in পদার্থবিজ্ঞান by
সূর্য থেকে পৃথিবীতে আগত রশ্মির নাম কি?

3 Answers

+1 vote
by
সৌর রশ্মি হলো সূর্য থেকে পৃথিবীতে আগত রশ্মি।
0 votes
by
সূর্য থেকে পৃথিবীতে আগত রশ্মি হলো সৌর রশ্মি
0 votes
by
সূর্যকে আমরা সাধারণ একটি G শ্রেণীর (নক্ষত্রের শ্রেণীবিভাগ অংশ পড়ুন) বামন নক্ষত্র বলে থাকি। আসলে “সাধারণ” ব্যাপারটা সত্যি কারণ, সূর্যের মতো অনেক অনেক নক্ষত্র আছে! কিন্তু আসলে এটি এতটাও সাধারণ নক্ষত্র নয়! মহাশূন্যের বেশিরভাগ নক্ষত্রই সূর্যের চেয়ে আকারে ছোট! মহাবিশ্বের নক্ষত্রগুলোকে ভর অনুসারে ভর বেশি থেকে কমের দিকে সাজানো হলে সূর্য প্রথম ১০% এর মধ্যে থাকবে! আমাদের গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ের নক্ষত্রগুলোর গড় ভর সূর্যের ভরের অর্ধেকেরও কম!
আমাদের সূর্যের জন্ম আজ থেকে প্রায় ৪,৬০০ কোটি বছর আগে! বিজ্ঞানীদের ধারণা সূর্য ও আমাদের সৌরজগতের জন্ম এক বিশাল মহাজাগতিক মেঘ থেকে যা অভিকর্ষ বলের প্রভাবে কেন্দ্রীভূত হতে থাকে এবং এই মেঘ থেকেই জন্ম হয় সূর্যের। আমরা আগে জেনেছি কিভাবে একটি নক্ষত্রের জন্ম হয়! সূর্যের জন্ম যেই গ্যাস ও ধূলিকণার মেঘ থেকে, একে সৌর নেবুলা বলা হয়। গ্যাস ও ধুলা যখন ঘনীভূত হচ্ছিল তখন তা ভরকেন্দ্রকে ঘিরে চাকতির মতো করে ঘুরতে ঘুরতে কেন্দ্রে পতিত হচ্ছিল আর গঠন করছিল সূর্যের। আর এই চাকতির থেকে কিছু কিছু জায়গায় গ্যাস ও ধুলা ঘনীভূত হয়েই আমাদের সৌরজগতের গ্রহ উপগ্রহ এসবের উৎপত্তি ঘটায়।

সূর্য তাঁর শক্তির যোগান পায় পারমাণবিক ফিউশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এ ব্যাপারে আগের পর্বে লিখেছি তাই বিস্তারিত বলবো না। এই পদ্ধতিতে এটি এর কেন্দ্রে হাইড্রোজেনকে হিলিয়ামে রুপান্তরিত করছে। বর্তমানে সূর্যের প্রায় ৭০% ই হাইড্রোজেন ও ২৮% হিলিয়াম রুপে আছে। বাকি ২% অন্যান্য মৌল। এই অনুপাত সময়ের সাথে ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হচ্ছে! কারণ হাইড্রোজেন রুপান্তরিত হচ্ছে হিলিয়ামে।



সূর্যের কাঠামোকে বেশ কিছু অঞ্চলে ভাগ করা যায়। যেমন কেন্দ্রীয় অঞ্চল, বিকিরণ অঞ্চল, ট্যাকোক্লাইন, তাপ পরিচলন অঞ্চল, পৃষ্ঠ ইত্যাদি!
সূর্যের উৎপাদিত শক্তির পুরোটাই আসে পারমাণবিক ফিউশন থেকে আর এটি ঘটে সূর্যের কেন্দ্রীয় বা Core অঞ্চলেই। সূর্যের কেন্দ্র থেকে এর পৃষ্ঠ পর্যন্ত দূরত্বের ৩০% এর মধ্যেই সূর্যের প্রায় সবটুকু শক্তি উৎপাদিত হয়ে থাকে। বাকি ৭০% এলাকায় এই শক্তি স্তরে স্তরে পরিচলিত হয়। সূর্যের কেন্দ্রের তাপমাত্রা প্রায় ১ কোটি ৫৭ লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াস! ধাপে ধাপে সব স্তর পেরিয়ে এই তাপ যখন সূর্যের পৃষ্ঠে বা আমরা সূর্যের যে অংশ দেখি অর্থাৎ ফটোস্ফিয়ার এ পৌঁছায়, তখন তা কমে গিয়ে হয় মাত্র ৫,৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই অঞ্চল থেকেই সূর্য এর সব ধরণের শক্তি বিকিরিত করে। আলো কণিকা ফোটন এই শক্তি বহন করে চারদিকে ছড়িয়ে দেয়। এ অঞ্চলে প্রায়ই সৌরকলঙ্ক বা সান স্পট দেখা যায়, যা সূর্যের চৌম্বকক্ষেত্রের কারণে হয়ে থাকে। এখানে তাপমাত্রা কম (৩,৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থাকে আশেপাশের তুলনায়। এরা কয়েক দিন থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

