মদীনায় হিজরত করার পর রাসূলুল্লাহ (সা.) ইয়াহুদিদের (ইহুদি) সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেন। তাঁর অন্যতম প্রধান পদক্ষেপ ছিল **মদীনার সনদ** বা **মদিনা চুক্তি** (সাহিফা আল-মদিনা) প্রণয়ন, যা মদিনার মুসলিম, ইয়াহুদি এবং অন্যান্য গোত্রের মধ্যে একটি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের চুক্তি ছিল। রাসূল (সা.) এর এই উদ্যোগের মূল দিকগুলো ছিল:
1. **ধর্মীয় স্বাধীনতা**: চুক্তির মাধ্যমে ইয়াহুদিরা তাদের ধর্ম পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা পেয়েছিল। মুসলমানদের পাশাপাশি তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস, উপাসনা, এবং জীবনযাত্রায় হস্তক্ষেপ করা নিষিদ্ধ ছিল।
2. **সামাজিক ও রাজনৈতিক সমতা**: চুক্তির আওতায় মুসলমান ও ইয়াহুদি উভয়েই মদিনার নাগরিক হিসেবে সমান অধিকার পেয়েছিল। উভয় পক্ষকেই মদিনার নিরাপত্তা এবং শান্তি রক্ষার জন্য একে অপরকে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছিল।
3. **পারস্পরিক রক্ষা এবং নিরাপত্তা**: মদিনা আক্রমণের শিকার হলে, মুসলমান ও ইয়াহুদিরা একসঙ্গে মদিনার রক্ষা করবে। এর মাধ্যমে মদিনার সকল সম্প্রদায়ের মধ্যে নিরাপত্তা ও ঐক্য বজায় রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
4. **বিচার ব্যবস্থা**: প্রত্যেক সম্প্রদায় তাদের নিজস্ব আইন অনুযায়ী তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিচার করতে পারত। তবে সকলের মধ্যে কোনো বিরোধ দেখা দিলে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে সেই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার ছিল।
এই চুক্তি রাসূল (সা.)-এর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও সহাবস্থানের নীতির উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এটি মদিনায় স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে এবং বিভিন্ন ধর্ম ও জাতির মধ্যে সৌহার্দ্য বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল।