রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে আপোষ করতে আসা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ইসলামের ইতিহাসে উল্লেখিত আছে। মূলত মক্কার কুরাইশ নেতারা ইসলাম ও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ক্রমবর্ধমান প্রভাব দেখে শঙ্কিত হয়ে তাঁর সঙ্গে আপোষের চেষ্টা করে। এর মধ্যে দুটি প্রধান ঘটনা হলো:
1. কুরাইশ নেতাদের আপোষ প্রচেষ্টা:
যখন ইসলামের প্রচার মক্কায় দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং কুরাইশরা বুঝতে পারে যে তারা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রচারকে আটকাতে পারছে না, তখন তারা তাঁকে আপোষ করার প্রস্তাব দেয়। কুরাইশের প্রভাবশালী নেতারা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে তাঁকে বিভিন্ন ধরনের প্রস্তাব দেন, যার মধ্যে ছিল:
তাঁকে মক্কার রাজা করার প্রস্তাব।
তাঁকে বিপুল ধন-সম্পদ ও ক্ষমতার প্রতিশ্রুতি।
তাঁকে প্রভাবশালী নারীদের সাথে বিবাহের প্রস্তাব।
তারা চেয়েছিল যে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইসলাম প্রচার বন্ধ করবেন বা কুরাইশদের দেবদেবীর উপাসনা সম্পর্কে আপোষ করবেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) সব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং দৃঢ়ভাবে জানান যে, তিনি আল্লাহর বার্তা প্রচারের জন্য প্রেরিত হয়েছেন এবং কোনো ধরনের আপোষ তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তিনি বলেন: "যদি তারা আমার ডান হাতে সূর্য এবং বাম হাতে চাঁদও এনে দেয়, তবুও আমি আমার দায়িত্ব থেকে বিচ্যুত হব না।"
2. হুদাইবিয়ার সন্ধি (৬২৮ খ্রিস্টাব্দ):
হিজরতের ৬ষ্ঠ বছরে (৬২৮ খ্রিস্টাব্দ) রাসূলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর সাহাবিরা মক্কায় ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। তবে মক্কার কুরাইশরা তাদেরকে ওমরাহ পালন করতে বাধা দেয়। এর ফলে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে হুদাইবিয়ার সন্ধি চুক্তি হয়। কুরাইশদের পক্ষ থেকে সুহাইল ইবনে আমর রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে আলোচনার জন্য আসে। এই চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, দুই পক্ষ দশ বছরের জন্য যুদ্ধবিরতি মেনে চলে এবং মুসলিমরা সেই বছর মক্কায় প্রবেশ না করে পরের বছর এসে ওমরাহ পালন করবে। যদিও এই চুক্তি প্রথমে মুসলিমদের জন্য কিছুটা কঠোর মনে হয়েছিল, পরে এটি মুসলিমদের জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়, কারণ এর মাধ্যমে ইসলাম শান্তিপূর্ণভাবে আরো বিস্তার লাভ করতে শুরু করে।
এই দুটি ঘটনা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে কুরাইশদের আপোষ প্রচেষ্টার অন্যতম উদাহরণ। তবে রাসূলুল্লাহ (সা.) কখনো ইসলামের মূল শিক্ষায় আপোষ করেননি এবং সবসময় আল্লাহর বার্তা প্রচারকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।