in ধর্ম ও আধ্যাত্মিক বিষয় by
রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর উপর নানামুখী অত্যাচার সম্পর্কে কিছু লিখ?

1 Answer

0 votes
by
ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা : ━━━━━━━━━━━━ সমস্ত যুক্তি, কৌশল ও আপোষ প্রস্তাব ব্যর্থ হওয়ার পর কুরায়েশ নেতারা এবার রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর উপরে সরাসরি অত্যাচারের সিদ্ধান্ত নিল। যেমন- রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর দিক থেকে লোকদের ফিরিয়ে আনার জন্য কুরায়েশ নেতারা বিদ্রুপ করে বলে, আমরাও এরূপ বলতে পারি। এ বিষয়ে আল্লাহ বলেন,وَإِذَا تُتْلَى عَلَيْهِمْ آيَاتُنَا قَالُوْا قَدْ سَمِعْنَا لَوْ نَشَاءُ لَقُلْنَا مِثْلَ هَـذَا إِنْ هَـذَا إِلاَّ أَسَاطِيْرُ الْأَوَّلِيْنَ ‘যখন তাদের নিকটে আয়াত সমূহ পাঠ করা হয়, তখন তারা বলে, আমরা শুনেছি। ইচ্ছা করলে আমরাও এরূপ বলতে পারি। এসব তো পূর্ববর্তীদের উপকথা ভিন্ন কিছুই নয়’ (আনফাল ৮/৩১)। উক্ত আয়াতে কাফেররা ‘কুরআনকে পুরাকালের কাহিনী এবং ইচ্ছা করলে আমরাও এরূপ বলতে পারি’ বলে দম্ভ প্রকাশ করেছে। অথচ অনুরূপ একটি কুরআন বা তার মত দু’একটি সূরা বা আয়াত জিন-ইনসান সকলকে একত্রিত হয়ে রচনা করে আনার জন্য মক্কায় পাঁচবার[ইউনুস ১০/৩৮; হূদ ১১/১৩; ইসরা ১৭/৮৮] এবং মদীনায় একবার (বাক্বারাহ ২/২৩-২৪) সহ মোট ছয়বার কাফেরদের চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। কিন্তু সে যুগে ও এ যুগে কেউ সে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেনি। বরং দেখা গেছে যে, সে যুগে ঐসব নেতারাই গোপনে রাতের অন্ধকারে বাইরে দাঁড়িয়ে তাহাজ্জুদের সালাতে রাসূল (সাঃ)-এর কুরআন তেলাওয়াত শুনত। আবু সুফিয়ান, নযর বিন হারেছ, আখনাস বিন শারীক্ব, আবু জাহল প্রমুখ নেতারা একে অপরকে না জানিয়ে গোপনে একাজ করত’ (ইবনু হিশাম ১/৩১৫-১৬)। কিন্তু যখন তারা তাদের জনগণের সামনে যেত, তখন তাদের মন্তব্য পাল্টে যেত। কারণ তখন দুনিয়াবী স্বার্থ তাদেরকে সত্যভাষণ থেকে ফিরিয়ে রাখত। একই অবস্থা আজকালকের মুসলিম-অমুসলিম নেতাদের। যাদের অধিকাংশ রাসূল (সাঃ) ও কুরআনের সত্যতাকে স্বীকার করে। কিন্তু বাস্তবে তা মানতে রাজি হয় না স্রেফ দুনিয়াবী স্বার্থের কারণে। এভাবে কাফেররা তাঁকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগ পর্যন্ত নানারূপ মানসিক কষ্ট দেয়। এ সময় আল্লাহ তাঁকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন, وَاصْبِرْ عَلَى مَا