লোহা কম বেশি সকলেই চেনে। লোহা এক প্রকার ধাতু। ধাতুগুলোর মধ্যে মানুষের সবচেয়ে বেশি পরিচিত এই লোহা। ছোট ৩-৫ বছরের শিশু থেকে বুড়ো সবাই লোহা চেনে। লোহার নাম শোনেনি এমন মানুষ পাওয়া যাবেনা।
ধাতব বস্তুর মধ্যে লোহাই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করে মানুষ। সুপ্রাচীন কাল থেকেই মানুষ লোহার ব্যবহার জানত। এশিয়া মাইনরের হিটটি সভ্যতায় লোহার আবিষ্কার ও ব্যবহার প্রথম হয় বলে ধারণা করা হয়।
লোহার বিভিন্ন নাম: লোহা, লৌহ, আয়রন, ফেরাম। বৈজ্ঞানিক ভাবে রসায়নে লোহার নাম ফেরাম। এবং সংকেত Fe ইংরেজিতে আয়রণ। বাংলায় লোহা, লৌহ ইত্যাদি।
লোহা বেশ শক্ত ধরণের উচ্চ ঘাতসহ উজ্জ্বল চকচকে বস্তু। কিন্ত আসলে আমরা লোহাকে চকচকে হিসাবে দেখিনা, দেখি কালচে হিসাবে। কারণ লোহা বেশ সক্রিয় এবং অক্সিজেনের প্রতি বেশ আসক্ত, সক্রিয়। অক্সিজেনের সংস্পর্শে এটি অক্সাইড তৈরি করে কালচে, লালচে বর্ণের হয়। ঘষা দিলে ভেতরে চকচকে লোহা দেখা যায়।
মাটিতে সামান্য পরিমাণ লোহা থাকে যা উদ্ভিদ গ্রহণ করে জীবন ধারণ করে এবং উদ্ভিজ্জ খাবার থেকে মানুষ সহ সকল প্রাণী লোহা গ্রহন করে। কি অবাক হচ্ছেন? লোহা আবার খাওয়া যায় নাকি? না লোহা সরাসরি খাবার নয়, খাওয়া যায়না। কিন্তু লোহা অল্প পরিমাণে পুষ্টি উপাদান। এমনকি মানুষের শরীরে লোহা না থাকলে মানুষের বেচে থাকাই অসম্ভব। কিভাবে ভাবছেন?
অন্য অনেক কিছু যেমন কোষীয় কার্যক্রম বাদ দিলাম শুধু রক্তের কথা ধরুন। রক্ত ছাড়া কি বাচা যায়? এই রক্তের একটি উপাদান হিমোগ্লোবিন। আর হিমোগ্লোবিন এর কেন্দ্রীয় মৌল হচ্ছে এই লোহা। লোহার জন্যই হিমোগ্লোবিন লাল তথা রক্ত লাল হয়। লোহা ছাড়া হিমোগ্লোবিন তৈরি হয়না ফলে রক্তও তৈরি হতে পারেনা। এজন্য রক্ত স্বল্পতায় ভোগা রোগীদের লৌহ আছে এমন শাক সবজি যেমন কচু শাক খেতে বলা হয়। এ কারণে লোহার কড়াইতে রান্না করা খাবার খুবই স্বাস্থ্যকর।
দৈনন্দিন জীবনে আমরা লোহাই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করি। পিন, সুই, সুচ থেকে শুরু করে ঘরের ছাদ, বেড়ার তারকাটা, পেরেক, নৌকা, ট্রলার, জাহাজ রেল গাডি, রেললাইন সবই লোহার তৈরি। ঘরের ছাদের টিনও লোহার তৈরি। চেয়ার টেবিল, রান্নার বড় কড়াই সবই তৈরি হয় লোহা থেকেই।
লোহা কোথায় পাওয়া যায়?
প্রকৃতিতে লোহা মুক্ত লোহা অবস্থায় পাওয়া যায়না। এটি খনিতে আকরিক হিসাবে পাওয়া যায়। আয়রণ পাইরাইটস এরকম একটি আকরিক।
খনি থেকে আকরিক সংগ্রহ করে বিভিন্ন ধাপে বিশুদ্ধ করে বিশেষ বার্তা চুল্লী নামক চুলায় উচ্চ তাপে আকরিক গলানো হয়, এসময় এতে কার্বন মেশালে লোহা তৈরি হয়। এই লোহাকে কাচা লোহা বা কাস্ট আয়রনও বলে, এ থেকে কার্বন অপসারণ করে নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় আবার কার্বন মেশালে পেটা লোহা পাওয়া যায়। এটি থেকেই ব্যবহার যোগ্য লোহা আসে। কাচা লোহা কিছুটা নরম, তাই পেটা লোহা এবং তা থেকে আরও শক্ত ইস্পাত লোহা ব্যবহারের জন্য বেশি উপযোগী। ইস্পাতে মরিচা পড়েনা বা খুবই কম।
লোহা অক্সিজেনের প্রতি আসক্তি থাকায় বাতাসে ফেলে রাখলে মরিচা ধরে লোহা ক্ষয় হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। মরিচাকে অনেক অঞ্চলে জং বলে। লোহায় জং ধরা বেশি পরিচিত বাক্য।
প্রাচীন কালের গুহা মানুষ থেকে আজকের এই আধুনিক যুগের মানুষ হতে লোহা বিশাল ভুমিকা রেখেছে। কারন আদিম মানুষ বিশেষ জ্ঞান ছাড়াই শুধু আগুনে গরম করে লোহা মুক্ত করে তা দিয়ে আত্মরক্ষার হাতিয়ার তৈরি করতে শেখে সহজে। ক্রমে লোহার ব্যবহারের ফলেই মানুষ নানা কিছু তৈরি করেই আজকে উন্নত হয়েছে।