2 Answers

0 votes
by
প্রাচীন গ্রীক সভ্যতা আধুনিক বিজ্ঞানের সুতিকাগার। সেই সময় সেখানকার মানুষের ধারণা ছিল মাটি, পানি, বায়ু ও আগুন—এই চারটি বস্তু দিয়েই আমাদের পৃথিবী সৃষ্টি। অর্থাৎ এই বস্তুগুলিই মৌলিক পদার্থ। কিন্তু খ্রীষ্টপূর্ব ৬০০ আব্দে ভারতীয় দার্শনিক কণাদ সর্বপ্রথম অবিভাজ্য কণার ধারণা দেন। তার মতে, অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এসব অবিভাজ্য কণা দিয়েই পৃথিবীর সকল বস্তু গঠিত। কণাদের সেই তত্ত্ব গ্রীকদেশে প্রতিষ্ঠিত করেন আরেক মহান দার্শনিক ডেমোক্রিটাস (খ্রীষ্টপূর্ব ৪৭০-৪০০ অব্দ)। তিনি কণাদের সেই অবিভাজ্য কণার নাম দিলেন এটম। এরপরে গ্রীকদেশে জন্মালেন সর্বকালের সেরা দার্শনিক অ্যারিস্টোটল (খ্রীষ্টপূর্ব ৩৮৪-৩২২ অব্দ)। নিজ কর্মগুণে তিনি গ্রীকবাসীদের কাছে দেবতুল্য হয়ে ওঠেন। তার কথা সাধারণ মানুষ থেকে রাজা-মহারাজারা পর্যন্ত একবাক্যে বিশ্বাস করত তাঁর কথা। অ্যারিস্টোটলের বিশ্বাস ছিল, মাটি, পানি, বায়ু ও আগুন তত্ত্বের পক্ষে। তাই কণাদ আর ডেমেক্রিটাসের এটম বা পরমাণু তত্ত্ব ধামাচাপা পড়ে যায়। এরপর কেটে যায় প্রায় দু’হাজার বছর। ১৮০৩ সালে ব্রিটিশ পদার্থবিদ জন ডালটন আবার সামনে নিয়ে আসেন পরমাণু তত্ত্ব। তিনি মৌলিক ও যৌগিক পদার্থ গঠণের ‘পরামাণুবাদ’ নামে একটা যুগান্তকারী মডেল দাঁড় করান। এই মতবাদ আনুসারে, প্রত্যেক পদার্থ পরমাণু নামের বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার সমষ্টি। এসব কণাকে আর ভাগ করা যায় না। ডালটন মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণার নাম দিলেন ‘মৌলিক পরমাণু’ এবং যৌগিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণার নাম ‘যৌগিক পরমাণু’। ডালটনের পরমাণুবাদ তত্ত্বে স্পষ্ট একটা গরমিল রয়েছে। এ তত্ত্ব মৌলিক ও যৌগিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণার মধ্যে কোনো পার্থক্য তৈরি করতে পারেনি। এর সমাধানে এগিয়ে এলেন অ্যাভোগেড্রো নামের আরেক বৈজ্ঞানিক। তিনি বললেন, মৌলিক পদার্থের ক্ষেত্রে ডালটনের পরমাণুবাদ তত্ত্ব ঠিক আছে। কিন্তু যৌগিক পদার্থের ক্ষেত্রে পরমাণু ধারণাটা সঠিক নয়। তার মতে, দুই বা দুইয়ের অধিক মৌলিক পরমাণু যুক্ত হয়ে যৌগিক পদার্থের একটা ক্ষুদ্রতম একক তৈরি হয়—এই একককে অণু বলে। আবার অণু মৌলিক পদার্থেরও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে একই মৌলিক পদার্থের দুই বা তারচেয়ে বেশি পরমাণু যুক্ত হয়ে মৌলিক অণু গঠন করে। উনবিংশ শতাব্দীর প্রায় শেষ পর্যন্ত টিকে ছিল ডালটনের পরমাণুবাদ, অর্থাৎ ‘পরমাণুই পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা’ তত্ত্বটি। ১৮৯৭ সালে স্যার জে. জে টমসন টেলিভিশনের পিকচার টিউবের মতো একটা ক্ষরণনলে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতে গিয়ে দেখলেন, টিউবের টকটকে লাল ধাতব উত্তপ্ত ফিলামেন্ট থেকে নেগেটিভ চার্জযুক্ত একধরনের কণা নির্গত হচ্ছে। এর ভর পরীক্ষা করে দেখা গেল, এই কণা সবচেয়ে হালকা মৌল হাইড্রোজেনের পরমাণুর ভরের চেয়েও একহাজার গুণ হালকা। এই কণাগুলির নির্গমণ পথে ফসফরাস মাখানো পর্দা রেখে দেখা গেলো, এরা