يَقُوْلُوْنَ وَاهْجُرْهُمْ هَجْرًا جَمِيْلاً ‘তারা যেসব কথা বলে, তাতে তুমি ছবর কর এবং তাদেরকে সুন্দরভাবে পরিহার করে চলো’ (মুযযাম্মিল ৭৩/১০)। ২. প্রতিবেশীদের অত্যাচার : ━━━━━━━━━━━━━━━━━ রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকটতম প্রতিবেশী ছিলেন তাঁর চাচা আবু লাহাব। তিনি ও তার স্ত্রী ছাড়াও কষ্টদানকারী অন্যান্য প্রতিবেশী ছিল হাকাম বিন আবুল ‘আছ বিন উমাইয়া, উক্ববা বিন আবু মু‘আইত্ব, ‘আদী বিন হামরা ছাক্বাফী, ইবনুল আছদা আল-হুযালী। প্রতিবেশীদের মধ্যে কেবল হাকাম বিন আবুল ‘আছ বিন উমাইয়া ইসলাম কবুল করেছিলেন (ইবনু হিশাম ১/৪১৫-১৬)। ইনিই ছিলেন উমাইয়া বংশের অন্যতম খলীফা মারওয়ানের পিতা। বস্ত্ততঃ মু‘আবিয়া (রাঃ) ও ইয়াযীদ বাদে মারওয়ানের বংশধরগণই ছিলেন উমাইয়া খেলাফতের পরপর খলীফা। অন্যান্য প্রতিবেশীরাও রাসূল (সাঃ)-এর উপর নানাবিধ অত্যাচার চালায়। তাতে সান্ত্বনা দিয়ে আল্লাহ বলেন,وَلَقَدْ كُذِّبَتْ رُسُلٌ مِنْ قَبْلِكَ فَصَبَرُوا عَلَى مَا كُذِّبُوا وَأُوْذُوا حَتَّى أَتَاهُمْ نَصْرُنَا وَلاَ مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِ اللهِ وَلَقَدْ جَاءَكَ مِنْ نَبَإِ الْمُرْسَلِيْنَ ‘তোমার পূর্বের বহু রাসূলকে মিথ্যা বলা হয়েছে। কিন্তু এ মিথ্যারোপে তারা ছবর করেছেন এবং তারা নির্যাতিত হয়েছেন যতক্ষণ না তাদের কাছে আমাদের সাহায্য এসে পৌঁছেছে। আর আল্লাহর বাণীসমূহের পরিবর্তনকারী কেউ নেই। এ বিষয়ে নবীগণের কিছু খবর তোমার নিকটে পৌঁছে গেছে (যার মধ্যে তোমার জন্য অনেক শিক্ষণীয় বিষয় রয়েছে)’ (আন‘আম ৬/৩৪)।[1] ৩. কা‘বাগৃহে সালাতরত অবস্থায় কষ্টদান : ━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━ (ক) আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘ঊদ (রাঃ) বলেন যে, একদিন রাসূল (সাঃ) বায়তুল্লাহ্র পাশে সালাত আদায় করছিলেন। এমন সময় আবু জাহল ও তার সাথীরা অদূরে বসে বলাবলি করতে লাগল, কে উটের নাড়ি-ভুঁড়ি এনে এই ব্যক্তির উপর চাপাতে পারে, যখন সে সিজদায় যাবে? তখন ওক্ববা বিন আবী মু‘আইত্ব উটের ভুঁড়ি এনে সিজদারত রাসূলের দুই কাঁধের মাঝখানে চাপিয়ে দিল, যাতে ঐ বিরাট ভুঁড়ির চাপে ও দুর্গন্ধে দম বন্ধ হয়ে তিনি মারা যান। এতে শত্রুরা হেসে লুটোপুটি খেয়ে একে অপরের উপর গড়িয়ে পড়তে থাকে। ইবনু মাসঊদ বলেন, আমি সব দেখছিলাম। কিন্তু এই অবস্থায় আমার কিছুই করার ছিল না। এই সময় ফাতেমার কাছে খবর পৌঁছলে তিনি দৌঁড়ে এসে ভুঁড়িটি সরিয়ে দিয়ে পিতাকে সাক্ষাৎ মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করেন। ইবনু হাজার বলেন, সম্ভবতঃ খবরটি রাবী নিজেই দিয়েছিলেন (বুখারী ফৎহসহ হা/৫২০-এর আলোচনা)। