চাচা আবু ত্বালিব ও স্ত্রী খাদীজার মৃত্যুর পর দশম নববী বর্ষের শাওয়াল মাস মোতাবেক ৬১৯ খ্রিষ্টাব্দের গ্রীষ্মকালে মে মাসের শেষে অথবা জুন মাসের প্রথমে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) স্বীয় মুক্তদাস যায়েদ বিন হারেছাহকে সাথে নিয়ে প্রধানতঃ নতুন সাহায্যকারীর সন্ধানে পদব্রজে(مَاشِيًا عَلَى قَدَمَيْهِ) ত্বায়েফ রওয়ানা হন।[যাদুল মা‘আদ ৩/২৮; ইবনু হিশাম ১/৪১৯; যঈফাহ হা/২৯৩৩] এ সময় রাসূল (সাঃ)-এর বয়স ছিল ৫০ বছর। এই প্রৌঢ় বয়সে এই দীর্ঘ পথ প্রচন্ড গরমের মধ্যে তিনি পায়ে হেঁটে অতিক্রম করেন। যা ছিল মক্কা হতে দক্ষিণ-পূর্বে প্রায় ৯০ কি. মি. দূরে। অতঃপর ত্বায়েফ পৌঁছে তিনি সেখানকার বনু ছাকবীফ গোত্রের তিন নেতা তিন সহোদর ভাই আব্দু ইয়ালীল, মাসঊদ ও হাবীব বিন আমর ছাক্বাফী-এর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদেরকে তাওহীদের দাওয়াত দেন। সাথে সাথে ইসলামকে সাহায্য করার জন্য তিনি তাদের প্রতি আহবান জানান। উক্ত তিন ভাইয়ের একজনের কাছে কুরায়েশ-এর অন্যতম গোত্র বনু জুমাহ(بنو جُمَح) এর একজন মহিলা বিবাহিতা ছিলেন (ইবনু হিশাম ১/৪১৯)। সেই আত্মীয়তার সূত্র ধরেই রাসূল (সাঃ) সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনজনই তাঁকে নিরাশ করেন। একজন বলেন,هُوَ يَمْرُطُ ثِيَابَ الْكَعْبَةِ (أى يُمَزِّقُهَا) إِنْ كَانَ اللهُ أَرْسَلَكَ ‘সে কা‘বার গোলাফ ছিঁড়ে ফেলবে, যদি আল্লাহ তোমাকে রাসূল করে পাঠিয়ে থাকেন’। অন্যজন বলেন,أَمَا وَجَدَ اللهُ أَحَدًا يُرْسِلُهُ غَيْرَكَ؟ ‘আল্লাহ কি তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে রাসূল হিসাবে পাঠানোর জন্য পাননি’? তৃতীয় জন বলেন, والله لا أكلِّمُكَ أبدًا، إن كنتَ رسولاً لأنت أعظمُ خطرًا من أن أرُدَّ عليكَ الكلامَ، ولئن كنتَ تَكْذِبُ على الله ما ينبغى أن أُكلِّمَك ‘আমি তোমার সাথে কোন কথাই বলব না। কেননা যদি তুমি সত্যিকারের নবী হও, তবে তোমার কথা প্রত্যাখ্যান করা আমার জন্য হবে সবচেয়ে বিপজ্জনক। আর যদি তুমি আল্লাহর নামে মিথ্যাচারে লিপ্ত হয়ে থাক, তবে তোমার সাথে আমার কথা বলা সমীচীন নয়’।[ইবনু হিশাম ১/৪১৯; আর-রাহীক্ব ১২৫ পৃঃ] নেতাদের কাছ থেকে নিরাশ হয়ে এবার তিনি অন্যদের কাছে দাওয়াত দিতে থাকেন। কিন্তু কেউ তার দাওয়াত কবুল করেনি। অবশেষে দশদিন পর তিনি সেখান থেকে প্রত্যাবর্তনের জন্য পা বাড়ান। এমন সময় নেতাদের উস্কানীতে বোকা লোকেরা ও ছোকরার দল এসে তাঁকে ঘিরে অশ্রাব্য ভাষায় গালি-গালাজ ও হৈ চৈ শুরু করে দেয়। এক পর্যায়ে তাঁকে লক্ষ্য করে তারা পাথর ছুঁড়তে আরম্ভ করে। যাতে তাঁর পায়ের গোড়ালী ফেটে রক্তে জুতা ভরে যায়’ (আর-রাওযুল উনুফ ৪/২৪)। এ সময় যায়েদ বিন হারেছাহ ঢালের মত থেকে রাসূল (সাঃ)-কে প্রস্তরবৃষ্টি থেকে রক্ষার চেষ্টা করেন। এভাবে রক্তাক্ত দেহে তিন মাইল হেঁটে (আর-রাহীক্ব ১২৫ পৃঃ) তায়েফ শহরের বাইরে তিনি এক আঙ্গুর বাগিচায় ক্লান্ত-শ্রান্ত অবস্থায় আশ্রয় নেন। তখন ছোকরার দল ফিরে যায়। বাগানটির মালিক ছিলেন মক্কার দুই নেতা উৎবা ও শায়বা বিন রাবী‘আহ দুই ভাই।