পর্দার ওপর আলোর ঝলক সৃষ্টি করতে পারে। এতো হালকা কণার দেখা প্রকৃতিতে মেলা সম্ভব নয়, তাই বিজ্ঞানীরা ভাবলেন হয়তো এটা পরমাণুর ভেতর থেকে নির্গত হয়। তাঁদের এই ধারণা দ্রুত প্রমাণিত হলো, আবিষ্কার হলো নতুন কণা ইলেক্ট্রন। নড়েচড়ে বসলেন বিজ্ঞানী মহল; তাহলে পরমাণুকেও ভাঙ্গা যায়! ১৯১১ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী আর্নেস্ট রাদারফোর্ড স্বর্ণপাতের ওপর আলফাকণার বিক্ষেপণ পরীক্ষার সাহায্যে পরমাণুতে নিউক্লিয়াসের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন। তিনি এই পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে পরমাণুর গঠনগত কিছু বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে নিশ্চিত হন। এই বৈশিষ্ট্যগুলো কণা বিজ্ঞানের অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সৃষ্টি করেছে পরমাণু গঠণের প্রথম গ্রহণযোগ্য মডেলটি। তাই স্বর্ণপাত পরীক্ষার ফলাফল থেকে প্রাপ্ত তথ্য তথা রাদারফোর্ডের পরমমাণু মডেল সংক্ষেপে বর্ণনা না করলে এই আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। স্বর্ণপাত পরীক্ষা দ্বারা রাদারফোর্ড নিশ্চিত হন, সকল পরমাণুই মূলত নিউক্লিয়াস ও নিউক্লিয়াসের বাইরে বিরাট ফাঁকা অঞ্চল নিয়ে গঠিত। কেন্দ্র মূলত পজেটিভ চার্জযুক্ত; আর কেন্দ্রের বাইরের ফাঁকা অঞ্চলে ইলেট্রনগুলোর অবস্থান। একটা পরমাণুর প্রায় সবটুকু ভর তার কেন্দ্রে পুঞ্জিভূত থাকে। পরমাণুর প্রায় সবটুকু ভর নিউক্লিয়াস দখল করলেও নিউক্লিয়াসের আয়তন একটা পরমাণুর আয়তনের প্রায় দশলক্ষ ভাগের একভাগ। ভাবা যাই, একটা পরমাণুর প্রায় সবটুকু অঞ্চলই ফাঁকা! যেহেতু সকল বস্তু পরমাণুর এই সুশৃঙ্খল সজ্জায় গঠিত, তাই বলা যায় প্রতিটা কঠিন বস্তুর ভেতর দশলক্ষ ভাগের ৯৯ লক্ষ ৯৯ হাজার ৯ শ’ ৯৯ ভাগ ফাঁকা আর বাকি এক মাত্র ভাগ সলিড। অর্থাৎ আমাদের এই কঠিন পৃথিবীর প্রায় সম্পূর্ণটুকুই ফাঁকা! রাদারফোর্ডের মডেলে আরো বলা হয়েছে, নেগেটিভ চার্জ যুক্ত ইলেক্ট্রনসমূহ পজেটিভ চার্যযুক্ত নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা ইন্ট্রেনের গতি-প্রকৃতি অনেকটা আমাদের সৌরজগতে সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা গ্রহগুলোর মতো। তাই রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলকে সোলার সিস্টেম এটম মডেলও বলে; পার্থক্য শুধু সূর্য ও তার গ্রহগুলোর মধ্যে মহকর্ষ বল ক্রিয়া করে আর নিউক্লিয়াস আর ইলেক্ট্রন সমূহের মধ্যে ক্রিয়া করে বৈদ্যুতিক চুম্বকীয় আকর্ষণবল। নিউক্লিয়াসে পজেটিভ চার্জের উৎস সন্ধান করতে গিয়ে রাদারফোর্ড ১৯১৯ সালে প্রোটন নামে এক ধরনের কণার অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন। এই কণা পজেটিভ চার্জযুক্ত। ১৯৩২ সালে রাদারফোর্ডের সহকর্মী জেমস চ্যাডউইক নিউক্লিয়াসের অভ্যান্তরে চার্জনিরপেক্ষ অদ্ভূত এক ধরনের কণার সন্ধান পান। মহাবিজ্ঞানী নিউটনের নামানুসারে এই কণার নামকরণ করা হয় নিউট্রন। বিজ্ঞানী মহল নিশ্চিত হলেন ইলেক্ট্রন, প্রোটান ও নিউট্রন— এই তিনটি মূলকণা দিয়েই পৃথিবীর সব মৌলিক পদার্থের সৃষ্টি। আবার যেহেতু যৌগিক পদার্থগুলো