in বাংলা by
বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদের গুরুত্ব লিখ?

2 Answers

0 votes
by
ভূমিকাঃ বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। এদেশের আনাচে-কানাচে রয়েছে অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর-বাওর, পুকুর-ডোবা ইত্যাদি। এসব জলাশয়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। মাছ আমাদের প্রিয় খাদ্য। তাই আমাদের মাছে-ভাতে বাঙালি বলা হয়। বাংলাদেশের মাছ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে। আগে এদেশে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত কিন্তু বর্তমানে এর পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাই আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি, সমৃদ্ধি, আত্মকর্মসংস্থান প্রভৃতির উপর বিবেচনা করে এ সম্পদের প্রতি নজর দেওয়া দরকার। বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদঃ মৎস্য শিল্পে উন্নত না হলেও বাংলাদেশ মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধ। বাংলাদেশ পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। নদীমাতৃক বাংলাদেশের বিভিন্ন জলাশয়ে নানা ধরণের মাছ রয়েছে। যা আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও সামুদ্রিক জলাশয় থেকে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে মাছ আহরণ করা হয়। দেশের শতকরা প্রায় ১০ ভাগ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মৎস্য আহরণ, বাজারজাতকরণ ও ব্যবসায়ের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। মৎস্য সম্পদ বাংলাদেশের মোট জাতীয় উৎপাদনের প্রায় ৫%। প্রতি বছর বাংলাদেশ প্রচুর পরিমাণ মৎস্য উৎপাদন করে থাকে। ২০১৩ সালে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) কর্তৃক প্রকাশিত The Global Aquacuture Production Statistics for the year 2011 শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী চাষকৃত মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। বাংলাদেশে বার্ষিক মৎস্যের উৎপাদন হলো ১৫,২৪,০০০ টন। বিশ্বে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে প্রথম চীন। মৎস্যের প্রকারভেদঃ আমাদের দেশে দুই ধরণের মাছ পাওয়া যায়। যথা-স্বাদু বা মিঠা পানির মাছ ও লোনা পানির মাছ। সামুদ্রিক মাছের মধ্যে ইলিশ প্রধান। ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। এছাড়াও রয়েছে লাক্ষা, রূপচাদা, চিংড়ি, গলদা চিংড়ি, হাঙর, পোয়া, ভেটকি, কোরাল, বোয়াল ইত্যাদি। মিঠা বা স্বাদু পানির মাছের মধ্যে রুই, কাতলা, মৃগেল, চিতল, আইড়, বোয়াল, পাঙ্গাস, কালবাইশ, শোল, গজার, কই, মাগুর, মলা, চিংড়ি, পাবদা, তেলাপিয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের মৎস্য ক্ষেত্রসমূহঃ বাংলাদেশের নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর ডোবা, হাওর-বাওর, নদীর মোহনা উপকূল ও সমুদ্র অঞ্চল ইত্যাদি মৎস্যের প্রধান ক্ষেত্র। বাংলাদেশের মৎস্য ক্ষেত্রে প্রায় ২৫০ রকমের মাছ পাওয়া যায়। বাংলাদেশে মৎস্যের উৎপাদন ক্ষেত্র অনুযায়ী তাদের দুইভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে।(ক) অভ্যন্তরীণ মৎস্যক্ষেত্র।(খ) সামুদ্রিক মৎস্যক্ষেত্র।