১৩ থেকে ১৭১৮ শতকের বাংলা অঞ্চলে কৃষি ছিল মূলত জনজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ সময়ের কৃষির আকার, পদ্ধতি, এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রভাবের বিবরণ নিচে উল্লেখ করা হলো:
কৃষির অবস্থা
1. প্রধান ফসল:
বাংলায় প্রধানত ধান, গম, তিল, মসুর, বাদাম, পাট, এবং বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ করা হতো। ধান ছিল প্রধান খাদ্য ফসল।
পাট ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য, যা ভারতীয় উপমহাদেশে খুব জনপ্রিয় ছিল।
2. কৃষি পদ্ধতি:
ঐ সময়ে কৃষকরা মূলত ভূমিদাস বা মালিকানা কৃষক ছিলেন। জমির মালিকানার উপর ভিত্তি করে কৃষকরা ফসল চাষ করতেন।
রুক্ষ এবং কৃষির জন্য অনুকূল স্থানগুলিতে ধান চাষ করা হতো। জলবায়ু এবং জলস্রোত কৃষির জন্য অত্যন্ত সহায়ক ছিল।
3. জলবায়ু ও প্রাকৃতিক পরিবেশ:
বাংলার মাটি উর্বর এবং আর্দ্র, যা কৃষির জন্য অনুকূল। বর্ষাকালে অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতো, কিন্তু এটি কৃষির জন্যও উপকারী ছিল।
নদী ও খালগুলোর মাধ্যমে সেচের সুবিধা ছিল, যা কৃষকদের ফসল উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক ছিল।
সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রভাব
1. কৃষকের জীবনযাত্রা:
কৃষকের জীবনযাত্রা ছিল সাধারণত কঠিন। তারা কাজের জন্য দীর্ঘ সময় কাটাতেন এবং তাদের অধিকাংশ ফসলের অংশ জমির মালিক বা দখলদারদের দিতে হতো।
কৃষকদের মধ্যে একটি বৃহৎ অংশ ছিল খেতমজুর, যারা দিনমজুরি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
2. বাণিজ্য ও অর্থনীতি:
কৃষির উপর ভিত্তি করে বাংলা অঞ্চলে বাণিজ্য ও অর্থনীতি গড়ে উঠেছিল। কৃষি উৎপাদন শহরে বাজারে বিক্রির মাধ্যমে অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হয়েছিল।
ধান, পাট, এবং অন্যান্য কৃষিপণ্য রপ্তানি করে বাংলা অঞ্চলের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
3. শাসন ও প্রশাসন:
মুঘল শাসনামলে কৃষকদের উপর কিছু কর আরোপ করা হতো। কৃষি উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীলতা শাসকদের জন্য একটি রাজস্ব উত্স ছিল।
জমিদারদের মধ্যে জমির মালিকানা, কর সংগ্রহ এবং কৃষকদের প্রতি কর্তৃত্বের কারণে সামাজিক বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছিল।
উন্নয়ন ও পরিবর্তন
এই সময়ে কিছু নতুন প্রযুক্তি এবং কৃষি পদ্ধতি চালু হয়েছিল, যা উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক ছিল।
কৃষকদের মধ্যে কিছু উন্নয়নমূলক চিন্তা ও আন্দোলন দেখা দেয়, বিশেষ করে ১৭শ শতকের শেষের দিকে।
উপসংহার
১৩ থেকে ১৭১৮ শতকের বাংলা অঞ্চলে কৃষি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, যা মানুষের জীবিকা ও সমাজের কাঠামোকে প্রভাবিত করেছে। কৃষি কেবল খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যম নয়, বরং অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনের একটি মূল অংশ ছিল।