে তিনি এক আল্লাহর দাসত্বের অধীনে সকল মানুষের সমানাধিকার ঘোষণা করেন। দু’টি দাওয়াত দু’টি আনুগত্যের প্রতি : ━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━ মুহাম্মাদ (সাঃ) ও তাঁর চাচা কুরায়েশ নেতা আবু লাহাবের দু’টি দাওয়াত ছিল দু’টি আনুগত্যের প্রতি ও দু’টি সার্বভৌমত্বের প্রতি দাওয়াত। দু’টি ছিল সম্পূর্ণ পরস্পর বিরোধী দাওয়াত। একটিতে ছিল আল্লাহর সার্বভৌমত্বের অধীনে সকল মানুষের অধিকার সমান। অন্যটিতে ছিল মানুষের সার্বভৌমত্বের অধীনে মানুষ মানুষের গোলাম। নিম্নের হাদীছ দু’টি তার জাজ্বল্যমান প্রমাণ।- عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ أَنَّهُ سَمِعَ رَبِيعَةَ بْنَ عِبَادٍ الدُّؤَلِيَّ يَقُولُ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمِنًى فِي مَنَازِلِهِمْ قَبْلَ أَنْ يُهَاجِرَ إِلَى الْمَدِينَةِ يَقُولُ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّ اللهَ يَأْمُرُكُمْ أَنْ تَعْبُدُوهُ وَلاَ تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا. قَالَ: وَوَرَاءَهُ رَجُلٌ يَقُولُ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّ هَذَا يَأْمُرُكُمْ أَنْ تَتْرُكُوا دَيْنَ آبَائِكُمْ، فَسَأَلْتُ مَنْ هَذَا الرَّجُلُ؟ قِيلَ: أَبُو لَهَبٍ- وفى رواية عنه قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْجَاهِلِيَّةِ بِسُوقِ ذِي الْمَجَازِ وَهُوَ يَقُولُ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ، قُولُوا لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ تُفْلِحُوا قَالَ: يُرَدِّدُهَا مِرَارًا وَالنَّاسُ مُجْتَمِعُونَ عَلَيْهِ يَتَّبِعُونَهُ، وَإِذَا وَرَاءَهُ رَجُلٌ أَحْوَلُ ذُو غَدِيرَتَيْنِ وَضِيءُ الْوَجْهِ يَقُولُ: إِنَّهُ صَابِئٌ كَاذِبٌ، فَسَأَلْتُ: مَنْ هَذَا؟ فَقَالُوا: عَمُّهُ أَبُو لَهَبٍ- ‘মুহাম্মাদ ইবনুল মুনকাদির বলেন, তিনি রাবী‘আহ বিন এবাদ আদ-দুআলী-কে বলতে শুনেছেন তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে মদীনায় হিজরতের পূর্বে মিনাতে লোকদের তাঁবু সমূহে গিয়ে বলতে শুনেছি, হে লোকসকল! আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁর ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না’। রাবী বলেন, এ সময় তাঁর পিছনে আর একজন ব্যক্তিকে বলতে শুনলাম, হে লোকসকল! নিশ্চয় এই ব্যক্তি তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যাতে তোমরা তোমাদের বাপ-দাদার ধর্ম পরিত্যাগ কর’। রাবী বলেন, আমি লোকদের জিজ্ঞেস করলাম এ ব্যক্তিটি কে? তারা বলল, আবু লাহাব’ (হাকেম হা/৩৮, হাদীছ সহীহ)। একই রাবী কর্তৃক অন্য বর্ণনায় এসেছে, জাহেলী যুগে আমি রাসূল (সাঃ)-কে যুল-মাজায বাজারে লোকদের উদ্দেশ্যে বার বার বলতে শুনেছি, قُولُوا لآ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ تُفْلِحُوا ‘তোমরা বল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তাহলে তোমরা সফলকাম হবে’। তাঁর পিছে পিছে আর একজন চোখ ট্যারা, দুই ঝুটি চুল ওয়ালা উজ্জ্বল গৌর বর্ণের ব্যক্তি বলছেন,إِنَّهُ صَابِئٌ كَاذِبٌ ‘লোকটি ধর্মত্যাগী ও মিথ্যাবাদী’। আমি লোকদের জিজ্ঞেস করলাম, এই ব্যক্তিটি কে? লোকেরা বলল, উনার চাচা আবু লাহাব’।[হাকেম হা/৩৯, ১/১৫ পৃঃ, হাদীছ সহীহ, আহমাদ হা/১৬০৬৬]

Related questions

উত্তর সন্ধানী! বেস্ট বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর ওয়েবসাইট। প্রশ্ন করুন, উত্তর নিন, সমস্যা সমাধান করুন ।
উত্তর সন্ধানী কি?
উত্তর সন্ধানী বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর এর ওয়েবসাইট।
গোপন প্রশ্ন ও উত্তর। ডিজিটাল শিক্ষায় প্রশ্নের উত্তরের সেরা ওয়েবসাইট।
...