in বাংলা by
বাংলাদেশের পুরাকীর্তি সম্পর্কে কিছু লিখ?

2 Answers

0 votes
by
সূচনা: বাংলাদেশ একটি সুপ্রাচীন দেশ। হাজার বছরের সংগ্রামের ইতিহাস ও প্রাচীনত্বের গরিমায় বাংলা সারা বিশ্বে পরিচিত। আর্য, মুঘল, ইংরেজ, পর্তুগীজসহ বহু জাতির পদচারণায় আমাদের এ বাঙালি সভ্যতা সমৃদ্ধ হয়েছে। সময়ের স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের সংস্কৃতি ও জীবনধারায় বহু সংযোজন বিয়োজন হয়েছে। বাংলার এ ক্রমবিবর্তনের ইতিহাস আমরা অনেক মূল্যবান প্রাচীন গ্রন্থ, কাব্য, উপন্যাস ও পুঁথিতে পাই। আরও এক উল্লেখযোগ্য মাধ্যম, যা আমাদের প্রাচীন জীবনধারার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়, সেটা হলো আমাদের পুরাকীর্তি। এসব পুরাকীর্তি আমাদের সামনে প্রাচীন বাংলার রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজের চিত্রপট তুলে ধরে। এগুলো আমাদের শিকড় তথা অস্তিত্বের জ্বলন্ত প্রমাণ। বাংলাদেশের পুরাকীর্তির অবস্থান:বাংলাদেশের অধিকাংশ পুরাকীর্তি নির্মিত হয়েছিল মূলত মুসলিম ও প্রাক মুসলিম যুগে। যখন নানা ধর্মের বিকাশ শুরু হয় ও বিভিন্ন জাতি প্রাচীন বাংলায় উপনিবেশ গড়তে শুরু করে। ভৌগোলিক অবস্থান, যোগাযোগের সুব্যবস্থা, উর্বর মাটি এবং এদেশের সম্পদ নানা জাতিকে এদেশে বসবাসের জন্য আকৃষ্ট করে। তাদের জীবনধারা, সংস্কৃতি, কৃষ্টিই একসময় মিশে যায় আমাদের সাথে। বাংলায় ধর্মের বিকাশ ও বসবাসের সুবিধার্থে তথা দেশ শাসনের তাগিদে তখন বহু ইমারত গড়ে ওঠে। বাংলার অধিকাংশ পুরাকীর্তি রাজশাহী, খুলনা, কুমিল্লা, নাটোর, সোনারগাঁ, দিনাজপুর, টাঙ্গাইল, যশোর প্রভৃতি অঞ্চলে অবস্থিত। বলতে গেলে, সারা বাংলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আরও অনেক নিদর্শন। চিহ্নিতকরণ ও সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক প্রাচীন গৌরব। বাংলাদেশের পুরাকীর্তির ধরণ: মুসলিম ও প্রাক-মুসলিম যুগে, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী রাজার শাসনামলে কৃষ্টি ও সংস্কৃতি ভিন্ন ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হয়। এই প্রবাহিত ধারা সাধারণ মানুষের জীবনকে অনুপ্রাণিত করে। ধর্মের প্রভাব আমাদের পুরাকীর্তিসমূহে প্রকাশ পায়। সেন রাজাদের পূর্বে যখন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পাল রাজারা দীর্ঘকাল ধরে বাংলা শাসন করেন তখন তাঁদের ভাস্কর্য ও স্থাপত্য শিল্পের দারুন উন্নতি হয়। এসব ভাস্কর্য ও স্থাপত্য শিল্পের অধিকাংশই হলো মঠ, আশ্রম ও বৌদ্ধ মন্দির, যা আমাদের তখনকার সময়ে বৌদ্ধ ধর্মের বিকাশ সম্পর্কে ধারণা দেয়। পরবর্তী সময়ে সেন রাজাদের আমল থেকে মুসলিম যুগের পূর্ব পর্যন্ত যে ইমারতগুলো তৈরি হয়েছে, সেগুলোতে হিন্দু ধর্মের প্রভাব দেখা যায়। তবে বাংলায় মন্দিরগুলো গ্রাম বাংলার সাধারণ গৃহের অনুকরণে নির্মিত হত। এসব মন্দিরের নির্মাণ শৈলি ও অলঙ্করণে হিন্দু ধর্মের আভিজাত্য ও মহত্ত্ব প্রকাশ পেত। মুসলিম যুগে ইসলাম ধর্মের প্রসারের লক্ষ্যে রাজা-বাদশারা অনেক পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। অনেক মসজিদ, কেল্লা এ সময় নির্মিত হয়। মোজাইক, দেয়াল চিত্র, মার্বেলের জালি, নকশাকাটা দেয়াল, দরজা, খিলান, কৌণিক এবং অর্ধ গোলাকার চালাছাদ, জ্যামিতিক নকশা, এসব মুসলিম যুগের পুরাকীর্তির বৈশিষ্ট্য। পাহাড়পুরের পুরাকীর্তি: বৌদ্ধযুগে রাজশাহীর পাহাড়পুরে নির্মিত আশ্রম এখন অনেকটা ধ্বংসস্তূপ। এ ধ্বংসস্তূপ থেকে আমরা সেযুগের কিছু পুরাকীর্তি খুঁজে পাই। মাটির সীলমোহর থেকে জানা যায়, এ সোমপুরবিহার পালরাজা ধর্মপালের আমলে তৈরি। হিমালয়ের দক্ষিণে এটাই ছিল সবচেয়ে বড় বিহার। উত্তর-দক্ষিণ বিহারটি ৯২২ ফুট এবং পূর্ব-পশ্চিমে ৯১৯ ফুট। এই চতুষ্কোণ বিহারটিতে আছে ১৭৭টি কক্ষ। পাহাড়পুর আশ্রমটি ছিল ২২ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। এর বাইরে চারিদিক ঘিরে ছিল ১৬ ফুট পুরু একটি দেওয়াল। দেওয়ালের গায়ে ছিল ১৭৭টি কক্ষ। প্রত্যেকটির আয়তন ছিল ১৪ ফুট ১৩ ১/২ ইঞ্চি। কক্ষগুলোর সামনে ছিল একটা ৯ ফুট বিস্তৃত বারান্দা। আশ্রমটির উচ্চতা ছিল ৭২ ফুট এবং এটি তিন স্তরে নির্মিত। যে দেয়াল দ্বারা আশ্রমটি বেষ্টিত ছিল সে দেয়ালের উপর ৬৩টি পাথরের মূর্তি সাজানো ছিল। এ মূর্তিগুলোতে ব্রাহ্মণ ধর্মের ছাপ সুস্পষ্ট ছিল। তাছাড়া এ আশ্রমের নির্মাণ শৈলীতে টেরাকোটা শিল্পের প্রাধান্য অধিকমাত্রায় লক্ষ্যণীয়। খনন কার্যের মাধ্যমে ২০০০ টেরাকোটা চিত্রের প্লেট পাওয়া যায়। তাছাড়া এখানকার মন্দির, বৌদ্ধ আশ্রম, আশ্রমের কিছু দূরে সত্যপীরের ভিটা, প্লেটের ওপর তাম্রলিপি, ব্রোঞ্জ নির্মিত মূর্তি ও সব পুরাকীর্তির নিদর্শন পাহাড়পুরের ঐতিহ্য ও গরিমার প্রতীক। এখানকার সমৃদ্ধির বর্ণনা চীন দেশের পর্যটক ফা-হিয়েন ও হিউয়েন সাং এর বিবরণ থেকে জানা যায়। মহাস্থানগড়ের পুরাকীর্তি: বগুড়া জেলার ইতিহাস বিখ্যাত করোতোয়া নদীর তীরে মহাস্থানগড় অবস্থিত। সমতল ভূমি থেকে এটি ২০/২৫ হাত উঁচু। অতি প্রাচীনকালে বগুড়া পুন্ড্ররাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। আর পৌন্ড্ররবর্ধন ছিল পুন্ড্রনগরের প্রাদেশিক রাজধানী। পরশুরাম ছিলেন পৌন্ড্রবর্ধনের রাজা। হিজরি ৪৪০ সনে হযরত শাহ সুলতান ইব্রাহিম বলখী মাহীসওয়ার (র.) ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে এখানে আগমন করেন। ইসলাম প্রচারের সময় তাঁর সঙ্গে রাজা পরশুরাম ও তাঁর ভগ্নি শীলা দেবীর যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে পরশুরাম নিহত হন ও তাঁর ভগ্নি শীলাদেবী মন্দিরের পেছন দরজা দিয়ে পালিয়ে করোতোয়া নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। সেই থেকে করোতোয়া নদীর সে স্থানটিকে শীলাদেবীর ঘাট বলা হয় এবং এটি হিন্দুদের পবিত্র তীর্থস্থান