(ক) অভ্যন্তরীণ বা মিঠা পানির মৎস্যক্ষেত্রঃ বাংলাদেশের নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুরডোবা, হাওর-বাওর, ধান ও পাটক্ষেত এবং নদীর মোহনা ইত্যাদিকে অভ্যন্তরীণ মৎস্য ক্ষেত্র বলা হয়। অভ্যন্তরীণ মৎস্য ক্ষেত্রের পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ ৩৫ হাজার ৬০০ একর এবং ধীবরের সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ ৭২ হাজার। নিম্নে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ মৎস্য খাতের উৎপাদন তুলে ধরা হলো- সাল ২০১০-১১ ২০১১-১২ ২০১২-১৩ অভ্যন্তরীণ মৎস্য ২৫.১৫ লক্ষ মেট্রিক টন ২৬.৮৩ লক্ষ মেট্রিক টন ২৭.৮১ লক্ষ মেট্রিক টন উৎসঃ মৎস্য অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকৃতি ও অবস্থান অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ মৎস্য ক্ষেত্রকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে- (১) মুক্ত জলাশয়ঃ বাংলাদেশে প্রায় ৪০.২৫ লক্ষ হেক্টর মুক্ত জলাশয় রয়েছে। এর মধ্যে নদী ও মোহনা অঞ্চল, সুন্দরবন অঞ্চল, বিল, কাপ্তাই হ্রদ, প্লাবনভূমি অন্তর্ভুক্ত। ২০১২-১৩ সালে মুক্ত জলাশয় থেকে মাছের উৎপাদন প্রায় ৯.৫৩ লক্ষ মেট্রিক টন। (২) বদ্ধ জলাশয়ঃ বাংলাদেশের দিঘি, পুকুর, বাওর ডোবা প্রভৃতি এ শ্রেণির মৎস্য ক্ষেত্রের অন্তর্গত। বাংলাদেশে প্রায় ৭.৪১ লক্ষ হেক্টর বদ্ধ জলাশয় রয়েছে। ২০১২-১৩ সালে বদ্ধ জলাশয় থেকে মাছের উৎপাদন প্রায় ১৮.২৮ লক্ষ মেট্রিক টন। অভ্যন্তরীণ মৎস্য ক্ষেত্রসমূহঃ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অভ্যন্তরীণ মৎস্যকেন্দ্র রয়েছে। যেমন ঢাকার সোয়ারী ঘাট, কাজলা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, চাঁদপুর, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কিশোরগঞ্জ, মাদারিপুর, সিলেট, নেত্রকোনা, রাঙ্গামাটি, খুলনা, পটুয়াখালী প্রভৃতি জেলা বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অভ্যন্তরীণ মৎস্য কেন্দ্র। (খ) সামুদ্রিক মৎস্য ক্ষেত্রঃ বাংলাদেশের সমুদ্র মৎস্য সম্পদে খুবই সমৃদ্ধশালী। এ মৎস্য ক্ষেত্রে ৪৭৫টি মাছের প্রজাতির মধ্যে মাত্র ১৩৩টি আবিষ্কৃত হয়েছে। যার মধ্যে ৪২টি প্রজাতিকে বাণিজ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দক্ষ ধীবর, মূলধন, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, সাজসরঞ্জাম, বড় জাহাজ প্রভৃতির অভাবে মৎস্যক্ষেত্রের বিরাট অংশের মাছ ধরা সম্ভব হয় না। বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য ক্ষেত্রকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় যথা- (১) উপকূলীয় মৎস্য ক্ষেত্রঃ বাংলাদেশে প্রায় ৭৩২ কি.মি. উপকূল রয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে মাছ চাষের তেমন বিস্তৃতি না থাকলেও অপরিকল্পিতভাবে চিংড়ি চাষের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। (২) গভীর সমুদ্রের মৎস্য ক্ষেত্রঃ আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী উপকূল হতে ৩২০ কি.মি. গভীর সমুদ্র পর্যন্ত বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিস্তৃত। এর গভীরতম অংশ মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধ। সামুদ্রিক মৎস্য কেন্দ্রঃ চট্টগ্রাম অঞ্চলের টেকনাফ, মহেশখালী, সন্দ্বীপ, কক্সবাজার, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া ও হাতিয়া, সুন্দরবন এলাকার দুবলা দ্বীপ, রাঙ্গাবালি, বাইশদিয়া প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য সামুদ্রিক মৎস্য কেন্দ্র। