আরাফাতে অবস্থান : ━━━━━━━━━━━━ ৯ই যিলহাজ্জ শুক্রবার সকালে তিনি মিনা হতে আরাফাতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন এবং ওয়াদিয়ে নামেরায়(وَادِي نَمِرَةَ) অবতরণ করেন। যার একপাশে আরাফাত ও অন্যপাশে মুযদালিফাহ অবস্থিত। অতঃপর সূর্য ঢলে পড়লে তিনি ক্বাছওয়ার (الْقَصْوَاءِ) পিঠে সওয়ার হয়ে আরাফাত ময়দানের বাত্বনে ওয়াদীতে(بَطْنُ الْوَادِي) গমন করেন। এটি ছিল একটি পাহাড়ী টিলা। যা বর্তমানে ‘জাবালে রহমত’(جَبَلُ الرَّحْمَةِ) বলে খ্যাত। অতঃপর তিনি সেখানে উটনীর পিঠে সওয়ার অবস্থায় উপস্থিত মুসলমানদের উদ্দেশ্যে সারগর্ভ ভাষণ দেন (যাদুল মা‘আদ ২/২১৫)। এসময় সেখানে এক লক্ষ চবিবশ হাযার বা ত্রিশ হাযার মুসলমান উপস্থিত ছিলেন (মির‘আত, শরহ মিশকাত হা/২৫৬৯)। মুবারকপুরী কোনরূপ সূত্র ছাড়াই এক লক্ষ অথবা এক লক্ষ চুয়াল্লিশ হাযার বলেছেন (আর-রাহীক্ব ৪৪৪ পৃঃ)। আরাফাতের ভাষণ : ━━━━━━━━━━━━ ১. জুবায়ের বিন মুত্ব‘ইম (রাঃ) বলেন, আরাফার দিন বিদায় হজ্জের ভাষণে সমবেত জনগণের উদ্দেশ্যে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, أَيُّهَا النَّاسُ، فَإِنِّى وَاللهِ لاَ أَدْرِى لَعَلِّى لاَ أَلْقَاكُمْ بَعْدَ يَوْمِى هَذَا بِمَكَانِى هَذَا، فَرَحِمَ اللهُ مَنْ سَمِعَ مَقَالَتِى الْيَوْمَ فَوَعَاهَا، فَرُبَّ حَامِلِ فِقْهٍ وَلاَ فِقْهَ لَهُ، وَلَرُبَّ حَامِلِ فِقْهٍ إِلَى مَنْ هُوَ أَفْقَهُ مِنْهُ، وَاعْلَمُوا أَنَّ أَمْوَالَكُمْ وَدِمَاءَكُمْ حَرَامٌ عَلَيْكُمْ كَحُرْمَةِ هَذَا الْيَوْمِ فِى هَذَا الشَّهْرِ فِى هَذَا الْبَلَدِ، وَاعْلَمُوا أَنَّ الْقُلُوبَ لاَ تَغِلُّ عَلَى ثَلاَثٍ: إِخْلاَصِ الْعَمَلِ للهِ، وَمُنَاصَحَةِ أُولِى الأَمْرِ، وَعَلَى لُزُومِ جَمَاعَةِ الْمُسْلِمِينَ، فَإِنَّ دَعْوَتَهُمْ تُحِيطُ مِنْ وَرَائِهِمْ- رواه الدارمىُّ- ‘হে জনগণ! আল্লাহর কসম, আমি জানিনা আজকের পরে আর কোনদিন তোমাদের সঙ্গে এই স্থানে মিলিত হতে পারব কি-না। অতএব আল্লাহ রহম করুন ঐ ব্যক্তির উপরে যে ব্যক্তি আজকে আমার কথা শুনবে ও তা স্মরণ রাখবে। কেননা অনেক জ্ঞানের বাহক নিজে জ্ঞানী নয় (সে অন্যের নিকট জ্ঞান বহন করে নিয়ে যায়) এবং অনেক জ্ঞানের বাহক তার চাইতে অধিকতর জ্ঞানীর নিকটে জ্ঞান বহন করে নিয়ে যায়। (২) জেনে রেখ, নিশ্চয়ই তোমাদের মাল-সম্পদ ও তোমাদের রক্ত