হিসাবে গণ্য হয়। তাছাড়াও এ স্থানে গোকুলের ম্যাড, বেহুলা সুন্দরী ও লখিন্দরের বাসর ঘরের ধ্বংসাবশেষ, পশ্চিমে কালিদহ, সাগর ও বাসোবনিয়া সওদাগরের বাড়ি, উজান-ভাইটালি নগর প্রভৃতি পুরাকীর্তি নিদর্শন রয়েছে। ময়নামতি:বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে কুমিল্লা শহর থেকে অল্পকিছু দূরে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থল ময়নামতি অবস্থিত। কথিত আছে, রাজা মানিকচন্দ্রের স্ত্রী ময়নামতির নামানুসারে এ স্থানের নামকরণ হয়েছে। লালমাই পাহাড়কে ঘিরে গড়ে উঠেছিল বৌদ্ধ সভ্যতার এ বিশাল তীর্থক্ষেত্র। সপ্তম থেকে একাদশ শতাব্দিতে গড়ে ওঠা এ পুরাকীর্তি, এক সময় দূর দূরান্ত থেকে আসা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জ্ঞান-বিজ্ঞানের তীর্থস্থান ছিল। লালমাই-ময়নামতি এলাকার প্রত্ন খননের ফলে উৎঘাটিত হয়েছে বেশ কয়েকটি বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষ। এগুলোর মধ্যে শালবন বিহার, ভোজ বিহার, আনন্দ বিহার উল্লেখযোগ্য। খড়গ, দেব, চন্দ্র বংশীয় রাজাদের কীর্তি আমাদের ইতিহাসে যোগ করেছে, নতুনমাত্রা। তাম্রশাসনে উল্লেখ আছে যে, দেববংশের রাজাদের রাজধানী ‘দেবপর্বত’ এই লালমাই পাহাড়ে অবস্থিত। তাছাড়া ইতিহাস বিখ্যাত কোটিল্য মুড়া ও আনন্দ রাজার দীঘি এই কুমিল্লার ময়নামতিতে অবস্থিত। ময়নামতিকে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনের জাদুঘর বলা যায়। এ স্থান বাংলার ইতিহাসে অনেক নতুন তথ্য সংযোজন করে ইতিহাসকে সমৃদ্ধ ও স্পষ্ট করেছে। লালবাগ কেল্লা ও ষাটগম্বুজ মসজিদ: লালবাগকেল্লা, বাংলার অন্যতম এক জনপ্রিয় পুরাকীর্তি। এর পূর্বনাম ছিল আওরঙ্গবাদ দুর্গ। এটি পুরাতন ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে বুড়িগঙ্গা নদীর পাশে অবস্থিত। মুগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয়পুত্র রাজপুত্র মুহম্মদ আযম ১৬৭৮ সালে এ লালবাগকেল্লা নির্মাণ শুরু করেন। তখন তিনি মুঘল সাম্রারাজ্যের অধীনে বাংলার সুবাদার হিসাবে নিয়োজিত ছিলেন। এটিকে বাংলার বিখ্যাত মুঘল কীর্তিতে পরিণত করার স্বপ্ন ছিল তাঁর। কিন্তু কেল্লা তৈরির কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যায় যখন সম্রাট আওরঙ্গজেব তাঁকে মাদ্রাজ যুদ্ধে সহযোগিতার জন্য ডেকে পাঠান। পরে শায়েস্তা খান বাংলার সুবাদার হয়ে আসলে এ কেল্লার কাজ আবার শুরু হয়। ১৬৮৪ সালে শায়েস্তা খান এর কন্যা পরী বিবির মৃত্যুর পর এ কেল্লাকে অশুভ বলে চিহ্নিত করা হয় এবং কেল্লার নির্মাণ কাজের পরিসমাপ্তি ঘটে। এ কেল্লায় তিনটি ইমারত, দুটো প্রবেশদ্বার ও অসমাপ্ত দুর্গ আছে। কেল্লার ভেতরে পরী বিবির সমাধিক্ষেত্র, পূর্বে দিওয়ানি-আলম ও হাম্মামখানা ও পশ্চিমে একটি মসজিদ। তাছাড়া
0 votes
by
