━━━ আল্লাহ মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে শেষনবী হিসাবে মনোনীত করেন। তিনি বলেন, مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَسُولَ اللهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ ‘মুহাম্মাদ তোমাদের কোন ব্যক্তির পিতা নন। বরং তিনি আল্লাহর রাসূল ও শেষনবী’ (আহযাব ৩৩/৪০)।[1] তিনি বলেন, اللهُ أَعْلَمُ حَيْثُ يَجْعَلُ رِسَالَتَهُ ‘আল্লাহ সর্বাধিক অবগত কার নিকটে তিনি রিসালাত সমর্পণ করবেন’ (আন‘আম ৬/১২৪)। কেননা وَاللهُ يَخْتَصُّ بِرَحْمَتِهِ مَن يَّشَاءُ ‘আল্লাহ স্বীয় অনুগ্রহের জন্য যাকে চান তাকে খাছ করে নেন’ (বাক্বারাহ ২/১০৫)। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, إِنَّ مَثَلِى وَمَثَلَ الأَنْبِيَاءِ مِنْ قَبْلِى كَمَثَلِ رَجُلٍ بَنَى بَيْتًا فَأَحْسَنَهُ وَأَجْمَلَهُ إِلاَّ مَوْضِعَ لَبِنَةٍ مِنْ زَاوِيَةٍ فَجَعَلَ النَّاسُ يَطُوفُونَ بِهِ وَيَعْجَبُونَ لَهُ وَيَقُولُونَ هَلاَّ وُضِعَتْ هَذِهِ اللَّبِنَةُ قَالَ فَأَنَا اللَّبِنَةُ وَأَنَا خَاتِمُ النَّبِيِّينَ ‘আমি ও আমার পূর্বেকার নবীগণের তুলনা ঐ ব্যক্তির ন্যায় যিনি একটি গৃহ নির্মাণ করেছেন। অতঃপর সেটিকে খুবই সুন্দর ও আকর্ষণীয় করেছেন। কিন্তু কোণায় একটি জায়গা খালি রেখেছেন। তখন লোকেরা ঐ স্থানটি ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে এবং বিস্ময় প্রকাশ করতে থাকে ও বলতে থাকে, কেন এখানে একটি ইট দেওয়া হয়নি? রাসূল (সাঃ) বলেন, আমিই সেই ইট এবং আমিই শেষনবী’।[বুখারী হা/৩৫৩৫; মুসলিম হা/২২৮৬] তিনি বলেন, بُعِثْتُ إِلَى الأَحْمَرِ وَالأَسْوَدِ، وَكَانَ النَّبِىُّ يُبْعَثُ إِلَى قَوْمِهِ خَاصَّةً وَبُعِثْتُ إِلَى النَّاسِ عَامَّةً- ‘আমি লাল ও কালো সকলের প্রতি প্রেরিত হয়েছি। অন্য নবীগণ নির্দিষ্টভাবে স্ব স্ব গোত্রের জন্য প্রেরিত হয়েছেন। কিন্তু আমি মানবজাতির সকলের জন্য প্রেরিত হয়েছি’।[বুখারী হা/৩৩৫; মুসলিম হা/ ৫২১; মিশকাত হা/৫৭৪৭] আল্লাহ বলেন, وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلاَّ كَافَّةً لِلنَّاسِ ‘আমি তোমাকে পুরা মানবজাতির প্রতি প্রেরণ করেছি’ (সাবা ৩৪/২৮)। অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, فَأَرْسَلَهُ إِلَى الْجِنِّ وَالإِنْسِ ‘অতঃপর আল্লাহ তাঁকে জিন ও ইনসানের প্রতি প্রেরণ করেন’।(মিশকাত হা/৫৭৭৩) আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত অন্য হাদীছে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, وَأُرْسِلْتُ إِلَى الْخَلْقِ كَافَّةً وَخُتِمَ بِىَ النَّبِيُّونَ ‘আমাকে পুরা সৃষ্টি জগতের প্রতি প্রেরণ করা হয়েছে এবং আমাকে দিয়েই নবীদের সিলসিলা সমাপ্ত করা হয়েছে’।