সালেহ (আঃ)-এর পরিচয় ‘আদ জাতির ধ্বংসের প্রায় ৫০০ বছর পরে হযরত সালেহ (আঃ) কওমে ছামূদ-এর প্রতি নবী হিসাবে প্রেরিত হন।[তারীখুল আম্বিয়া ১/৪৯ পৃঃ] কওমে ‘আদ ও কওমে ছামূদ একই দাদা ‘ইরাম’-এর দু’টি বংশধারার নাম। এদের বংশ পরিচয় ইতিপূর্বে হূদ (আঃ)-এর আলোচনায় বিধৃত হয়েছে। কওমে ছামূদ আরবের উত্তর-পশ্চিম এলাকায় বসবাস করত। তাদের প্রধান শহরের নাম ছিল ‘হিজ্র’ যা শামদেশ অর্থাৎ সিরিয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল। বর্তমানে একে সাধারণভাবে ‘মাদায়েনে সালেহ’ বলা হয়ে থাকে। ‘আদ জাতির ধ্বংসের পর ছামূদ জাতি তাদের স্থলাভিষিক্ত হয়। তারাও ‘আদ জাতির মত শক্তিশালী ও বীরের জাতি ছিল। তারা প্রস্তর খোদাই ও স্থাপত্য বিদ্যায় খুবই পারদর্শী ছিল। সমতল ভূমিতে বিশালকায় অট্টালিকা নির্মাণ ছাড়াও পর্বতগাত্র খোদাই করে তারা নানা রূপ প্রকোষ্ঠ নির্মাণ করত। তাদের স্থাপত্যের নিদর্শনাবলী আজও বিদ্যমান রয়েছে। এগুলোর গায়ে ইরামী ও ছামূদী বর্ণমালার শিলালিপি খোদিত রয়েছে। অভিশপ্ত অঞ্চল হওয়ার কারণে এলাকাটি আজও পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। কেউ সেখানে বসবাস করে না। ৯ম হিজরীতে তাবূক যুদ্ধে যাওয়ার পথে মুসলিম বাহিনী হিজ্রে অবতরণ করলে রাসূলুল্লাহ(সাঃ) তাদেরকে সেখানে প্রবেশ করতে নিষেধ করে বলেন, لاَ تَدْخُلُوا مَسَاكِنَ الَّذِينَ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ إِلاَّ أَنْ تَكُونُوا بَاكِيْنَ أَنْ يُصِيبَكُمْ مَا أَصَابَهُمْ- ‘তোমরা ঐসব অভিশপ্তদের এলাকায় প্রবেশ করো না ক্রন্দনরত অবস্থায় ব্যতীত। যদি ক্রন্দন করতে না পার, তাহলে প্রবেশ করো না। তাহলে তোমাদের উপর ঐ গজব আসতে পারে, যা তাদের উপর এসেছিল’।[বুখারী হা/৪৩৩; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫১২৫ ‘শিষ্টাচার’ অধ্যায় ‘যুলুম’ অনুচ্ছেদ।] রাসূলের এই বক্তব্যের মধ্যে সুক্ষ্ম তাৎপর্য এই যে, এগুলি দেখে যদি মানুষ আল্লাহর গজবে ভীত না হয়, তাহলে তাদের অন্তর শক্ত হয়ে যাবে এবং ঐসব অভিশপ্তদের মত অহংকারী ও হঠকারী আচরণ করবে। ফলে তাদের উপর অনুরূপ গজব নেমে আসবে, যেরূপ ইতিপূর্বে ঐসব অভিশপ্তদের উপর নেমে এসেছিল। পার্থিব বিত্ত-বৈভব ও ধনৈশ্বর্যের পরিণতি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অশুভ হয়ে থাকে। বিত্তশালীরা আল্লাহ ও আখেরাতকে ভুলে গিয়ে ভ্রান্ত পথে পা বাড়ায়। ছামূদ জাতির বেলায়ও তাই হয়েছিল। অথচ কওমে নূহের কঠিন শাস্তির ঘটনাবলী তখনও লোকমুখে আলোচিত হ’ত। আর কওমে ‘আদ-এর নিশ্চিহ্ন হওয়ার ঘটনা তো তাদের কাছে একপ্রকার টাটকা ঘটনাই ছিল। অথচ তাদের ভাইদের ধ্বংসস্ত্তপের উপরে বড় বড় বিলাসবহুল অট্টালিকা নির্মাণ করে ও বিত্ত বৈভবের মালিক হয়ে তারা পিছনের কথা ভুলে গেল। এমনকি তারা ‘আদ জাতির মত অহংকারী কার্যকলাপ শুরু করে দিল। তারা শিরক ও মূর্তিপূজায় লিপ্ত হ’ল। এমতাবস্থায় তাদের হেদায়াতের জন্য তাদেরই বংশের মধ্য হ’তে সালেহ (আঃ)-কে আল্লাহ নবী মনোনীত করে পাঠালেন।