বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি (Binary Number System) হলো এমন একটি সংখ্যা পদ্ধতি, যেখানে শুধুমাত্র দুটি সংখ্যা ব্যবহার করা হয়: ০ এবং ১। এই পদ্ধতি ডিজিটাল সিস্টেম এবং কম্পিউটারের মূল ভিত্তি, কারণ এটি ট্রানজিস্টর বা সুইচের দুটি অবস্থান (চালু বা বন্ধ, উচ্চ বা নিম্ন ভোল্টেজ) দিয়ে কার্যকর করা সহজ।
বাইনারি সংখ্যা ব্যবহারের কারণ:
1. ডিজিটাল ডিভাইসে: কম্পিউটার এবং অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইসগুলি মূলত ইলেকট্রনিক সার্কিট দিয়ে তৈরি, যা শুধুমাত্র দুই ধরণের সিগনাল (0 এবং 1) বুঝতে পারে। তাই বাইনারি পদ্ধতি ব্যবহারে ইলেকট্রনিক যন্ত্রগুলোর কার্যকারিতা বাড়ে।
2. তথ্য সঞ্চালন ও প্রক্রিয়াকরণ: সমস্ত তথ্য যেমন লেখা, ছবি, শব্দ ইত্যাদি ডিজিটাল সিস্টেমে বাইনারি ফরম্যাটে রূপান্তরিত করে প্রক্রিয়াকৃত হয়। এতে তথ্য নিরাপদ ও দ্রুত প্রক্রিয়াকরণ করা যায়।
3. লজিক গেট ও ট্রানজিস্টর ব্যবহারে সহজ: কম্পিউটারের লজিক গেট এবং ট্রানজিস্টর প্রযুক্তি বাইনারি সিস্টেমের মাধ্যমে কার্যকরভাবে কাজ করে। দুটি ভিন্ন ভোল্টেজ লেভেল (উচ্চ এবং নিম্ন) দিয়ে সহজেই ০ এবং ১ বোঝানো যায়।
বাইনারি পদ্ধতির উদাহরণ ও ব্যবহার:
১. সংখ্যা নিরূপণ:
বাইনারি পদ্ধতিতে সংখ্যা গণনা করা হয় বেস-২ বা ভিত্তি ২ এর মাধ্যমে। উদাহরণস্বরূপ:
দশমিক সংখ্যা 5 = বাইনারি সংখ্যা 101
(2^2 + 2^0 = 4 + 1 = 5)
দশমিক সংখ্যা 9 = বাইনারি সংখ্যা 1001
(2^3 + 2^0 = 8 + 1 = 9)
২. কম্পিউটার মেমরি ও স্টোরেজ:
মেমরি, হার্ডডিস্ক, পেনড্রাইভ ইত্যাদি স্টোরেজ ডিভাইসগুলো তথ্য সংরক্ষণের জন্য বাইনারি পদ্ধতি ব্যবহার করে। প্রত্যেকটি বিট (bit) একটি বাইনারি সংখ্যা প্রকাশ করে (০ বা ১)। ৮ বিট মিলে একটি বাইট (Byte) গঠন করে।
৩. ডেটা ট্রান্সমিশন:
ইন্টারনেট, ওয়াই-ফাই, এবং ব্লুটুথের মতো প্রযুক্তি তথ্য প্রেরণ করার জন্য বাইনারি সংকেত ব্যবহার করে। এতে উচ্চ ও নিম্ন ভোল্টেজের সিগনাল দিয়ে ০ এবং ১ বোঝানো হয়, যা ডেটা রূপান্তরিত করে।
৪. লজিক গেটের কার্যক্রম:
কম্পিউটারের প্রসেসর ও অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইসের মধ্যে লজিক গেট (AND, OR, NOT ইত্যাদি) ব্যবহার করা হয়। এই গেটগুলি বাইনারি পদ্ধতি ব্যবহার করে ইনপুট ও আউটপুট তৈরি করে। উদাহরণস্বরূপ:
AND গেট: যদি দুটি ইনপুট ১ হয়, তাহলে আউটপুট ১ হবে, অন্যথায় ০।
OR গেট: যদি যেকোনো একটি ইনপুট ১ হয়, তাহলে আউটপুট ১ হবে, অন্যথায় ০।
৫. প্রোগ্রামিং ভাষা:
নিম্ন স্তরের প্রোগ্রামিং ভাষা, যেমন মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজ বা অ্যাসেম্বলি ল্যাঙ্গুয়েজ, বাইনারি কোড ব্যবহার করে। উচ্চ স্তরের প্রোগ্রামিং ভাষাগুলি কম্পাইল হলে মেশিন ল্যাঙ্গুয়েজে পরিণত হয়, যা বাইনারি সংখ্যা ব্যবহার করে প্রসেসরে কার্যকর হয়।
৬. ডিজিটাল ঘড়ি:
বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করে ডিজিটাল ঘড়িতে সময় নির্ধারণ করা হয়। প্রত্যেকটি সংখ্যা বাইনারি আকারে উপস্থাপন করা হয়, যা ০ এবং ১ দিয়ে সময় প্রকাশ করে।
উদাহরণ:
দশমিক সংখ্যা 7-এর বাইনারি রূপ: 111
দশমিক সংখ্যা 12-এর বাইনারি রূপ: 1100
সংক্ষেপে:
বাইনারি পদ্ধতি কম্পিউটার বিজ্ঞান ও ডিজিটাল ইলেকট্রনিক্সের ভিত্তি। এর মাধ্যমে আমরা কম্পিউটার চালনা, প্রোগ্রামিং, ডেটা স্টোরেজ, এবং তথ্য সঞ্চালনের কাজ করতে পারি।