সূর্য নিজ অক্ষকে কেন্দ্র করে নিয়মিত ঘুরছে। তবে এটি যেহেতু কোন কঠিন বস্তু না বরং বিশাল গ্যাসের পিণ্ড তাই এর ঘোরার বেগ সবজায়গায় সমান নয়। অর্থাৎ বিষুবীয় অঞ্চলে এটি পৃথিবীর হিসেবে প্রায় সাড়ে ২৫ দিনে একবার ঘুরে আসে, আর মেরু অঞ্চলে একবার ঘুরতে ৩৬ দিন পর্যন্ত লাগতে পারে! যেকোনো গ্যাসীয় গ্রহেও এমন হয়ে থাকে।



সূর্যের পৃষ্ঠের বাইরের মণ্ডলকে আবার চার ভাগে ভাগ করা যায়। ক্রোমোস্ফিয়ার, রুপান্তর অঞ্চল, সৌরমুকুট ও হিলিওস্ফিয়ার।

ফটোস্ফিয়ার এর উপরেই ক্রোমোস্ফিয়ার। গ্রিক ক্রোমা শব্দের মানে রঙ। হালকা গোলাপি লাল রঙের এই মণ্ডল কেবল পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময়েই দেখা যায়। অন্য সময় বোঝা যায়না সূর্যের অতি উজ্জ্বলতার কারণে! এ অঞ্চলের তাপমাত্রা উচ্চতার সাথে বেড়ে ২০ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হতে পারে।
এর পরের অঞ্চল হচ্ছে রুপান্তর অঞ্চল। করোনা বা সৌরমুকুট অঞ্চলের আগে এ অঞ্চল। ক্রোমোস্ফিয়ারের ২০০ কিলোমিটার উপর অবদি এ অঞ্চলের বিস্তার। এখানে তাপমাত্রা উচ্চতার সাথে আরও বেড়ে প্রায় ১ লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি হয়! এ অঞ্চল পৃথিবী থেকে দেখা দুঃসাধ্য, কিন্তু মহাশূন্য থেকে শক্তিশালী যন্ত্রের সাহায্যে এর অস্তিত্ব বোঝা যায়!



এর পরেই আছে করোনা বা সৌরমুকুট। পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় সূর্যের চারপাশে ঘিরে থাকা উজ্জ্বল অঞ্চলকে সৌরমুকুট বলে। এ অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা ১৫ লক্ষ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো হতে পারে, তবে কিছু কিছু জায়গায় তা ২ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস ও হতে পারে! এ অঞ্চল থেকে সৌরবায়ু বা সোলার উইন্ড এর উৎপত্তি হয়। আলো ছাড়াও সূর্য তাপ ও চার্জিত কণার স্রোত পরিচলিত করে, একেই সৌরবায়ু বলে। যার বেশিরভাগ ই ইলেকট্রন, প্রোটন ও আলফা কণিকা! এই বায়ুর গতি প্রতি সেকেন্ডে ৪৫০ কিলোমিটার! মাঝে মাঝে এর প্রভাবে পৃথিবীতে স্যাটেলাইট যোগাযোগ ব্যহত হয়, এমনকি বিদ্যুৎ পরিবহণ ব্যবস্থাও বন্ধ করে দিতে পারে! আর পৃথিবীর আকাশে দেখতে পাওয়া অরোরা এর ফলেই হয় কিন্তু!

মাঝেমাঝে সূর্যের বুকে বড় বড় বিস্ফোরণ ঘটে! বিশেষ করে সূর্যের পৃষ্ঠে! যা সৌরঝড় নামে পরিচিত। এসময় সূর্য থেকে ইলেকট্রন, আয়ন ও পরমাণু স্রোত তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গের  সাথে মহাশূন্যে নিক্ষিপ্ত হয়! একে Solar Flare বলে। পৃথিবীতে এই স্রোত এসে পৌঁছাতে দুই একদিন সময় লাগে! অন্যান্য নক্ষত্রের বেলায় একে Stellar Flare বলে। এই Flare সৌরকলংকের আশেপাশে উৎপন্ন হয়ে থাকে যেখানে চৌম্বকক্ষেত্র প্রবল থাকে। সৌরমুকুটে সঞ্চিত চৌম্বক শক্তি হঠাৎ মুক্তি পেলে এ অবস্থার অবতারণা ঘটে! অনেকসময় এ প্রবল তড়িৎচৌম্বক বলের প্রভাবে পৃথিবীতে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি বা বেতার যোগাযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যদিও পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র ও বায়ুমণ্ডল সূর্য থেকে আগত অধিকাংশ ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয় রশ্মি থেকে আমাদের রক্ষা করে।

সূর্য আমাদের শক্তির উৎস, আর অন্যান্য শক্তির উৎসের মতোই সূর্য অস্থায়ী একটি উৎস। সূর্য তাঁর জীবনের অর্ধেকটা এর মধ্যেই পেরিয়ে এসেছে। এর মূল জ্বালানী হাইড্রোজেনের অর্ধেকটা এর মধ্যেই শেষ করে ফেলেছে এটি! যা হাইড্রোজেন আছে তা দিয়ে আরও ৫০০ কোটি বছর চলবে। হাইড্রোজেন ফিউশন প্রক্রিয়ায় হিলিয়াম হয়েই শক্তির উৎপন্ন করে। এই ফিউশন প্রক্রিয়া বাইরের দিকে একটা চাপের সৃষ্টি করে আর সূর্যের অভিকর্ষ নিজের কেন্দ্রের দিকে একটা টান বা বলের সৃষ্টি করে। এই দুইয়ে মিলে একটা স্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি করে। এর কারণেই সূর্য বা অন্যান্য নক্ষত্র গোলাকার ধারণ করে।

তাই যখন ফিউশন শেষ হয়ে যাবে তখন বহির্মুখী চাপের তুলনায় অভিকর্ষের টান বেশি হবে ও সূর্যের আকার সংকুচিত হয়ে আসবে! এ সংকোচনের ফলে তাপমাত্রা বেড়ে যাবে ও হিলিয়াম ফিউশনের মাধ্যমে কার্বন হবার মতো অবস্থায় পৌঁছাবে। নক্ষত্রের ভর অনুযায়ী এই প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে বা হঠাৎ হঠাৎ বিস্ফোরণের মাধ্যমে হতে পারে। যাই হোক, এই ফিউশন প্রক্রিয়ার ফলে উৎপন্ন শক্তির ফলে সূর্য তখন আবার বড় হতে থাকবে ও এর আসল আকারের থেকে অনেক বড় হয়ে যাবে। নির্দিষ্ট করে বলতে তখন সূর্য বড় হয়ে বুধ, শুক্রকে গ্রাস করে প্রায় পৃথিবী পর্যন্ত চলে আসতে পারে। নক্ষত্রের এ অবস্থাকে রেড জায়ান্ট বলে।

এ অবস্থায় সূর্যের পৃষ্ঠতাপমাত্রা কয়েক হাজার ডিগ্রি কমে যাবে। এভাবে সূর্য প্রায় আরও ১০০ কোটি বছর কাটাবে। এরপর হিলিয়াম শেষ হয়ে গেলে তখন সূর্য আবার অভিকর্ষের টানে আবার ছোট হয়ে যাবে, তখন এক পর্যায়ে সূর্যের অভিকর্ষ বল তাঁর বাইরের বিশাল আবরণ আর ধরে রাখতে পারবে না। ফলে তা বিশাল গ্যাস ও ধূলিকণার মেঘ রুপে চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে ও কেন্দ্রে পড়ে থাকবে সূর্যের ছোট সাদাটে রঙের উজ্জ্বল কেন্দ্র, যাকে তখন সাদা বামন বা হোয়াইট ডোয়ার্ফ নক্ষত্র বলা হবে! যা আকারে আমাদের পৃথিবীর সমান হবে প্রায়!

উৎপন্ন হবে গ্রহীয় নেবুলার! সাদা বামন নিজের টানে সংকুচিত হয়ে এত ঘন হয় যে এর প্রতি বর্গ সেন্টিমিটার পদার্থের ভর ১০ কেজি থেকে ১০০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এক পর্যায়ে যখন সাদা বামন আর শক্তি নির্গত করতে পারবে না, তা পরিণত হবে কালো বামনে। যদিও মহাবিশ্বে এখনো কোন কালো বামনের খোঁজ পাওয়া যায়নি, কারণ মহাবিশ্বের বয়স এখনো এতটা বেশি হয়নি!

Related questions

উত্তর সন্ধানী! বেস্ট বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর ওয়েবসাইট। প্রশ্ন করুন, উত্তর নিন, সমস্যা সমাধান করুন ।
উত্তর সন্ধানী কি?
উত্তর সন্ধানী বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর এর ওয়েবসাইট।
গোপন প্রশ্ন ও উত্তর। ডিজিটাল শিক্ষায় প্রশ্নের উত্তরের সেরা ওয়েবসাইট।
...