খাইবার ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান, যা হিজাজ অঞ্চলের উত্তরে, মদিনা থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। খাইবার ছিল একটি উর্বর ও সমৃদ্ধ এলাকা, যেখানে প্রধানত ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। তৎকালীন খাইবারের বিবরণ নিম্নরূপ:
1. **প্রাকৃতিক সম্পদ ও উর্বরতা**: খাইবার ছিল অত্যন্ত উর্বর একটি এলাকা। সেখানে প্রচুর খেজুর বাগান, কৃষিজমি এবং পানির উৎস ছিল। খাইবারের খেজুর উৎপাদন বিখ্যাত ছিল, এবং এটি ইহুদি সম্প্রদায়ের জন্য একটি অর্থনৈতিক শক্তি কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত হত। এই অঞ্চলে বিভিন্ন ফসল চাষ হতো, যা তাদের কৃষি নির্ভর অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করেছিল।
2. **কেল্লা ও দুর্গসমূহ**: খাইবার ছিল শক্তিশালী দুর্গসমূহে পরিপূর্ণ। এখানে ইহুদিদের আটটি প্রধান দুর্গ ছিল, যেমন: আন-নাঈম, আল-কামুস, আল-কাতিবা ইত্যাদি। প্রতিটি দুর্গই ছিল ভালোভাবে সুরক্ষিত, পাথর ও শক্তিশালী প্রাচীর দিয়ে নির্মিত। এই দুর্গগুলো ছিল খাইবারের প্রতিরক্ষার মূল ভরসা, যেখানে ইহুদি যোদ্ধারা প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত ছিল।
3. **ইহুদি জনসংখ্যা ও শক্তি**: খাইবারের ইহুদি সম্প্রদায় ছিল খুবই শক্তিশালী ও সংগঠিত। তাদের নিজস্ব বাহিনী ছিল এবং তারা তাদের দুর্গগুলোকে শক্তিশালীভাবে সুরক্ষিত করেছিল। তারা অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত ছিল এবং যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষিত ছিল। খাইবারের ইহুদিরা ইসলামবিরোধী শক্তিগুলোর সাথে যুক্ত ছিল এবং ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল।
4. **অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র**: খাইবারের সমৃদ্ধ কৃষি ও খেজুরের উৎপাদন তাদের অর্থনীতিকে মজবুত করেছিল। এছাড়াও, এই অঞ্চল বাণিজ্যের একটি কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো, যেখানে বিভিন্ন পণ্য লেনদেন করা হতো। ইহুদিরা বণিক এবং ধনী ছিল, এবং তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতা ছিল ইসলামিক রাষ্ট্রের জন্য একটি হুমকি।
5. **খাইবারের যুদ্ধ**: ৭ হিজরিতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইহুদি সম্প্রদায়ের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে খাইবার অভিযানে নেতৃত্ব দেন। মুসলিম বাহিনী বিভিন্ন দুর্গে আক্রমণ করে এবং অবশেষে খাইবার বিজয় অর্জন করে। এই যুদ্ধ মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিজয় ছিল, যা মদিনার ইসলামী রাষ্ট্রের শক্তি বৃদ্ধি করেছিল এবং খাইবারের ইহুদিদের প্রভাব কমিয়ে দেয়।
তৎকালীন খাইবার এইভাবেই একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ছিল, যা ইসলামের জন্য একটি বড় সামরিক এবং অর্থনৈতিক সাফল্যের প্রতীক হয়ে উঠেছিল।