ব্যবসায়ে অভাবিত সাফল্যে খাদীজা দারুণ খুশী হন। অন্যদিকে গোলাম মায়সারার কাছে মুহাম্মাদের মিষ্টভাষিতা, সত্যবাদিতা, আমানতদারী এবং উন্নত চিন্তা-চেতনার কথা শুনে বিধবা খাদীজা মুহাম্মাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে পড়েন। ইতিপূর্বে পরপর দু’জন স্বামী মৃত্যুবরণ করায় মক্কার সেরা নেতৃবৃন্দ তাঁর নিকটে বিয়ের পয়গাম পাঠান। কিন্তু তিনি কোনটাই গ্রহণ করেননি। এবার তিনি নিজেই বান্ধবী নাফীসার মাধ্যমে নিজের বিয়ের পয়গাম পাঠালেন যুবক মুহাম্মাদ-এর কাছে। তখন উভয় পক্ষের মুরববীদের সম্মতিক্রমে শাম থেকে ফিরে আসার মাত্র দু’মাসের মাথায় সমাজনেতাদের উপস্থিতিতে ধুমধামের সাথে তাদের বিবাহ সম্পন্ন হয়। মুহাম্মাদ স্বীয় বিবাহের মোহরানা স্বরূপ ২০টি উট প্রদান করেন। এ সময় খাদীজা ছিলেন মক্কার শ্রেষ্ঠ ধনী ও সম্ভ্রান্ত মহিলা এবং সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারিণী হিসাবে ‘ত্বাহেরা’ (পবিত্রা) নামে খ্যাত। তখন তাঁর বয়স ছিল ৪০ এবং মুহাম্মাদের বয়স ছিল ২৫। মুহাম্মাদ ছিলেন খাদীজার তৃতীয় স্বামী। অন্যদিকে খাদীজা ছিলেন মুহাম্মাদের প্রথমা স্ত্রী।[ইবনু হিশাম ১/১৮৭-৮৯; আল-বিদায়াহ ২/২৯৩-৯৪] উভয়ের দাম্পত্য জীবন পঁচিশ বছর স্থায়ী হয়। মৃত্যুকালে খাদীজার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর। তবে উভয়ের বয়স নিয়ে মতভেদ আছে। সন্তান-সন্ততি : ━━━━━━━━━ তাঁর মোট ৩ পুত্র ও ৪ কন্যা ছিল। ইবরাহীম ব্যতীত বাকী ৬ সন্তানের সবাই ছিলেন খাদীজার গর্ভজাত। তিনি বেঁচে থাকা অবধি রাসূল (সাঃ) দ্বিতীয় বিবাহ করেননি।[ইবনু হিশাম ১/১৯০; মুসলিম হা/২৪৩৬] মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর সাথে বিয়ের সময় খাদীজা পূর্ব স্বামীদ্বয়ের কয়েকজন জীবিত সন্তানের মা ছিলেন। তাঁর গর্ভজাত ও পূর্বস্বামীর সন্তানেরা সকলে ইসলাম কবুল করেন ও সকলে সাহাবী ছিলেন। খাদীজার গর্ভে রাসূল (সাঃ)-এর প্রথম সন্তান ছিল ক্বাসেম। তার নামেই রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর উপনাম ছিল আবুল ক্বাসেম। অতঃপর কন্যা যয়নব, পুত্র আব্দুল্লাহ; যার লকব ছিল ত্বাইয়িব ও ত্বাহের। কারণ তিনি নবুঅত লাভের পর জন্মগ্রহণ করেছিলেন। অতঃপর রুক্বাইয়া, উম্মে কুলছূম ও ফাতেমা। ক্বাসেম ছিলেন সন্তানদের মধ্যে সবার বড়। যিনি ১৭ মাস বয়সে মারা যান। নবুঅত লাভের পর আব্দুল্লাহ জন্ম গ্রহণের কিছু দিনের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করায় ‘আছ বিন ওয়ায়েল প্রমুখ কুরায়েশ নেতারা রাসূল (সাঃ)-কে ‘আবতার’ বা নির্বংশ বলে অভিহিত করেন। কেননা সে যুগে কারু পুত্র সন্তান মারা গেলে এবং পরে পুত্র সন্তান হতে দেরী হলে আরবরা ঐ ব্যক্তিকে ‘আবতার’ বলত। অতঃপর চার কন্যার মধ্যে কে সবার বড় ও কে সবার ছোট এ নিয়ে মতভেদ আছে। তবে প্রসিদ্ধ মতে যয়নব বড় ও ফাতেমা ছিলেন ছোট। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর মোট সাত সন্তানের ছয় জনই তাঁর জীবদ্দশায় মৃত্যুবরণ করেন। তাদের মধ্যে পুত্রগণ শৈশবে মারা যান। কন্যাগণ সকলে বিবাহিতা হন ও হিজরত করেন। কিন্তু ফাতেমা ব্যতীত বাকী তিন কন্যা রাসূল (সাঃ)-এর জীবদ্দশায় মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর ছয় মাস পরে ফাতেমা (রাঃ) মারা যান। রাসূল (সাঃ)-এর সর্বশেষ সন্তান ছিলেন পুত্র ‘ইবরাহীম’। তিনি ছিলেন মিসরীয় দাসী মারিয়া ক্বিবতীয়ার গর্ভজাত। যিনি মদীনায় জন্মগ্রহণ করেন এবং দুধ ছাড়ার আগেই মাত্র ১৮ মাস বয়সে ১০ম হিজরীর ২৯শে শাওয়াল মোতাবেক ৬৩২ খৃষ্টাব্দের ২৭ অথবা ৩০শে জানুয়ারী সূর্য গ্রহণের দিন সোমবার মদীনায় ইন্তেকাল করেন।[বুখারী হা/১০৬০; মুসলিম হা/৯০৬] জামাতাগণ : ━━━━━━━ (১) আবুল ‘আছ বিন রাবী‘ : ইনি খাদীজার আপন বোন হালার পুত্র ছিলেন। কন্যা যয়নবকে তিনি এই ভাগিনার সাথে বিবাহ দেন। আলী ও উমামাহ নামে তাঁদের একটি পুত্র ও একটি কন্যা সন্তান হয়। যয়নব (রাঃ) ৮ম হিজরীতে এবং আবুল ‘আছ (রাঃ) ১২ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। (২-৩) উৎবা ও উতাইবাহ : আবু লাহাবের এই দুই পুত্রের সাথে রুক্বাইয়া ও উম্মে কুলছূমের বিবাহ হয়। কিন্তু সূরা লাহাব নাযিলের পর তাদেরকে তালাক দিতে আবু লাহাব বাধ্য করেন। এদের ঔরসে কোন সন্তানাদি হয়নি। পরে রুক্বাইয়া হযরত উসমান (রাঃ)-এর সাথে বিবাহিতা হন। হাবশায় হিজরতকালীন সময়ে ‘আব্দুল্লাহ’ নামে তাঁর একটি পুত্র সন্তান হয়। যিনি ১ম হিজরীতে মদীনায় ৬ বছর বয়সে মারা যান। তার পরের বছর ২য় হিজরীতে বদরের যুদ্ধ থেকে ফেরার দিন রুক্বাইয়া মৃত্যুবরণ করেন