প্রাচীন মানুষের সমাজ ব্যবহারের মধ্যে পার্থক্য বিভিন্ন দিক থেকে দেখা যায়, যেমন খাদ্য সংগ্রহ, প্রযুক্তির ব্যবহার, জীবনযাত্রার ধরন এবং সামাজিক গঠন। নিচে কিছু প্রধান পার্থক্য তুলে ধরা হলো:
১. খাদ্য সংগ্রহ ও জীবনযাপন:
শিকারি-সংগ্রাহক সমাজ: প্রাচীন মানুষের প্রাথমিক সমাজ শিকারি-সংগ্রাহক (Hunter-gatherer) ছিল। তারা শিকার করে এবং বনজ ফল-মূল সংগ্রহ করে জীবনধারণ করত। তাদের কোন স্থায়ী বসবাসের ব্যবস্থা ছিল না এবং তারা জীবিকার জন্য বিভিন্ন স্থান পরিবর্তন করত।
কৃষিভিত্তিক সমাজ: কৃষির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ ফসল ফলাতে শিখে, স্থায়ী বসতি গড়ে তোলে। কৃষি আবিষ্কারের ফলে খাদ্যের নিয়মিত সরবরাহ নিশ্চিত হয় এবং বৃহত্তর জনসংখ্যা সহ সমাজ গঠন সম্ভব হয়।
২. প্রযুক্তির ব্যবহার:
পাথরের সরঞ্জাম: প্রাচীন শিকারি-সংগ্রাহক সমাজে পাথর, হাড় ও কাঠের তৈরি সরঞ্জাম ব্যবহৃত হতো। এগুলো শিকারের জন্য এবং বেঁচে থাকার অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হতো।
ধাতব যুগ: পরবর্তী সময়ে, মানুষ তামা, ব্রোঞ্জ এবং লোহা থেকে বিভিন্ন সরঞ্জাম ও অস্ত্র তৈরি করতে শিখেছিল, যা কৃষি, নির্মাণকাজ এবং যুদ্ধের কৌশলকে উন্নত করেছে।
৩. সামাজিক গঠন:
ছোট গোষ্ঠী বা উপজাতি: শিকারি-সংগ্রাহক সমাজগুলো সাধারণত ছোট পরিবার বা গোষ্ঠী আকারে গঠিত ছিল। তাদের নেতৃত্ব সাধারণত অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে নির্ধারিত হতো।
বৃহৎ সম্প্রদায় এবং শহর: কৃষিভিত্তিক সমাজের উদ্ভবের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ বড় বড় গ্রাম বা শহর গঠন করতে শুরু করে। কৃষি থেকে উদ্বৃত্ত উৎপাদনের ফলে শ্রেণিভিত্তিক সমাজ গড়ে ওঠে, যেখানে নেতারা (রাজা, পুরোহিত, বা সামরিক নেতারা) বড় ভূমিকা পালন করতেন।
৪. সংস্কৃতি ও ধর্ম:
প্রকৃতি পূজা: প্রাচীন শিকারি-সংগ্রাহক সমাজে মানুষ প্রকৃতির উপাসনা করত, যেমন সূর্য, চাঁদ, নদী, গাছ ইত্যাদির পূজা।
প্রাতিষ্ঠানিক ধর্ম: কৃষিভিত্তিক এবং শহরভিত্তিক সমাজে প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের বিকাশ হয়। মন্দির, পুরোহিত, এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো সমাজের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে।
৫. বিনিময় ও বাণিজ্য:
বার্টার সিস্টেম: শিকারি-সংগ্রাহক সমাজে বিনিময় পদ্ধতি খুব সাধারণ ছিল না, তবে কখনও কখনও তারা তাদের জিনিসপত্র বিনিময় করত।
বিনিময় ব্যবস্থা ও বাণিজ্য: কৃষিভিত্তিক সমাজে উৎপাদনের উদ্বৃত্ত তৈরি হওয়ার ফলে বিনিময় ও বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। মুদ্রার ব্যবহার এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বিকাশ ঘটে।
এই পার্থক্যগুলো প্রাচীন মানুষের জীবনযাত্রা, প্রযুক্তি এবং সমাজের ক্রমবিকাশের একটি চিত্র তুলে ধরে।