মৌলিক পদার্থ দিয়ে তৈরি, তাই বলা চলে পৃথিবীর সব বস্তু এই তিনটি মূল কণিকার সমন্বয়ে গঠিত। কিন্তু বিজ্ঞান এখানেই থেমে থাকল না। বিজ্ঞানী-সমাজে প্রশ্ন উঠল, নিউক্লিয়াসে প্রোটন ও নিউট্রন পরস্পরের সাথে দৃঢ়ভাবে যুক্ত থাকে কীভাবে? তাদের মধ্যে তো মহাকর্ষ বল ক্রিয়া করে না? তাছাড়া নিউট্রন চার্জ নিরেপেক্ষ কণা, অন্যদিকে প্রোটন পজেটিভ চার্জযুক্ত; তাই এদের মধ্যে কোনো বৈদ্যুতিক আকর্ষণ বল ক্রিয়া করার কথা নয়। আবার একই চার্জযুক্ত দুটি কণা পরস্পরকে বিকর্ষণ করে। তাই একাধিক প্রোটনযুক্ত নিউক্লিয়াসে বিকর্ষী বল ক্রিয়া করার কথা। ফলে প্রোটনগুলো নিউক্লিয়াসে আটকে না থেকে দূরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ার কথা। তাহলে...? এই সমস্যার সাথে তারা লক্ষ করলেন আরেকটি অদ্ভুত ব্যাপার। একটা নিউক্লিয়াসের ভর এর ভেতরের প্রোটন ও নিউট্রনগুলোর আলাদা আলাদা ভরের যোগফলের সমান হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা হলো না। নিউক্লিয়াসের ভর প্রোটন ও নিউট্রনগুলোর আলাদা আলাদা ভরের যোগফলের সমান নয়; বেশ খানিকটা কম। তাহলে বাকি ভরটুকু গেলো কোথায়? এই সমস্যদুটো সমাধানে এগিয়ে এলেন স্বয়ং আইনস্টাইন। নিউক্লিয়াসের ভেতর থেকে নিউক্লিয়নগুলো আলাদা করতে হলে বিপুল পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হয়। এবার এই ব্যপারটাকে উল্টোদিক থেকে হিসাব করলে দাঁড়ায়, নিউক্লিয়নগুলো নিজেদের ভেতর যখন বন্ধন তৈরি করে তখন তারা ওই একই পরিমাণ শক্তি ছেড়ে দেয়। এই শক্তি নিউক্লিয়নগুলো কোথায় পায়? এই শক্তি উৎপাদন করার জন্য নিউক্লিয়নগুলো তাদের সামগ্রীক ভর কিছুটা কমিয়ে ফেলে; তাই নিউক্লিয়াসে ভর ঘাটতি দেখা দেয়। সেই ঘাটতি ভরটুকু আইনস্টাইনের সর্ববিখ্যাত সমীকরণ E=mc2 সূত্রানুসারে বিপুল পরিমাণ শক্তিতে পরিণত হয়। আবার সুগঠিত নিউক্লিয়াসকে ভাঙ্গতে গেলে সেই পরিমাণ শক্তি বাইরে থেকে প্রয়োগ করতে হয়। তখন নিউক্লিয়নগুলো সেই শক্তি গ্রহণ করে তাদের হারানো ভর ফিরে পায় এবং তাদের নিউক্লিয় বন্ধন ভেঙ্গে যায়। যেহেতু নিউক্লিয়াসের ভর ঘাটতির সমস্যা সমাধান হয়ে গেল, তাই বিজ্ঞানীরা ধরে নিলেন ইলেক্ট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন—এই তিনটি মৌলিক কণা দিয়েই আমাদের দৃশ্যমান জগত গঠিত। কিন্তু তাঁদের সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত করলেন মারে গেলম্যান নামের এক বিজ্ঞানী। ১৯৬৭ সালে গেলম্যান প্রমাণ করলেন ইলেক্ট্রন অবিভাজ্য কণা হলেও প্রোটন ও নিউট্রন তা নয়। কোয়ার্ক নামের আরো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিছু কণা দ্বারা মূলত প্রোটন-নিউট্রন তৈরি। তখনো পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা মাত্র দুই ধরনের কোয়ার্কের খোঁজ পেয়েছেন। এদের একটার নাম আপ কোয়ার্ক; অন্যটার নাম ডাউন কোয়ার্ক। পরবর্তীকালে আরো চার রকম কোয়ার্কসহ আরো ১৩ প্রকার মুল কণিকা আবিষ্কৃত হয়। এছাড়াও মহকর্ষ বলের উৎস কী তা এখনো বিজ্ঞানীরা জানতে পারেননি— তাদের ধারণা গ্রাভিটন নামের এক ধরনের কণা এই বলের উৎস। কল্পিত সেই গ্রাভিটনকেও হণ্যে হয়ে খুঁজছেন