in জীব বিজ্ঞান by
রাসেলস ভাইপার সাপে কামড়ালে কি হয়?

রাসেলস ভাইপার কামড়ালে মানুষ মারা যায় নাকি?

1 Answer

0 votes
by
রাসেলস ভাইপার বা বাংলায় চন্দ্রবোড়া, কোন কোন এলাকায় উলুবোড়া নামেও পরিচিত। রাসেলস ভাইপার একটি তীব্র বিষধর সাপ।

ভাইপারিডি পরিবারের ডাবোইয়া গণের রাসেলি প্রজাতির সাপ।

বৈজ্ঞানিক নাম D. russelli (Daboira russelli)

ইদানিং বাংলাদেশে সাপটিকে নিয়ে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকের প্রাণ গেছে এই সাপের ছোবলে। তবে আগে বাংলাদেশে ছিলনা বললেই চলে। দেখা যেতনা। অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন বাংলাদেশ থেকে হয়ত বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
যাই হোক বর্তমানে দেশের ৩২টি জেলাতে এর উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। আরও হয়ত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এখানে রাসেলস ভাইপার সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া হল।

রাসেলস ভাইপার খুব বেশি লম্বা সাপ নয়। তবে এটি বেশ মোটা স্বাস্থ্যবান। মোটা বলেই একে খাটো দেখায়। গায়ের রঙ পিঠের দিকে হলুদাভ, বুকের দিকে ক্রমশ সাদা বা মেটে বর্ণের বলা যেতে পারে তবে অজগর সাপের মত বড় বড় কালো ছোপ রয়েছে তাই অনেকেই অজগরের বাচ্চা বলে ভুল করেন। অজগর নির্বিষ সাপ কিন্তু চন্দ্রবোড়া খুবই বিষধর সাপ।
চন্দ্রবোড়া ঝোপঝড় যুক্ত বাগান মানুষের বাড়ির আশেপাশের চেয়ে বরং ক্ষেত খামার, কৃষি জমিতে বিলে, ফসলের মাঠে থাকতে বেশি পছন্দ করে। ফসলে ক্ষেতে থাকা ইদুরের জন্যই এরা ঐরকম স্থানে থাকে। তবে বাড়ির আশেপাশেও এরা আসে ঘরের ইদুরের টানে। আর এদের আবাস্থল ধ্বংস হলে আশ্রয়ের খোজে যেকোন জায়গায় যেতে পারে তা বলার প্রয়োজন নাই।
রাসেলস ভাইপার স্থলজ এটি জলজ নয় কিন্তু তবুও এরা পানিতে দারুণ সাতার কাটতে পারে। শুকনো, স্যাতসেতে বা ভেজা ঘাসযুক্ত ক্ষেতে এরা থাকে।  তবে সাধারণত এরা গাছে, টোঙে ওঠেনা। বনের মধ্যে কম দেখা গেলেও ধূলা বালি যুক্ত গর্তযুক্ত ক্ষুদ্র গাছ যুক্ত স্থান যেখানে উদুর ব্যাং এর মত ছোট প্রাণিরা চরে বেড়াতে পারে এরা সেখানেই বেশি থাকে।
রাসেল ভাইপার কিছুটা অলস ধরনের সাপ অর্থাৎ এরা সারাদিন ধরে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেনা। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে এরা বরং সারাদিন এক জায়গায় বা খুব ছোট এরিয়ার মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে থাকতে পছন্দ করে। নড়াচড়া একটু কমই পছন্দ করে।
সাবধান এর মানে এই নয় যে এরা দ্রুত নড়াচড়া করতেই পারেনা। শুনে অবাক হবেন যে রাসেলস ভাইপারই কেবল অন্য যেকোন সাপের চেয়ে দ্রুত গতিতে ছোবল দিতে পারে। চোখের নিমেষেই ছোবল দিয়ে পূর্ব স্থানে ফেরত যেতে পারে। মনে হবে যেন কিছু হয়নি, ছোবল দেইনি। উপরে অলস বলার কারণ হল এরা নিজ জায়গা ছেড়ে চলে যেতে চাইনা। অন্যন্য সাপ কামড়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায় কিন্তু চন্দ্রবোড়া কামড় দিয়েও নিজের জায়গায় বা আশেপাশে থাকে। পালিয়ে যায়না। অন্যন্য সাপের মত সারাদিন এদিক সেদিক করে বেড়ায় না।