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মাথা উঁচু করে তিনবার বলেন, اللهُمَّ عَلَيْكَ بِقُرَيْشٍ، اللهُمَّ عَلَيْكَ بِقُرَيْشٍ، اللهُمَّ عَلَيْكَ بِقُرَيْشٍ- ثُمَّ سَمَّى- اللهُمَّ عَلَيْكَ بِعَمْرِو بْنِ هِشَامٍ، وَعُتْبَةَ بْنِ رَبِيعَةَ، وَشَيْبَةَ بْنِ رَبِيعَةَ، وَالْوَلِيدِ بْنِ عُتْبَةَ، وَأُمَيَّةَ بْنِ خَلَفٍ، وَعُقْبَةَ بْنِ أَبِى مُعَيْطٍ، وَعُمَارَةَ بْنِ الْوَلِيدِ، قَالَ عَبْدُ اللهِ فَوَاللهِ لَقَدْ رَأَيْتُهُمْ صَرْعَى يَوْمَ بَدْرٍ، ثُمَّ سُحِبُوا إِلَى الْقَلِيبِ قَلِيبِ بَدْرٍ- متفق عليه- ‘হে আল্লাহ তুমি কুরায়েশকে ধর (তিনবার)! হে আল্লাহ তুমি আমর ইবনে হেশাম (আবু জাহল)-কে ধর। হে আল্লাহ তুমি উৎবা ও শায়বাহ বিন রাবী‘আহ, অলীদ বিন উৎবা, উমাইয়া বিন খালাফ, ওক্ববা বিন আবু মু‘আইত্ব এবং উমারাহ বিন অলীদকে ধর’। ইবনু মাস‘ঊদ বলেন, আমি তাদের (উক্ত ৭ জনের) সবাইকে বদর যুদ্ধে নিহত হয়ে কূয়ায় নিক্ষিপ্ত অবস্থায় দেখেছি’।[বুখারী হা/৫২০; মুসলিম হা/১৭৯৪; মিশকাত হা/৫৮৪৭] উটের ভুঁড়ি চাপানোর এই নির্দেশ আবু জাহলই দিয়েছিলেন এবং অন্যেরা তা মেনে নিয়েছিল। সেমতে তার আগের দিন উটসমূহ নহর করা হয়েছিল।[মুসলিম হা/১৭৯৪; বুখারী ফৎহসহ হা/২৪০] এর দ্বারা বুঝা যায় যে, নেককার ব্যক্তির দো‘আ বা বদ দো‘আ অবশ্যই আল্লাহর নিকটে কবুল হয়। তার বাস্তবায়ন সঙ্গে সঙ্গে হতে পারে অথবা আল্লাহ তার থেকে অনুরূপ একটি কষ্ট দূর করে দেন অথবা সেটি আখেরাতে প্রদানের জন্য রেখে দেন’ (আহমাদ হা/১১১৪৯)। কিন্তু আখেরাতের জন্য রেখে দেওয়ার কারণে বদকারগণ ঐ বদ দো‘আর কোন গুরুত্ব দেয় না। বরং পুনরায় কঠিনভাবে শত্রুতা করতে থাকে। যেমন আবু জাহ্ল গং রাসূল (সাঃ)-এর বদ দো‘আ শুনে ঘাবড়ে গেলেও পরক্ষণে তা ভুলে যায় এবং বিপুল উৎসাহে শত্রুতা করতে থাকে। ফলে এই ঘটনার প্রায় দশ বছর পর বদর যুদ্ধে তাদের উপরে উক্ত বদ দো‘আর বাস্তবায়ন ঘটে ও সব নেতা একত্রে নিহত হয়। আর বদর যুদ্ধের পর এক সপ্তাহের মধ্যে আরেক নেতা আবু লাহাব গুটিবসন্তে আক্রান্ত হয়ে পচে-গলে দুর্গন্ধযুক্ত অবস্থায় মক্কায় নিজ গৃহে মারা যায়। এভাবে মযলূম নবী বিজয়ী হন ও যালেম নেতারা ধ্বংস হয়। উল্লেখ্য যে, রাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) উক্ত হাদীছে বর্ণিত মুশরিক নেতাদের সবাইকে বদরের যুদ্ধে নিহত হয়ে