রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর উপরে মানসিক ও দৈহিক অত্যাচারের কিছু ঘটনা আমরা ইতিপূর্বে জেনেছি। এক্ষণে আমরা তাঁর সাথীদের উপরে অত্যাচারের কিছু নমুনা পেশ করব।- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, প্রথম সাতজন ব্যক্তি তাদের ইসলাম প্রকাশ করেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ), আবুবকর, ‘আম্মার ও তার মা সুমাইয়া, ছোহায়েব, বেলাল ও মিক্বদাদ। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে আল্লাহ নিরাপত্তা দেন তাঁর চাচা আবু ত্বালেবের মাধ্যমে, আবুবকরকে নিরাপত্তা দেন তার গোত্রের মাধ্যমে। আর বাকীদের মুশরিকরা পাকড়াও করে। তাদেরকে তারা লোহার পোষাক পরিয়ে প্রচন্ড দাবদাহের মধ্যে ফেলে রাখে। তারা যেভাবে খুশী নির্যাতন করে। কিন্তু বেলালের ব্যাপারটি ছিল ভিন্ন। সে নিজেকে আল্লাহর উপর সঁপে দিয়েছিল। লোকেরা তার পিছনে ছোকরাদের লেলিয়ে দেয়। তারা তাকে মক্কার অলি-গলিতে ঘুরায়। আর সে বলতে থাকে আহাদ, আহাদ’।[আহমাদ হা/৩৮৩২; বায়হাক্বী সুনান হা/১৭৩৫১] এখানে সাতজনের মধ্যে সুমাইয়ার স্বামী ইয়াসিরকে ধরা হয়নি। যদিও তিনিও ছিলেন একই সময়ের নির্যাতিত সাহাবী’ (আল-ইছাবাহ, ‘আম্মার ক্রমিক ৫৭০৮)। উল্লেখ্য যে, মুসলমানদের উপরে কাফিরদের এই অত্যাচারের কোন ধরাবাঁধা নিয়ম ছিল না কিংবা উঁচু-নীচু ভেদাভেদ ছিল না। তবে স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী সচ্ছল ও উঁচু স্তরের লোকদের চাইতে গরীব ও ক্রীতদাস শ্রেণীর মুসলমানদের উপরে অত্যাচার ও নির্যাতনের মাত্রা ছিল অনেক বেশী, যা অবর্ণনীয়। নিম্নে উদাহরণ স্বরূপ জাহেলী যুগে সাহাবীগণের উপর নির্যাতনের কিছু নমুনা পেশ করা হল।- (১) বেলাল বিন রাবাহ : ━━━━━━━━━━━━━━ যিনি কুরায়েশ নেতা উমাইয়া বিন খালাফের হাবশী ক্রীতদাস ছিলেন। ইসলাম কবুল করার অপরাধে তাকে তার মনিব অবর্ণনীয় নির্যাতন করে। তার গলায় দড়ি বেঁধে গরু-ছাগলের মত ছেলে-ছোকরাদের দিয়ে পাহাড়ে ও প্রান্তরে টেনে-হিঁচড়ে ঘুরানো হত। তাতে তার গলার চামড়া রক্তাক্ত হয়ে যেত। খানাপিনা বন্ধ রেখে তাকে ক্ষুৎ-পিপাসায় কষ্ট দেওয়া হত। কখনো উত্তপ্ত কংকর-বালুর উপরে হাত-পা বেঁধে ফেলে রেখে বুকে পাথর চাপা দেওয়া হত আর বলা হতلاَ تَزَالُ هَكَذَا حَتَّى تَمُوتَ أَوْ تَكْفُرَ بِمُحَمَّدِ وَتَعْبُدَ اللاَّتَ وَالْعُزَّى ‘মুহাম্মাদের দ্বীন পরিত্যাগ এবং লাত-‘উযযার পূজা না করা পর্যন্ত তোকে আমৃত্যু এভাবেই পড়ে থাকতে হবে’। কিন্তু বেলাল শুধুই বলতেন ‘আহাদ’ ‘আহাদ’ (ইবনু হিশাম ১/৩১৭-১৮)। একদিন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পাশ দিয়ে যাবার সময় এই দৃশ্য দেখে বললেনأَحَدٌ يُنْجِيكَ ‘আহাদ’ অর্থাৎ ‘আল্লাহ তোমাকে মুক্তি দেবেন’। অতঃপর তিনি এসে আবুবকরকে বললেন, يَا أَبَا بَكْرٍ إِنَّ بِلاَلاً يُعَذَّبُ فِي اللهِ ‘হে আবুবকর। বেলাল আল্লাহর পথে শাস্তি ভোগ করছে’। আবুবকর ইঙ্গিত বুঝলেন। অতঃপর উমাইয়ার দাবী অনুযায়ী নিজের কাফের গোলাম নিসতাস (نِسْطَاسٌ)-এর বিনিময়ে এবং একটি মূল্যবান চাদর ও দশটি উক্বিয়ার (স্বর্ণমুদ্রা) বিনিময়ে তাকে খরীদ করে মুক্ত করে দেন।[1] উমর (রাঃ) বলেন,أَبُو بَكْرٍ سَيِّدُنَا، وَأَعْتَقَ سَيِّدَنَا، يَعْنِى بِلاَلاً ‘আবুবকর আমাদের নেতা এবং মুক্ত করেছেন আমাদের নেতাকে’। এর দ্বারা তিনি বেলালকে বুঝাতেন।[বুখারী হা/৩৭৫৪; মিশকাত হা/৬২৫০] উমর (রাঃ)-এর এই কথার মধ্যে ইসলামী সাম্যের প্রকৃষ্ট প্রমাণ মেলে। যেখানে মানুষে মানুষে কোন ভেদাভেদ নেই তাক্বওয়া ব্যতীত। বেলাল (রাঃ) ইসলামের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ মুওয়াযযিন ছিলেন। তিনি ২০ হিজরী সনে ৬৩ বছর বয়সে দামেষ্কে মৃত্যুবরণ করেন’ (আল-ইছাবাহ ক্রমিক সংখ্যা ৭৭৬)। (২) ‘আমের বিন ফুহায়রাহ : ━━━━━━━━━━━━━━━━━━ আবুবকরের মুক্তদাস ছিলেন। হিজরতের রাতে ইনি সার্বিক খিদমতে ছিলেন। বদর ও ওহুদের যুদ্ধে যোগদান করেন। তিনি ৪র্থ হিজরীর ছফর মাসে সংঘটিত বি’রে মাঊনার মর্মান্তিক ঘটনায় ৭০জন শহীদের অন্যতম ছিলেন (ইবনু হিশাম ১/৩১৮)। (৩) উম্মে উবাইস, যিন্নীরাহ, নাহদিয়াহ ও তার মেয়ে.. : ━━━━━━━━━━━━━━━━━━━━ উম্মে উবাইস, যিন্নীরাহ, নাহদিয়াহ ও তার মেয়ে এবং বনু মুআম্মাল-এর জনৈকা দাসী মুসলমান হলে তারা সবাই বর্বরতম নির্যাতনের শিকার হন। ইবনু ইসহাক বলেন,