রাসূলুল্লাহ (সা.) মুসলিম সেনাবাহিনীকে যুদ্ধে কৌশলগতভাবে ভাগ করতেন, যাতে তারা সুনিয়ন্ত্রিত ও সুশৃঙ্খলভাবে যুদ্ধে অংশ নিতে পারে। সেনাবাহিনীকে মূলত কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা হতো:
1. মুহাজির ও আনসার বাহিনী:
প্রাথমিকভাবে মুসলিম সেনাবাহিনীকে দুটি বড় দলে ভাগ করা হতো:
মুহাজির: মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় আগত মুসলমানদের দল।
আনসার: মদিনার স্থানীয় বাসিন্দা, যারা মুহাজিরদের সাহায্য করেছিল এবং ইসলাম গ্রহণ করেছিল।
এই দুটি দলকে রাসূলুল্লাহ (সা.) বিভিন্ন যুদ্ধে আলাদা আলাদা বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করতেন, যাতে তারা একসঙ্গে সংগঠিতভাবে কাজ করতে পারে।
2. মুখ্য বাহিনী ও তীরন্দাজ বাহিনী:
সেনাবাহিনীকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা হতো:
মুখ্য বা পায়ে হেঁটে যুদ্ধকারী বাহিনী (Infantry): যারা সরাসরি ময়দানে অস্ত্রসহ শত্রুর মুখোমুখি হতো।
তীরন্দাজ বাহিনী (Archers): এই বাহিনীর সদস্যরা দূর থেকে শত্রুদের উপর তীর ছুঁড়ে আক্রমণ চালাতেন। যেমন, উহুদের যুদ্ধে একটি ছোট পাহাড়ে তীরন্দাজ বাহিনীকে স্থাপন করা হয়েছিল, যাতে তারা দূর থেকে শত্রুদের উপর আক্রমণ করতে পারে এবং মুসলিম সেনাবাহিনীকে সুরক্ষা দিতে পারে।
3. ডান ও বাম প্রান্তের বাহিনী (Right and Left Flanks):
রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রায়শই সেনাবাহিনীকে ডান ও বাম প্রান্তে ভাগ করতেন। এতে শত্রুর আক্রমণ সামনের পাশাপাশি দুই পাশ থেকেও প্রতিহত করা যেত। ডান ও বাম প্রান্তের দায়িত্ব সাধারণত অভিজ্ঞ সাহাবিরা পালন করতেন। যেমন, বদরের যুদ্ধে হজরত আলী (রা.) ও অন্যান্য সাহাবিরা প্রান্তের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
4. কমান্ডার ও নেতৃত্বে নিয়োগ:
প্রতিটি ভাগ বা শাখার জন্য একজন দক্ষ ও নির্ভরযোগ্য নেতা বা কমান্ডার নিয়োগ করা হতো। তারা তাদের অধীনস্থ সৈন্যদের পরিচালনা করতেন এবং যুদ্ধে কৌশলগত নির্দেশনা দিতেন। যেমন, বদরের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেই পুরো বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে ছিলেন, কিন্তু বিভিন্ন অংশে আলাদা নেতৃত্ব নিযুক্ত করেছিলেন।
5. ঘোড়সওয়ার বাহিনী (Cavalry):
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নেতৃত্বে কিছু যুদ্ধে ঘোড়সওয়ার বাহিনীও ছিল, যাদের দায়িত্ব ছিল দ্রুতগতিতে শত্রুদের উপর আক্রমণ চালানো ও প্রতিরক্ষা করা। এই বাহিনীকে প্রায়ই কৌশলগতভাবে ব্যবহার করা হতো, বিশেষ করে শত্রুর পেছন দিক থেকে আক্রমণ করার জন্য।
6. গুপ্তচর ও বার্তাবাহক বাহিনী:
রাসূলুল্লাহ (সা.) সেনাবাহিনীর মধ্যে কিছু সাহাবিকে গুপ্তচর হিসেবে শত্রুদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে এবং বার্তা আদান-প্রদানের জন্য নিযুক্ত করতেন। তাদের মাধ্যমে শত্রুর অবস্থা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হতো এবং যুদ্ধের কৌশল নির্ধারণ করা হতো।
7. অতিরিক্ত রিজার্ভ বাহিনী:
কিছু যুদ্ধে, বিশেষ করে বড় যুদ্ধগুলোতে, অতিরিক্ত সৈন্যদের রিজার্ভ হিসেবে রাখা হতো। এই বাহিনী মূল যুদ্ধের ময়দানে সরাসরি অংশ না নিয়ে অপেক্ষা করত এবং প্রয়োজনে ব্যবহার করা হতো, যেন শত্রুর কোন অতিরিক্ত আক্রমণ প্রতিহত করা যায়।
এই ধরনের ভাগ করে বাহিনী পরিচালনার মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ (সা.) যুদ্ধের ময়দানে নিয়মশৃঙ্খলা বজায় রেখেছিলেন এবং প্রতিটি যুদ্ধে বিজয় অর্জনে কৌশলগত সুবিধা পেয়েছিলেন।