তারা। গ্রাভিটনকে বাদ দিলে আমাদের এই মহবিশ্বে মূল কণিকার সংখ্যা হলো মোট ষোলটি। এর মধ্যে সকল প্রকার কোয়ার্ক ও ইলেক্ট্রনসহ ১২ টি-কে বলে ফার্মিওন শ্রেণীর কণা। আলোর ফোটন কণাসহ বাকি ৪ টি-কে বলে বোসন শ্রেণীর কণা। ইদানিংকালে বিজ্ঞানে স্ট্রিং বা তন্তুতত্ত্বের আবির্ভাব হয়েছে। এই তত্ত্বের মূলসুর হলো, এইসব মূলকণিকাগুলোও নাকি পরম কণা নয়, এরা মূলত অতি সুক্ষ একপ্রকার নমনীয় তন্তুর সাহয্যে তৈরি। এই তন্তুর বিভিন্ন মাত্রায় কম্পনের ফলে নাকি মূল কণিকাগুলো তৈরি হয়। একটা সহজ উদাহরণ দিয়ে স্ট্রিংতত্ত্বকে বোঝার চেষ্টা করতে পারি, একটা চিকন তারের একটা চুড়িকে যদি হাত দিয়ে ঘুরিয়ে মেঝের ওপর ছেড়ে দেয়া হয় তবে ঘুরন্ত অবস্থায় সেটাকে একটা গোলাকার টেনিস বলের মতো দেখাবে—স্ট্রিংতত্ত্বে তন্তুর কম্পন দ্বারা কণা সৃষ্টির পক্রিয়াকে অনেকটা এভাবে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। স্ট্রিং তত্ত্ব এখনো সঠিকভাবে প্রমাণিত নয়। ভবিষ্যতে এই তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হলে হয়তো পরম কণা বলে কোনো কিছুই থাকবে না। আজ থেকে প্রায় ১০৬ বছর আগের কথা। নিজের বাড়িতে দড়ি ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করতে হয় অস্ট্রীয় পদার্থবিদ লুডভিগ বোলৎসমানকে। কারণ তিনি এমন এক ধারনায় বিশ্বাস করতেন যে ধারণা দিয়ে ব্যাখা করা যায় মোটামুটি দৃশ্যমান অদৃশ্যমান আমাদের এই বিশ্বজগতের সবকিছু। যে কাগজের পাতায় এই বইটি পড়ছেন তার গঠন থেকে শুরু করে রহস্যময় জীবনের প্রকৃতিকেও। তিনি বিশ্বাস করতেন একটা বস্তুকে যত ইচ্ছা ক্ষুদ্র অংশে ভাঙ্গা যায় না। বস্তু মাত্রই একটা অতিসাধারণ সরল গাঠনিক কাঠামোর সমষ্টি। হ্যাঁ, বোলৎসমান পরমাণুতে বিশ্বাস করতেন। এটা সে সময়কার কথা যে সময়ে পরমাণু নিয়ে আলোচনা করাকে মনে করা হত সময়ের অপব্যবহার আর একে ফেলা হত অপবিজ্ঞানের ক্যাটাগরিতে। বোলৎসমানই প্রথম বলেছিলেন, পরমাণুকে না দেখলেও কিছু পরিসাংখ্যিক সমীকরণের মাধ্যমে আমাদের পক্ষে তাদের গতিবিধি বর্ণনা করা সম্ভব। এভাবেই তাঁর হাত ধরে জন্ম নেয় পরিসাংখ্যিক গতিবিদ্যা কিন্তু কেনইবা প্রচলিত একটা ধারণার বিপরীতে এসে পরমাণূতে আশ্রয় নিলেন বোলৎসমান? ব্যাপারটা বুঝতে সময়ের কাটা আরেকটু পেছানো যাক। উনিশ শতকের মাঝামাঝি তখন। সভ্যতার ইতিহাসে ঘটে গেল শিল্প বিপ্লব। শুরটা ইংলেণ্ড থেকেই। প্রথমেই পানি চালিত একপ্রকার চাকার সাহায্যে বিপ্লব আসলো পোশাক তৈরিতে। জেমস ওয়ার্টের বাষ্প ইঞ্জিন বিপ্লব ঘটাল যোগাযোগ ব্যবস্থায়। খনি থেকে ধাতু নিষ্কাশন থেকে শুরু করে তার পূর্নাঙ্গিক রূপান্তর পর্যন্ত সবকাজেই ব্যবহৃত হতে থাকলো বাষ্প। ফলে কীভাবে কম শক্তি খরচ করে ভালো ফলদায়ক বাষ্প উৎপন্ন করা যায় তার একটা জোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল বিশ্বব্যাপী। অন্তত উনিশ শতকের পদার্থবিজ্ঞানে। উচ্চ তাপমাত্রা ও চাপে জলীয় বাষ্পের আচরণ নিয়ে শুরু হয়ে গেল বিস্তর গবেষণা। বোলৎসমান আর তাঁর সমসাময়িক বিজ্ঞানীরা দেখলেন জলীয় বাষ্পকে যদি অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গোলকের অবিরাম সংঘর্ষপূর্ণ সমন্বিত একটা ব্যবস্থা হিসেবে চিন্তা করা যায় তবে কিছু সুন্দর গাণিতিক নীতিমালা প্রণয়ন করা যায় যা খুব সহজেই উচ্চ তাপমাত্রা ও চাপে জলীয় বাষ্পের আচরণ ব্যাখা করতে পারে। কিন্তু বিপত্তি বাঁধে তৎকালীন বৈজ্ঞানিক সংস্কৃতির সাথে। একটা ঐশ্বরিক বস্তু যা কিনা স্বয়ং বিধাতার সৃষ্টি তা কীভাবে এত ছোট ছোট কতগুলো গোলকের অসংখ্য সংঘর্ষের একটা রূপায়ন হতে পারে! ফল যা হবার তাই হল। নাস্তিক প্রকৃতিবাদী নামে ভূষিত হয়ে হেয় প্রতিপন্ন আর একঘরে হতে হতে মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে একসময় আত্মহননের পথটাই বেছে নিতে হল বোলৎসমানকে। ১৯০৫ সাল। বোলৎসমানের মৃত্যুর প্রায় ১ বছর আগে একটা অকাট্য প্রমাণ হাতে আসলো বিশ্ববাসীর যে, বোলৎসমানের পরমাণুই রাজত্ব করছে এই বিশ্বজগতে। কিন্তু কেন জানি বোলৎসমানের কান পর্যন্ত পৌছায় নি এই আবিষ্কারের সংবাদ। বিজ্ঞানের ইতিহাসে এমন ট্রাজেডি আর কী হতে পারে!!!
0 votes
by
প্রাচীন গ্রীক সভ্যতা আধুনিক বিজ্ঞানের সুতিকাগার। সেই সময় সেখানকার মানুষের ধারণা ছিল মাটি, পানি, বায়ু ও আগুন—এই চারটি বস্তু দিয়েই আমাদের পৃথিবী সৃষ্টি। অর্থাৎ এই বস্তুগুলিই মৌলিক পদার্থ। কিন্তু খ্রীষ্টপূর্ব ৬০০ আব্দে ভারতীয় দার্শনিক কণাদ সর্বপ্রথম অবিভাজ্য কণার ধারণা দেন। তার মতে, অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এসব অবিভাজ্য কণা দিয়েই পৃথিবীর সকল বস্তু গঠিত। কণাদের সেই তত্ত্ব গ্রীকদেশে প্রতিষ্ঠিত করেন আরেক মহান দার্শনিক ডেমোক্রিটাস (খ্রীষ্টপূর্ব ৪৭০-৪০০ অব্দ)। তিনি কণাদের সেই অবিভাজ্য কণার নাম দিলেন এটম। এরপরে গ্রীকদেশে জন্মালেন সর্বকালের সেরা দার্শনিক অ্যারিস্টোটল (খ্রীষ্টপূর্ব ৩৮৪-৩২২ অব্দ)। নিজ কর্মগুণে তিনি গ্রীকবাসীদের কাছে দেবতুল্য হয়ে ওঠেন। তার কথা সাধারণ মানুষ থেকে রাজা-মহারাজারা পর্যন্ত একবাক্যে বিশ্বাস করত তাঁর কথা। অ্যারিস্টোটলের বিশ্বাস ছিল, মাটি, পানি, বায়ু ও আগুন তত্ত্বের পক্ষে। তাই কণাদ আর ডেমেক্রিটাসের এটম বা পরমাণু তত্ত্ব ধামাচাপা পড়ে যায়। এরপর কেটে যায় প্রায় দু’হাজার বছর। ১৮০৩ সালে ব্রিটিশ পদার্থবিদ জন ডালটন আবার সামনে নিয়ে আসেন পরমাণু তত্ত্ব। তিনি মৌলিক ও যৌগিক পদার্থ গঠণের ‘পরামাণুবাদ’ নামে একটা যুগান্তকারী মডেল দাঁড় করান। এই মতবাদ আনুসারে, প্রত্যেক পদার্থ পরমাণু নামের বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার সমষ্টি। এসব কণাকে আর ভাগ করা যায় না। ডালটন মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণার নাম দিলেন ‘মৌলিক পরমাণু’ এবং যৌগিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণার নাম ‘যৌগিক পরমাণু’। ডালটনের পরমাণুবাদ তত্ত্বে স্পষ্ট একটা গরমিল রয়েছে। এ তত্ত্ব মৌলিক ও যৌগিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণার মধ্যে কোনো পার্থক্য তৈরি করতে পারেনি। এর সমাধানে এগিয়ে এলেন অ্যাভোগেড্রো নামের আরেক বৈজ্ঞানিক। তিনি বললেন, মৌলিক পদার্থের ক্ষেত্রে ডালটনের পরমাণুবাদ তত্ত্ব ঠিক আছে। কিন্তু যৌগিক পদার্থের ক্ষেত্রে পরমাণু ধারণাটা সঠিক নয়। তার মতে, দুই বা দুইয়ের অধিক মৌলিক