বিষধর যেকোন সাপের চেয়ে রাসেলস ভাইপারের বিষদাত সবচেয়ে বড়। তাই এতে কামড়ালে স্পষ্ট ক্ষত হয়, জ্বালা যন্ত্রণা করে। রাসেলস ভাইপারের বিষে নানা রকম উপাদান বেশি থাকে তাই কামড় দিলে দেহের একাধিক অর্গান আক্রান্ত হয়।
রাসেলস ভাইপার দিনে রাতে সবসময় সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। তাই এটি যেকোন সময় কামড় দিতে পারে।
মাঠে, ক্ষেতে যাওয়া মানুষেরাই এদের আক্রমনের শীকার হয় বেশি। তাই মাঠে কাজ করতে গেলে হাটু পর্যন্ত বিশেষ জুতা পরিধান করে গেলে সুরক্ষা পাওয়া যেতে পারে অনেকটা। সাধারণত ভাবে এরা বেশি উচুর দিকে কামড় দেয়না, তবে যেদিক থেকে বিপদ আসছে বলে মনে করে সেদিকে কামড় দিতে পারে, উচুতেও এরা লাফিয়ে উঠে(জাম্প করার মত কিন্তু আসলে মাটি থেকে লাফ দিয়ে উপরে ঊঠতে পারেনা, মাথা যতটুকু উচু হতে পারে ততটুকু) কামড় দিতে পারে।
রাসেলস ভাইপার হিস হিস শব্দ করে তবে তা গোখরোর মত বিশেষ ফোস ফোস মত নয়।
রাসেলস ভাইপারের কামড়ে নাকি ৩০ সেকেন্ডেই মানুষ মারা যায় এমন গুজব শুনতেছি। এটি একেবারেই ভুল কথা। রাসেলস ভাইপারে কামড় দিলে ৮-১০ ঘন্টারও বেশি সময় পাওয়া যায় যদিও এর অর্থ এটা নয় যে তারপরই মারা যায়। বরং গড় টাইম ৭২ ঘন্টা। অর্থাৎ রোগীর যদি শারীরিক অন্য কোন সমস্যা না থাকে অত্যান্ত ভীতু না হন তবে গড়ে ৭২ ঘন্টার আগে সহজে মারা যান না। বেচে থাকেন। ১৫ দিন বেচে থেকে তারপর মারা গেছে সে রেকর্ডও আছে। আবার ২৪ ঘন্টার আশেপাশে মারা যাওয়ার হার বেশ বেশি দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রে। এমন হয় মূলত ডাক্তারের কাছে না যেয়ে ভূল টোটকা, ওঝার কাছে যাওয়া, শক্ত করে বাধা, ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে হার্ট এটাক এবং শরীরে অন্যন্য না রোগ বা দূর্বলতার উপস্থিতির জন্য। খুব অল্প ক্ষেত্রে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমার ক্ষেত্রেও। কিন্তু কোন ক্রমেই ৩০ সেকেন্ড বা ৩০ মিনিট নয়। এই সময়ে মারা গেলে তা মূলত রোগীর ভয়ে হার্ট এটাক করে মারা যায়। অনেকেই বলছেন রাসেলস ভাইপার নাকি তীব্র বিষধর মানে বিষের তীব্রতার দিক দিয়ে ২য়,৩য়,৫ম এমন। না একেবারেই না। এর তীব্রতা অনেক কম এমনকি গোখরা, কেউটে থেকেও কম, সিরিয়ালে ৩০টি সাপের পর। তবে হ্যা একটা কথা সত্য এরা কামড়ে প্রচুর মাত্রায় বিষ ঢালে। এদের বিষদাত সবচেয়ে বড় বলে দ্রুত বেশি পরিমাণ বিষ নির্গত হয়। কিন্তু মনে রাখতে হবে এরা ছোবল দেয় অতি দ্রুত গতিতে তাই এত অল্প সময়ে অধিক বিষ বাস্তবে নির্গত হয়না। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কোন অর্থই নেই। ভয় পাওয়া বোকামি ছাড়া কিছু নয়। ইউটিউব ভিডিওতে অতি ভীতিকর যেসব তথ্য তা মূলত দর্শক আকৃষ্ট করে পুরো ভিডিও দেখানোর জন্য, শেয়ার করার জন্য। কারণ এতে ভিডিওকারীর ইনকাম হয়। ওসব অতিরঞ্জিত কথায় কান দেবেন বা, ভিডিও শেয়ার করবেন না। অন্তত এই পোস্ট পড়ার পর অতিরঞ্জিত কথা শুনলেই তা দেখা বন্ধ করবেন। এটা গুজব ছড়িয়ে পড়া আটকাতে আপনার দায়িত্ব।
রাসেলস ভাইপার ইন্ডিয়াতে খুব কমন ও পরিচিত একটি সাপ। এর এন্টিভেনম অর্থাৎ ওষুধও আছে। বাংলাদেশেও এর ওষুধ পর্যাপ্ত পরিমাণ আছে এছাড়া সরকার বাড়তি ব্যবস্থাও করছেন। তাই আতঙ্কিত হবেন না।

চন্দ্রবোড়া সাপে কামড়ালে মোটেও ভয় পাবেন না, টেনশন নিবেন না, দ্রুতই হাসপাতালে চলে যান। ওঝার কাছে কখনো নয়, এবং শক্ত করে বাধবেনও না। আগের দিনে খুব প্রচলিত ছিল সাপে কামড়ালে টাইট করে বাধতে হয় যাতে বিষ উপরে না ওঠে। এই কথার বৈজ্ঞানিক ভিক্তি নাই। এমনকি বিজ্ঞানীরা বলেন বাধলে অংগে রক্ত বন্ধ হয়েই মারা যেতে পারে। বেচে গেলেও ঐ অংগের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। মন না বুঝলে মন বোঝাতে বাধতেই পারেন তবে ঢিলা করে যাতে রক্ত চলাচল আটকে না যায়। একজন সুস্থ মানুষের অংগ বাধলেও তার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। আপনাদের স্বাভাবিক ভাবেই অনেকক্ষণ এক পাশ চেপে বসলে দেখবেন ঝিঝি লেগেছে। আসলে ঝিঝি লাগা হল রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে কোষ অক্সিজেন স্বল্পতায় প্রদাহ শুরু করে।

রাসেলস ভাইপার দেখলে বন বিভাগকে খবর দিন। নিজেরা নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখুন। সাপ মারবেন না। মারাটা সমাধান নয়। এরা আমাদের নানা উপকার করে থাকে। হয়ত সরাসরি না বলে আপনি বুঝতে পারবেন না।
আর হ্যা, দুর্ঘটনা ঘটে গেলে অর্থাৎ কামড় দিলে আতংকিত হবেন না, যথাসম্ভব নড়াচড়া করবেন না। অন্যের সহযোগিতা নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে চলে যান। যত নড়াচড়া করবেন বিষ তত দ্রুত কাজ শুরু করে তাই শান্ত স্থির থাকুন। অন্যরা ধরে হাসপাতালে নিবেন। সতর্ক থাকবেন। লম্বা জুতার মত নিরাপদ কিছু পরে ক্ষেতে যাবেন, চারপাশ দেখে নিবেন তারপর কাজ শুরু করবেন। সাবধানই বড় নিরাপত্তা। প্রয়োজন নেই, বাড়ি থেকে দূরে এমন স্থানের গাছ, ঘাস লতাপাতা ছেটে পরিস্কার করে উজাড় করবেন না। এমন পরিবেশ সাপের বাসস্থান।  ওদের ওখানে থাকার জায়গা দিন, ওরা বাড়ির পাশে আসবেইনা। ওরা কিন্তু মানুষকে ভয় পায়। মানুষকে এড়িয়ে চলতেই পছন্দ করে। ওরা ইচ্ছা করে কামড়াতে চাইনা।

No related questions found

উত্তর সন্ধানী! বেস্ট বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর ওয়েবসাইট। প্রশ্ন করুন, উত্তর নিন, সমস্যা সমাধান করুন ।
উত্তর সন্ধানী কি?
উত্তর সন্ধানী বাংলা প্রশ্ন ও উত্তর এর ওয়েবসাইট।
গোপন প্রশ্ন ও উত্তর। ডিজিটাল শিক্ষায় প্রশ্নের উত্তরের সেরা ওয়েবসাইট।
...