আমাদের বিশাল এই মহাবিশ্বে রয়েছে গ্রহ,নক্ষত্র,ছায়াপথের মত আরও নানান মহাজাগতিক বস্তু।এখানে নক্ষত্রসহ অন্যান্য বস্তুর অবস্থান পরিবর্তনের ঘটনা মোটেও অস্বাভাবিক নয়। এই মতবাদ অনুসারে ধারণা করা হয় যে এক সময় চলতে চলতে বিশাল এক নক্ষত্র সূর্যের সামনে এসে পড়েছিল।আর নক্ষত্রটির আকার সূর্যের চেয়ে বড় হওয়ায় তার আকর্ষণী ক্ষমতাও ছিল সূর্যের চেয়ে বেশি।আবার সূর্যের ভিতরেও কিন্তু চলছে এক ধরণের আকর্ষণী ক্ষমতা যা কিনা সূর্যের ভিতরকার বস্তুগুলোকে ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট।আমরা জানি সূর্যের ভিতরে প্রতিনিয়তই চলছে বিস্ফোরণ যার ফলে সূর্যপৃষ্ঠে সৃষ্টি হয় জোয়ারের মত একটা পরিবেশ।সেই বিশাল নক্ষত্রের ফলে এই জোয়ারের মাত্রা যায় আরও বেড়ে। যদিও সূর্যের নিজস্ব আকর্ষণী ক্ষমতার কারণে ভিতরকার বস্তু সৌরপৃষ্ঠ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে না।কিন্তু সেই দানবাকৃতির সেই নক্ষত্রের কারণে সৌরপৃষ্ঠ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বেশ খানিকটা অংশ।কি ভয়ানক কথা।তবে এতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সূর্য থেকে কিছুটা অংশ বিচ্ছিন্ন করলেও নক্ষত্রটি কিন্তু তা সাথে করে নিয়ে যেতে পারেনি। এর কারণটা একটু ব্যাখ্যা করা যাক।যেহেতু নক্ষত্রটি ক্রমান্বয়ে সূর্যের নিকটতর হয়েছিল তাই তার আকর্ষণী ক্ষমতাও বেড়ে গিয়েছিল এবং উভয়ের আনুপাতিক গতিবেগও বেড়েছিল।সৌরপৃষ্ঠ থেকে বিচ্ছিন্ন হবার সময় কিন্তু বিচ্ছিন্ন অংশটির উপর দ্বিমুখী বল কাজ করছিল।একটি ছিল সেই আগন্তুক নক্ষত্রটির টান এবং অপরটি সূর্যের নিজস্ব টান। এইসব ক্রিয়ার ফলে সেই বিচ্ছিন্ন অংশটির অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না।তার আকার হয়ে গিয়েছিল অনেকটা মাকুর মত অর্থাৎ মাথা ও লেজের অংশ চিকন এবং মধ্যে মোটা।তো, সেই বিচ্ছিন্ন অংশটি সূর্যের টান ছেড়ে নক্ষত্রের দিকে আগালেও নক্ষত্রটি কিন্তু রাগ করে আপন গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।ফলে নক্ষত্রের গতির সাথে তাল মেলানো সম্ভব হয়নি সেই বিচ্ছিন্ন অংশটির। কিন্তু বিচ্ছিন্ন আর আকারে ছোটো হলে কি হবে সেই বা কম যায় কিসে?তাই নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য সে ইতোমধ্যেই অর্জন করে নিজস্ব একটা গতিবেগ।এদিকে নক্ষত্রটি বেশ দূরে সরে গেলেও তার আদিনিবাস সূর্য কিন্তু বেশি দূরে যেতে না পারার কারণে তার আকর্ষনও অগ্রাহ্য করতে পারেনি।কিন্তু এর মাঝে যে সূর্য ব্যাটারও মাথা খারাপ।সে আর আগের মত কাছে টেনে নেয় না সেই অংশটিকে।আবার দূরেও ঠেলে দিতে পারে না। তাই সূর্য তার চারপাশে ঘোরার অনুমতি দেয় সেই বিচ্ছিন্ন অংশটিকে।সূর্যের প্রচন্ড তাপে সেই বিচ্ছিন্ন অংশটির পুরোটাই ছিল প্রথমে গ্যাসীয় আর আকার ছিল সেই মাকুর মত। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে প্রান্তের চিকন অংশ ঠান্ডা হয়ে আসে এবং তরলে পরিণত হতে থাকে।যেহেতু তরল আর গ্যাসীয় অবস্থা দুটি একসাথে থাকতে পারেনি তাই দুই প্রান্তের তরল অংশদুটি আলাদা হয়ে যায়।অবশ্য তরল হলেও এদের তাপমাত্রা ছিল প্রচন্ড।একই প্রক্রিয়ায় বিচ্ছিন্ন বাকি অংশগুলোও তাপ বিকিরণের মাধ্যমে খন্ডে খন্ডে ভাগ হতে থাকে। আর এই খন্ডগুলোর একটিই হল এক একটি গ্রহ।যাদের একজন আমাদের এই পৃথিবী।আবার গ্রহগুলোর ভিতরেও সূর্যের আকর্ষণে সৃষ্ট জোয়ারের কারণে বেশ কিছু অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে উপগ্রহের সৃষ্টি হয়।ঠিক এমনি ভাবেই সৃষ্টি হয় পৃথিবীর উপগ্রহ চাঁদ।