পরমাণু যুক্ত হয়ে যৌগিক পদার্থের একটা ক্ষুদ্রতম একক তৈরি হয়—এই একককে অণু বলে। আবার অণু মৌলিক পদার্থেরও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে একই মৌলিক পদার্থের দুই বা তারচেয়ে বেশি পরমাণু যুক্ত হয়ে মৌলিক অণু গঠন করে। উনবিংশ শতাব্দীর প্রায় শেষ পর্যন্ত টিকে ছিল ডালটনের পরমাণুবাদ, অর্থাৎ ‘পরমাণুই পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণা’ তত্ত্বটি। ১৮৯৭ সালে স্যার জে. জে টমসন টেলিভিশনের পিকচার টিউবের মতো একটা ক্ষরণনলে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করতে গিয়ে দেখলেন, টিউবের টকটকে লাল ধাতব উত্তপ্ত ফিলামেন্ট থেকে নেগেটিভ চার্জযুক্ত একধরনের কণা নির্গত হচ্ছে। এর ভর পরীক্ষা করে দেখা গেল, এই কণা সবচেয়ে হালকা মৌল হাইড্রোজেনের পরমাণুর ভরের চেয়েও একহাজার গুণ হালকা। এই কণাগুলির নির্গমণ পথে ফসফরাস মাখানো পর্দা রেখে দেখা গেলো, এরা পর্দার ওপর আলোর ঝলক সৃষ্টি করতে পারে। এতো হালকা কণার দেখা প্রকৃতিতে মেলা সম্ভব নয়, তাই বিজ্ঞানীরা ভাবলেন হয়তো এটা পরমাণুর ভেতর থেকে নির্গত হয়। তাঁদের এই ধারণা দ্রুত প্রমাণিত হলো, আবিষ্কার হলো নতুন কণা ইলেক্ট্রন। নড়েচড়ে বসলেন বিজ্ঞানী মহল; তাহলে পরমাণুকেও ভাঙ্গা যায়! ১৯১১ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী আর্নেস্ট রাদারফোর্ড স্বর্ণপাতের ওপর আলফাকণার বিক্ষেপণ পরীক্ষার সাহায্যে পরমাণুতে নিউক্লিয়াসের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন। তিনি এই পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে পরমাণুর গঠনগত কিছু বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে নিশ্চিত হন। এই বৈশিষ্ট্যগুলো কণা বিজ্ঞানের অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সৃষ্টি করেছে পরমাণু গঠণের প্রথম গ্রহণযোগ্য মডেলটি। তাই স্বর্ণপাত পরীক্ষার ফলাফল থেকে প্রাপ্ত তথ্য তথা রাদারফোর্ডের পরমমাণু মডেল সংক্ষেপে বর্ণনা না করলে এই আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। স্বর্ণপাত পরীক্ষা দ্বারা রাদারফোর্ড নিশ্চিত হন, সকল পরমাণুই মূলত নিউক্লিয়াস ও নিউক্লিয়াসের বাইরে বিরাট ফাঁকা অঞ্চল নিয়ে গঠিত। কেন্দ্র মূলত পজেটিভ চার্জযুক্ত; আর কেন্দ্রের বাইরের ফাঁকা অঞ্চলে ইলেট্রনগুলোর অবস্থান। একটা পরমাণুর প্রায় সবটুকু ভর তার কেন্দ্রে পুঞ্জিভূত থাকে। পরমাণুর প্রায় সবটুকু ভর নিউক্লিয়াস দখল করলেও নিউক্লিয়াসের আয়তন একটা পরমাণুর আয়তনের প্রায় দশলক্ষ ভাগের একভাগ। ভাবা যাই, একটা পরমাণুর প্রায় সবটুকু অঞ্চলই ফাঁকা! যেহেতু সকল বস্তু পরমাণুর এই সুশৃঙ্খল সজ্জায় গঠিত, তাই বলা যায় প্রতিটা কঠিন বস্তুর ভেতর দশলক্ষ ভাগের ৯৯ লক্ষ ৯৯ হাজার ৯ শ’ ৯৯ ভাগ ফাঁকা আর বাকি এক মাত্র ভাগ সলিড। অর্থাৎ আমাদের এই কঠিন পৃথিবীর প্রায় সম্পূর্ণটুকুই ফাঁকা! রাদারফোর্ডের মডেলে আরো বলা হয়েছে, নেগেটিভ চার্জ যুক্ত ইলেক্ট্রনসমূহ পজেটিভ চার্যযুক্ত নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা ইন্ট্রেনের গতি-প্রকৃতি অনেকটা আমাদের সৌরজগতে সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকা গ্রহগুলোর মতো। তাই রাদারফোর্ডের পরমাণু মডেলকে সোলার সিস্টেম এটম মডেলও বলে; পার্থক্য শুধু সূর্য ও তার গ্রহগুলোর মধ্যে মহকর্ষ বল ক্রিয়া করে আর নিউক্লিয়াস আর ইলেক্ট্রন সমূহের মধ্যে ক্রিয়া করে বৈদ্যুতিক চুম্বকীয় আকর্ষণবল। নিউক্লিয়াসে পজেটিভ চার্জের উৎস সন্ধান করতে গিয়ে রাদারফোর্ড ১৯১৯ সালে প্রোটন নামে এক ধরনের কণার অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন। এই কণা পজেটিভ চার্জযুক্ত। ১৯৩২ সালে রাদারফোর্ডের সহকর্মী জেমস চ্যাডউইক নিউক্লিয়াসের অভ্যান্তরে চার্জনিরপেক্ষ অদ্ভূত এক ধরনের কণার সন্ধান পান। মহাবিজ্ঞানী নিউটনের নামানুসারে এই কণার নামকরণ করা হয় নিউট্রন। বিজ্ঞানী মহল নিশ্চিত হলেন ইলেক্ট্রন, প্রোটান ও নিউট্রন— এই তিনটি মূলকণা দিয়েই পৃথিবীর সব মৌলিক পদার্থের সৃষ্টি। আবার যেহেতু যৌগিক পদার্থগুলো মৌলিক পদার্থ দিয়ে তৈরি, তাই বলা চলে পৃথিবীর সব বস্তু এই তিনটি মূল কণিকার সমন্বয়ে গঠিত। কিন্তু বিজ্ঞান এখানেই থেমে থাকল না। বিজ্ঞানী-সমাজে প্রশ্ন উঠল, নিউক্লিয়াসে প্রোটন ও নিউট্রন পরস্পরের সাথে দৃঢ়ভাবে যুক্ত থাকে কীভাবে? তাদের মধ্যে তো মহাকর্ষ বল ক্রিয়া করে না? তাছাড়া নিউট্রন চার্জ নিরেপেক্ষ কণা, অন্যদিকে প্রোটন পজেটিভ চার্জযুক্ত; তাই এদের মধ্যে কোনো বৈদ্যুতিক আকর্ষণ বল ক্রিয়া করার কথা নয়। আবার একই চার্জযুক্ত দুটি কণা পরস্পরকে বিকর্ষণ করে। তাই একাধিক প্রোটনযুক্ত নিউক্লিয়াসে বিকর্ষী বল ক্রিয়া করার কথা। ফলে প্রোটনগুলো নিউক্লিয়াসে আটকে না থেকে দূরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ার কথা। তাহলে...? এই সমস্যার সাথে তারা লক্ষ করলেন আরেকটি অদ্ভুত ব্যাপার। একটা নিউক্লিয়াসের ভর এর ভেতরের প্রোটন ও নিউট্রনগুলোর আলাদা আলাদা ভরের যোগফলের সমান হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে তা হলো না। নিউক্লিয়াসের ভর প্রোটন ও নিউট্রনগুলোর আলাদা আলাদা ভরের যোগফলের সমান নয়; বেশ খানিকটা কম। তাহলে বাকি ভরটুকু গেলো কোথায়? এই সমস্যদুটো সমাধানে এগিয়ে এলেন স্বয়ং আইনস্টাইন। নিউক্লিয়াসের ভেতর থেকে নিউক্লিয়নগুলো আলাদা করতে হলে বিপুল পরিমাণ শক্তির প্রয়োজন হয়। এবার এই ব্যপারটাকে উল্টোদিক থেকে হিসাব করলে দাঁড়ায়, নিউক্লিয়নগুলো নিজেদের ভেতর যখন বন্ধন তৈরি করে তখন তারা ওই একই পরিমাণ শক্তি ছেড়ে দেয়। এই শক্তি নিউক্লিয়নগুলো কোথায় পায়? এই শক্তি উৎপাদন করার জন্য নিউক্লিয়নগুলো তাদের সামগ্রীক ভর কিছুটা কমিয়ে ফেলে; তাই নিউক্লিয়াসে ভর ঘাটতি দেখা দেয়। সেই ঘাটতি ভরটুকু আইনস্টাইনের সর্ববিখ্যাত সমীকরণ E=mc2 সূত্রানুসারে বিপুল পরিমাণ শক্তিতে পরিণত হয়। আবার সুগঠিত নিউক্লিয়াসকে ভাঙ্গতে গেলে সেই পরিমাণ শক্তি বাইরে থেকে প্রয়োগ করতে হয়। তখন নিউক্লিয়নগুলো সেই শক্তি গ্রহণ করে তাদের হারানো ভর ফিরে পায় এবং তাদের নিউক্লিয় বন্ধন ভেঙ্গে যায়। যেহেতু নিউক্লিয়াসের ভর ঘাটতির সমস্যা সমাধান হয়ে গেল, তাই বিজ্ঞানীরা ধরে নিলেন ইলেক্ট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন—এই তিনটি মৌলিক কণা