ঠাট্টা-বিদ্রুপ, কা‘বায় সালাত আদায়ে বাধা ও নানাবিধ কষ্ট দানের পরেও কোনভাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে দমিত করতে না পেরে অবশেষে তারা তাঁকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। যেটা ছিল হিজরতের প্রত্যক্ষ কারণ। ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, কুরায়েশ নেতাদের একটি দল হিজরে (الْحِجْر) একত্রিত হয়। অতঃপর লাত, মানাত ও ‘উযযার নামে শপথ করে বলে যে, এবার আমরা মুহাম্মাদকে দেখলে একযোগে তার উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ব এবং হত্যা না করা পর্যন্ত তাকে ছেড়ে আসব না’। একথা জানতে পেরে ফাতেমা কাঁদতে কাঁদতে পিতার কাছে এলেন এবং উক্ত খবর দিয়ে বললেন যে, ঐ নেতারা আপনাকে হত্যা করে রক্তমূল্য নিজেরা ভাগ করে পরিশোধ করবে। রাসূল (সাঃ) বললেন, বেটি! আমাকে ওযূর পানি দাও। অতঃপর ওযূ করে তিনি সোজা হারামে চলে গেলেন ও তাদের মজলিসে প্রবেশ করলেন। তারা তাঁকে দেখে বলে উঠল, এই তো সে ব্যক্তি। কিন্তু কেউ তাঁর দিকে চোখ তুলে তাকাতে বা উঠে দাঁড়িয়ে তাঁর দিকে এগিয়ে আসতে সাহস করল না। এ সময় তিনি তাদের দিকে এক মুষ্টি মাটি ছুঁড়ে মেরে বলেন, شَاهَتِ الْوُجُوهُ ‘চেহারাসমূহ ধূলি মলিন হৌক’! রাবী বলেন, ঐ মাটি যার গায়েই লেগেছিল, সেই-ই বদরের যুদ্ধে কাফের অবস্থায় নিহত হয়েছিল’।[আহমাদ হা/২৭৬২, ৩৪৮৫; হাকেম হা/৫৮৩, ৩/১৫৭; সিলসিলা সহীহাহ হা/২৮২৪] উল্লেখ্য যে, হযরত নূহ, ইবরাহীম ও মূসা (আঃ) আল্লাহর পথে চরমভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। অন্যদের মধ্যে বহুসংখ্যক নবীকে সরাসরি হত্যা করা হয়েছে। অতঃপর শেষনবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে হত্যা করতে সক্ষম না হলেও তাকে মর্মান্তিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। যেমন হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেন, لَقَدْ أُخِفْتُ فِى اللهِ وَمَا يُخَافُ أَحَدٌ وَلَقَدْ أُوذِيتُ فِى اللهِ وَمَا يُؤْذَى أَحَدٌ وَلَقَدْ أَتَتْ عَلَىَّ ثَلاَثُونَ مِنْ بَيْنِ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ وَمَا لِى وَلِبِلاَلٍ طَعَامٌ يَأْكُلُهُ ذُو كَبِدٍ إِلاَّ شَىْءٌ يُوَارِيهِ إِبْطُ بِلاَلٍ ‘আমাকে আল্লাহর পথে যেভাবে ভীত করা হয়েছে এমনটি কাউকে করা হয়নি। আমি আল্লাহর পথে যেভাবে নির্যাতিত হয়েছি, এমনটি কেউ হয়নি। মাসের ত্রিশটি দিন ও রাত আমার ও আমার পরিবারের কোন খাদ্য জোটেনি। বেলালের বগলে যতটুকু লুকানো সম্ভব ততটুকু খাদ্য ব্যতীত’ (অর্থাৎ খুবই সামান্য)।[আহমাদ হা/১২২৩৩, ১৪০৮৭; তিরমিযী হা/২৪৭২; ইবনু মাজাহ হা/১৫১] বলা বাহুল্য এভাবে চূড়ান্ত পরীক্ষার সম্মুখীন হওয়ার পরেই আল্লাহ তাঁকে হিজরতের অনুমতি দেন। হিজরত শুরু (بدء الهجرة) : ━━━━━━━━━━━━━━━━ ১৪ নববী বর্ষের ২৭শে ছফর মোতাবেক ৬২২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দিবাগত শেষ রাতে আবুবকর (রাঃ)-এর বাড়ী থেকে হিজরত শুরু হয়[1] এবং রাত থাকতেই তাঁরা ৩ কি. মি. দক্ষিণ-পূর্বে ছওর গিরিগুহায় পৌঁছে যান। অতঃপর সেখানে তাঁরা শুক্রবার, শনিবার ও রবিবার তিনদিন তিন রাত অবস্থান করেন। এসময় রাসূল (সাঃ)-এর বয়স ছিল ৫৩ বছর। বিবরণ (وصف الهجرة) : ━━━━━━━━━━━━━ আয়েশা (রাঃ) বলেন, হিজরতের দিন ভরদুপুরে একটা কাপড়ে মাথা ঢেকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের বাড়ীতে আসেন। যেসময় সাধারণতঃ কেউ বের হয় না। তিনি এসে আবুবকরকে বললেন যে, তাঁকে হিজরতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আমরা তখন তাঁদের সফরের জন্য দ্রুত গোছ-গাছ শুরু করে দিলাম। (বড় বোন) আসমা তার কোমরবন্দ ছিঁড়ে তার এক অংশ দিয়ে থলের মুখ বেঁধে দেন। অন্য অংশ নিজের ব্যবহারে রাখেন। তিনি বলেন, আবুবকর আগে থেকেই অপেক্ষায় ছিলেন। কেননা চারমাস পূর্বেই (অর্থাৎ ২য় বায়‘আতের পর থেকে হিজরতপূর্ব সময়ের মধ্যে) রাসূল (সাঃ) সকলকে জানিয়েছিলেন যে, আমাকে তোমাদের হিজরতের স্থান স্বপ্নে দেখানো হয়েছে, যা কালো পাথুরে মাটির মাঝে খেজুর বাগিচা সমৃদ্ধ এলাকা। তখন থেকেই মুসলমানগণ ইয়াছরিবে হিজরত করতে থাকেন। এমনকি হাবশা থেকেও অনেকে ফিরে ইয়াছরিবে যান। তবে জা‘ফর বিন আবু তালেব তখনও সেখানে ছিলেন। এক পর্যায়ে আবুবকরও ইয়াছরিবে চলে যেতে চান। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাকে বলেন, عَلَى رِسْلِكَ فَإِنِّى أَرْجُو أَنْ يُؤْذَنَ لِى ‘থেমে যাও! আশা করছি যে, আমাকেও অনুমতি দেওয়া হবে’ (বুখারী হা/২২৯৭; ৩৯০৫)। ফলে সেদিন থেকেই আবুবকর দু’টি দ্রুতগামী বাহন প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আবুবকর (