[ইবনু হিশাম ১/৪২০; আল-বিদায়াহ ৩/১৩৪] এই উৎবার কন্যা ছিলেন আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দ বিনতে উৎবা। যিনি ওহুদ যুদ্ধের দিন কাফের পক্ষে মহিলা দলের নেতৃত্ব দেন এবং পরে মক্কা বিজয়ের দিন মুসলমান হন। ত্বায়েফ সফর বিষয়ে আয়েশা (রাঃ) বলেন, عَنْ عَائِشَةَ أَنَّهَا قَالَتْ لِرَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَا رَسُولَ اللهِ هَلْ أَتَى عَلَيْكَ يَوْمٌ كَانَ أَشَدَّ مِنْ يَوْمِ أُحُدٍ فَقَالَ لَقَدْ لَقِيتُ مِنْ قَوْمِكِ وَكَانَ أَشَدَّ مَا لَقِيتُ مِنْهُمْ يَوْمَ الْعَقَبَةِ إِذْ عَرَضْتُ نَفْسِى عَلَى ابْنِ عَبْدِ يَالِيلَ بْنِ عَبْدِ كُلاَلٍ فَلَمْ يُجِبْنِى إِلَى مَا أَرَدْتُ فَانْطَلَقْتُ وَأَنَا مَهْمُومٌ عَلَى وَجْهِى فَلَمْ أَسْتَفِقْ إِلاَّ بِقَرْنِ الثَّعَالِبِ فَرَفَعْتُ رَأْسِى فَإِذَا أَنَا بِسَحَابَةٍ قَدْ أَظَلَّتْنِى فَنَظَرْتُ فَإِذَا فِيهَا جِبْرِيلُ فَنَادَانِى فَقَالَ إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ قَدْ سَمِعَ قَوْلَ قَوْمِكَ لَكَ وَمَا رَدُّوا عَلَيْكَ وَقَدْ بَعَثَ إِلَيْكَ مَلَكَ الْجِبَالِ لِتَأْمُرَهُ بِمَا شِئْتَ فِيهِمْ قَالَ فَنَادَانِى مَلَكُ الْجِبَالِ وَسَلَّمَ عَلَىَّ. ثُمَّ قَالَ يَا مُحَمَّدُ إِنَّ اللهَ قَدْ سَمِعَ قَوْلَ قَوْمِكَ لَكَ وَأَنَا مَلَكُ الْجِبَالِ وَقَدْ بَعَثَنِى رَبُّكَ إِلَيْكَ لِتَأْمُرَنِى بِأَمْرِكَ فَمَا شِئْتَ إِنْ شِئْتَ أَنْ أُطْبِقَ عَلَيْهِمُ الأَخْشَبَيْنِ. فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : بَلْ أَرْجُو أَنْ يُخْرِجَ اللهُ مِنْ أَصْلاَبِهِمْ مَنْ يَعْبُدُ اللهَ وَحْدَهُ لاَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا، متفق عليه- ‘তিনি একদিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন ওহুদের দিন অপেক্ষা কষ্টের দিন আপনার জীবনে এসেছিল কি? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ। তোমার কওমের কাছ থেকে যে কষ্ট পেয়েছি তার চাইতে সেটি অধিক কষ্টদায়ক ছিল। আর তা ছিল আক্বাবার (ত্বায়েফের) দিনের আঘাত। যেদিন আমি (ত্বায়েফের নেতা) ইবনু ‘আব্দে ইয়ালীল বিন ‘আব্দে কুলাল-এর কাছে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু সে তাতে সাড়া দেয়নি। তখন দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ফিরে আসার