সূচনা: বাংলাদেশ একটি সুপ্রাচীন দেশ। হাজার বছরের সংগ্রামের ইতিহাস ও প্রাচীনত্বের গরিমায় বাংলা সারা বিশ্বে পরিচিত। আর্য, মুঘল, ইংরেজ, পর্তুগীজসহ বহু জাতির পদচারণায় আমাদের এ বাঙালি সভ্যতা সমৃদ্ধ হয়েছে। সময়ের স্রোতের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের সংস্কৃতি ও জীবনধারায় বহু সংযোজন বিয়োজন হয়েছে। বাংলার এ ক্রমবিবর্তনের ইতিহাস আমরা অনেক মূল্যবান প্রাচীন গ্রন্থ, কাব্য, উপন্যাস ও পুঁথিতে পাই। আরও এক উল্লেখযোগ্য মাধ্যম, যা আমাদের প্রাচীন জীবনধারার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়, সেটা হলো আমাদের পুরাকীর্তি। এসব পুরাকীর্তি আমাদের সামনে প্রাচীন বাংলার রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজের চিত্রপট তুলে ধরে। এগুলো আমাদের শিকড় তথা অস্তিত্বের জ্বলন্ত প্রমাণ। বাংলাদেশের পুরাকীর্তির অবস্থান:বাংলাদেশের অধিকাংশ পুরাকীর্তি নির্মিত হয়েছিল মূলত মুসলিম ও প্রাক মুসলিম যুগে। যখন নানা ধর্মের বিকাশ শুরু হয় ও বিভিন্ন জাতি প্রাচীন বাংলায় উপনিবেশ গড়তে শুরু করে। ভৌগোলিক অবস্থান, যোগাযোগের সুব্যবস্থা, উর্বর মাটি এবং এদেশের সম্পদ নানা জাতিকে এদেশে বসবাসের জন্য আকৃষ্ট করে। তাদের জীবনধারা, সংস্কৃতি, কৃষ্টিই একসময় মিশে যায় আমাদের সাথে। বাংলায় ধর্মের বিকাশ ও বসবাসের সুবিধার্থে তথা দেশ শাসনের তাগিদে তখন বহু ইমারত গড়ে ওঠে। বাংলার অধিকাংশ পুরাকীর্তি রাজশাহী, খুলনা, কুমিল্লা, নাটোর, সোনারগাঁ, দিনাজপুর, টাঙ্গাইল, যশোর প্রভৃতি অঞ্চলে অবস্থিত। বলতে গেলে, সারা বাংলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে আরও অনেক নিদর্শন। চিহ্নিতকরণ ও সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক প্রাচীন গৌরব। বাংলাদেশের পুরাকীর্তির ধরণ: মুসলিম ও প্রাক-মুসলিম যুগে, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী রাজার শাসনামলে কৃষ্টি ও সংস্কৃতি ভিন্ন ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হয়। এই প্রবাহিত ধারা সাধারণ মানুষের জীবনকে অনুপ্রাণিত করে। ধর্মের প্রভাব আমাদের পুরাকীর্তিসমূহে প্রকাশ পায়। সেন রাজাদের পূর্বে যখন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পাল রাজারা দীর্ঘকাল ধরে বাংলা শাসন করেন তখন তাঁদের ভাস্কর্য ও স্থাপত্য শিল্পের দারুন উন্নতি হয়। এসব ভাস্কর্য ও স্থাপত্য শিল্পের অধিকাংশই হলো মঠ, আশ্রম ও বৌদ্ধ মন্দির, যা আমাদের তখনকার সময়ে বৌদ্ধ ধর্মের বিকাশ সম্পর্কে ধারণা দেয়। পরবর্তী সময়ে সেন রাজাদের আমল থেকে মুসলিম যুগের পূর্ব পর্যন্ত যে ইমারতগুলো তৈরি হয়েছে, সেগুলোতে হিন্দু ধর্মের প্রভাব দেখা যায়। তবে বাংলায় মন্দিরগুলো গ্রাম বাংলার সাধারণ গৃহের অনুকরণে নির্মিত হত। এসব মন্দিরের নির্মাণ শৈলি ও অলঙ্করণে হিন্দু ধর্মের আভিজাত্য ও মহত্ত্ব প্রকাশ পেত। মুসলিম যুগে ইসলাম ধর্মের প্রসারের লক্ষ্যে রাজা-বাদশারা অনেক পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। অনেক মসজিদ, কেল্লা এ সময় নির্মিত হয়। মোজাইক, দেয়াল চিত্র, মার্বেলের জালি, নকশাকাটা দেয়াল, দরজা, খিলান, কৌণিক এবং অর্ধ গোলাকার চালাছাদ, জ্যামিতিক নকশা, এসব মুসলিম যুগের পুরাকীর্তির বৈশিষ্ট্য। পাহাড়পুরের পুরাকীর্তি: বৌদ্ধযুগে রাজশাহীর পাহাড়পুরে নির্মিত আশ্রম এখন অনেকটা ধ্বংসস্তূপ। এ ধ্বংসস্তূপ থেকে আমরা সেযুগের কিছু পুরাকীর্তি খুঁজে পাই। মাটির সীলমোহর থেকে জানা যায়, এ সোমপুরবিহার পালরাজা ধর্মপালের আমলে তৈরি। হিমালয়ের দক্ষিণে এটাই ছিল সবচেয়ে বড় বিহার। উত্তর-দক্ষিণ বিহারটি ৯২২ ফুট এবং পূর্ব-পশ্চিমে ৯১৯ ফুট। এই চতুষ্কোণ বিহারটিতে আছে ১৭৭টি কক্ষ। পাহাড়পুর আশ্রমটি ছিল ২২ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। এর বাইরে চারিদিক ঘিরে ছিল ১৬ ফুট পুরু একটি দেওয়াল। দেওয়ালের গায়ে ছিল ১৭৭টি কক্ষ। প্রত্যেকটির আয়তন ছিল ১৪ ফুট ১৩ ১/২ ইঞ্চি। কক্ষগুলোর সামনে ছিল একটা ৯ ফুট বিস্তৃত বারান্দা। আশ্রমটির উচ্চতা ছিল ৭২ ফুট এবং এটি তিন স্তরে নির্মিত। যে দেয়াল দ্বারা আশ্রমটি বেষ্টিত ছিল সে দেয়ালের উপর ৬৩টি পাথরের মূর্তি সাজানো ছিল। এ মূর্তিগুলোতে ব্রাহ্মণ ধর্মের ছাপ সুস্পষ্ট ছিল। তাছাড়া এ আশ্রমের নির্মাণ শৈলীতে টেরাকোটা শিল্পের প্রাধান্য অধিকমাত্রায় লক্ষ্যণীয়। খনন কার্যের মাধ্যমে ২০০০ টেরাকোটা চিত্রের প্লেট পাওয়া যায়। তাছাড়া এখানকার মন্দির, বৌদ্ধ আশ্রম, আশ্রমের কিছু দূরে সত্যপীরের ভিটা, প্লেটের ওপর তাম্রলিপি, ব্রোঞ্জ নির্মিত মূর্তি ও সব পুরাকীর্তির নিদর্শন পাহাড়পুরের ঐতিহ্য ও গরিমার প্রতীক। এখানকার সমৃদ্ধির বর্ণনা চীন দেশের পর্যটক ফা-হিয়েন ও হিউয়েন সাং এর বিবরণ থেকে জানা যায়। মহাস্থানগড়ের পুরাকীর্তি: বগুড়া জেলার ইতিহাস বিখ্যাত করোতোয়া নদীর তীরে মহাস্থানগড় অবস্থিত। সমতল ভূমি থেকে এটি ২০/২৫ হাত উঁচু। অতি প্রাচীনকালে বগুড়া পুন্ড্ররাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। আর পৌন্ড্ররবর্ধন ছিল পুন্ড্রনগরের প্রাদেশিক রাজধানী। পরশুরাম ছিলেন পৌন্ড্রবর্ধনের রাজা। হিজরি ৪৪০ সনে হযরত শাহ সুলতান ইব্রাহিম বলখী মাহীসওয়ার (র.) ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে এখানে আগমন করেন। ইসলাম প্রচারের সময় তাঁর সঙ্গে রাজা পরশুরাম ও তাঁর ভগ্নি শীলা দেবীর যুদ্ধ হয়। যুদ্ধে পরশুরাম নিহত হন ও তাঁর ভগ্নি শীলাদেবী মন্দিরের পেছন দরজা দিয়ে পালিয়ে করোতোয়া নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। সেই থেকে করোতোয়া নদীর সে স্থানটিকে শীলাদেবীর ঘাট বলা হয় এবং এটি হিন্দুদের পবিত্র তীর্থস্থান হিসাবে গণ্য হয়। তাছাড়াও এ স্থানে গোকুলের ম্যাড, বেহুলা সুন্দরী ও লখিন্দরের বাসর ঘরের ধ্বংসাবশেষ, পশ্চিমে কালিদহ, সাগর ও বাসোবনিয়া সওদাগরের বাড়ি, উজান-ভাইটালি নগর প্রভৃতি