তোমাদের পরস্পরের উপরে হারাম, যেমন আজকের এই দিন, এই মাস, এই শহর তোমাদের জন্য হারাম’ (অর্থাৎ এর সম্মান বিনষ্ট করা হারাম)। (৩) জেনে রেখ, তিনটি বিষয়ে মুমিনের অন্তর খিয়ানত করে না : (ক) আল্লাহর উদ্দেশ্যে এখলাছের সাথে কাজ করা। (খ) শাসকদের জন্য কল্যাণ কামনা করা এবং (গ) মুসলমানদের জামা‘আতকে অাঁকড়ে ধরা। কেননা তাদের দো‘আ তাদেরকে পিছন থেকে (শয়তানের প্রতারণা হতে) রক্ষা করে’ (দারেমী হা/২২৭, সনদ সহীহ)। অর্থাৎ মুমিন যতক্ষণ উক্ত তিনটি স্বভাবের উপরে দৃঢ় থাকবে, ততক্ষণ তার অন্তরে খিয়ানত বা বিদ্বেষ প্রবেশ করবে না। যা তাকে ইলম প্রচারের কাজে বাধা দেয়। আর তিনিই হবেন কামেল মুমিন’ (মির‘আত হা/২২৯-এর ব্যাখ্যা)। ছাহেবে মিরক্বাত বলেন,لُزُومِ جَمَاعَةِ الْمُسْلِمِينَ অর্থ আক্বীদা ও সৎকর্মে সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকা এবং জুম‘আ, জামা‘আত ও অন্যান্য বিষয়ে সকলে অংশগ্রহণ করা।فَإِنَّ دَعْوَتَهُمْ تُحِيطُ مِنْ وَرَائِهِمْ অর্থ তাদের দো‘আ তাদেরকে শয়তানী প্রতারণা এবং পথভ্রষ্টতা হতে পিছন থেকে তাদের রক্ষা করে। এর মধ্যে ধমকি রয়েছে, যে ব্যক্তি জামা‘আত থেকে বেরিয়ে যাবে, সে ব্যক্তি জামা‘আতের বরকত ও মানুষের দো‘আ থেকে বঞ্চিত হবে। এছাড়াও এর মধ্যে ইঙ্গিত রয়েছে যে, জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপন করা অধিক উত্তম বিচ্ছিন্ন থাকার চাইতে’। কোন কোন বর্ণনায়مَنْ وَرَائَهُمْ এসেছে। অর্থাৎ তাদের পিছনে যারা আছে, তারা তাকে রক্ষা করে। ত্বীবী বলেন, এর দ্বারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতকে বুঝানো হয়েছে। যাদের দো‘আ তাদের পরবর্তী বংশধরগণকেও পথভ্রষ্টতা হতে রক্ষা করে’ (মিরক্বাত, শরহ মিশকাত হা/২২৮-এর ব্যাখ্যা)। ২. জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, বিদায় হজ্জের দিন সূর্য ঢলে যাওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ক্বাছওয়া (الْقَصْوَاءُ) উটনীর পিঠে সওয়ার হয়ে বাত্বনুল ওয়াদীতে আরাফাহ ময়দানে আসেন। অতঃপর লোকদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে তিনি বলেন, أَيُّهَا النَّاسُ، إِنَّ دِمَاءَكُمْ وَأَمْوَالَكُمْ حَرَامٌ عَلَيْكُمْ كَحُرْمَةِ يَوْمِكُمْ هَذَا، فِيْ شَهْرِكُمْ هَذَا، فِيْ بَلَدِكُمْ هَذَا- أَلاَ كُلُّ شَىْءٍ مِنْ أَمْرِ الْجَاهِلِيَّةِ