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মৎস্য সম্পদের গুরুত্বঃ মৎস্য সম্পদ বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনে মৎস্য সম্পদের অবদান শতকরা প্রায় ৫ ভাগ। রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে ৪.৩৭%। নিম্নে মৎস্য সম্পদের গুরুত্ব তুলে ধরা হলো- খাদ্য হিসাবে মাছঃ বলা হয়ে থাকে মাছে-ভাতে বাঙালি। ভাত-মাছ ছাড়া আমাদের খাবারের পরিতৃপ্তি আসে না। ফলে প্রতিদিন প্রতিবেলা খাবারে মাছ থাকে। মাছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ, খনিজ লবণ, ভিটামিন এ ও ডি রয়েছে। জীবিকা নির্বাহের উপায়ঃ বাংলাদেশের প্রায় মোট জনসংখ্যার ১০ ভাগ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। ফলে মাছ চাষ করে মানুষ দিন দিন স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে। শিল্পের উপকরণঃ মাছের চামড়া, হাড়, কাঁটা, চর্বি ইত্যাদি শিল্পের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া শুশুক, হাঙর, কচ্ছপ প্রভৃতির তেল দ্বারা নানা ধরণের ওষুধ, বার্নিশ, গ্লিসারিন, সাবান ইত্যাদি প্রস্তুত করা হয়। জমির সদ্ব্যবহারঃ কৃষি জমিতে একই সাথে মাছ ও ধান চাষ করা হয়। তাছাড়া জলাশয়, খালবিল, হাওর-বাওরকে যত্ন সহকারে মৎস্য চাষের আওতায় আনা হচ্ছে। পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও আয় বৃদ্ধিঃ মাছ ও মাছের পোনা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর প্রভৃতি সহজসাধ্য করার জন্য
0 votes
by
ভূমিকাঃ বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। এদেশের আনাচে-কানাচে রয়েছে অসংখ্য নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর-বাওর, পুকুর-ডোবা ইত্যাদি। এসব জলাশয়ে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। মাছ আমাদের প্রিয় খাদ্য। তাই আমাদের মাছে-ভাতে বাঙালি বলা হয়। বাংলাদেশের মাছ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে। আগে এদেশে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত কিন্তু বর্তমানে এর পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাই আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি, সমৃদ্ধি, আত্মকর্মসংস্থান প্রভৃতির উপর বিবেচনা করে এ সম্পদের প্রতি নজর দেওয়া দরকার। বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদঃ মৎস্য শিল্পে উন্নত না হলেও বাংলাদেশ মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধ। বাংলাদেশ পৃথিবীর বৃহত্তম বদ্বীপ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। নদীমাতৃক বাংলাদেশের বিভিন্ন জলাশয়ে নানা ধরণের মাছ রয়েছে। যা আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও সামুদ্রিক জলাশয় থেকে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে মাছ আহরণ করা হয়। দেশের শতকরা প্রায় ১০ ভাগ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মৎস্য আহরণ, বাজারজাতকরণ ও ব্যবসায়ের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। মৎস্য সম্পদ বাংলাদেশের মোট জাতীয় উৎপাদনের প্রায় ৫%। প্রতি বছর বাংলাদেশ প্রচুর পরিমাণ মৎস্য উৎপাদন করে থাকে। ২০১৩ সালে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) কর্তৃক