[মুসলিম হা/৫২৩; মিশকাত হা/৫৭৪৮] বর্তমান পৃথিবীর সকল জিন ও ইনসান শেষনবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উম্মত। যারা তাঁর দ্বীন কবুল করেছে, তারা হল ‘উম্মাতুল ইজাবাহ’ (أُمَّةُ الْإِجَابَةِ) অর্থাৎ মুসলিম। আর যারা তাঁর দ্বীন কবুল করেনি, তারা হল ‘উম্মাতুদ দা‘ওয়াহ’ (أُمَّةُ الدَّعْوَةِ) অর্থাৎ কাফির-মুশরিকগণ, যাদেরকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দিতে হবে। যেহেতু আর কোন শরী‘আত নিয়ে আর কোন নবী আসবেন না, সেকারণ ক্বিয়ামত পর্যন্ত সকল জিন-ইনসান শেষনবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উম্মত। মুসলমানের কর্তব্য হল শেষনবী (সাঃ)-এর আনীত ইসলামী শরী‘আত নিজেরা মেনে চলা এবং দুনিয়াবাসীকে তা মেনে চলার আহবান জানানো। কেননা হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এরশাদ করেছেন,وَالَّذِى نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لاَ يَسْمَعُ بِى أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الأُمَّةِ يَهُودِىٌّ وَلاَ نَصْرَانِىٌّ ثُمَّ يَمُوْتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِى أُرْسِلْتُ بِهِ إِلاَّ كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ ‘যাঁর হাতে মুহাম্মাদের জীবন তাঁর কসম করে বলছি, ইহূদী হৌক বা নাছারা হৌক এই উম্মতের যে কেউ আমার আগমনের খবর শুনেছে, অতঃপর মৃত্যুবরণ করেছে, অথচ আমি যা নিয়ে প্রেরিত হয়েছি, তার উপরে ঈমান আনেনি, সে ব্যক্তি অবশ্যই জাহান্নামী হবে’।[মুসলিম হা/১৫৩; মিশকাত হা/১০] মূলতঃ খতমে নবুঅতের আক্বীদার মধ্যেই বিশ্ব মুসলিম ও বিশ্ব মানবতার ঐক্য ও অগ্রগতি নির্ভর করে। এই ঐক্য বিনষ্ট করার জন্য শয়তান শুরু থেকেই চেষ্টা চালিয়েছে এবং এখনও চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) উম্মতকে সাবধান করে বলেন, ‘অতদিন ক্বিয়ামত হবে না, যতদিন না আমার উম্মতের কিছু গোত্র মুশরিকদের সঙ্গে মিশে যাবে এবং মূর্তিপূজা করবে। আর সত্ত্বর আমার উম্মতের মধ্যে ত্রিশ জন মিথ্যাবাদীর জন্ম হবে। যাদের প্রত্যেকে ধারণা করবে যে, সে নবী (كَذَّابُونَ ثَلاَثُونَ كُلُّهُمْ يَزْعُمُ أَنَّهُ نَبِىٌّ)। অথচ আমি শেষনবী। আমার পরে কোন নবী নেই। আর আমার উম্মতের মধ্যে চিরদিন একটি দল হক-এর উপরে বিজয়ী থাকবে, বিরোধীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। এভাবেই আল্লাহর নির্দেশ (ক্বিয়ামত) এসে যাবে’ (আবুদাঊদ হা/৪২৫২)। রাসূল (সাঃ)-এর জীবদ্দশায় ছান‘আর আসওয়াদ ‘আনাসী ও ইয়ামামার মুসায়লামা কাযযাব (মুসলিম হা/২২৭৪) এবং তাঁর মৃত্যুর পরে আরও কয়েকজন সহ এ যুগে মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানী (১৮৩৯-১৯০৮ খৃ.) তাদের অন্যতম।