পুরাকীর্তি নিদর্শন রয়েছে। ময়নামতি:বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাংশে কুমিল্লা শহর থেকে অল্পকিছু দূরে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থল ময়নামতি অবস্থিত। কথিত আছে, রাজা মানিকচন্দ্রের স্ত্রী ময়নামতির নামানুসারে এ স্থানের নামকরণ হয়েছে। লালমাই পাহাড়কে ঘিরে গড়ে উঠেছিল বৌদ্ধ সভ্যতার এ বিশাল তীর্থক্ষেত্র। সপ্তম থেকে একাদশ শতাব্দিতে গড়ে ওঠা এ পুরাকীর্তি, এক সময় দূর দূরান্ত থেকে আসা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের জ্ঞান-বিজ্ঞানের তীর্থস্থান ছিল। লালমাই-ময়নামতি এলাকার প্রত্ন খননের ফলে উৎঘাটিত হয়েছে বেশ কয়েকটি বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষ। এগুলোর মধ্যে শালবন বিহার, ভোজ বিহার, আনন্দ বিহার উল্লেখযোগ্য। খড়গ, দেব, চন্দ্র বংশীয় রাজাদের কীর্তি আমাদের ইতিহাসে যোগ করেছে, নতুনমাত্রা। তাম্রশাসনে উল্লেখ আছে যে, দেববংশের রাজাদের রাজধানী ‘দেবপর্বত’ এই লালমাই পাহাড়ে অবস্থিত। তাছাড়া ইতিহাস বিখ্যাত কোটিল্য মুড়া ও আনন্দ রাজার দীঘি এই কুমিল্লার ময়নামতিতে অবস্থিত। ময়নামতিকে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনের জাদুঘর বলা যায়। এ স্থান বাংলার ইতিহাসে অনেক নতুন তথ্য সংযোজন করে ইতিহাসকে সমৃদ্ধ ও স্পষ্ট করেছে। লালবাগ কেল্লা ও ষাটগম্বুজ মসজিদ: লালবাগকেল্লা, বাংলার অন্যতম এক জনপ্রিয় পুরাকীর্তি। এর পূর্বনাম ছিল আওরঙ্গবাদ দুর্গ। এটি পুরাতন ঢাকার দক্ষিণ-পশ্চিমাংশে বুড়িগঙ্গা নদীর পাশে অবস্থিত। মুগল সম্রাট আওরঙ্গজেবের তৃতীয়পুত্র রাজপুত্র মুহম্মদ আযম ১৬৭৮ সালে এ লালবাগকেল্লা নির্মাণ শুরু করেন। তখন তিনি মুঘল সাম্রারাজ্যের অধীনে বাংলার সুবাদার হিসাবে নিয়োজিত ছিলেন। এটিকে বাংলার বিখ্যাত মুঘল কীর্তিতে পরিণত করার স্বপ্ন ছিল তাঁর। কিন্তু কেল্লা তৈরির কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যায় যখন সম্রাট আওরঙ্গজেব তাঁকে মাদ্রাজ যুদ্ধে সহযোগিতার জন্য ডেকে পাঠান। পরে শায়েস্তা খান বাংলার সুবাদার হয়ে আসলে এ কেল্লার কাজ আবার শুরু হয়। ১৬৮৪ সালে শায়েস্তা খান এর কন্যা পরী বিবির মৃত্যুর পর এ কেল্লাকে অশুভ বলে চিহ্নিত করা হয় এবং কেল্লার নির্মাণ কাজের পরিসমাপ্তি ঘটে। এ কেল্লায় তিনটি ইমারত, দুটো প্রবেশদ্বার ও অসমাপ্ত দুর্গ আছে। কেল্লার ভেতরে পরী বিবির সমাধিক্ষেত্র, পূর্বে দিওয়ানি-আলম ও হাম্মামখানা ও পশ্চিমে একটি মসজিদ।

Related questions

উত্তর সন্ধানী! বেস্ট বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর ওয়েবসাইট। প্রশ্ন করুন, উত্তর নিন, সমস্যা সমাধান করুন ।
উত্তর সন্ধানী কি?
উত্তর সন্ধানী বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর এর ওয়েবসাইট।
গোপন প্রশ্ন ও উত্তর। ডিজিটাল শিক্ষায় প্রশ্নের উত্তরের সেরা ওয়েবসাইট।
...