রেডিয়াম (Radium) একটি অত্যন্ত রেডিওঅ্যাকটিভ মৌল, যার রাসায়নিক সংকেত Ra এবং পারমাণবিক সংখ্যা 88। এটি আলকালাইন আর্থ ধাতুর একটি উপাদান এবং প্রধানত ইউরেনিয়াম আকরিকের মধ্যে পাওয়া যায়। রেডিয়াম ১৮৯৮ সালে বিজ্ঞানী মেরি কুরি এবং পিয়েরে কুরি দ্বারা আবিষ্কৃত হয়েছিল। এটি ইতিহাসে প্রথম রেডিওঅ্যাকটিভ উপাদানগুলির মধ্যে একটি ছিল, এবং এটি তেজস্ক্রিয়তার কারণে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যাপকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
বৈশিষ্ট্য
1. রাসায়নিক গঠন:
রেডিয়াম অ্যালকালাইন আর্থ ধাতুগুলির সাথে মিলে রাসায়নিকভাবে সক্রিয়। এটি সাধারণত এককভাবে পাওয়া যায় না, বরং অন্যান্য মৌল যেমন ইউরেনিয়ামের সঙ্গে মিশ্রিত থাকে।
2. ফিজিক্যাল বৈশিষ্ট্য:
রেডিয়াম একটি সাদা রূপালী রঙের ধাতু। তবে এটি বাতাসে সংস্পর্শে এলে কালচে হয়ে যায়, কারণ এটি দ্রুত অক্সাইডে পরিণত হয়।
এটি একটি খুব ভারী ধাতু এবং এটি প্রায় 700 °C তাপমাত্রায় গলে যায়।
3. রেডিওঅ্যাকটিভ প্রভাব:
রেডিয়াম খুবই শক্তিশালী রেডিওঅ্যাকটিভ উপাদান, যা আলফা, বিটা, এবং গামা রশ্মি নির্গত করে। এর বিকিরণ অনেক শক্তিশালী, যা দীর্ঘমেয়াদী এক্সপোজার থেকে ক্যান্সার এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
উৎস
রেডিয়াম সাধারণত ইউরেনিয়াম আকরিক থেকে পাওয়া যায়, বিশেষত পিচব্লেন্ড নামক খনিজ থেকে। এটি পৃথিবীর ভূত্বকে খুবই ক্ষুদ্র পরিমাণে উপস্থিত থাকে।
ব্যবহার
1. চিকিৎসা:
অতীতে রেডিয়াম রেডিওথেরাপিতে ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হত। তবে এর বিপজ্জনক বিকিরণের কারণে এটি এখন আধুনিক রেডিওথেরাপি পদ্ধতিতে ব্যবহৃত হয় না।
2. ঘড়ির ডায়াল:
অতীতে রেডিয়ামকে ঘড়ির ডায়ালে উজ্জ্বলতা তৈরি করতে ব্যবহৃত হতো, কারণ এটি নিজেই আলো বিকিরণ করে। তবে এর তেজস্ক্রিয়তার কারণে এই ব্যবহারও বন্ধ করা হয়েছে।
3. বৈজ্ঞানিক গবেষণা:
রেডিয়াম তেজস্ক্রিয়তার গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল। এটি গবেষণা এবং বিভিন্ন রেডিওঅ্যাকটিভ উপাদানের আবিষ্কারের ক্ষেত্রে সহায়ক।
স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা
রেডিয়ামের বিকিরণ অত্যন্ত ক্ষতিকারক। এর তেজস্ক্রিয়তার কারণে দীর্ঘমেয়াদী এক্সপোজার মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। রেডিয়াম এক্সপোজারের ফলে ক্যান্সার, অস্থি দুর্বলতা, এবং রক্তের রোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
ইতিহাসে, রেডিয়াম এক্সপোজারের কারণে অনেক শ্রমিক মারাত্মক অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়েছেন, বিশেষত যারা ঘড়ির ডায়ালে কাজ করতেন।
সারসংক্ষেপ
রেডিয়াম একটি অত্যন্ত রেডিওঅ্যাকটিভ এবং শক্তিশালী মৌল, যা অতীতে চিকিৎসা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে। তবে এর তেজস্ক্রিয়তা মানব স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক, তাই আজকাল এটি কম ব্যবহার করা হয়। রেডিয়ামের বিকিরণ গবেষণার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলেও, এর নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে এর ব্যবহার এখন সীমিত।