প্রকাশিত The Global Aquacuture Production Statistics for the year 2011 শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী চাষকৃত মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। বাংলাদেশে বার্ষিক মৎস্যের উৎপাদন হলো ১৫,২৪,০০০ টন। বিশ্বে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে প্রথম চীন। মৎস্যের প্রকারভেদঃ আমাদের দেশে দুই ধরণের মাছ পাওয়া যায়। যথা-স্বাদু বা মিঠা পানির মাছ ও লোনা পানির মাছ। সামুদ্রিক মাছের মধ্যে ইলিশ প্রধান। ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। এছাড়াও রয়েছে লাক্ষা, রূপচাদা, চিংড়ি, গলদা চিংড়ি, হাঙর, পোয়া, ভেটকি, কোরাল, বোয়াল ইত্যাদি। মিঠা বা স্বাদু পানির মাছের মধ্যে রুই, কাতলা, মৃগেল, চিতল, আইড়, বোয়াল, পাঙ্গাস, কালবাইশ, শোল, গজার, কই, মাগুর, মলা, চিংড়ি, পাবদা, তেলাপিয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের মৎস্য ক্ষেত্রসমূহঃ বাংলাদেশের নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুর ডোবা, হাওর-বাওর, নদীর মোহনা উপকূল ও সমুদ্র অঞ্চল ইত্যাদি মৎস্যের প্রধান ক্ষেত্র। বাংলাদেশের মৎস্য ক্ষেত্রে প্রায় ২৫০ রকমের মাছ পাওয়া যায়। বাংলাদেশে মৎস্যের উৎপাদন ক্ষেত্র অনুযায়ী তাদের দুইভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে।(ক) অভ্যন্তরীণ মৎস্যক্ষেত্র।(খ) সামুদ্রিক মৎস্যক্ষেত্র।(ক) অভ্যন্তরীণ বা মিঠা পানির মৎস্যক্ষেত্রঃ বাংলাদেশের নদী-নালা, খাল-বিল, পুকুরডোবা, হাওর-বাওর, ধান ও পাটক্ষেত এবং নদীর মোহনা ইত্যাদিকে অভ্যন্তরীণ মৎস্য ক্ষেত্র বলা হয়। অভ্যন্তরীণ মৎস্য ক্ষেত্রের পরিমাণ প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষ ৩৫ হাজার ৬০০ একর এবং ধীবরের সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ ৭২ হাজার। নিম্নে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ মৎস্য খাতের উৎপাদন তুলে ধরা হলো- সাল ২০১০-১১ ২০১১-১২ ২০১২-১৩ অভ্যন্তরীণ মৎস্য ২৫.১৫ লক্ষ মেট্রিক টন ২৬.৮৩ লক্ষ মেট্রিক টন ২৭.৮১ লক্ষ মেট্রিক টন উৎসঃ মৎস্য অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকৃতি ও অবস্থান অনুযায়ী অভ্যন্তরীণ মৎস্য ক্ষেত্রকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে- (১) মুক্ত জলাশয়ঃ বাংলাদেশে প্রায় ৪০.২৫ লক্ষ হেক্টর মুক্ত জলাশয় রয়েছে। এর মধ্যে নদী ও মোহনা অঞ্চল, সুন্দরবন অঞ্চল, বিল, কাপ্তাই হ্রদ, প্লাবনভূমি অন্তর্ভুক্ত। ২০১২-১৩ সালে মুক্ত জলাশয় থেকে মাছের উৎপাদন প্রায় ৯.৫৩ লক্ষ মেট্রিক টন। (২) বদ্ধ জলাশয়ঃ বাংলাদেশের দিঘি, পুকুর, বাওর ডোবা প্রভৃতি এ শ্রেণির মৎস্য ক্ষেত্রের অন্তর্গত। বাংলাদেশে প্রায় ৭.৪১ লক্ষ হেক্টর বদ্ধ জলাশয় রয়েছে। ২০১২-১৩ সালে বদ্ধ জলাশয় থেকে মাছের উৎপাদন প্রায় ১৮.২৮ লক্ষ মেট্রিক টন। অভ্যন্তরীণ মৎস্য ক্ষেত্রসমূহঃ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে অভ্যন্তরীণ মৎস্যকেন্দ্র রয়েছে। যেমন ঢাকার সোয়ারী ঘাট, কাজলা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, চাঁদপুর, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, কিশোরগঞ্জ, মাদারিপুর, সিলেট, নেত্রকোনা, রাঙ্গামাটি, খুলনা, পটুয়াখালী প্রভৃতি জেলা বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অভ্যন্তরীণ মৎস্য কেন্দ্র। (খ) সামুদ্রিক মৎস্য ক্ষেত্রঃ বাংলাদেশের সমুদ্র মৎস্য সম্পদে খুবই সমৃদ্ধশালী। এ মৎস্য ক্ষেত্রে ৪৭৫টি মাছের প্রজাতির মধ্যে মাত্র ১৩৩টি আবিষ্কৃত হয়েছে। যার মধ্যে ৪২টি প্রজাতিকে বাণিজ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। দক্ষ ধীবর, মূলধন, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, সাজসরঞ্জাম, বড় জাহাজ প্রভৃতির অভাবে মৎস্যক্ষেত্রের বিরাট অংশের মাছ ধরা সম্ভব হয় না। বাংলাদেশের সামুদ্রিক মৎস্য ক্ষেত্রকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় যথা- (১) উপকূলীয় মৎস্য ক্ষেত্রঃ বাংলাদেশে প্রায় ৭৩২ কি.মি. উপকূল রয়েছে। উপকূলীয় অঞ্চলে মাছ চাষের তেমন বিস্তৃতি না থাকলেও অপরিকল্পিতভাবে চিংড়ি চাষের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। (২) গভীর সমুদ্রের মৎস্য ক্ষেত্রঃ আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী উপকূল হতে ৩২০ কি.মি. গভীর সমুদ্র পর্যন্ত বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিস্তৃত। এর গভীরতম অংশ মৎস্য সম্পদে সমৃদ্ধ। সামুদ্রিক মৎস্য কেন্দ্রঃ চট্টগ্রাম অঞ্চলের টেকনাফ, মহেশখালী, সন্দ্বীপ, কক্সবাজার, কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া ও হাতিয়া, সুন্দরবন এলাকার দুবলা দ্বীপ, রাঙ্গাবালি, বাইশদিয়া প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য সামুদ্রিক মৎস্য কেন্দ্র। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মৎস্য সম্পদের গুরুত্বঃ মৎস্য সম্পদ বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনে মৎস্য সম্পদের অবদান শতকরা প্রায় ৫ ভাগ। রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে ৪.৩৭%। নিম্নে মৎস্য সম্পদের গুরুত্ব তুলে ধরা হলো- খাদ্য হিসাবে মাছঃ বলা হয়ে থাকে মাছে-ভাতে বাঙালি। ভাত-মাছ ছাড়া আমাদের খাবারের পরিতৃপ্তি আসে না। ফলে প্রতিদিন প্রতিবেলা খাবারে মাছ থাকে। মাছে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, লৌহ, খনিজ লবণ, ভিটামিন এ ও ডি রয়েছে। জীবিকা নির্বাহের উপায়ঃ বাংলাদেশের প্রায় মোট জনসংখ্যার ১০ ভাগ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। ফলে মাছ চাষ করে মানুষ দিন দিন স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে। শিল্পের উপকরণঃ মাছের চামড়া, হাড়, কাঁটা, চর্বি ইত্যাদি শিল্পের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া শুশুক, হাঙর, কচ্ছপ প্রভৃতির তেল দ্বারা নানা ধরণের ওষুধ, বার্নিশ, গ্লিসারিন, সাবান ইত্যাদি প্রস্তুত করা হয়। জমির সদ্ব্যবহারঃ কৃষি জমিতে একই সাথে মাছ ও ধান চাষ করা হয়। তাছাড়া জলাশয়, খালবিল, হাওর-বাওরকে যত্ন সহকারে মৎস্য চাষের আওতায় আনা হচ্ছে। পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ও আয় বৃদ্ধিঃ মাছ ও মাছের পোনা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর প্রভৃতি সহজসাধ্য করার।

Related questions

উত্তর সন্ধানী! বেস্ট বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর ওয়েবসাইট। প্রশ্ন করুন, উত্তর নিন, সমস্যা সমাধান করুন ।
উত্তর সন্ধানী কি?
উত্তর সন্ধানী বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর এর ওয়েবসাইট।
গোপন প্রশ্ন ও উত্তর। ডিজিটাল শিক্ষায় প্রশ্নের উত্তরের সেরা ওয়েবসাইট।
...