পূর্বোক্ত সামগ্রিক অবস্থা সম্মুখে রেখে এক্ষণে আমরা মদীনায় নতুন সমাজ ব্যবস্থার রূপায়ণ প্রত্যক্ষ করব। রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে একই সঙ্গে আভ্যন্তরীণ সংশোধন ও বাইরের অবস্থা সামাল দিয়ে চলতে হয়েছে। নতুন জাতি গঠনের প্রধান ভিত্তি হল আধ্যাত্মিক কেন্দ্র স্থাপন। সেজন্য তিনি ক্বোবায় প্রথম মসজিদ নির্মাণের পর এবার মদীনায় প্রধান মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেন। মসজিদে নববী নির্মাণ : ━━━━━━━━━━━━━━ মদীনায় প্রবেশ করে রাসূল (সাঃ)-এর উটনী যে স্থানে প্রথম বসে পড়েছিল, সেই স্থানটিই হল পরবর্তীতে মসজিদে নববীর দরজার স্থান। স্থানটির মালিক ছিল দু’জন ইয়াতীম বালক সাহল ও সোহায়েল বিন রাফে‘ বিন ‘আমর। এটি তখন তাদের খেজুর শুকানোর চাতাল ছিল (ইবনু হিশাম ১/৪৯৫)। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দশ দীনার মূল্যে স্থানটি খরীদ করলেন। আবুবকর (রাঃ) মূল্য পরিশোধ করলেন।[আর-রাহীক্ব ১৮৪ পৃঃ; বুখারী ফৎহসহ হা/৩৯০৬] অতঃপর তার আশপাশের মুশরিকদের কবরগুলি উঠিয়ে ফেলা হয় এবং ভগ্নস্তূপগুলি সরিয়ে স্থানটি সমতল করা হয়। গারক্বাদের খেজুর গাছগুলি উঠিয়ে সেগুলিকে ক্বিবলার দিকে সারিবদ্ধভাবে পুঁতে দেওয়া হয়’ (বুখারী হা/৪২৮)। অতঃপর খেজুর গাছ ও তার পাতা দিয়ে মসজিদ তৈরী হয়। চার বছর পর এটি কাঁচা ইট দিয়ে নির্মাণ করা হয় (বুখারী ফৎহসহ হা/৩৯০৬ ও ৩৫৩৪)। ঐ সময় আল্লাহর হুকুমে ক্বিবলা ছিল বায়তুল মুক্বাদ্দাস, যা ছিল ইহূদীদের ক্বিবলা এবং মদীনা থেকে উত্তর দিকে। মসজিদের ভিত ছিল প্রায় তিন হাত উঁচু। দরজা ছিল তিনটি। যার দু’বাহুর স্তম্ভগুলি ছিল পাথরের, মধ্যের খাম্বাগুলি খেজুর বৃক্ষের, দেওয়াল কাঁচা ইটের, ছাদ খেজুর পাতার এবং বালু ও ছোট কংকর বিছানো মেঝে- এই নিয়ে তৈরী হল মসজিদে নববী, যা তখন ছিল ৭০×৬০×৫ হাত মোট ৪২০০ বর্গ হাত আয়তন বিশিষ্ট। যেখানে বর্ষায় বৃষ্টি পড়ত। ১৬ বা ১৭ মাস পরে ক্বিবলা পরিবর্তিত হলে উত্তর দেওয়ালের বদলে দক্ষিণ দেওয়ালের দিকে ক্বিবলা ঘুরে যায়। ফলে পিছনে একমাত্র দরজাটিই এখন ক্বিবলা হয়েছে।[1] কেননা মক্কা হল মদীনা থেকে দক্ষিণ দিকে। ‘উবাদাহ বিন সামেত (রাঃ) বলেন, আনছারগণ মাল জমা করে রাসূল (সাঃ)-এর নিকটে আসেন এবং বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এদিয়ে আপনি মসজিদটি আরও সুন্দরভাবে নির্মাণ করুন। কতদিন আমরা এই ছাপড়ার নীচে সালাত আদায় করব? জবাবে রাসূল (সাঃ) বলেন,مَا بِيْ رَغْبَةٌ عن أخِي موسى، عَرِيْشٌ كَعَريشِ مُوسى ‘আমার ভাই মূসার ছাপড়ার ন্যায় ছাপড়া থেকে ফিরে আসতে আমার কোন আগ্রহ নেই’।[বায়হাক্বী, দালায়েলুন নবুঅত ২/৪১৩; মুরসাল সহীহ, সহীহাহ হা/৬১৬] নির্মাণ কাজে রাসূল (সাঃ) : ━━━━━━━━━━━━━━━━ মসজিদ নির্মাণে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সশরীরে অংশগ্রহণ করেন। তিনি নিজ হাতে ইট ও পাথর বহন করেন। এ সময় তিনি সাথীদের উৎসাহিত করে বলতেন, اللَّهُمَّ لاَ عَيْشَ إِلاَّ عَيْشُ الْآخِرَه + فَاغْفِرِ الْأَنْصَارَ وَالْمُهَاجِرَةَ ‘হে আল্লাহ! আখেরাতের আরাম ব্যতীত কোন আরাম নেই। অতএব তুমি আনছার ও মুহাজিরদের ক্ষমা কর’ (বুখারী হা/৪২৮)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, اللَّهُمَّ لاَ خَيْرَ إِلاَّ خَيْرُ الْآخِرَهْ + فَانْصُرِ الْأَنْصَارَ وَالْمُهَاجِرَةَ ‘হে আল্লাহ! আখেরাতের কল্যাণ ব্যতীত কোন কল্যাণ নেই। অতএব তুমি আনছার ও মুহাজিরদের সাহায্য কর’ (বুখারী হা/৩৯৩২)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, اللَّهُمَّ إِنَّ الأَجْرَ أَجْرُ الآخِرَهْ + فَارْحَمِ الأَنْصَارَ وَالْمُهَاجِرَهْ ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই পুরস্কার হল আখেরাতের পুরস্কার। অতএব তুমি আনছার ও মুহাজিরদের প্রতি অনুগ্রহ কর’ (বুখারী হা/৩৯০৬)। মসজিদ নির্মাণের বরকতমন্ডিত কাজের প্রতি উজ্জীবিত করার জন্য তিনি বলেন, هَذَا الْحِمَالُ لاَ حِمَالَ خَيْبَرْ + هَذَا أَبَرُّ رَبَّنَا وَأَطْهَرْ ‘এই বোঝা খায়বরের বোঝা নয়। হে আমাদের প্রভু! একাজ অতীব পুণ্যময় ও পবিত্র’ (বুখারী হা/৩৯০৬)। রাসূল (সাঃ)-এর নিজ হাতে কাজ করায় উৎসাহিত হয়ে সাহাবীগণ গেয়ে ওঠেন- لَئِنْ قَعَدْنَا وَالنَّبِيُّ يَعْمَلُ + لَذَاكَ مِنَّا الْعَمَلُ الْمُضَلَّلُ ‘যদি আমরা বসে থাকি, আর নবী কাজ করেন, তবে সেটা আমাদের পক্ষ থেকে হবে নিতান্তই ভ্রান্ত কাজ’ (বুখারী ফৎহসহ হা/৩৯০৬)। আযানের প্রবর্তন :