দিয়েই আমাদের দৃশ্যমান জগত গঠিত। কিন্তু তাঁদের সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত করলেন মারে গেলম্যান নামের এক বিজ্ঞানী। ১৯৬৭ সালে গেলম্যান প্রমাণ করলেন ইলেক্ট্রন অবিভাজ্য কণা হলেও প্রোটন ও নিউট্রন তা নয়। কোয়ার্ক নামের আরো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিছু কণা দ্বারা মূলত প্রোটন-নিউট্রন তৈরি। তখনো পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা মাত্র দুই ধরনের কোয়ার্কের খোঁজ পেয়েছেন। এদের একটার নাম আপ কোয়ার্ক; অন্যটার নাম ডাউন কোয়ার্ক। পরবর্তীকালে আরো চার রকম কোয়ার্কসহ আরো ১৩ প্রকার মুল কণিকা আবিষ্কৃত হয়। এছাড়াও মহকর্ষ বলের উৎস কী তা এখনো বিজ্ঞানীরা জানতে পারেননি— তাদের ধারণা গ্রাভিটন নামের এক ধরনের কণা এই বলের উৎস। কল্পিত সেই গ্রাভিটনকেও হণ্যে হয়ে খুঁজছেন তারা। গ্রাভিটনকে বাদ দিলে আমাদের এই মহবিশ্বে মূল কণিকার সংখ্যা হলো মোট ষোলটি। এর মধ্যে সকল প্রকার কোয়ার্ক ও ইলেক্ট্রনসহ ১২ টি-কে বলে ফার্মিওন শ্রেণীর কণা। আলোর ফোটন কণাসহ বাকি ৪ টি-কে বলে বোসন শ্রেণীর কণা। ইদানিংকালে বিজ্ঞানে স্ট্রিং বা তন্তুতত্ত্বের আবির্ভাব হয়েছে। এই তত্ত্বের মূলসুর হলো, এইসব মূলকণিকাগুলোও নাকি পরম কণা নয়, এরা মূলত অতি সুক্ষ একপ্রকার নমনীয় তন্তুর সাহয্যে তৈরি। এই তন্তুর বিভিন্ন মাত্রায় কম্পনের ফলে নাকি মূল কণিকাগুলো তৈরি হয়। একটা সহজ উদাহরণ দিয়ে স্ট্রিংতত্ত্বকে বোঝার চেষ্টা করতে পারি, একটা চিকন তারের একটা চুড়িকে যদি হাত দিয়ে ঘুরিয়ে মেঝের ওপর ছেড়ে দেয়া হয় তবে ঘুরন্ত অবস্থায় সেটাকে একটা গোলাকার টেনিস বলের মতো দেখাবে—স্ট্রিংতত্ত্বে তন্তুর কম্পন দ্বারা কণা সৃষ্টির পক্রিয়াকে অনেকটা এভাবে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। স্ট্রিং তত্ত্ব এখনো সঠিকভাবে প্রমাণিত নয়। ভবিষ্যতে এই তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হলে হয়তো পরম কণা বলে কোনো কিছুই থাকবে না। আজ থেকে প্রায় ১০৬ বছর আগের কথা। নিজের বাড়িতে দড়ি ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করতে হয় অস্ট্রীয় পদার্থবিদ লুডভিগ বোলৎসমানকে। কারণ তিনি এমন এক ধারনায় বিশ্বাস করতেন যে ধারণা দিয়ে ব্যাখা করা যায় মোটামুটি দৃশ্যমান অদৃশ্যমান আমাদের এই বিশ্বজগতের সবকিছু। যে কাগজের পাতায় এই বইটি পড়ছেন তার গঠন থেকে শুরু করে রহস্যময় জীবনের প্রকৃতিকেও। তিনি বিশ্বাস করতেন একটা বস্তুকে যত ইচ্ছা ক্ষুদ্র অংশে ভাঙ্গা যায় না। বস্তু মাত্রই একটা অতিসাধারণ সরল গাঠনিক কাঠামোর সমষ্টি। হ্যাঁ, বোলৎসমান পরমাণুতে বিশ্বাস করতেন। এটা সে সময়কার কথা যে সময়ে পরমাণু নিয়ে আলোচনা করাকে মনে করা হত সময়ের অপব্যবহার।

Related questions

উত্তর সন্ধানী! বেস্ট বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর ওয়েবসাইট। প্রশ্ন করুন, উত্তর নিন, সমস্যা সমাধান করুন ।
উত্তর সন্ধানী কি?
উত্তর সন্ধানী বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর এর ওয়েবসাইট।
গোপন প্রশ্ন ও উত্তর। ডিজিটাল শিক্ষায় প্রশ্নের উত্তরের সেরা ওয়েবসাইট।
...