হযরত মূসা (আ.)-এর মিশর ত্যাগ এবং ফেরআউন ও তার দলবল ধ্বংসের ঘটনা কুরআনে বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে। এটি ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়, যেখানে আল্লাহর শক্তি, ইমানের দৃঢ়তা এবং অবিশ্বাসীদের শাস্তির শিক্ষা দেয়া হয়েছে।
মিশর ত্যাগের পটভূমি:
হযরত মূসা (আ.)-কে আল্লাহ নবী হিসেবে ফেরাউন ও মিশরের বনি ইসরাইলদের কাছে প্রেরণ করেন। মিশরের ফেরাউন তখন একজন অত্যাচারী শাসক ছিলেন, যিনি বনি ইসরাইলদেরকে কঠোরভাবে দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রেখেছিলেন। আল্লাহর আদেশে হযরত মূসা (আ.) ফেরাউনের কাছে যান এবং তাকে আল্লাহর পথে ডাকার চেষ্টা করেন। মূসা (আ.) ফেরাউনকে বলেন, আল্লাহ একমাত্র ইলাহ এবং তাঁকে মেনে চলার আদেশ দেন।
ফেরাউনের অবাধ্যতা:
ফেরাউন মূসার (আ.) আসমানী আহ্বানকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং তাকে ও বনি ইসরাইলদের নির্যাতন করতে থাকেন। ফেরাউন নিজেকে "প্রভু" হিসেবে দাবি করতেন এবং মূসার (আ.) বার্তাকে মিথ্যা মনে করতেন। আল্লাহ ফেরাউন ও তার জাতিকে বিভিন্ন ধরনের বিপদ (যেমন প্লেগ, পোকামাকড়, বন্যা, পঙ্গপাল) দিয়ে সতর্ক করেন, কিন্তু ফেরাউন তবু আল্লাহর আদেশ মানতে অস্বীকার করেন।
মিশর ত্যাগ:
ফেরাউনের অত্যাচার যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন আল্লাহ হযরত মূসা (আ.)-কে নির্দেশ দেন মিশর ত্যাগ করতে এবং বনি ইসরাইলদের নিয়ে মিশর থেকে পালানোর প্রস্তুতি নিতে। হযরত মূসা (আ.) আল্লাহর আদেশ অনুসারে বনি ইসরাইলদের নিয়ে রাতের আঁধারে মিশর ত্যাগ করেন। তারা আল্লাহর নির্দেশে রওনা হয় এবং রেড সি (লোহিত সাগরের) দিকে যাত্রা করে।
ফেরাউনের ধ্বংস:
ফেরাউন মূসা (আ.) ও বনি ইসরাইলদের পালানোর খবর শুনে বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে তাদের পিছু নেন। তারা লোহিত সাগরের তীরে মূসা (আ.) এবং তার অনুসারীদের আটকে ফেলে। বনি ইসরাইলরা তখন চরম ভীত হয়ে পড়ে, কারণ সামনের দিকে সমুদ্র আর পিছনে ফেরাউনের সৈন্যবাহিনী। তখন আল্লাহ হযরত মূসা (আ.)-কে তাঁর লাঠি দিয়ে সমুদ্র আঘাত করতে বলেন।
সমুদ্র বিভক্ত হওয়া: মূসা (আ.) যখন আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী তার লাঠি সমুদ্রের দিকে আঘাত করেন, তখন সমুদ্র বিভক্ত হয়ে যায়। দুই দিকে পানির পাহাড় তৈরি হয় এবং মাঝখানে শুকনো পথ তৈরি হয়, যা দিয়ে বনি ইসরাইলরা নিরাপদে পার হয়ে যায়।
ফেরাউনের ধ্বংস: যখন মূসা (আ.) এবং তার অনুসারীরা সমুদ্র পার হয়ে নিরাপদে পৌঁছে যায়, তখন ফেরাউন এবং তার সৈন্যরা সেই পথ দিয়ে তাদের ধাওয়া করে। কিন্তু যখন তারা সমুদ্রের মাঝখানে পৌঁছায়, আল্লাহ সমুদ্রের পানি তাদের উপর ফিরিয়ে দেন, এবং ফেরাউনসহ তার সম্পূর্ণ বাহিনী ডুবে মারা যায়।
কুরআনের বর্ণনা:
এই ঘটনাটি কুরআনে সূরা আশ-শু'আরা (২৬:৬৩-৬৮) এবং অন্যান্য সূরায় বর্ণিত হয়েছে, যেখানে আল্লাহ বলেন: "অতঃপর আমি মূসাকে নির্দেশ দিলাম তোমার লাঠি দিয়ে সমুদ্রকে আঘাত করো। তখন সমুদ্র দ্বিখণ্ডিত হলো এবং প্রত্যেক অংশ ছিল বিশাল পর্বতের মত। ... আমি অন্যদেরকে সেখানে এনে ডুবিয়ে দিলাম।" (২৬:৬৩-৬৬)
শিক্ষা:
এই ঘটনাটি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এবং ধৈর্যের একটি মহান উদাহরণ। ফেরাউনের ধ্বংস দ্বারা বোঝা যায়, আল্লাহ অত্যাচারী এবং অহংকারীদের কিভাবে শাস্তি দেন, আর আল্লাহর নৈকট্য এবং বিশ্বাস রাখার ফলস্বরূপ আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের কিভাবে মুক্তি দেন।