কূয়ায় নিক্ষিপ্ত হতে দেখেছেন’ বলে যে কথা বর্ণনায় এসেছে, তার অর্থ হল তিনি এদের ‘অধিকাংশ’কে দেখেছেন। কেননা ওক্ববা বিন আবু মু‘আইত্ব বদরে যুদ্ধাবস্থায় নিহত হননি। বরং তাকে বন্দী করে মদীনায় নিয়ে যাওয়ার পথে হত্যা করে ফেলে দেওয়া হয়। উমাইয়া বিন খালাফ বদরে নিহত হলেও উক্ত কূয়ায় নিক্ষিপ্ত হননি। বরং অধিক স্থূলদেহী হওয়ায় ও ফুলে যাওয়ার কারণে কূয়ায় ফেলা সম্ভব হয়নি। ফলে তাকে কূয়ার অদূরে একটি গর্তে ফেলে মাটি ও পাথর চাপা দেওয়া হয়।(বুখারী ফৎহসহ হা/৩৯৮১) অতঃপর ‘উমারাহ বিন অলীদ বিন মুগীরাহ মাখযূমী, যাকে কুরায়েশরা দূত হিসাবে বাদশাহ নাজাশীর দরবারে পাঠিয়েছিল। সেখানে গিয়ে সে জাদুর ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে। অতঃপর হাবশার জঙ্গলে কাফের অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। ঘটনাটি খুবই প্রসিদ্ধ। তখন ছিল দ্বিতীয় খলীফা হযরত উমর (রাঃ)-এর খেলাফতকাল।(বুখারী ফৎহসহ হা/২৪০) (খ) একদিন সালাতরত অবস্থায় ওক্ববা বিন আবু মু‘আইত্ব এসে গলায় জোরে কাপড় পেঁচিয়ে ধরল, যাতে রাসূল (সাঃ) নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা যান। জনৈক ব্যক্তি চিৎকার করে গিয়ে এ খবর দিলে আবুবকর (রাঃ) ছুটে এসে পেঁচানো কাপড় খুলে দিলেন ও বদমায়েশগুলিকে ধিক্কার দিয়ে বললেন,أَتَقْتُلُونَ رَجُلاً أَنْ يَقُولَ رَبِّىَ اللهُ؟ وَقَدْ جَاءَكُمْ بِالْبَيِّنَاتِ مِنْ رَبِّكُمْ ‘তোমরা কি এমন একজন মানুষকে হত্যা করছ, যিনি বলেন আমার প্রভু আল্লাহ। অথচ তিনি তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণাদি সহ তোমাদের কাছে আগমন করেছেন?’ এ সময় তারা রাসূল (সাঃ)-কে ছেড়ে আবুবকরকে বেদম প্রহার করে’ (বুখারী, হা/৬৩৭৮, ৪৮১৫)। ওরওয়া বিন যুবায়ের বলেন, আমি আব্দুল্লাহ বিন আমর ইবনুল ‘আছ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, মুশরিকরা রাসূল (সাঃ)-এর সাথে সবচাইতে কষ্টদায়ক আচরণ কোনটি করেছিল, আমাকে বলুন। তখন তিনি ওক্ববা বিন আবু মু‘আইত্বের অত্র ঘটনাটি বর্ণনা করেন’ (বুখারী হা/৩৮৫৬)। রাসূল (সাঃ)-এর জীবনের অত্র ঘটনায় তার প্রিয়

Related questions

উত্তর সন্ধানী! বেস্ট বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর ওয়েবসাইট। প্রশ্ন করুন, উত্তর নিন, সমস্যা সমাধান করুন ।
উত্তর সন্ধানী কি?
উত্তর সন্ধানী বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর এর ওয়েবসাইট।
গোপন প্রশ্ন ও উত্তর। ডিজিটাল শিক্ষায় প্রশ্নের উত্তরের সেরা ওয়েবসাইট।
...